X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কাছে নেই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারকারীদের সুনির্দিষ্ট তথ্য

তাসকিনা ইয়াসমিন
১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:২১আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:৩৬




স্যানিটারি ন্যাপকিন (ছবি: ইন্টারনেট থেকে)
নারী উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য নিয়ে দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা কাজ করছে। এসব কাজে দেশি ও বিদেশি দান-অনুদানও প্রচুর। তবে উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কাছে বাংলাদেশি নারীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এ নিয়ে বড় ধরনের কোনও গবেষণা কাজও হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারীর এই স্বাস্থ্যজনিত বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে ট্যাবু থাকায় এ নিয়ে কেউ তেমন কাজ করেনি।

তবে, বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে ব্র্যাক, প্ল্যান বাংলাদেশ এবং আইসিডিডিআরবি’র মতো প্রতিষ্ঠান।
ঐতিহাসিক তথ্যানুযায়ী, পৃথিবীতে দশম শতকে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের তথ্য পাওয়া যায়। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে দার্শনিক হাইপাসিয়ার মাসিককালে কাপড় ব্যবহার করতেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। তিনি সম্রাটকে অসম্মান জানাতে এটি ব্যবহার করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনকদের একজন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন যুদ্ধক্ষেত্রে তার সৈনিকদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা করেছিলেন। দেশটিতে ১৮৮৮ সাল থেকে এর বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়। প্রথমে জনসন অ্যান্ড জনসন স্যানিটারি টাওয়েল বিক্রি শুরু করে। তারা নার্সদের জন্য এই প্যাডগুলো বানাতো। পরবর্তী সময়ে ১৯২১ সালে সর্বপ্রথম স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন শুরু হয়।
ঢাকায় মোট ৭৩১ জন নারীর ওপর পরিচালিত বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফার্ম ম্যাগনাম ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিংয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৭৫ ভাগ নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। এরা সবাই কর্মজীবী নারী নয়তো শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে ১৫ ভাগ নারী মাসিকের সময় কাপড়, টিস্যু বা তুলা ব্যবহার করেন। এদের বেশিরভাগই গার্মেন্ট কর্মী, গৃহিণী অথবা কোনও কারখানার কর্মী, যাদের মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকার চেয়ে কম। ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্লার্ক, ক্লিনার ও আয়া— এই ধরনের পদে চাকরি করেন। এদের মধ্যে ৩৭ ভাগ স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে অস্বস্তি অনুভব করেন। বাকি ৩০ ভাগ ন্যাপকিনের দাম বেশি হওয়ায় ব্যবহার করেন না।
পরিচালিত গবেষণায় জানা যায়, ৫৭ ভাগ কিশোরী প্রথমবার মাসিক হওয়ার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু জানেন না। মাত্র ১৫ ভাগ নারী মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। শুধু সচেতনতার অভাবে নারীরা ১০০ টাকার প্রসাধন সামগ্রী কিনলেও স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনেন না।
ন্যাশনাল হাইজিন বেজলাইন সার্ভের রিপোর্ট ২০১৪ এর মতে, স্কুলছাত্রীদের ১২ বছর থেকে মাসিক শুরু হয়। এদের মধ্যে ৩৬ ভাগ বিষয়টি হওয়ার পর প্রথমবার জানে। ৪০ ভাগ ছাত্রী মাসিকের কারণে মাসে তিন দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন।
নারীবাদীরা মনে করেন, মাসিক নিয়ে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা নারীর প্রতি পুরুষের নিম্নমানের দৃষ্টিভঙ্গিরই বহিঃপ্রকাশ। নারীবাদী চেল্লা কুইন নারীদের ন্যাপকিনের মতো পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারে লজ্জা পাওয়ার ব্যাপারে বলেছেন, এ বিষয়ে বিজ্ঞাপন চালু হলে এটি নারীর মাসিকের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসবে। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে স্বাভাবিকভাবে আলোচনা করা উচিত. যা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ৫৯ ভাগ নারী মাসিক হওয়া পছন্দ করেন না। এদের মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ নারী সারাজীবন মাসিক না হলেও ভালো হতো বলে মত দেন। দেশটিতে যৌন শিক্ষার সঙ্গে মাসিকের বিষয় সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়। আবার সেদেশের কিছু কিছু গবেষণা প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয় যে, কন্যাশিশুরা তাদের মায়ের কাছ থেকেই প্রথম এ বিষয়ে শিখতে পারে।
