করোনাভাইরাসের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের ৩ কোটি ডোজ উৎপাদন করবে রাশিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ তহবিলের প্রধান জানিয়েছেন, এ বছর রাশিয়াতেই ৩ কোটি ডোজ উৎপাদন করা হবে। আর বিদেশে উৎপাদন করা হবে আরও ১৭ কোটি ডোজ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, এই ভ্যাকসিনে প্রথম মানবদেহে পরীক্ষা এই সপ্তাহে শেষ হয়েছে। গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, এটির ব্যবহার নিরাপদ এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করেছে। তবে এই রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটুকু শক্তিশালী তা স্পষ্ট নয়।
রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ)-এর প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ জানান, ভ্যাকসিনটির তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় কয়েক হাজার মানুষের দেহে তা প্রবেশ করানো হবে। আগস্টে এই পরীক্ষা শুরু হতে পারে।
দিমিত্রিয়েভ বলেন, আমরা আশা করছি চলমান ফলাফল অনুসারে রাশিয়ায় আগস্টে তা অনুমোদিত হতে পারে এবং অন্য দেশগুলোতে সেপ্টেম্বরে। ফলে তা বিশ্বের মধ্যে প্রথম অনুমোদিত ভ্যাকসিন হতে পারে।
করোনায় এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত ও অন্তত ৫ লাখ ৮২ হাজারের মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাসের টিকা উদ্ভাবনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জোরালো প্রচেষ্টা চললেও এখন পর্যন্ত কার্যকর ভ্যাকসিন উদ্ভাবন সম্ভব হয়নি। বিশ্বে তৈরি দুই শতাধিক ভ্যাকসিনের মধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে ১৫টির। এরমধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ উৎপাদনকারী অ্যাস্ট্রাজেনেকার পরীক্ষামূলক প্রকল্পটি প্রথম ভ্যাকসিন হিসেবে চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, ভ্যাকসিন তৈরিতে তারাই সবথেকে এগিয়ে রয়েছে।
বৈশ্বিক প্রয়োজনীয়তা পূরণে বড় ধরনের ভ্যাকসিন উৎপাদনের বিষয়টি আলোচনা করছেন উৎপাদকরা।
দিমিত্রিয়েভ জানান, রুশ ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের মানবদেহে পরীক্ষা রাশিয়ায় ও মধ্যপ্রাচ্যের দুটি দেশে পরিচালিত হবে। ৩ আগস্ট দ্বিতীয় ধাপে ১০০ জন মানুষের দেহে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তা শুরু হবে।
এর আগে এক সাক্ষাৎকারে দিমিত্রিয়েভ জানিয়েছিলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে পরীক্ষা ও উৎপাদনে অংশীদার হওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
মস্কোর গামালেয়া ইনস্টিটিউট রুশ ক্যান্ডিডেট ভ্যাকসিন উৎপাদন করেছে। এখন পর্যন্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের টিকা নিজেরাই উৎপাদন করছে। তবে বেসরকারি ওষুধ কোম্পানি অ্যালিউম বোতলজাত করছে।
দিমিত্রিয়েভ বলেছেন, উভয় প্রতিষ্ঠানই আগামী কয়েক মাসে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য তাদের ল্যাবের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ করছে। রয়টার্সকে তিনি বলেন, সাধারণভাবে তথাকথিত হার্ড ইমিউনিটির জন্য রাশিয়ায় ৪ থেকে ৫ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। ফলে আমরা মনে করি এই বছর দেশে ৩ কোটি ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারলে ভালো অবস্থানে থাকবে। পরের বছর ভ্যাকসিনটি চূড়ান্ত করতে পারবো আমরা।
এই বছরেই আরও ১৭ কোটি ডোজ উৎপাদনে পাঁচটি দেশের সঙ্গে রাশিয়ার চুক্তি হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে ভ্যাকসিনটির মূল্য সম্পর্কে কোনও ধারণা দিতে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। বলেছেন, লাতিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশ ভ্যাকসিনটি আমদানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া ব্রিটিশ ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আস্ট্রাজেনেকার সঙ্গেও রাশিয়ার চুক্তি হয়েছে। আস্ট্রাজেনেকার তাদের ভ্যাকসিনের কিছু অংশ হয়তো রাশিয়ায় উৎপাদন করতে পারে।