দিল্লির সহিংসতার সময় সাহায্যের ১৩ হাজারেরও বেশি ফোনকল গেলেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। টানা ছয়দিন চলা হিন্দুত্ববাদী তাণ্ডবের সময় গুলি, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছিল দিল্লি পুলিশ। তা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থায় নেয়নি তারা। ভারতের রাজধানীর পরিস্থিতি নিয়ে যখন পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ আসছে, ঠিক তখনই দেশটির একটি সংবাদমাধ্যম এই অভিযোগ তুলেছে।
দিল্লিতে ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া হিন্দুত্ববাদী তাণ্ডবে নিহতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) যেখানে নিহতের সংখ্যা ছিল ২৭, বৃহস্পতিবার বিকালে তা ৩৮-এ পৌঁছায়। আর ২৮ ফেব্রুয়ারি নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২। এরমধ্যে ২১ জনই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে প্রাণহানির এ সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কেননা, আহতদের মধ্যে অনেকেই এখনও ঝুঁকিমুক্ত নয়। দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন অনেকে।
কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর সহিংসতার প্রথম চারদিনে দিল্লি পুলিশের কাছে ১৩ হাজার ২০০টি ফোন গিয়েছিল। তবে তারা নীরব ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার জন্যই সহিংসতা এমন চরম আকার ধারণ করেছিল। ফোনে বার বার অভিযোগ করা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
স্থানীয়দের সেইসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই পুলিশ কন্ট্রোল রুমের কল লগ খতিয়ে দেখেছে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম। এতে দেখা গেছে, ২৩ তারিখ (রবিবার) বিক্ষোভের প্রথম দিন সন্ধ্যাতেই ৭০০ ফোন গিয়েছিল পুলিশের কাছে। ২৪ তারিখে একধাক্কায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫০০। ২৫ ফেব্রুয়ারি ৭ হাজার ৫০০ ফোন পায় পুলিশ। ওই দিন রাত থেকেই এলাকা পরিদর্শনে বার হন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তার পর দিন অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ৫০০টি ফোন পায় পুলিশ।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, শুধুমাত্র যমুনা বিহার থেকেই ভজনপুরা থানায় ২৪ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফোন গেছে। ভজনপুরা থানার আট পাতার কল রেজিস্টার খতিয়ে দেখে তারা জানিয়েছে, কোন নম্বর থেকে ফোন গেছে, কী অভিযোগ এবং তার প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার জন্য রেজিস্টারের পাতায় আলাদা আলাদা কলাম থাকলেও, শুধুমাত্র কোথা থেকে ফোন এসেছিল, কী অভিযোগ তা-ই লেখা রয়েছে। এমনকি গুলি চলা এবং আগুন লাগানোর অভিযোগও লেখা রয়েছে তাতে। কিন্তু অভিযোগের প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার উল্লেখ নেই সেখানে। অর্থাৎ অভিযোগ পেয়েও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
যমুনা বিহারের বিজেপি কাউন্সিলর প্রমোদ গুপ্ত জানিয়েছেন, শুধু সাধারণ মানুষই নন, আমার অভিযোগের প্রেক্ষিতেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি আমার ফোনই ধরেনি। সংবাদমাধ্যমকে প্রমোদ গুপ্ত বলেন, ‘পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। পুলিশ যদি ব্যবস্থা নিতো, পরিস্থিতি এতটা খারাপ দিকে মোড় নিতো না।’
একই অভিযোগ শিববিহারের ‘রাজধানী পাবলিক স্কুল’-এর মালিক ফয়জল ফারুখের। তিনি জানান, ‘সোমবার স্কুলে হামলা চালায় তাণ্ডবকারীরা। সব শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা বেরিয়ে গেলে বার বার পুলিশকে ফোন করি আমি। ফোনে তারা আশ্বাস দিলেও, স্কুল চত্বরে কোনও পুলিশ এসেই পৌঁছায়নি।’