X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আজ

বিদেশ ডেস্ক
১৫ নভেম্বর ২০২০, ১০:৩৫আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২০, ১০:৪২

সিঙ্গাপুরে রবিবার স্বাক্ষরিত হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। আসিয়ান জোটের ১০টি দেশ ছাড়াও এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করছে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে এই চুক্তিকে আখ্যায়িত করা হচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্যে চীনা অভ্যুত্থান হিসেবে। বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আজ

সিঙ্গাপুরে আসিয়ানের চলতি শীর্ষ বৈঠকের শেষ দিনে অর্থাৎ ১৫ই নভেম্বর রবিবার এই চুক্তিটি সম্পাদিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বিশ্ব বাণিজ্যে একটি মৌলিক ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে।

এশিয়ার আরেক বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ভারতেরও এই চুক্তিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তবে সস্তা চীনা পণ্য তাদের বাজার ছেয়ে যাবে এই ভয়ে গতবছর তারা আলোচনা থেকে বেরিয়ে যায়।

রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) নামে নতুন এই জোটের অর্থনীতির আয়তন বিশ্বের মোট জিডিপি-র ৩০ শতাংশ। ফলে, এই চুক্তি বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবাধ বাণিজ্য এলাকা তৈরি করবে। যুক্তরাষ্ট্রম কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যে যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল রয়েছে সেটি বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়েও এশিয়ার নতুন এই বাণিজ্য অঞ্চলটির পরিধি বড় হবে।

ব্যবসা বিষয়ক পরামর্শক সংস্থা আইএইচএস মারকিটের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ রাজিব বিশ্বাস। তার মতে, ‘এই অঞ্চলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উদারীকরণে এই চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। কেননা, আরসিইপি বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অঞ্চলে পরিণত হবে।’

বিশ্ব বাণিজ্যে চীনা অভ্যুত্থান

২০১২ সালে প্রথম এই চুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছিল। তারপর গত আট বছরে ধরে চীনের প্রবল উৎসাহ এবং উদ্যোগে এখন এটি বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। মুক্ত বাণিজ্যের এই চুক্তিকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তারের পথে একটি ক্যু বা অভ্যুত্থান হিসাবে দেখা হচ্ছে।

সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাণিজ্যের অধ্যাপক আলেকজান্ডার ক্যাপ্রিকে উদ্ধৃত ব্যাংকক পোস্ট বলেছে, ‘এই জোট চীনকে তাদের ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়নে নিশ্চিতভাবে সাহায্য করবে।’

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে মুক্ত বাণিজ্য থেকে আমেরিকা যেভাবে পিছিয়েছে, সেই শূন্যতা দখল করছে চীন। ২০১৬ সালে এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১০টি দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র মিলে টিপিপি নামে যে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি করেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প সেটি থেকে আমেরিকাকে বের করে নিয়ে যান।

অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, নতুন চুক্তিটি হলে ভবিষ্যতে এশিয়ায় বাণিজ্যের নীতি এবং শর্ত নিয়ন্ত্রণ করবে চীন।

গবেষণা সংস্থা কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের ইভান ফেইগেনবমকে উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটনের গবেষণা-ভিত্তিক সাময়িকী দি ডিপ্লোম্যাট লিখেছে, ‘এশিয়ায় প্রধান দুই বাণিজ্য চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র নেই। ফলে এ অঞ্চলে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের শর্ত ও মান নির্ধারণে ক্ষমতার হাতবদল হবে। এর ভিত্তিতেই কয়েক প্রজন্ম ধরে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে।’

দ্য ডিপ্লোম্যাট-এর সাবেক সম্পাদক অঙ্কিত পাণ্ডা টুইট করেছেন, ‘আরসিইপি চুক্তি যে হচ্ছে তাতে ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট যে এশিয়ায় বড় ঘটনা ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্র তাতে শামিল হোক বা না হোক এমন আরও ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’

কেন উৎসাহী আসিয়ান

জাপান ও অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও চীনা আধিপত্য নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশর মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। কিন্তু তা স্বত্বেও আরইসিপিতে যোগ দিতে তারা এখন আর পিছপা হচ্ছে না। বরং সাম্প্রতিক সময়ে তাদের মধ্যে এ নিয়ে উৎসাহ বাড়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট।

মালয়েশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী মোহামেদ আজমিন আলী বলেছেন, ‘গত আট বছর ধরে রক্ত, ঘাম আর চোখের পানি ঝরিয়ে রবিবার আরসিইপি স্বাক্ষরের জন্য আমরা শেষ পর্যন্ত প্রস্তুত হয়েছি।’

