ভারতে তাবলিগ জামাতের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তা খতিয়ে দেখছে সে দেশের পুলিশ। ওই বার্তায় সমবেতদের উদ্দেশে বক্তা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে যে সামাজিক শিষ্টাচার মানার কথা বলা হচ্ছে, তা মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক ধরনের ষড়যন্ত্র। গত মাসে তাবলিগ জামাতের সদর দফতরে অনুষ্ঠিত এক ধর্মীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে ভারতে করোনার সংক্রমণ বিস্তৃত হয়েছে। জামাতের প্রধান মাওলানা সাদ কাহন্দলভিসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ।
গত ১ মার্চ দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজ মসজিদে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন তাবলিগ জামাতের একটি ধর্মীয় সমাবেশ শুরু হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব ও কিরগিজস্তানের প্রতিনিধিসহ প্রায় দুই হাজার মানুষ ওই আয়োজনে অংশ নেন। ১৫ মার্চ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরও অনেকে সেখানে থেকে যান। গত তিন দিনে সেখান থেকে প্রায় দুই হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সতর্কতা উপেক্ষা করে জমায়েত অব্যাহত রাখায় তাবলিগ জামাতের সাত নেতার বিরুদ্ধে সংক্রামক রোগ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২৪ মার্চ সতর্কতার নোটিশ দেওয়ার পরও মারকাজ মসজিদে গণঅবস্থান ও দর্শনার্থীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য এই সাত ব্যক্তি দায়ী। মামলার আসাসিরা হলেন, জামাতের প্রধান মাওলানা সাদ কাহন্দলভি, জিসান, মুফতি শেহজাদ, এম সাইফি, ইউনুস, মোহাম্মদ সালমান ও মোহাম্মদ আশরাফ।
উল্লেখ্য, করোনা মহামারি ঠেকাতে গত ২৪ মার্চ থেকে ভারতে ২১ দিনের লকডাউন শুরু হয়েছে।
এদিকে দিল্লি মারকাজ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখছে দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ। এতে দেখা গেছে, বক্তারা সমবেতদের সরকারের সোশ্যাল ডিস্টেন্সিংয়ের আদেশ উপেক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। করোনাভাইরাস সতর্কতাকে ‘মুসলিম ভাইদের থেকে মুসলমানদের দূরে রাখার ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিতে শোনা গেছে ওই বক্তাকে।
ওই ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, ‘মৃত্যু থেকে কোথায় পালাবেন? মৃত্যু আপনার সামনে… এটা আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়ার সময়। ডাক্তারের কথা শুনে নামাজ বন্ধ করে, পরস্পরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ করে থাকার সময় নয়। হ্যাঁ, ভাইরাস আছে। কিন্তু আমার সঙ্গে ৭০ হাজার ফেরেশতাও আছে। তারা যদি আমাকে রক্ষা করতে না পারেন, তাহলে কে পারবেন? এখন এই ধরনের জমায়েত আরও বেশি করে করার সময়, পরস্পরকে এড়িয়ে চলার সময় নয়।… আমরা একত্রিত হলে রোগ ছড়াবে, কে বলেছে?’ অনেকেই বলছেন, ভিডিওটির বক্তা মাওলানা সাদ কাহন্দলভি নিজেই।
ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া অন্তত ১২৪ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া এসব মানুষের কাছ থেকে আরও করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দিল্লি পুলিশ ও সরকার বলছে, করোনার আশঙ্কায় তাবলিগ জামাতকে মারকাজ নিজামুদ্দিন খালি করে দিতে বলা হয়েছিল। তবে আয়োজকেরা পুলিশকে বলেছিল, মানুষ লকডাউন জারির আগেই জড়ো হয়েছেন আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে যেখানে আছে তাকে সেখানেই অবস্থান করতে বলেছেন।