X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

যে ৫ কারণে গরম সামলাতে পারছে না ব্রিটিশরা

মিছবাহ পাটওয়ারী
২০ জুলাই ২০২২, ১৭:২৯আপডেট : ২১ জুলাই ২০২২, ১৪:০৪

ভয়াবহ তাপদাহে পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ অঞ্চলে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। গত সোমবার ইতিহাসের সবচেয়ে গরম রাত পার করেছে যুক্তরাজ্য। এদিন দক্ষিণ লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের কাছে চার্লউডে সাময়িকভাবে তাপমাত্রার রেকর্ড ৩৯.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, আগামী দিনগুলোতে হাজার হাজার মানুষ মারা যেতে পারে। ট্রেন অপারেটররা লোকজনকে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

উত্তর ও পশ্চিম ইউরোপে যুক্তরাজ্যই এই সপ্তাহে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হওয়া একমাত্র দেশ নয়। উত্তর আফ্রিকা থেকে গরম বাতাস ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে চলে যায়। কিন্তু একটি উত্তরাঞ্চলীয় দ্বীপ রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্যের একটি মৃদু জলবায়ু রয়েছে। ফলে এখানকার স্থাপনাগুলো এই ধরনের তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তৈরি করা হয়নি। কয়েকটি পয়েন্টের মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায়।

 

ঘরের ডিজাইন

কেন্ট ইউনিভার্সিটির টেকসই স্থাপত্য বিভাগের একজন অধ্যাপক মারিয়ালেনা নিকোলোপোলু। সংবাদমাধ্যম টাইমকে তিনি বলেন, পুরানো, ভিক্টোরিয়ান যুগের স্থাপত্য এবং নতুন স্থাপনা কোনোটিই গরম আবহাওয়ার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত নয়। যদিও পুরানো বাড়ির পুরু পাথরের দেয়াল অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।

তীব্র তাপপ্রবাহে যুক্তরাজ্যে বেড়েছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। ছবি: রয়টার্স

আধুনিক ভবনগুলোতে গরম মোকাবিলার উপযুক্ত নকশা না থাকার কারণে সমস্যা দেখা দেয়। অধ্যাপক মারিয়ালেনা নিকোলোপোলু বলছেন, ‘আজকাল প্রায়ই ডেভেলপারররা ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিক্রি করে লাভবান হওয়ার জন্য সংস্কার করে থাকেন। তারা সম্ভাব্য সবচেয়ে সস্তা উপায়ে এটি করার চেষ্টা করে থাকেন।’

কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে তৈরি হওয়া বিশাল আকৃতির ভবনগুলোর কথাও উল্লেখ করেন এই স্থাপত্য বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, এসব ভবনে জানালা থেকে ক্রস ভেন্টিলেশনের সুযোগ কমে যায়।

স্পেনের মতো ইউরোপীয় দেশগুলোতে অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকগুলো প্রায়ই একটি কেন্দ্রীয় গহ্বরের চারপাশে তৈরি করা হয় যেন বাতাসের অবিচ্ছিন্ন প্রবাহ ঠিক থাকে।

ইউনিভার্সিটি অব রিডিং-এর গবেষক ক্লোই ব্রিমিকম্ব বলেন, ‘২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের দক্ষিণে নিয়মিত তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকবে।’ ২০৫০-এর দশকের মধ্যে তাপপ্রবাহ অতিরিক্ত পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ব্রিটিশদের রেলপথে ভ্রমণ কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

 

পরিবহন

ব্রিটিশ নাগরিকদের অপ্রয়োজনীয় ট্রেন ভ্রমণে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এই সপ্তাহে ট্রেনের গতির ওপর বিধিনিষেধের ফলে নেটওয়ার্কজুড়ে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যে বিশ্বের প্রাচীনতম কিছু রেলপথ রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই ইস্পাত ট্র্যাক দিয়ে নির্মিত যা আশেপাশের তাপমাত্রা থেকে প্রায় ৬৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট ওপরে থাকে। লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড ১৮৬৩ সালের। ব্যবহৃত অনেক ট্রেনই কয়েক দশক পুরানো। সাত লাইনে এখনও এয়ার কন্ডিশনার নেই। তবুও গণপরিবহন ব্যবহার করা নির্গমন কমাতে অপরিহার্য। এটি তাৎক্ষণিকভাবে আশেপাশের তাপমাত্রা ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।

