সদ্য প্রয়াত ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্মরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার অপরাধে একজন ইমামকে অপসারণের দাবি তুলেছেন ব্রিটেনের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায়। গত শনিবার মাগরিবের নামাজের পর ইস্ট লন্ডন মসজিদের ভেতরে ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদকে অপসারণের দাবিতে স্থানীয় কয়েকজন মুসলিম বিক্ষোভও করেছেন। তাকে অপসারণের দাবিতে অনলাইনে প্রচারণা শুরু হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন এক হাজারের বেশি মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার অপসারণ দাবিকারীদেরও সমালোচনাও করছেন অনেকে।
জানা গেছে, সম্প্রতি রিজেস্ট পার্কে সেন্ট্রাল মসজিদে রানির স্মরণসভা আয়োজন করা হয়। প্রয়াত রানির প্রতি সম্মান জানাতে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন কমিউনিটির তিন শতাধিক মুসলিম অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ইমাম মাহমুদও রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে ওই স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। শুরুতে ব্রিটেনের স্কুল শিক্ষার্থীরা ব্রিটিশ গীতিকার গেরি বারলোর লেখা ‘সিং’ গানটি পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান শেষ হয় ব্রিটেনের জাতীয় সংগীত ‘গড সেভ দ্য কিং’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। ব্রিটেনের কোনও মসজিদে এটিই ছিল প্রথম জাতীয় সংগীত গাওয়া। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে ৭০ জন মুসলিম শিশু শিক্ষার্থী।
এরপর ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ায় ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদকে ইস্ট লন্ডন মসজিদ থেকে অপসারণের দাবি তুলেন মসজিদের মুসল্লিদের একটি পক্ষ। ইমামের বিরুদ্ধে চেঞ্জ ডট ওআরজি ওয়েবসাইটে একটি অনলাইন পিটিশন চালু করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, যে ব্যক্তি উপনিবেশিক পদক গ্রহণ করেছেন এবং আপনার সন্তানদের নিয়ে ‘গড সেভ দ্য কিং’ জাতীয় সংগীত পরিবেশন করিয়েছেন তার কাছে আপনারা কী আশা করেন? এমন ইমামের কাছে আপনি আপনার সন্তানকে কেন পাঠাবেন এমন প্রশ্নও তোলা হয় ওই পিটিশনে।
মিসরের কায়রোর উত্তরাঞ্চলীয় ঘার্বিয়াতে জন্ম ইমাম মাহমুদের। ২০১৯ সালে তিনি ব্রিটেনের সন্মানসূচক ‘অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই)’ পদক পান। ২০১৭ সালে লন্ডনের ফিন্সবারি পার্ক মসজিদে যখন সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল তখন সেই মসজিদে ইমাম ছিলেন তিনি। সেদিন উত্তেজিত জনতার হাত থেকে শ্বেতাঙ্গ হামলাকারীকে রক্ষার করে ব্রিটেনের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে আলোচনায় আসেন ইমাম মাহমুদ। তাৎক্ষণিকভাবে তার অহিংসার নীতি ব্রিটেনে ব্যাপক আলোচিত হয়।
ইমাম মাহমুদকে অপসারণের দাবি তোলার বিরুদ্ধেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক মুসলিম সরব হয়েছেন। তাদের যুক্তি, আমরা বহু বিশ্বাস ও সংস্কৃতির এক সমাজে বাস করি। এখানকার আইন আমাদের মানতে হবে। ইমাম মাহমুদ ভুল কিছু করেননি বলেও মন্তব্য করছেন তারা।
তারা আরও বলছেন, তাকে রানির স্মরণসভায় অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। এদেশের নাগরিক হিসেবে তিনি জাতীয় সংগীত গেয়েছেন। আপনি যদি আপনার দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং অলিম্পিকে পদক জেতেন তাহলে আপনাকে জাতীয় সংগীত গাইতে হবে।
কেউ কেউ অপসারণের এই চেষ্টাকে মুসলিমদের মধ্যে অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
ইস্ট লন্ডন মসজিদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লন্ডন সেন্ট্রাল মস্কের ও অনুষ্ঠানে ইস্ট লন্ডন মসজিদের একজন ইমামও আমন্ত্রিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। পরে ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমামের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে একটি মহলের ভিন্নমত আমাদের নজরে আসে। তাই বিষয়টি আমরা ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় ইসলামি চিন্তাবিদদের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছি যাতে তারা এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ইস্ট লন্ডন মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকতা দেলওয়ার খান ও আইয়ুব খানের সঙ্গে লন্ডন সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।