X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে হিলারির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়া প্রায় নিশ্চিত

বাধন অধিকারী
০৩ মার্চ ২০১৬, ১৮:৩৫আপডেট : ০৩ মার্চ ২০১৬, ১৮:৪৮

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থিতা বাছাইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লড়াই ‘সুপার টিউসডে’তে বিপুল সাফল্য পেয়েছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। আর এ মধ্য দিয়ে ডেমোক্র্যাটদের হয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার কাজটি অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছেন তিনি। প্রার্থিতা বাছাই পর্বে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রাইমারি ও ককাসের ভিত্তিতে পাওয়া ডেলিগেটদের নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী স্যান্ডার্সের চেয়ে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। সুপার ডেলিগেটদেরও অধিকাংশই রয়েছেন হিলারির পক্ষে। যদিও গাণিতিক হিসেবে এখনও স্যান্ডার্সের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ফুরিয়ে যায়নি, তবে নির্বাচনী তথ্য, আগের নির্বাচনগুলোর প্রার্থিতা বাছাইয়ের অভিজ্ঞতা এবং ডেমোক্র্যাটদের রাজনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলতে চাচ্ছেন, আসলে হিলারিই হতে যাচ্ছেন ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী মঙ্গলবারের নির্বাচনে ১১টি অঙ্গরাজ্য এবং একটি টেরিটরির মধ্যে ৮টিতেই জয় পেয়েছেন হিলারি। তবে মার্কিন নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রার্থিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে পপুলার ভোটে কিংবা ককাসে জয় চূড়ান্ত কিছু নয়। প্রার্থিতা নির্বাচনের সবশেষ কর্তৃপক্ষ আসলে দলের ডেলিগেটরা। তারাই নির্ধারণ করেন চূড়ান্ত বিচারে কারা প্রার্থী হবেন।

হিলারি-ক্লিনটন

 

প্রাইমারি, ককাস এবং ডেলিগেট নির্বাচন প্রক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থিতা নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। প্রাইমারি ও ককাস নামের দুইটি পদ্ধতির মধ্য দিয়ে সেখানে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার প্রাথমিক পর্ব সম্পন্ন হয়। প্রাইমারি হচ্ছে প্রথাগত নির্বাচন, যেখানে দিনব্যাপী গোপন ব্যালটে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। আর ককাস হচ্ছে দলের নিবন্ধিত ভোটার ও কর্মীদের সভা, যা পূর্বনির্ধারিত দিন ও ক্ষণে অনুষ্ঠিত হয়। কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে শুধু প্রাইমারি নির্বাচন হয়, আবার কোনো রাজ্যে শুধু ককাস নির্বাচন হয়। কোনো রাজ্যে প্রাইমারি ও ককাস দুটিই হয়। এবার এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি। শেষ হওয়ার কথা ১৪ জুন। প্রাইমারি বা ককাস নির্বাচন সাধারণত সরাসরি নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা নির্ধারণের সুযোগ পাওয়ার পরিবর্তে তারা নির্ধারণ করেন যে, প্রতিটি দলের কনভেনশনে দলের কোন প্রার্থী কতজন ডেলিগেট সংগ্রহ করতে পারলেন। চূড়ান্ত দলীয় কনভেনশনে ওই ডেলিগেটদের ভোটেই চূড়ান্ত প্রার্থিতা নিশ্চিত করা হয়।

