করোনাভাইরাস মহামারি ও লকডাউনের ফলে গরিব যে আরও গরিব হবে তা নয়, এর ফলে বিশ্বে আরও প্রায় ৪০ কোটি মানুষ চরম দরিদ্র হবেন। যা বিশ্বব্যাংকের আগের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। এতে করে বিশ্বে মোট চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১১২ কোটিতে। এই দারিদ্র্য-সীমার মানুষের দৈনিক আয় হবে মাত্র ১৬১ টাকা বা তার চেয়েও কম। শুক্রবার জাতিসংঘের অধীনস্থ সংস্থা ইউএনইউ-ওয়াইডার এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরেছে।
আন্তর্জাতিক এই গবেষক দলে রয়েছেন লন্ডনের কিংস কলেজ ও অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদরা। চরম থেকে খুব দরিদ্র, বিভিন্ন ধরনের দারিদ্র্য-সীমা নির্ধারণের জন্য মানুষের গড় দৈনিক আয়ের যে মাত্রাগুলি বিশ্বব্যাংক নির্ধারণ করেছে, সেই সবক’টির ভিত্তিতেই এই গবেষণা চালানো হয়েছে।
দরিদ্রদের আর্থিক অবস্থা বোঝানোর জন্য বিশ্বব্যাংক যে কয়েকটি মাত্রা নির্ধারণ করেছে, সেগুলো একটি হলো, মানুষের আয় দিনে ১৬১ টাকা ৪১ পয়সা (১.৯০ ডলার) বা তারও কম। বিশ্বব্যাংকের দেওয়া সংজ্ঞায় এই আয়ের মানুষদেরই বলা হয় চরম দরিদ্র। আর যাদের আয় দিনে ৪৬৭ টাকা ২৪ পয়সা (৫.৫০ ডলার) তাদের বলায় বেশি দরিদ্র।
বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছিল, বিশ্বে চরম দারিদ্র্যের শিকার হবেন ৭ থেকে ১০ কোটি মানুষ। তবে নতুন এই গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণেই আরও প্রায় ৪০ কোটি মানুষকে সহ্য করতে হবে চরমতম দারিদ্র্যের জ্বালা, যন্ত্রণা।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই চরমতম দারিদ্র্যের মাত্রায় আগামী দিনে বিশ্বে দারিদ্র্যের চরম সীমায় পৌঁছে যাবেন বিশ্বের অন্তত ১১২ কোটি মানুষ।আর বেশি দরিদ্রের মাত্রায় এই পৃথিবীতে গরিব হয়ে পড়বেন অন্তত ৩৭০ কোটি মানুষ। যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি।
গবেষণা আরও বলা হয়েছে, পরিস্থিতির সর্বাধিক অবনতিতে কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় মানুষের গড় বাৎসরিক আয় কমে যাবে কম করে ২০ শতাংশ।
গবেষক দলের অন্যতম সদস্য অ্যান্ডি সামনার বলেন, বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো যদি জরুরি ভিত্তিতে এই সব মানুষের কল্যাণে আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, লকডাউনের ফলে প্রতিদিন গরিবদের আয় যেভাবে কমে যাচ্ছে, তা পূরণ করার লক্ষ্যে কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারে, তা হলে গোটা বিশ্বেই গরিবদের ভবিষ্যৎ বলে আর কিছুই থাকবে না।
গবেষকরা তুলে ধরেছেন, এই চরম দারিদ্র্যেও এলাকাভেদে ‘বৈষম্য’ থাকবে। কোথাও তা সংখ্যায় কম হবে। কোথাও বেশি। সবচেয়ে করুণ অবস্থা হবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির। এর মধ্যে প্রথম দিকেই রয়েছে জনবহুল দেশ ভারত। তার পরেই রয়েছে সাহারা মরুভূমি সংলগ্ন আফ্রিকার দেশগুলি। বিশ্বে যে ১১২ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের শিকার হবেন, তাদের এক-তৃতীয়াংশই আফ্রিকার ওই দেশগুলোর নাগরিক।