X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় মারা যাওয়া বেশিরভাগই ডায়াবেটিস আক্রান্ত, সতর্কতায় করণীয়

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২৩:১৩আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২৩:১৫

করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহে যারা মারা গেছেন, তাদের বেশিরভাগ আগে থেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। এক সপ্তাহে মৃতদের ৬৪ দশমিক ৪৭ শতাংশই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত  ছিল। এরপর রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি-জনিত রোগ, বক্ষব্যাধি, হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগের আক্রান্তরা। 

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতর করোনা বিষয়ক নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে সপ্তাহভিত্তিক বিশ্লেষণে এ তথ্য জানিয়েছে। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানজিনা হোসেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য মতে, গত সপ্তাহে (১৩ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৯৪ জন। তাদের মধ্যে কোমর্বিডিটি বা আগে থেকেই অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ছিলেন ১৫২ জন। শতকরা হিসাবে যা ৫১ দশমিক ৭০ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত এক সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন ৬৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ, উচ্চ রক্ত চাপে আক্রান্ত ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ, কিডনিজনিতে রোগে আক্রান্ত ছিলেন ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ, বক্ষব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন ১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ, হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ, থাইরয়েডজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন চার দশমিক ৬১ শতাংশ, স্ট্রোকে আক্রান্ত ছিলেন ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ, লিভারজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ, রক্তজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ, নিউরোলজিক্যাল রোগে আক্রান্ত ছিলেন ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ, বাতজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ।

ডা. তানজিনা হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ। সারাজীবনই আমাদেরকে এরসঙ্গে জীবনযাপন করতে হয়। এই রোগের নানারকম জটিলতা আছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তাহলে ধীরে ধীরে কিডনি, হার্ট, চোখ, পায়ের নার্ভ, রক্তনালী এসব কিছুতেই প্রভাব পড়ে। সেই কারণে সবসময় এটিকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হয়।

যে কারণে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি

ডা. তানজিনার মতে, অনেকেই কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তা বুঝতে পারে না। তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন সুগার লেভেল ৯-১০ এর মধ্যে থাকলে স্বাভাবিক। কিন্তু খালি পেটে ৬ এবং খাবার খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ৮ এর নিচে থাকলে আমরা সেটাকে নিয়ন্ত্রণে থাকা বলি। এরকমই যদি সবসময় কারও থাকে তাহলে অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতো সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে। অন্যথায় কয়েকবছর পর নানারকম জটিলতা দেখা দেবে।

দ্বিতীয়ত, ডায়াবেটিস মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। যার কারণে এসব রোগীদের বারবার নানা ধরনের সংক্রমণ দেখা দেয়। আমরা করোনাকালীন সময়ে দেখলাম ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্থা বেশি খারাপ হলো। একইসঙ্গে যে কোনও ধরনের সংক্রমণ কমাতে হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সেটি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে নানা ধরনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনেকসময় পায়ের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তা কেটে ফেলারও প্রয়োজন হয়।

তৃতীয়ত, লক্ষ্য রাখতে হবে গর্ভবতী মায়েদের দিকে। কারণ এতে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, সন্তান জন্মদানের সময় নানারকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এখন বাংলাদেশে অনেক বেশি। এটি আলাদা ধরনের ডায়াবেটিস যেটি শুধুমাত্র গর্ভধারণের সময় দেখা দেয়। এটি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে মা ও শিশু দুজনেরই নানারকম জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে করণীয়

ডা. তানজিনা জানান, ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাকে ৩টি ডি বলা হয়- ডায়েট, ড্রাগ ও ডিসিপ্লিন। তিনি বলেন, ডায়েট অর্থ হচ্ছে এই না যে না খেয়ে থাকতে হবে। এটা মানুষের একটি ভুল ধারণা। এর অর্থ হচ্ছে সঠিক খাবার সঠিক পরিমাণে খাবার সঠিক সময়ে খাওয়া। দুধ, ডিম, মাছ , মাংস সবই খেতে পারবেন কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে খেতে হবে। আরেকটি হচ্ছে শারীরিক ব্যায়াম। মানুষ যতবেশি হাঁটাহাঁটি বা যে কোনও ধরনের ব্যায়াম করেন ইনসুলিন শরীরে তত ভালো কাজ করে। তখন দেখা যায় ওষুধের ডোজ অনেক কম লাগে।

এ ছাড়া ওষুধ বা ড্রাগ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। ওষুধ গ্রহণও মনিটরিংয়ের মধ্যে থাকতে হবে। প্রতি তিন থেকে ছয় মাস পর পর চিকিৎসকের কাছে যাওয়া, ওষুধের ডোজ কিংবা ইনসুলিনের মাত্রা চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারণ করা। তাছাড়া রক্তচাপ, চোখ, কিডনি এগুলো মনিটরিংয়ের মধ্যে থাকা।

ডা. তানজিনা বলেন, আমরা এখন পরামর্শ দিই; বাসায় যেন রোগীরা একটি গ্লুকোমিটার রাখেন। এটি দিয়ে মাঝে মাঝে ব্লাডসুগার পরীক্ষা করবেন। তাহলে নিজের সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী সপ্তাহে একদিন কিংবা দু’সপ্তাহে খালি পেটে এবং খাবারের দুই ঘণ্টা পর একবার নিজের রক্তের পরীক্ষা নিজেরই করা দরকার। এ ছাড়া যখনই অসুস্থ বোধ হবে তখনই সুগার মেপে দেখা দরকার। কারণ অনেক সময় সুগার কমে যায় কিংবা বেড়ে যায়; দুই ক্ষেত্রেই অসুস্থ বোধ হয়। অসুস্থ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

/এসও/এনএইচ/         
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
এবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
আমান উল্লাহ আমানকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলেন আপিল বিভাগ
আমান উল্লাহ আমানকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলেন আপিল বিভাগ
বুধবার থেকে ঢাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা সশরীরে
বুধবার থেকে ঢাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা সশরীরে
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলে ১ লাখ ডলার পাবেন বাবররা!
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলে ১ লাখ ডলার পাবেন বাবররা!
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?