দৃশ্যত গৃহবন্দি অবস্থায় ঈদের জামাত পড়তে না পারার বেদনা নিয়ে রবিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপজুড়ে বসবাসরত ১৫ লক্ষাধিক বাংলাদেশি। করোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে এবার উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে আমেজহীন এক ঈদ উদযাপন করছে তারা।
পাঁচ মিনিটের দূরত্বে থাকা সন্তান, নাতি-নাতনিদের ঈদের দিনেও না দেখতে পারার বেদনা নিয়ে দিনটি কাটছে তাদের।
যুক্তরাজ্যে গত ১৫ মার্চ থেকে লকডাউন থাকায় সব মসজিদ বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য বার মসজিদ ও খোলা মাঠে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হলেও এবার কোথাও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ঘরেই ঈদের নামাজ পড়া যাবে কি না এ নিয়েও ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির খতিবরা ভিন্ন মত দিয়েছেন।
রবিবার সকালে বাংলা ট্রিবিউন-এর সঙ্গে কথা হয় যুক্তরাজ্যের প্রবীণ কমিউনিটি নেতা ও ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কে এম আবু তাহের চৌধুরী-র। তিনি ফোনে জানান, ইস্ট লন্ডন মসজিদের খতিব ও ইমাম মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম ও মাওলানা আব্দুর রহমান আল মাদানী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঘরে ঈদের নামাজ পড়া যাবে বলে মত দিয়েছেন। অন্যদিকে ফুলতলী (রহ.)-এর অনুসারী মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান ও মাওলানা আব্দুল মালিক ঈদের নামাজ খুতবা ছাড়া বাসায় না পড়ে দুই বা চার রাকাত নফল নামাজ আদায়ের পক্ষে মত দিয়েছেন।
দেওবন্দ ধারার অনুসারী মুফতি আব্দুর রহমান ঘরে ঈদের নামাজ বা নফল নামাজ উভয়ই পড়া যাবে বলে মত দিয়েছেন।
কে এম আবু তাহের চৌধুরী বলেন, ঘরে ঈদ জামাত করলেও বন্ধু বা স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে না পারার মর্মপীড়া অনুভব করছি। এবার করোনা পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যে লাখো বাংলাদেশি কর্মহীন হলেও দেশে স্বজন ও এলাকার মানুষদের জন্য প্রবাসীরা অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। সবকটি কমিউনিটি সংগঠন ও বাংলাদেশি কমিউনিটির ছয়টি টিভি চ্যানেল চাঁদা তুলে সে টাকা দেশে পাঠিয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে বৈধ কাগজপত্রবিহীন প্রবাসীরা এবার খুব কষ্টে ঈদ কাটাচ্ছেন।
ব্রিটেনে গত ৪০ বছর ধরে বসবাস করছেন বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া অধ্যাপক ও লেখক ড. রেনু লুৎফা। তিনি রবিবার ফোনে বাংলা ট্রিবিউন-কে বলেন, ‘আমার মেয়ে, জামাতা লন্ডনে আমার ঘর থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের দূরত্বে থাকেন। যুক্তরাজ্যে লকডাউন শুরু হয় মার্চের ১৫ তারিখ থেকে। সেদিন থেকে তাদের সঙ্গে আর দেখা হয়নি। ঈদের দিনও সরাসরি দেখা হবে না।
লন্ডনের নিউহ্যাম কাউন্সিলের কাউন্সিলর মুজিবুর রহমান জসিম বলেন, বেশিরভাগ প্রবাসী নিজেরা সংকটে থাকলেও ঈদের বাজেটের পুরো টাকাটাই দেশে স্বজন ও অসচ্ছল মানুষের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন।
মুজিবুর রহমান জসিম আরও বলেন, কাউন্সিল ও সরকার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও অনেকে রাস্তায় নামছেন। তিনি সবাইকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে লকডাউন মানার আহ্বান জানান।
সিলেটের ছাতক উপজেলার আক্তার হোসেন গত দুই যুগ ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। এই কমিউনিটি নেতা বলেন, এ রকম ঈদ আর কখনও আমাদের জীবনে আসেনি। শপিং মলগুলো করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ। যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি ও ভারতীয় কাপড়ের বাজার সাউথ হল, হোয়াইট চ্যাপেল, গ্রিন স্ট্রিট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় অনেকে সন্তানদেরও ঈদে নতুন জামা কিনে দিতে পারেনি। তাই পুরনো কাপড় পরেই বহু প্রবাসী পরিবার ঈদ করছে। অনলাইনে অবশ্য অনেকে কেনাকাটা করেছেন।
স্পেন প্রবাসী সাংবাদিক মুবিন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্পেনে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ঈদের আনন্দ নেই। প্রবাসীরা করুণ এক বাস্তবতার মধ্যে এবার ঈদ কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি কমিউনিটির ব্যবসায়ীরা খুব বিপাকে আছে।
ইতালির মিলান বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান শামীম জানান, ইতালিতে গত ৪ মে থেকে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। তবে ভেনিসের নিকটবর্তী পাদোভার মতো মাত্র কয়েকটি শহরে সামাজিক দূরত্ব মেনে ঈদ জামাত আয়োজনে নগর কর্তৃপক্ষের অনুমতি মিলেছে। মিলানসহ বেশিরভাগ শহরেই প্রবাসীরা ঘরে ঈদ জামাত করছেন।