X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা গণহত্যা: কী আদেশ দিতে যাচ্ছে আইসিজে?

বিদেশ ডেস্ক
২৩ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:৩১আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:৫৫
image

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় বেলা ৩ টায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ ঘোষণা করবেন জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। শুনানিতে মামলাকারী গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে ৫টি বিষয়ে আদেশ চাওয়া হয়েছিল। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্লেষকরা বলেছেন, রাখাইনে নতুন করে যেন আর কোনও গণহত্যা সংঘটিত না হয়, আদালতের অন্তর্বর্তী আদেশে তার প্রতিফলন ঘটতে পারে। তারা মনে করছেন, আইসিজের পক্ষ থেকে  সুনির্দিষ্ট কোনও আদেশ এলে মিয়ানমারের পক্ষে তা উপেক্ষা করা সহজ হবে না। আর নেপিদো আদেশ বাস্তবায়ন না করলেও পরে অন্য পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ থাকবে গাম্বিয়ার।

রোহিঙ্গা গণহত্যা: কী আদেশ দিতে যাচ্ছে আইসিজে?

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। মামলায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও সংঘাত আরও তীব্রতর না হওয়ার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সের্গেই ভ্যাসিলিয়েভ বলেছেন: 'সর্বার্থেই এটি একটি ঐতিহাসিক মামলা। খুব কম সংখ্যক মামলার ক্ষেত্রেই এর সঙ্গে (রোহিঙ্গা নিধন) তুলনীয় মাত্রার ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।’

ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস-এর কমিশনার রিড ব্রোডি বলেছেন, ‘বিশ্বের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আদালত আজ আমাদের সময়ে সংঘটিত সবথেকে ভয়ঙ্কর এক গণ-নৃশংসতার বিরুদ্ধে রায় দিতে যাচ্ছে। ওই নৃশংসতা এখনও চলছে।’ লিউভেন ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক গ্লেইডার হার্নান্দেজ তার সঙ্গে একমত হয়েছেন। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘এই মামলার প্রকৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপক এবং আইসিজের প্রাক্তন আইনজীবী মাইক বেকার বলেছেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ উঠেছে তা অত্যন্ত দ্রুততর সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা জরুরি। এ নিয়ে আরও বড় পরিসরে আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। অন্তর্বর্তীকালীন আদেশকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ এই অধ্যাপক। তিনি বলেছেন: ‘আজ একেবারেই প্রাথমিক একটি সিদ্ধান্ত আসবে; যা দিয়ে মামলার রায় কী হবে তা বলা কঠিন।’

যে বিষয়গুলোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো: গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমার অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবে; মিলিটারি, প্যারামিলিটারি ও বেসামরিক অস্ত্রধারী ব্যক্তি যেন কোনও ধরনের গণহত্যা না চালাতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া; গণহত্যা সংক্রান্ত কোনও ধরনের প্রমাণ নষ্ট না করা; এবং বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও বেশি জটিল ও খারাপ করে এমন কোনও পদক্ষেপ না নেওয়া। পঞ্চম বিষয়টি হচ্ছে, আদেশের পরে আগামী ৪ মাসের মধ্যে উভয়পক্ষ তাদের নেওয়া পদক্ষেপ কোর্টকে অবহিত করবে।

হার্নান্দেজ মনে করছেন, নতুন করে যেন আর কোনও গণহত্যা সংঘটিত না হয়, অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে সেই বিষয়টি গুরুত্ব পেতে পারে। ‘মানবিক সহায়তার প্রবেশ নিশ্চিত করার মতো সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলোতে আদেশ দিতে পারেন আদালত’।  

প্রশ্ন উঠেছে আইসিজের আদেশ মিয়ানমার বাস্তবায়ন করবে কিনা। রিড ব্রোডি বলেছেন, ‘সু চিকে হেগে পাঠিয়ে মিয়ানমার আইসিজের গুরুত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। আদালতের বৈধতা অস্বীকার করা এখন সরকারের পক্ষে সত্যিই কঠিন হয়ে উঠবে।’

মিয়ানমার যদি আদালতের অন্তবর্তীকালীন আদেশ বাস্তবায়ন না করে, তাহলে গাম্বিয়া মামলাটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থানান্তর করতে পারবে। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেবে, তারা মিয়ানমারকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধ্য করবে কিনা। পরবর্তীতে যদি প্রমাণিত হয়, মিয়ানমার আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করেনি, তাহলে তাদেরকে দায়ী করা যাবে।  ব্রোডি আরও বলেছেন: 'আদালতের আদেশ যত বেশি সুনির্দিষ্ট হবে, এর কোনও লঙ্ঘন হয়েছে কিনা তা শনাক্ত করা তত সহজ হবে।'

ভ্যাসিলিয়েভ আশা প্রকাশ করেছেন, ‘আইসিজে গাম্বিয়ার পাশেই থাকবে এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেবে’।

উল্লেখ্য,  রোহিঙ্গারা রাখাইনে বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়েছে এবং এর ফলে গণহত্যার মতো অপরাধ সংগঠিত হয়েছে উল্লেখ করে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে অভিযোগ আনে গাম্বিয়া। যেহেতু এ ধরনের মামলা দীর্ঘস্থায়ী হয়, সে কারণে ওই একই আবেদনে পাচঁটি বিষয়ে কোর্টের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চায় দেশটি।  এ বিষয়ে শুনানি হয় ডিসেম্বরের ১০ থেকে ১২ তারিখে। সেখানে গাম্বিয়া ও মিয়ানমার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করে।

/বিএ/
সম্পর্কিত
তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে সিরিজ ভূমিকম্প
আবারও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলো উত্তর কোরিয়া
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
সর্বশেষ খবর
বর্জনকারীদের ‘অনুসারীরাও’ ভোটে, সহিংসতার শঙ্কা দেখছে না ইসি
বর্জনকারীদের ‘অনুসারীরাও’ ভোটে, সহিংসতার শঙ্কা দেখছে না ইসি
মাদক বহনের সময় দুর্ঘটনা, এরপর থেকে নষ্ট হচ্ছে জাবির ৬০ লাখ টাকার অ্যাম্বুলেন্সটি
মাদক বহনের সময় দুর্ঘটনা, এরপর থেকে নষ্ট হচ্ছে জাবির ৬০ লাখ টাকার অ্যাম্বুলেন্সটি
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
পার্বত্য তিন উপজেলার ভোট স্থগিত
পার্বত্য তিন উপজেলার ভোট স্থগিত
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস