এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি ভারতের মুম্বাইয়ের ধারাবিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে সেখানে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। মাত্র আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করায় ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতে করোনার নতুন হটস্পট হতে পারে এই ধারাবি।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সোমবার (৬ এপ্রিল) সকাল নাগাদ ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে চার হাজার ২৮৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ১১৭ জনের। আর চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩২৮ জন।
ধারাবিতে করোনায় আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি আট সদস্যের পরিবার নিয়ে এক রুমের একটি বাসায় বাস করতেন। স্ত্রী, চার মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ৪২০ বর্গফুটের ঘর ছিল তা। তার পরিবারের দাবি, মৃত ব্যক্তির কোনও ভ্রমণের ইতিহাস ছিল না। শুধু মসজিদে যেতেন। কিন্তু পরে জানা যায়, বস্তিতে তার আরেকটি বাসা রয়েছে। সেখানে সম্প্রতি দিল্লিতে তাবলিগ জামাতে যোগ দেওয়া পাঁচ ব্যক্তি কয়েকদিন অবস্থান করেছেন। তাবলিগ সদস্যরা সেখান থেকে কেরালার উদ্দেশে রওনা দেন।
পুলিশের ধারণা, তাবলিগের পাঁচ সদস্য ধারাবিতে দুই দিন অবস্থান করেছেন। বস্তি এলাকার দায়িত্বে থাকা পৌর কর্মকর্তা কিরন দিগাবকার বলেন, আমরা তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। সংক্রমণের উৎস জানা দরকার। এই ব্যক্তি কীভাবে ও কার কাছ থেকে সংক্রমিত হলেন? কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের সংক্রমণ ঠেকাতে হবে।
মৃতের পরিবারের দাবি, তার পাসপোর্ট ছিল না। কিন্তু পুলিশ এই বিষয়ে সন্দিহান। তারা মৃত ব্যক্তির ফোন রেকর্ড যাচাই করে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ৩০৮টি বাসা ও ৮০টি দোকান পুরোপুরি সিল করে দেওয়া হয়েছে। আড়াই হাজার মানুষকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাসাবাড়িগুলোতে পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুনাশক ছড়াচ্ছেন। মৃত ব্যক্তির পরিবারের আট জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
বস্তির বাসিন্দাদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব ১৩০ জন এবং আরও ৩৫ জন শ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত আছেন। তাদের কোভিড ১৯-এর লক্ষণ নিবিড় পর্যালোচনায় রাখা হয়েছে।
সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ ৫০ শয্যার সিওন হাসপাতালের দায়িত্ব নিয়েছে এবং পাশের একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্সকে ৩০০ শয্যার কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, দ্রুত এসব পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বিস্তার ঠেকাতে তা যথেষ্ট নয় বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। বৃহস্পতিবার বস্তিতে বাস করা একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত ৩৫ বছরের চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পৌর কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক যে ভবনে থাকতেন তা সিল করে দিয়েছে। এই ভবনে প্রায় ৩০০ লোকের বসবাস। এখানে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ জনকে শনাক্ত করে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠনো হয়েছেন। হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের দুই নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া ৩০ বছরের এক নারী, ৬০ বছরের আরেক পুরুষ ও ২১ বছরের এক ল্যাব টেকনিশিয়ানও করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।
পৌর কর্মকর্তা কিরন বলেন, আমরা এখনও বস্তি এলাকায় সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু বস্তির বাইরেও অনেক ঝুপড়ি রয়েছে। যদি সেখানে আক্রান্ত পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিচ্ছিন্ন করতে পারবো না। তখন তাদের কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।
বিবিসি’র প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে, যদি এমনটি ঘটে থাকে তাহলে সংক্রমণ ঠেকানো বিশৃঙ্খলায় পড়বে। স্থানীয় হাসপাতাল ও অস্থায়ী কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে দ্রুতই রোগীতে পূর্ণ হয়ে যাবে।
প্রথম দুজন আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এরপর সাত জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। আরও ২৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলাফল কখন পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত না।
বস্তিতে স্বাস্থ্য টিমের নেতৃত্বে থাকা মেডিক্যাল কর্মকর্তা ভিরেন্দ্র মোহিত বলেন, পরীক্ষার ফলাফল আসতে দেরি হওয়ার কারণে সময় চলে যাচ্ছে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও দেরি হচ্ছে।