ডেমোক্র্যাটদের ক্ষেত্রে ওই প্রাইমারি আর ককাস থেকে নির্ধারিত হওয়া ডেলিগেটরা প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে আনুপাতিকভাবে পাওয়া ভোট অনুযায়ী বণ্টিত হয়ে থাকেন। ধরা যাক, কোন এক অঙ্গরাজ্যে ১০ জন ডেলিগেট আছেন। সেখানে হিলারি পেয়েছেন ৬০ শতাংশ ভোট, আর স্যান্ডার্স পেয়েছেন ৪০ শতাংশ ভোট। এক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ ভোটের কারণে হিলারি পাবেন ৬ জন ডেলিগেট আর ৪০ শতাংশ ভোটের কারণে স্যান্ডার্স পাবেন ৪ জন ডেলিগেট। এই সাধারণ ডেলিগেটদের বাইরে রয়েছেন আনপ্লেজড বা সুপার ডেলিগেটরা। এদের নির্বাচিত হতে হয় না। বর্তমান ও সাবেক নির্বাচিত কর্মকর্তা ও দলীয় নেতাদের মধ্য থেকে সুপার ডেলিগেটদের বাছাই করা হয়। তারাও প্রার্থী নির্বাচনে ভোট দেন।
এবারের নির্বাচনের প্রার্থিতা বাছাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাটদের ডেলিগেট সংখ্যা ৪,৭৬৩ জন। এদের মধ্যে প্রাইমারি আর ককাস থেকে নির্বাচিত ডেলিগেটের সংখ্যা হবে ৪২৫১ জন। আর সুপার ডেলিগেটের সংখ্যা ৭১২ জন। মোট ৪৭৬৩ জন সাধারণ ও সুপার ডেলিগেটের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সংখ্যক ডেলিগেট যাকে ভোট দেবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন ডেমোক্র্যাটদের হয়ে। সে হিসেবে প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে একজন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে পেতে হবে ২৩৮২ জন ডেলিগেটের সমর্থন। জুলাইয়ে ফিলাডেলফিয়ায় প্রার্থী বাছাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন। সেই সম্মেলনেই ডেলিগেট আর সুপার ডেলিগেটদের ভোটে নির্ধারিত হবেন ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

 

ডেলিগেট সমর্থনে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে হিলারি
এপির তথ্য অনুযায়ী সুপার টিউসডেতে হিলারি জিতে নিয়েছেন ৫০৮ জন ডেলিগেট। বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী স্যান্ডারস জিতেছেন ৩৪২ ডেলিগেট। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ডেলিগেট সমর্থনের ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণে এগিয়ে আছেন হিলারি। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রাইমারি আর ককাসগুলোর ফলাফলের ভিত্তিতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ৪৫৭ জন সুপার ডেলিগেটসহ সবমিলে ১০৫৬ জন ডেলিগেটের সমর্থন নিশ্চিত করেছেন হিলারি। অন্যদিকে মাত্র ২২ জন সুপার ডেলিগেটসহ মাত্র ৪২৯ জন ডেলিগেটকে নিজের পক্ষে রাখতে সমর্থ হয়েছেন স্যান্ডার্স। দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীর এ পর্যন্ত নিশ্চিত করা সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, প্রার্থিতা পেতে প্রয়োজনীয় ২৩৮২ ডেলিগেটের মধ্যে প্রায় অর্ধেক ডেলিগেট নিশ্চিত করে ফেলেছেন হিলারি। স্যান্ডার্স রয়েছেন অনেক পিছিয়ে। এখনও বাকি রয়েছে ৩৫টি অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারি ও ককাস। সাধারণ ও সুপার ডেলিগেটসহ এখনও ৩২৭৮ জন ডেলিগেটের সমর্থন পাননি কোনও প্রার্থীই। এই ৩২৭৮ জন ডেলিগেটের মধ্যে ১৩২৬ জনের সমর্থন পেলেই হিলারি চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে যাবেন।
বিপরীতে স্যান্ডার্সকে পেতে হবে ৩২৭৮ জনের মধ্যে ১৯৫৩ জন ডেলিগেটের সমর্থন। এখনও যেসব সুপার ডেলিগেট কাউকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দেননি, তাদের বেশিরভাগই যে হিলারির পক্ষে, সেটাও এরই মধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এই খবর নিশ্চিত করেছে। সে অর্থে ৭১২ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত হিলারিকে সমর্থন দেওয়া ৪৫৭ জন এবং স্যান্ডার্সকে সমর্থন দেওয়া ২২ জন মিলে ৪৭৯ জন সুপার ডেলিগেট তাদের সমর্থন নিশ্চিত করলেও বাকি ২৩৩ জনের মধ্যেও বেশিরভাগই যে হিলারিকে সমর্থন দেবেন, তাও প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে।