আরেকজন মেনেস্ট্রুয়াল অ্যাকটিভিস্ট রাচেল কুডর নেলবুফ ‘মাই লিটল রেড বুক’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন। চলচ্চিত্র পরিচালক ও একাডেমিক জিওভান্না চেসলার ‘পিরিয়ড: দ্য অ্যান্ড অব মেনেস্ট্রুয়েশন’ নামে একটি ডকুমেন্টরি তৈরি করেছেন। আর্টিস্ট ইনগ্রিড বেরথন- মইনি ভেনিস বায়েনালে একটি ভিডিও এবং বেশ কিছু ছবির প্রদর্শনী করেছেন।
বাংলাদেশে নারীদের মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছেন তরুণ উদ্ভাবক মেহেদি হাসান রবিন। তিনি এ ক্যাম্পেইনের সঙ্গে নিজেকে জড়ানোর প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ব্রিটিশ কাউন্সিলে অ্যাক্টিভ সিটিজেন সোশ্যাল অ্যাকশন প্রজেক্ট-২০১৮’-তে অংশগ্রহণ করি। সেখানে আমাদের ‘সেফ পিরিয়ড’ থিমের উপস্থাপনা প্রতিযোগিতায় সেরা পাঁচে স্থান পায়। এর মাধ্যমে এটি বৈশ্বিক স্বীকৃতি মেলে। এসময় আমরা গ্লোবাল ক্যাম্পেইনে যোগদান করি। সেখানে ইথিওপিয়ার একজন আমাদের প্ল্যানটি শুনে তার দেশে এ নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এটা আমাদের জন্য খুবই গর্বের বিষয় যে, বাংলাদেশের কিশোরিদের নিয়ে শুরু করা একটি কাজ এখন বিশ্বের অন্যপ্রান্তের একটি দেশের কিশোরিদের উপকারে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে আমরা ব্রিটিশ কাউন্সিলের তরুণদের কোর্সে অংশ নেই। তখন সেফ পিরিয়ডের বিষয়টি নিয়ে কাজ করি। সেখানে আমাদেরকে সমাজে অবহেলিত কোনও একটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে বলা হয়। তখন আমরা নারীদের মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের সচেতনতার বিষয়টি নিয়ে আইডিয়া দেই। কীভাবে স্বল্প আয়ের নারীদের সচেতন করে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা যায়, তা নিয়েও কাজ করি। এ কাজে আমরা ১৩-১৫ বয়সী স্কুলছাত্রীদের বেছে নেই। বাংলাদেশে মাসিকের বিষয়টি এখনও একটা ট্যাবু। এটার প্রধান শিকার হয় স্বল্প আয়ের পরিবারের কিশোরিরা। আমরা ১৭টি স্কুলের ১৬৮২ জন স্কুলছাত্রীকে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’
প্ল্যান বাংলাদেশ কমিউনিকেশনস স্পেশালিস্ট আরবান প্রোগ্রামের কর্মকর্তা হুমায়রা সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে স্যানিটারি ন্যাপকিন কত নারী ব্যবহার করেন, এই ধরনের কোনও রিসার্চ বা সার্ভে তথ্য নেই। এছাড়া, স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে কাজ করা ওয়াটার এইডের সঙ্গে যোগাযোগ করেও নির্দিষ্ট কোনও তথ্য পাইনি। তাদের কাছে বাংলাদেশে কতভাগ নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করছেন, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি ছোট্ট প্রজেক্ট আছে ঢাকার বাইরে যেখানে আমরা নিজেরা সচেতনতা সৃষ্টি করেছি। সেখানে কর্মীরা স্বল্পমূল্যে নিজেরাই ন্যাপকিন বানাচ্ছে। এটা আমাদের ছোট্ট একটি প্রকল্প। কিন্তু আমাদের কাছে স্পেসিফিক কোনও ডাটা নেই।’
হুমায়রা সুলতানা বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশে এখনও নারীদের ঋতুস্রাবের বিষয়টি অবহেলিত। আমরা কেবল বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি। হয়তো দ্রুতই এই বিষয়টি নিয়ে কোনও গবেষণা হবে।’
আইসিডিডিআরবি’র তথ্য কর্মকর্তা এ এফ এম তারিফুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সচেতনতার বিষয়ে কাজ চলছে। তবে, কতজন নারী মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন, এ নিয়ে কোনও গবেষণা নেই।’

/টিটি/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খুলনায় বজ্রসহ বৃষ্টি
খুলনায় বজ্রসহ বৃষ্টি
কালবৈশাখী বয়ে যেতে পারে সারা দেশে
কালবৈশাখী বয়ে যেতে পারে সারা দেশে
আইপিডিসির নতুন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিক হোসাইন
আইপিডিসির নতুন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিক হোসাইন
বিজয়ের সেঞ্চুরিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন আবাহনী
বিজয়ের সেঞ্চুরিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন আবাহনী
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো