X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মহামারিতে স্থবির ভারতের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি, কাশ্মিরে বাড়ছে সহিংসতা

আশীষ বিশ্বাস, কলকাতা
০৮ মে ২০২০, ২১:৫৯আপডেট : ০৮ মে ২০২০, ২২:০০

করোনাভাইরাস মহামারিতে স্থবির হয়ে পড়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি। এই পরিস্থিতির মধ্যে মধ্যেই সহিংসতা বাড়তে শুরু করেছে গত বছর বিশেষ অধিকার ও সায়ত্ত্বশাসন বাতিল হওয়া জম্মু-কাশ্মিরে। সহিংসতা এড়াতে বিশেষ অধিকার বাতিলকে কেন্দ্র করে সেখানে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করেছিল ভারত সরকার। এতে করে নাগরিক অধিকার খর্বের সমালোচনাও উঠে। তবে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের পরও কাশ্মিরে বড় ধরনের সহিংসতা না হওয়াটা দিল্লির জন্য ছিল স্বস্তিদায়ক। এমনকি কমে আসে নিয়মিত ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও।  মহামারির কারণে লকডাউনের ফলে কাশ্মিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও আসে কিছুটা শিথিলতা। আর এতে করে সেখানে সম্প্রতি বাড়তে শুরু করেছে সহিংসতা।

মহামারিতে স্থবির ভারতের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি, কাশ্মিরে বাড়ছে সহিংসতা

মহামারি শুরুর আগে ভারত প্রতিরক্ষার জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও নীতি গ্রহণ করে। একটি ছিল, ভারতীয় অস্ত্র রফতানি বৃদ্ধি করা নতুন বাজার অনুসন্ধানের মাধ্যমে। দ্বিতীয়টি ছিল, দেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের উৎপাদন বৃদ্ধি। যা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘মেইক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি নামে অভিহিত করেছেন।
কিন্তু ২০২০ সালে করোনা মহামারিতে এই কাজে বড় ধরনের স্থবিরতা নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে ভারতের সীমান্তে প্রতিরক্ষা বাস্তবায়ন। আরও আশঙ্কার বিষয় হলো, লকডাউনের কারণে সরকারের সব ধরনের কাজ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে কারও কোনও ধারণা নেই, কখনও প্রতিরক্ষা বিভাগ স্বাভাবিকভাবে পুনরায় কাজ শুরু করতে পারবে।
ভারতের প্রতিবেশী দেশ এবং বিশ্বের কথা বিবেচনায় নিলে ভারত সরকারের উৎকণ্ঠিত হওয়ার মতো কিছু নেই। প্রাণঘাতী মহামারিতে ভারত ব্যাপক বিপর্যস্ত কিন্তু অপর গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোও খুব ভালো আছে তা নয়। তবে এক্ষেত্রে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি রয়েছে যা দিল্লির পক্ষে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। যেমনটি দেখা যাচ্ছে সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও আফগানিস্তানে। ওই দেশগুলোতে সশস্ত্র সংঘাত বেড়েছে। স্পর্শকাতর ভারত-পাকিস্তান সীমান্তেও এমন প্রবণতা দেখা গেছে। মহামারির মধ্যেই সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ৭/৮ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। সন্ত্রাসীদের ফাঁদ পেতে বা গ্রেনেড হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এতে বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহাণি ও সম্পদেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ভারতের প্রভাবশালী পশ্চিমাপন্থী উদার অংশ ও অনেক বিরোধী দল মনে করে, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) হয়ত কাশ্মিরের বিশেষ অধিকার বাতিলের মধ্যদিয়ে বড় ধরনের আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। যা ধারণ করার ক্ষমতা নেই তাদের। তারা অবশ্য এক্ষেত্রে মোদির নেতৃত্বে ভারতের দৃঢ়তাকে অবজ্ঞা করছেন। ভারতের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হলে মোদির দিল্লি যে পাল্টাঘাত করতে একবিন্দুও পিছপা হবে না তা পাকিস্তান ও তাদের ছায়া মিত্ররা খুব ভালোই জানে। এক্ষেত্রে মোদি আন্তর্জাতিক সমালোচনাকেও অগ্রাহ্য করতে পারেন। যা কংগ্রেস বা অন্য সরকারগুলো করতে পারেনি।
ভারতের অস্ত্র রফতানি জোরদার করার পেছনে অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে। সাধারণভাবে ভারত অস্ত্রক্রেতা হিসেবে পরিচিত। সৌদি আরবের পর ভারতই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অস্ত্রক্রেতা দেশ।

তবে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের ক্ষেত্রে কিছু আগ্নেয়াস্ত্র উৎপাদনের স্থিতিশীলতা প্রয়োজন ছিল। দেশে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র ও সরঞ্জাম উৎপাদিত হচ্ছিল। তবে এই উৎপাদনের পরিমাণ ছিল খুব কম।
এরপরও ২০১৪ সালে ভারত আন্তর্জাতিক বাজারে ২ হাজার কোটি রুপি মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছে। গত দুই বছরে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার কোটি রুপির কাছাকাছি। দেশে প্রতিরক্ষা পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ ও মান অর্জন করেছে ভারত।
বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোটের জন্য এটি বড় ধরনের সাফল্য। ফলে মোদি যখন বলেন যে, আগামী পাঁচ বছরে ভারত অন্তত ৩৫ হাজার কোটি রুপি মূল্যের অস্ত্র রফতানি করতে পারবে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই অর্থ খুব তাৎপর্যপূর্ণ না হলেও ভারতের ক্ষেত্রে বা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বিচারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে ভারতের অর্থনৈতিক খাতে বড় ধরনের উন্নতি হতে পারে।
ভারতের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়কারী দেশগুলো শুধু যে কম উন্নত এশীয় বা আফ্রিকার দেশ তা নয়। ভারতের কাছ থেকে প্রায় ৪০টি দেশ ছোট আগ্নেয়াস্ত্র কিনছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইসরায়েল, সিঙ্গাপুর, আজারবাইজান, ইরাক, জাপান, লেবানন, উরুগুয়ে, ইকুয়েডর, গিনি ও মিসর।
সাধারণভাবে বোধগম্য যে, ভারত বোমারু, ক্ষেপণাস্ত্র, ভারি অস্ত্র বা সুপাই হাই-টেক হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র ইত্যাদি বিক্রি করছে না। যেগুলো বিক্রি করে পরাশক্তিরা। তবে ভারতের বুলেট প্রুফ ভেস্টের বাজার বাড়ছে। এমনকি গ্রেনেড হামলা ঠেকাতে বিশেষ কম্বলেরও চাহিদা রয়েছে।

এছাড়া উপকূলীয় প্রতিরক্ষা ও নজরদারি ব্যবস্থা, পিই প্যানেল, রাডারের যন্ত্রাংশ, কার্টিজ, নাইট ভিশন ইকুইপমেন্ট, মাইনবিরোধী সামরিক যান, ডিটেনেটোর, লেজার ট্রান্সমিটারসহ বেশ কিছু প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি করছে ভারত।

ভারতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাবিদরাও খুশি যে সর্বশেষ প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে ৪০টিরও বেশি দেশের সহস্রাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত হয়েছেন বলে। ভারতীয় কারখানাগুলো থেকেও প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদনের আগ্রহ বাড়ছে।

/এএ/
সম্পর্কিত
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য খালাস করে গেলেন যে নারী ট্রাকচালক
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা