আফ্রিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্য আর পশ্চিম এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ঝাঁকবদ্ধ মরু পতঙ্গ পঙ্গপাল৷ সব মিলিয়ে ৩০টি দেশে এই পঙ্গপাল ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ৷ বিশেষত পূর্ব আফ্রিকার ফসলের মৌসুমে ব্যাপক মাত্রায় পঙ্গপাল হানা দেওয়ায় চরম খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য আর দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে মরু পতঙ্গদের বসবাস৷ এসব অঞ্চলে বছরে বৃষ্টিপাত হয় আট ইঞ্চিরও কম৷গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘হর্ন অব আফ্রিকার’ দেশগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০০ ভাগ পর্যন্ত বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ আফ্রিকার মরু অঞ্চলে এমন বৃষ্টি পঙ্গপালের বংশবিস্তারের জন্য সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি করেছে৷
পূর্ব আফ্রিকাজুড়ে এসব মরু পতঙ্কের আক্রমণে জীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে। বর্তমানে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেখানে। দ্য হর্ন অব আফ্রিকা নামে পরিচিত ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, জিবুতি ও সোমালিয়া নিয়ে গঠিত ওই অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকা চরম হুমকির মুখে। বর্তমানে ইথিওপিয়া ও সোমালিয়ায় ঝাঁকে ঝাঁকে বাড়ছে পঙ্গপাল। এটা এখন কেনিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম, উগান্ডার উত্তর-পূর্বের ২০০ কিলোমিটার ও দক্ষিণ সুদানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে হানা দিচ্ছে।
বর্তমানে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) খাদ্য সংগ্রহ মৌসুম চলছে। তবে মরু পতঙ্কের কারণে পর্যাপ্ত খাবার সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সামগ্রিক পরিবেশ অনুকূল হওয়ায় পঙ্গপাল আরও কয়েক মাস জীবিত থাকবে, তাদের বংশবৃদ্ধি ও আক্রমণের ফলে সেখানে আরও ফসলহানি হবে। উগান্ডা ও দক্ষিণ সুদানে ব্যাপকহারে এটা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সুদান ও মিসরের উপকূলবর্তী এলাকায় বড় ধরনের ঝাঁকে পরিণত হয়েছে এই পতঙ্গ।
ইতোমধ্যে জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছে; ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়াসহ পূর্ব আফ্রিকায় পঙ্গপালের আক্রমণে মানবিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে। জিবুতি ও ইরিত্রিয়ায় ৩৬ হাজার কোটি পতঙ্গের আক্রমণে খাদ্য নিরাপত্তায় অভূতপূর্ব হুমকি তৈরি হয়েছে। নতুন ধরনের পঙ্গপালের দশ লাখ পতঙ্গের একটি ঝাঁক এক দিনে ৩৫ হাজার মানুষের খাবার খেয়ে ফেলতে পারে। আগামী এপ্রিলে এই পঙ্গপাল নতুন করে বংশবৃদ্ধি করতে পারে।
জার্মানভিত্তিক মাধ্যম ডয়েচ ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পঙ্গপাল প্রতিদিন তাদের নিজেদের ভরের সমপরিমাণ খাবার খেতে পারে৷ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক বিশেষজ্ঞের মতে, ম্যানহাটন আকৃতির পঙ্গপালের একটি ঝাঁক গোটা নিউ ইয়র্কের জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার সাবাড় করতে পারে৷ প্রতি কিলোমিটারে ঝাঁকে চার থেকে আট কোটি পতঙ্গ থাকে৷
এরইমধ্যে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে কয়েক হাজার একর জমিতে হানা দিয়েছে পঙ্গপাল৷ জাতিসংঘের আশঙ্কা এদের ঠেকাতে না পারলে জুন নাগাদ তাদের সংখ্যা ৫০০ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে৷ পৌঁছাতে পারে ৩০ টি দেশে৷ আরও খারাপ পরিস্থিতিতে বিশ্বের ২০ ভাগ ভূমি খুব সহজেই আক্রান্ত হবে৷ ১০ ভাগের এক ভাগ মানুষের বেঁচে থাকার মত খাবারের অভাব দেখা দিবে৷
কেনিয়া, ইথিওপিয়া ও সোমালিয়া এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ৷ সেই সঙ্গে আফ্রিকার আরও ১৪ টি দেশেও ছড়িয়েছে এই পতঙ্গ৷ লোহিত সাগরের দুইপাড়েও সমান তালে বাড়ছে এদের আধিপত্য৷ সুদান, মিসরের উপকূল থেকে শুরু করে দক্ষিণ পশ্চিম সৌদি আরবেও চলছে বংশবিস্তার৷ ওমানের পূর্ব উপকূল থেকে শুরু করে ভারত-পাকিস্তান পর্যন্ত পৌঁছেছে তারা।