দলের এমপিদের আস্থা ভোটে গত ৬ জুন জিতে গেলেও ২৩ জুনের উপনির্বাচনে দুটো আসনেই হেরেছে বরিস জনসনের দল কনজারভেটিভ পার্টি। টিভারটন আসনে লিবারেল ডেমোক্রেট প্রার্থীর কাছে ও ওয়েইকফিল্ড আসনে লেবারের প্রার্থীর কাছে কনজারভেটিভ প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয়ের দায় মাথায় নিয়ে শুক্রবার (২৪ জুন) তাৎক্ষণিকভাবে পদত্যাগ করেছেন দলটির চেয়ারম্যান অলিভার ডউডেন এমপি। এ পদত্যাগকে দুঃখজনক হিসেবে মন্তব্য করেছেন ব্রিটেনের চ্যান্সেলর রিশি সুনাক।
স্কাই নিউজ শনিবার দুপুরে জানিয়েছে, পার্টি চেয়ারম্যানের আচমকা পদত্যাগে উদ্বিগ্ন ও অনেকটা বিস্মিত বিস্মিত প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। আরও পদত্যাগ হবে কি না সে ব্যাপারে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েছে দলের বরিস সমর্থক এমপিদের শিবিরে।
মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ব্রিটেন অর্থনৈতিকভাবে দুঃসময় পার করছে। আর্থিক মন্দার কারণে ব্রিটিশ জনগণের হতাশা ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভদের প্রতি জনসমর্থন হ্রাসের কারণ হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।
প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার সকালে চিফ হুইপ ও চ্যান্সেলরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে বরিস জনসন পদত্যাগ এড়াতে আগাম নির্বাচনের ট্রাম্পকার্ড খেলতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কমনওয়েলথ দেশগুলোর একটি বৈঠকে যোগ দিতে রুয়ান্ডা সফরে রয়েছেন জনসন। সেখান থেকে তিনি এই পরাজয়ের খবর পেয়েছেন। তিনি উপনির্বাচনের এই ফলাফলকে ‘কঠিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
গত নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থীদের হারিয়ে এই দুটি আসনে জয় পেয়েছিল কনজারভেটিভরা। উপনির্বাচনের এই পরাজয় ইঙ্গিত দিচ্ছে ২০১৯ সালে জনসন ভোটারদের যা দিয়ে আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন তা ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
নির্বাচনি বোঝা হয়ে উঠতে পারেন আশঙ্কায় দলের আইনপ্রণেতারা জনসনবিরোধী অবস্থান নিচ্ছেন। বিশেষ করে কোভিড-১৯ লকডাউন পার্টি আয়োজনের কারণে। পার্টিগেট কেলেঙ্কারিতে জরিমানার মুখে পড়লেও পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এই মাসে কনজারভেটিভ এমপিদের আস্থা ভোটে টিকে যান বরিস। যদিও তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এমপিদের ৪১ শতাংশ তার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।
রুয়ান্ডায় থাকা বরিস জনসন বলেন, আমি মনে করি সরকারকে জনগণের কথা শুনতে হবে। আমাদের স্বীকার করতে হবে যে অনেক কিছু করার আছে।
দলের চেয়ারম্যান পদত্যাগের সময় একটি চিঠিতে সতর্কভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই পরাজয়ের জন্য জনসনের দায় নেওয়া উচিত বলে তিনি করেন। তিনি লিখেছেন, স্বাভাবিকের মতো কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যেতে পারি না। কাউকে দায় নিতে হবে এবং আমার সিদ্ধান্ত হলো এমন পরিস্থিতিতে দায়িত্বে থাকা সঠিক না।
কনজারভেটিভ দলের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, মন্ত্রিসভা থেকে আরও সদস্যদের পদত্যাগ নিয়ে উদ্বিগ্ন নন বরিস জনসন।
রিশি সুনাক অবশ্য বলেছেন, আমরা এই পরাজয়ের সম্পূর্ণ দায় নিচ্ছি।
পরাজয়ের পর জনসন ও দলের নেতাদের এমন ব্যাখ্যাতে হতাশা কাটছে না কনজারজেটিভ পার্টির মধ্যে। বেশ কয়েকজন এমপি অলিভার ডউডেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে টুইট করেছেন। তারা দাবি করেছেন, এই পরাজয়ের জন্য তিনি দায়ী নন। তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, জনসনের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আবারও ভিন্নমত বাড়তে পারে।
দলের নিয়ম অনুসারে, এক বছরের মধ্যে আবার অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব আনা যাবে না জনসনের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে পদত্যাগের ঢেউ দেখা দিলে পিছু হটতে পারেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে তিনি ২০২৪ সালে নির্ধারিত থাকলেও আগাম জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।