অনেক বিশ্লেষক বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিণতিতে আসিয়ান জোটের দেশগুলো যে চরম অর্থনৈতিক চাপে পড়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করার ব্যাপারে তাদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

চীন বিশ্বের একমাত্র বড় কোনও দেশ যার অর্থনীতিতে এখনও প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। অল্প কিছুদিন আগেই দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা করেছেন, আগামী ১০ বছরে চীন ২২ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করবে।

তিনি বলেন ‘চীন এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজার এবং এই বাজার আরও বড় হবে।’ দিনে দিনে তাদের বাজার আরও উন্মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে বেইজিং।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীনকে নিয়ে ওজর-আপত্তি-উদ্বেগ থাকলেও তাদের এই বিশাল বাজারের অংশীদার হওয়ার জন্য এশিয়ার বহু দেশ উদগ্রীব।

আরসিইপিতে এমন কিছু দেশ রয়েছে যাদের কারও কারও মধ্যে মধ্যে বৈরিতা যেভাবে দিন-দিন বাড়ছে তাতে শেষ পর্যন্ত এটি কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই সন্দেহ রয়েছে। যেমন, চীন ও জাপানের মধ্যে কিছু দ্বীপের মালিকানা নিয়ে বৈরিতা বেড়েই চলেছে। এছাড়া, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে রেষারেষির পারদ দিন দিন চড়ছে।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বলেছেন, আরসিইপি নিয়ে খুব বেশি উৎসাহিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।

সিঙ্গাপুরে এশিয়ান ট্রেড সেন্টারের ডেবোরা এমস্ বিবিসি-কে বলেন ‘কাউকে পছন্দ না করলেও তার সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রাখা খুবই সম্ভব। সাধারণ মানুষও তাদের সম্পর্কে এটি করে। আরসিইপি সেটাই করছে। মতভেদ থাকলেও, বাণিজ্যের সম্পর্ক থেকে সেগুলোকে আলাদা রাখছে।’

চুক্তির ফল কী হবে

এই চুক্তির ফলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে জোট এলাকায় মধ্যে একে একে অধিকাংশ আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক উঠে যাবে। টেলিযোগাযোগ, মেধাসত্ত্ব, ব্যাংক ও বিমার মত আর্থিক সেবা, ই-কমার্স ও পেশাদারি সেবার মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোও এই চুক্তির আওতায় থাকছে।

সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো 'রুলস অব অরিজিন' অর্থাৎ কোন দেশে থেকে পণ্য আসছে তার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারিত হবে। সিঙ্গাপুর থেকে বিবিসি-র টিম ম্যাকডোনাল্ড বলছেন, রুলস অব অরিজিনের সংজ্ঞায় পরিবর্তনের প্রভাব হবে বিশাল।

এসব সদস্য দেশগুলোর অনেকের এরইমধ্যে নিজেদের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। তবে তাতে রুলস অব অরিজিন সম্পর্কিত নানা রকম বিধিনিষেধ রয়েছে।

এশিয়ান ট্রেড সেন্টারের ডেবোরা এমস্‌ বলেন, ‘এখন যেসব মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে তা আরসিইপি-র তুলনায় অনেক জটিল।’

কোনও সদস্য দেশ যদি তাদের উৎপাদিত পণ্যে ভিন্ন কোনও দেশের কাঁচামাল ব্যবহার করে তাহলে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি থাকলেও তাদের আমদানি শুল্ক গুনতে হয়। যেমন, ইন্দোনেশিয়া যদি তাদের তৈরি কোনও যন্ত্রে অন্য কোনও দেশের আমদানি করা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে তাহলে আসিয়ানভুক্ত অন্য দেশে তা রফতানিতে শুল্ক দিতে হতে পারে। তবে আরসিইপি চুক্তিতে সদস্য দেশগুলো থেকে যন্ত্রাংশ কিনলে রফতানিতে কোনও সমস্যা হবে না। এই বিষয়টিকেই আসিয়ান জোটের সদস্যদের নতুন এই বাণিজ্য চুক্তিতে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছে। তবে তার চেয়েও বড় আকর্ষণ চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত রফতানির সুযোগ। সূত্র: বিবিসি।

/এমপি/
সম্পর্কিত
তাইওয়ানে সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্রের
বাংলাদেশের আম-কাঁঠাল-আলু নিতে চায় চীন
ট্রাম্প বা বাইডেন যে-ই জিতুন মার্কিন সমর্থন অপরিবর্তিত থাকবে, আশা তাইওয়ানের
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়