  noname

স্যান্ডার্সের প্রতিবন্ধকতা ও হিলারির বিপুল সম্ভাব্যতার নেপথ্যে
হিলারিকে হারিয়ে প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে বাকি থাকা ৩২৭৮ জন ডেলিগেটের মধ্যে ৬০ শতাংশের সমর্থন আদায় করতে হবে স্যান্ডার্সকে, যা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
সিএনএনের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অর্ধেক পথ এরইমধ্যে পাড়ি দিয়েছেন হিলারি। তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী স্যান্ডার্সের জয়ের পথ খুবই সংকীর্ণ। প্রার্থিতা পেতে গেলে তাকে আসছে ১৫ মার্চ বিপুল ডেলিগেট সম্পন্ন ফ্লোরিডা, ইলিনয়, ওহাইয়োতে বড় ধরনের জয় পেতে হবে। বড় জয় পেতে হবে অন্যান্য অঙ্গরাজ্যেও। তবে রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, সেটা প্রায় অসম্ভব।

গার্ডিয়ানের কলামিস্ট ও স্বনামধন্য রাজনীতি বিশ্লেষক রিচার্ড উলফি তার কলামে বুধবার লিখেছেন, ‘খেলা শেষ হয়ে গেছে’। অর্থাৎ হিলারিই প্রার্থী হচ্ছেন। তার মতে বাকি অঙ্গরাজ্যগুলো থেকেও বেশি ডেলিগেট সংগ্রহ করতে পারবেন না স্যান্ডার্স। কেননা তিনি কেবল সত্যবাদী, বাস্তববাদী নন। বড় বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর বিপরীতে দাঁড়িয়ে স্যান্ডার্সের তরফে মনোনয়ন পাওয়া প্রায় অসম্ভব বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি। বলতে চেয়েছেন, অধিকাংশ মিডিয়ার সমর্থনও হিলারির প্রতি। গার্ডিয়ানের আরেক বিশ্লেষণে দাবি করা হয়েছে, স্যান্ডার্সের নির্বাচনী প্রচারণাতে ভোটারদের মন জয় করার চেয়ে প্রাধান্য পায় রাজনৈতিক বিপ্লবের মতবাদ, যার অনেককিছুই জনগণের কাছে অর্থবোধক হয় না। তাই বাকি অঙ্গরাজ্যগুলোতেও তার সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

হিলারি-ক্লিনটন-২

ওই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, স্যান্ডার্স শ্রেণী প্রশ্নে যতোটা সরব, পরিচয়ের রাজনীতির প্রশ্নে ততোটা নয়। সে কারণে ন্যায় ও সমতার পক্ষের মানুষ হয়েও কৃষ্ণাঙ্গদের সমর্থন অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এরইমধ্যে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রাইমারি আর ককাসে যার প্রমাণ মিলেছে। তার ভরসা কেবল সাদা বর্ণের প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটরা।

এদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের এক বিশ্লেষণে হিলারি ক্লিন্টনের ক্যাম্পেইন ম্যানেজারের বরাতে জানানো হয়েছে, ২০০৮ সালের প্রার্থিতা বাছাইয়ে সুপার টিউসডে পর্যন্ত ওবামা হিলারির চেয়ে যতোটা এগিয়ে ছিলেন, এবার স্যান্ডার্সের চেয়ে হিলারি তার চেয়েও বেশি ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।

লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মার্কিন নির্বাচনের প্রার্থিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে হয়ে যাওয়া অঙ্গরাজ্যগুলোর ফলাফল পরবর্তী অঙ্গরাজ্যগুলোর প্রাইমারি ও ককাসকে প্রভাবিত করে থাকে। সেদিক থেকে হিলারি প্রার্থিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন। পাশাপাশি তারা সামনে এনেছে সাউথ ক্যারোলিনাকে। ৯২ এ বিল ক্লিন্টন এবং ৮ বছর আগে ওবামা সেখানে জয় পেয়েছিলেন, আর প্রার্থীও হতে পেরেছিলেন। বিশ্লেষণে দাবি করা হয়েছে, অনেকে এ কারণেও স্যান্ডার্সকে চাইছেন না যে তিনি রিপাবলিকানদের সঙ্গে পেরে উঠবেন না, যেটা হিলারি পারবেন। সূত্র: বিবিসি, সিএনএন, এপি, দ্য গার্ডিয়ান, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ওয়াশিংটন পোস্ট

/বিএ/এজে

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী