দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায় চার চীনা নাগরিকের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে শনিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
শনিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক নূর হিশাম আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুর থেকে বাসযোগে মালয়েশিয়াতে প্রবেশ করা এক চীনা নাগরিকের শরীরে এ ভাইরাস পাওয়া গেছে। ৪০ বছরের ওই ব্যক্তি করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের উহান শহরের বাসিন্দা। গত বুধবার একটি পর্যটক দলের সঙ্গে তিনি মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। এর আগে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জুলকেফলি আহমদ আরও তিন চীনা নাগরিকের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্তের খবর নিশ্চিত করেন।
সর্বশেষ আক্রান্ত ব্যক্তি বুধবার মালয়েশিয়ায় প্রবেশের পরদিন থেকে জ্বরে ভুগছিলেন। পরে তিনি জহর এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। পরে পরীক্ষায় তার শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়।
এর আগে শনাক্ত হওয়া তিনজনের সবাই ৬৬ বছরের এক ব্যক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সিঙ্গাপুরে পরীক্ষায় ওই ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এদিকে করোনার উৎপত্তিস্থল চীনে এ পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে আরও ১৩শ’-এরও বেশি মানুষ। দ্রুত গতিতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শনিবার ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর বৈঠকে তিনি বলেছেন, দেশ ‘গুরুতর পরিস্থিতির’ মোকাবিলা করছে। বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদ দেন শি জিনপিং। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শনিবার চান্দ্র নববর্ষের সরকারি ছুটির দিনে এ বৈঠকে মিলিত হন তিনি। এ সময় বিদ্যমান পরিস্থিতির ব্যাপারে কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দেন চীনা প্রেসিডেন্ট।
চীনের উহান শহর থেকে উৎপত্তি হওয়া এ ভাইরাস ইতোমধ্যেই রাজধানী বেইজিংসহ চীনের ২৯টি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২০ বছরে চীন এবং বাকি বিশ্বের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট যোগাযোগ দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে। উহানের এক কোটি ১০ লাখ বাসিন্দা এখন সরাসরি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গন্তব্যের পাশাপাশি বাড়ির কাছের সিউল, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুরের মতো শহরে যেতে পারে। সে কারণেই ভাইরাসটি চীনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স ও সৌদি আরবসহ অন্তত ১২টি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, আক্রান্তরা সম্প্রতি চীন সফর করেছেন।
চীনে আক্রান্ত ও মৃতের বেশিরভাগ খবর মূলত হুবেই প্রদেশ থেকেই আসছে। তবে জাতীয় পর্যায়ে এ সংক্রান্ত বিশদ কোনও ডাটা প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ। অবশ্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এ ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উহানসহ মোট তিনটি শহরের প্রায় দুই কোটি মানুষকে শহর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিল্প ও পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয় ও জমজমাট শহর উহানে এখন কার্যত সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। সূত্র : আল জাজিরা, রয়টার্স।