গরমে অতিষ্ঠ ব্রিটিশরা খোলা মাঠে সূর্যাস্ত দেখছেন। ছবি: রয়টার্স

 

নগর পরিকল্পনা

৯০ লাখ মানুষের শহর লন্ডন। পার্শ্ববর্তী গ্রামীণ এলাকাগুলোর চেয়ে সেখানকার তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উষ্ণ হতে পারে। কংক্রিট ভবন এবং তাপ শোষণকারী পৃষ্ঠগুলো ইতোমধ্যে জ্বলন্ত তাপকে প্রশস্ত করে। নিকোলোপোলো বলছেন, এই সমস্যাটি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। কেননা, বড় শহরগুলোতে আবাসনের চাহিদা বাড়ছে। এই আবাসন খাতকে কেন্দ্র করে সবুজের সমারোহ আরও কমে যাচ্ছে।

২০০১ থেকে ২০১৬-এর মধ্যে ইংল্যান্ডে সবুজের সমারোহ ৬৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

নিকোলোপোলো বলছেন, সরকারের উচিত ছায়া তৈরি করা এবং পথচারী চলাচল করে এমন এলাকায় গাছ লাগানো। ছায়া ছাড়া, কংক্রিট এবং অ্যাসফল্ট দিয়ে তৈরি অনেক রাস্তা এবং ফুটপাথ দ্রুত গরম হয়ে যায় এবং আশেপাশের রাস্তাগুলোকেও উষ্ণ করে তোলে। মনে হবে আপনি যেন একটি চুলার মধ্য দিয়ে হাঁটছেন।

রোদ থেকে নিজেদের রক্ষায় মাথা ঢাকছেন এক ব্রিটিশ নারী। ছবি: রয়টার্স

 

কুলিং সেন্টার

যুক্তরাজ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কুলিং সেন্টার কার্যত নেই। অথ্চ তাপদাহের সময় এগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল মানুষের জন্য জীবন রক্ষাকারী উপাদান হতে পারে।

যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিসের প্রধান নির্বাহী পেনেলোপ এন্ডারসবি বলেন, ‘আমাদের কুলিং সেন্টারের মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে স্বল্পমেয়াদী পরিবর্তন আনতে হবে এবং পরে দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন করতে হবে।’

 

এয়ার কন্ডিশনার

যুক্তরাজ্যে আনুমানিক পাঁচ শতাংশেরও কম বাসাবাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ৯১ শতাংশ। এর কারণ হলো, ব্রিটিশ ভবনগুলো সাধারণত পুরানো। ইটের তৈরি এসব স্থাপনায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বসানো কঠিন।

এছাড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট স্থাপন করা বেশ ব্যয়বহুল। এটি পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। বৈশ্বিক উষ্ণতার পেছেনেও এর ভূমিকা রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের হিসাব অনুযায়ী, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট থেকে যে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন হয় সেটি ২১০০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি করবে।

এয়ার কন্ডিশনার ইউনিটগুলো সাধারণত ঘর থেকে রাস্তার দিকে গরম বাতাস বের করে দেয়। এটি কংক্রিটের ফুটপাতের উত্তাপের প্রভাবকে কঠিন করে তোলে। ফলে পথচারীরা হাঁটার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হয়।

টাইম অবলম্বনে।

/এএ/
সম্পর্কিত
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান পাকিস্তান ও ইরানের
গাজায় ৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি ইসরায়েলের
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে ইসরায়েল?
সর্বশেষ খবর
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
গরমে পানির সংকট রাজধানীতে, যা বলছে ওয়াসা
গরমে পানির সংকট রাজধানীতে, যা বলছে ওয়াসা
গরমে নাকাল পথচারীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করলো ফায়ার সার্ভিস
গরমে নাকাল পথচারীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করলো ফায়ার সার্ভিস
বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়