‘আমি তো কোনোদিন কিছু বুঝতে পারিনি। আমার পেটে কোনও ব্যথা ছিল না। খালি বসার পর উঠতে একটু কষ্ট হতো। এরমধ্যে কেমন করে পেটের মধ্যে ১০ কেজি ওজনের টিউমার ছিল শুনেই আমি অবাক।’ বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের একটি ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন রোগী আয়শা বেগম (৫২)। তার পেট থেকে সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে ১০ কেজি ওজনের একটি টিউমার সার্জারি করে বের করেন চিকিৎসকেরা।
আয়শা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একমাস আগে থেকে পেটে ব্যথা অনুভব করি। ঠিকমতো কাজ করতে পারতাম না। তবে উপুড় হয়ে কিছুটা করতে পারতাম। ভারী জিনিস ওঠানো বা নামানোতে সমস্যা ছিল।’ তিনি বলেন, ‘বড় ছেলে ইলেট্রিকের কাজ করে, সেও এখন আমার জন্য খরচ করছে। আমাকে নিয়ে পরিবারের সবাই দুঃচিন্তায় আছেন।’
আয়শার স্বামী মো. লোকমান হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন সে ভালো আছে। অপারেশনের পরে আজ বুধবার তাকে বসানো হয়েছে। এখনও কিছুটা ব্যথা আছে। ’ তিনি বলেন, এক-দেড় মাস আগে তার পেটে ব্যথা ওঠে। তখন গ্রাম্য ডাক্তার পেটে গ্যাস জমেছে বলে জানান এবং মেডিক্যালে ভর্তি করতে বলেন। আমি তাকে ঢাকায় নিয়ে আসি। এখানে আল্ট্রাসনো করিয়ে পেটে টিউমার ধরা পড়ে। পরে সিটিস্ক্যান করানো হলো এবং হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। এত বড় জিনিসটা নিয়ে সে চলছে, কোনোদিন আমরা কিছু বুঝতে পারিনি। খালি বসলে, উঠতে কষ্ট হতো।’
মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান কচি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০০২ সাল থেকে সার্জারির কাজ করছি। আমার জীবনে এত বড় টিউমারের রোগী এটাই প্রথম। এরকম রোগী আমরা ভবিষ্যতে আর নাও পেতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘প্রায় একমাস আগে এই রোগী আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হন। সিটিস্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় তার পেটে টিউমার শনাক্ত হয়। অস্ত্রোপচারের পর দেখা যায়, পেটের এই টিউমারটি ওভারিতেও পৌঁছে গেছে।’
চিকিৎসকরা বলেন, এই রোগীর এখন আর কোনও সমস্যা নেই। আমরা তাকে আগামী পাঁচ-সাত দিন রাখবো। এরপর তাকে ছুটি দিয়ে দেবো। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেও উনার তিন মাস ভারি কিছু তোলা ঠিক হবে না। এরপর থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন।
আয়শার সার্জারিতে অংশ নেন—ডা. মাহমুদ হাসান কনক, ডা. বুশরা নুর আল চৌধুরী, ডা. রোকসানা ইয়াসমিন ছন্দা, ডা. ওয়াসি উদ্দিন, এনেসথেসিওলজিস্ট ডা. শামীমা ইয়াসমিন ও ডা. মহুয়া রহমান।
আরও পড়ুন...
রোগীর পেট থেকে ১০ কেজি টিউমার অপসারণ