X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

আমিই করবো ম্যালেরিয়া নির্মূল

তাসকিনা ইয়াসমিন
২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০৬:০২আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ২০:০২

আমিই করবো ম্যালেরিয়া নির্মূল বর্তমানে কঠিন রোগও যেখানে সহজে নিরাময় করা সম্ভব, সেখানে ম্যালেরিয়ার মতো জ্বরে বিশ্বে কয়েক লাখ মানুষ মারা যায়। ২০১৭ সালের তথ্যানুযায়ী ৮৯টি দেশের মোট ২১৯ মিলিয়ন মানুষ ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হন। এরমধ্যে প্রাণ হারান চার লাখ ৩৫ হাজার জন। অন্যদিকে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৫২৩ জন। এরমধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়।




এ অবস্থায় ম্যালেরিয়া নির্মূলের প্রত্যয় নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দেশে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমিই করবো ম্যালেরিয়া নির্মূল’। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সকলে সচেতন হলে এই রোগ নির্মূল করা সম্ভব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, আফ্রিকা অঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, যা মোট মৃত্যুর ৯০ ভাগ। ২০১৭ সালে ২০০ মিলিয়ন মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে মারা যায় ৪ লাখ ৩ হাজার জন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই সময়ে আক্রান্ত হয়েছিলো ১১ দশমিক তিন মিলিয়ন মানুষ। মারা গেছে ১৯ হাজার ২৭ জন। বিশ্বের ৮৯টি দেশে ২০১৭ সালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় ২১৯ মিলিয়ন মানুষ। এরমধ্যে মারা গেছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার জন। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪৬ হাজার।

আমিই করবো ম্যালেরিয়া নির্মূল
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৮ সালে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৫২৩ জন। এরমধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ২৪৭ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ১৩ জন। ২০০৭ সালে আক্রান্ত হন ৫৯ হাজার ৮৫৭ জন। মারা যান ২২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক কর্মকর্তা ডা. এ.এম. বাঙালি বলেন, ১৮৯৭ সালে স্যার ডোরাল্ড রস সেকান্দ্রাবাদে প্রথম আবিষ্কার করেন যে এটি প্যারাসাইটিক ডিজিজ। তখন থেকে এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ভারতীয় উপমহাদেশে যত সেনা যুদ্ধে মারা যান, তার চেয়ে বেশি মারা যান ম্যালেরিয়ায়। এসময় রোগটি নিয়ে বেশি শোরগোল শুরু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যালেরিয়া বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আকতারুজ্জামান বলেন, বর্তমানে দেশে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, যা প্রায় ৮৪ ভাগ। আর ভাইভেক্স ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ১৬ ভাগ। দেশের ১৩ জেলার ৭১টি উপজেলা ম্যালেরিয়াপ্রবণ। এরমধ্যে ৮টি জেলায় ২০২১ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কাজ করছে সরকার। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। এছাড়া কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কুড়িগ্রাম জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রয়েছে।
তিনি বলেন, এটি প্লাজমোডিয়াম প্রজাতির এক ধরনের পরজীবীর মাধ্যমে সংঘটিত সংক্রামক রোগ, যা সাধারণত জ্বরের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এনোফিলিস জাতীয় স্ত্রী-মশা এর বাহক। আক্রান্ত রোগীর অজ্ঞান হওয়া, হঠাৎ অস্বাভাবিক বা অসংলগ্ন আচরণ, বারবার খিঁচুনি হওয়া, দুর্বল হয়ে পড়া, বারবার বমি হওয়া, শিশুর ক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধ বা অন্য খাবার খেতে না পারা মারাত্মক ম্যালেরিয়ার লক্ষণ।
তবে বর্তমানে মানুষের সচেতনতা এবং সম্মিলিত চেষ্টায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

আমিই করবো ম্যালেরিয়া নির্মূল
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড লাইন ডিরেক্টর (সিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, “এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘আমিই করবো ম্যালেরিয়া নির্মূল’। আমি এবং আমরা মিলে অবশ্যই ম্যালেরিয়াকে নির্মূল করতে পারবো। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে।’
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে করণীয় প্রসঙ্গে ডা. এম এম আকতারুজ্জামান বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় মশারি টানাতে হবে। এই মশারি ব্যবহারে গর্ভবতী নারী ও পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। রাতে বাইরে গেলে হাত-পা ঢাকা থাকে এমন কাপড় পরা, সম্ভব হলে শরীরের অনাবৃত অংশে মশানিরোধক ক্রিম বা লোশন এবং ঘরের দরজা-জানালায় নেট ব্যবহার, বাড়ির আঙিনা ও আশপাশের ঝোঁপঝাড় কেটে পরিষ্কার করা, অপ্রয়োজনীয় ডোবা, গর্ত, নর্দমা ভরাট করে ফেলা এবং আবদ্ধ জলাশয়ে শুককীটখেকো মাছ (তেলাপিয়া, গাপপি, কার্প, নাইলোটিকা) চাষ করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম.এ. ফয়েজ বলেন, দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং প্রতিরোধ করতে হবে। এটাই আমাদের অঙ্গীকার। তাহলে আমি এবং আমরাই ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে পারবো।

/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা
সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা
কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
উপজেলা নির্বাচন আগের যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে: ইসি হাবিব
উপজেলা নির্বাচন আগের যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে: ইসি হাবিব
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই