‘পাহাড়ি কন্যা’ বান্দরবান ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম পছন্দের জায়গা। দেশীয় পর্যটনে এই জেলা সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানকার পাহাড়, টিলা, বন, পাথরের জলপ্রপাত ও আঁকাবাকা নদী সববয়সী পর্যটককে আকর্ষণ করে। এসবের সঙ্গে ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আদি বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি আকর্ষণীয়। ফলে সারাবছর পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এখানে। তবে একদিনের জন্য ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করছে জেলা প্রশাসন।
বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় একযোগে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১৮ মার্চ। এ কারণে ওইদিন পর্যটকদের বান্দরবানে ভ্রমণ না করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। শনিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে ডিসি অফিস বান্দরবানের ফেসবুক পেজে এই তথ্য জানানো হয়।
নির্বাচনের সময় টানা তিন দিনের ছুটি থাকায় বান্দরবানের সব হোটেল কক্ষ বুকিং হয়ে আছে। বাসের টিকিটও বিক্রি হয়ে গেছে বেশ ক’দিন আগেই। ফলে বোঝা যাচ্ছে, পর্যটক সমাগম হতে পারে চোখে পড়ার মতো।
ডিসি অফিস বান্দরবানের ফেসবুক পেজে বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবুল কালাম লিখেছেন, ‘যদি কেউ ইতোমধ্যে এই সময়ে (টানা তিন দিনের ছুটি) বান্দরবানে ভ্রমণের পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে নির্বাচনের দিনটি বাদ দিয়ে আসার চেষ্টা করবেন।’
কেউ যদি নির্বাচনের দিন বান্দরবানে পৌঁছেই যান তাহলে সারাদিন হোটেলে বসে সময় কাটানো ছাড়া উপায় নেই। তবে মোহাম্মদ আবুল কালাম মনে করেন, ‘নির্বাচনের দিন অপরিচিত লোক হিসেবে এলাকায় অবস্থান করা ঠিক হবে না।’
কারও আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব নির্বাচনের দিন বান্দরবানে আসার পরিকল্পনা করলে তাদের নিরুৎসাহিত করার জন্যও অনুরোধ জানান বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)।
ডিসি অফিস বান্দরবানের ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে, রবিবার (১৭ মার্চ) দিবাগত রাত ১২টা থেকে ১৮ মার্চ দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ থাকবে।
বান্দরবানের পর্যটন আকর্ষণ
শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বালাঘাটায় রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দির। স্থানীয়ভাবে এটি হলো ‘বুদ্ধ ধাতু জাদি’। এছাড়া শহরেই রয়েছে জাদিপাড়ার রাজবিহার ও উজানিপাড়ার বিহার। শহর থেকে চিম্বুকের পথে যেতে চোখে পড়বে বম ও ম্রো উপজাতিদের গ্রাম। মেঘলা সাফারি পার্কে আছে দুটি ঝুলন্ত সেতু। সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণ ভ্রমণপিয়াসীদের মনোরম অভিজ্ঞতা দেয়।
বান্দরবান শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে শৈলপ্রপাত একটি আকর্ষণীয় পাহাড়ি ঝরনা। এছাড়া বাংলাদেশের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ তাজিনডং ও বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডংয়ে আরোহণের জন্য পর্যটকদের ভিড় জমে। পর্যটকরা সাধারণত বগা লেক থেকে হেঁটে কেওক্রাডংয়ে যান। অনেকেই আছেন যারা কেওক্রাডং না গিয়ে বগা লেক থেকে ফিরে আসেন। এই হ্রদও দর্শনীয় স্থান। হ্রদসন্নিহিত এলাকায় বম উপজাতিদের বাস।
জেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থানের মধ্যে আরও রয়েছে প্রান্তিক হ্রদ, জীবননগর ও কিয়াচলং হ্রদ, বাকলাই ঝরনা, চিনরি ঝিরি ঝরনা, ফাইপি ঝরনা, জাদিপাই ঝরনা, মিরিংজা পর্যটন, নাফাখুম, রেমাক্রি, নীলাচল, নীলগিরি, থানচি, পতংঝিরি ঝরনা, প্রান্তিক লেক, রিজুক ঝরনা ও উপবন পর্যটন। সব মিলিয়ে বান্দরবানের মুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেশ-বিদেশের ভ্রমণপ্রেমীদের মন কাড়ে।