মসজিদ শুধু নামাজ আদায়ের স্থানই নয়, বরং একইসঙ্গে এটি মুসলিম সমাজ ও ইসলামি সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ তো বটেই, অনেক মসজিদ ঐতিহাসিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। এসব মুসলিম স্থাপত্যকে স্বতন্ত্র করে তুলেছে চোখধাঁধানো নির্মাণশৈলী। ‘বাংলা ট্রিবিউন জার্নি’তে ধারাবাহিকভাবে থাকছে এমন কিছু মসজিদের পরিচিতি।
মসজিদুল হারাম
ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে অবস্থিত মসজিদুল হারাম পবিত্র কাবাকে ঘিরে অবস্থিত। কাবার দিকে মুখ করেই পুরো দুনিয়ার মুসলমানরা সালাত বা নামাজ আদায় করেন। হজ ও ওমরার জন্য প্রায় ৪০ লাখ মুসল্লি হাজির হন সেখানে। এটি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ। ভেতরে ও বাইরে নামাজের স্থান মিলে ৯৯ একর (৪ লাখ ৮০০ বর্গমিটার) এলাকাজুড়ে বিস্তৃত মসজিদুল হারাম।
মসজিদ আল হারাম, গ্রেট মস্ক অব মক্কা, গ্র্যান্ড মস্ক অব মক্কা নামেও এটি পরিচিত। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, এই ঘর হচ্ছে মানবজাতির ইবাদতের জন্য নির্মিত প্রথম স্থাপনা। মসজিদটিকে ঘিরে রয়েছে মহানবী (সা.) ও তার প্রিয় সাহাবীদের স্মৃতিধন্য ইসলামের অনেক পবিত্র স্থান।
পবিত্র জমজম কুয়া এই মসজিদ কম্পাউন্ডের মধ্যে অবস্থিত। পাম্পের মাধ্যমে ওই কুয়া থেকে পানি উত্তোলন করা হয়। হাজীরা দেশে ফেরার সময় বরকতের উদ্দেশে সেখান থেকে পানি নিয়ে আসেন।
মসজিদে নববী
ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্র স্থান মসজিদে নববী পবিত্র মদিনা নগরীতে অবস্থিত। মহানবী (সা.) হিজরত করে মদিনায় আসার পর তাঁর বাসগৃহের পাশে এই মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তিনি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে এই নির্মাণ কাজে অংশ নেন। পরে বিভিন্ন সময়ে এর সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়।
মসজিদে নববীর সবুজ গম্বুজ একাধিকবার সংস্কার করা হয়েছে। এই মসজিদে মহানবীর (সা.) কবর বা রওজা মুবারাক থেকে তার মিম্বর পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানটি রিয়াজুল জান্নাহ বা জান্নাতের বাগান হিসেবে পরিচিত। মহানবী (সা.) ছাড়াও সেখানে ইসলামের প্রথম দুই খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ও হজরত উমর ফারুকের (রা.) কবর রয়েছে।
আল আকসা মসজিদ
ইসলামের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান আল আকসা মসজিদ হলো ইসলামের প্রথম কিবলা। মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের একবছরেরও বেশি সময় পর আল্লাহ তাআলার নির্দেশে ইসলামের নতুন কিবলা হয় পবিত্র কাবা। মহানবী (সা.) মিরাজের রাতে মসজিদুল হারাম থেকে সেখানে গিয়েছিলেন।
আল আকসার অনতিদূরেই রয়েছে সোনালি গম্বুজবিশিষ্ট ‘ডোম অব দ্য রক’ বা ‘কুব্বাত আল-শাখরা’। আটকোণা এই ডোম অব দ্য রকের ভেতরেই রয়েছে সেই পাথরের ভিত্তি; যেখান থেকে তিনি মিরাজের উদ্দেশে ঊর্ধ্বাকাশের পথে যাত্রা করেন। ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদটি বায়তুল মুকাদ্দিস নামেও পরিচিত। বর্তমানে পবিত্র জেরুজালেম নগরী ইসরায়েলের দখলে থাকলেও আল আকসা মসজিদের তত্ত্বাবধান করে একটি ফিলিস্তিনি-জর্ডানি ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান।
সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদ
আধুনিক ইসলামি স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন সুলতান ওমর আলি সাইফুদ্দিন মসজিদ। ব্রুনাইয়ের রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ানে অবস্থিত এ মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৫৮ সালে। নান্দনিক নির্মাণশৈলীর সুবাদে এটিকে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে ধর্মীয় তাৎপর্যের পাশাপাশি এটি ব্রুনাইয়ের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণস্থল। দেশটির ২৮তম সুলতান ওমর আলি সাইফুদ্দিনের নামে এর নামকরণ হয়েছে।
মসজিদটির নির্মাণশৈলীতে মোগল ও ইতালীয় স্থাপত্যের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। এটি নির্মাণে অত্যন্ত মূল্যবান গ্রানাইট, মার্বেল ও ক্রিস্টাল ব্যবহৃত হয়। প্রধান গম্বুজের বাইরের অংশটি সোনা দিয়ে তৈরি। পাঁচ একর জমির ওপর নির্মিত এই মসজিদের ভেতরের অংশে একসঙ্গে তিন হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। ব্রুনাই নদীর তীরে একটি কৃত্রিম অগভীর হ্রদে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদটি। এর চত্বর জুড়ে আছে বিপুলসংখ্যক গাছপালা আর চোখ জুড়ানো ফুলের বাগান ও পানির ফোয়ারা। এ যেন জান্নাতি আবহে ঘেরা এক ইবাদতগৃহ।
জহির মসজিদ
মালয়েশিয়ার কেদাহ প্রদেশের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত জহির মসজিদ। ১৯১২ সালে সুলতান তাজউদ্দিন মুকাররাম শাহের ছেলে টুংকু মাহমুদ এটি নির্মাণ করেন। ইসলামের পাঁচ মূল স্তম্ভের প্রতীক হিসেবে মসজিদটিতে রয়েছে পাঁচটি গম্বুজ। ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রার লংকাটে অবস্থিত আজিজি মসজিদের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এটি নির্মাণ করা হয়।
মালয়েশিয়ার পুরনো ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলোর মধ্যে জহির মসজিদ অন্যতম। এখানে রাজ্যের বার্ষিক কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ১০ মসজিদের একটি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল মসজিদটি।