X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

হাতে বোনা ঘাসের দড়ি দিয়ে বানানো সেতু

জনি হক
১৩ জুলাই ২০১৯, ০৯:০০আপডেট : ১৩ জুলাই ২০১৯, ০৯:০০

ঘাস দিয়ে বানানো সেতু ঘাস দিয়ে কি সেতু বানানো যায়? উত্তর কী হবে না হবে তা পরের ব্যাপার, প্রশ্নটাই কারও কারও কাছে অবান্তর ঠেকতে পারে। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, পেরুর কুস্কো অঞ্চলে অ্যাপুরিমাক নদীর ওপর প্রতি বছর গড়ে ওঠে এমন একটি সেতু। এর ওপর দিয়ে স্থানীয়রা হেঁটে দিব্যি নদী পার হন। একে বলা যায় হাতে বোনা সেতু! কারণ ঘাস হাতে বুনে বানানো হয় এটি। এর নাম কুইসওয়াচাকা সেতু।  
ঘাস দিয়ে সেতু বানানো পেরুর একটি ঐতিহ্য ঘাস হাতে বুনে নদী পারাপারের এই জিনিস বানানো পেরুর ইনকা সভ্যতার অন্তত ৬০০ বছরের ঐতিহ্য। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই প্রথা চলে আসছে।

ঘাস দিয়ে বানানো সেতু নদী পার হওয়ার জন্য নতুন সেতু গড়তে দুই পাশের অধিবাসীদের প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সমবেত হন। তারা প্রথমে পুরনো সেতু কেটে নদীতে ফেলে দেন। ঘাসের তৈরি হওয়ায় এটি সহজেই ভেসে দূরে চলে যায়।

সেতুর জন্য ঘাসের দড়ি বুনছেন দুই নারী প্রথা অনুযায়ী শুধু পুরুষদেরই সেতু নির্মাণ কাজে অংশ নেওয়ার অনুমতি রয়েছে। আর নারীরা পাহাড়ের উপরিভাগে বসে ছোট ছোট দড়ি বোনেন।

সেতু পুনর্গঠনের প্রথম দিনের কাজের চিত্র সেতু পুনর্গঠনের প্রথম দিন পুরুষ অধিবাসীরা পুরনো সেতুর চারপাশে জড়ো হন। তারা প্রথমে ছোট দড়িগুলো বুনে বুনে বড় দড়িতে রূপান্তর করেন। তিন গুণ করে পাকানো এক ফুট পুরু ছয়টি বড় দড়িই সেতুর মূল ভিত্তি। এর প্রতিটিতে ১২০টি পাতলা দড়ি থাকে।

সেতুর জন্য ঘাস দিয়ে তৈরি করা দড়ি শক্ত ঘাস ব্যবহার করে হাতে দুই পলি দড়ি বোনার ক্ষেত্রে প্রতিটি পরিবার অবদান রাখে। এসব ঘাস স্থানীয়ভাবে ‘কয়া ইচু’ নামে পরিচিত। সহজে বাঁকানো বা ভাঁজ করতে ঘাসগুলো প্রথমে বৃত্তাকার পাথরে পেটানো ও পরে পানিতে ভেজানো হয়।

সেতু নির্মাণের অন্যদিকে চলতে থাকে রান্না সবাই যখন ব্যস্ত তখন অনেক গ্রামবাসী কাঠ পুড়িয়ে বিভিন্ন মেন্যু রান্না করেন। সেতুর নির্মাণকাজ উপলক্ষে গ্রাম থেকে চুলা নিয়ে আসা হয়। মুরগি, গিনিপিগ ও অ্যাপুরিমাক নদীর ট্রাউট মাছ হলো প্রধান পদ। সব খাবারের সঙ্গে থাকে স্থানীয়ভাবে চাষ করা বিভিন্ন আকার ও রঙের আলু।

সেতুর নির্মাণকাজের চিত্র ঘাস দিয়ে বোনা ছয়টি দড়ির মধ্যে সেতুর মেঝে হিসেবে ব্যবহার হয় চারটি। বাকি দুটিকে করা হয় দু’দিকের হাতল। ছয়টি দড়ি গিরিখাতের দুই পাশের পাথরে খুব শক্ত করে বাঁধা হয়। যথাযথভাবে এই কাজ করার জন্য লেগে যায় দিনের বেশিরভাগ সময়।

অকুতোভয় অধিবাসীদের কাছে হার মানে পাহাড়ি উচ্চতা নির্মাণকাজের তৃতীয় দিন একদল নির্ভীক পুরুষ সেতুর ওপর হেঁটে হেঁটে হাতলের ছোট দড়িগুলো মেঝের সঙ্গে বেঁধে দেন। এর মাধ্যমে তৈরি হয়ে যায় বেড়া। ফলে সবাই নিরাপদে সেতু অতিক্রম করতে সক্ষম হন।

দৃষ্টিনন্দন ঘাসের সেতু সেতু নির্মাণের পুরো প্রক্রিয়ায় কোনও আধুনিক উপকরণ, সরঞ্জাম বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না। শুধুই ঘাস ও জনশক্তি দিয়ে গড়ে ওঠে এটি।

দৃষ্টিনন্দন ঘাসের সেতু কুইসওয়াচাকা সেতুর পুনর্গঠন হয় বছরের একবার। সুস্বাদু খাবার ও গান-বাজনার মধ্য দিয়ে নির্মাণকাজের চতুর্থ দিন সেতু উদযাপন করা হয়। প্রতিবারই সেদিন থাকে জুনের দ্বিতীয় রবিবার।

সূত্র: বিবিসি, ছবি: জর্ডি বাস্ক


/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিচার-সংস্কার ও নতুন সংবিধান রচনা বাদে নির্বাচন হলে আমরা অংশ নেবো না: নাহিদ
বিচার-সংস্কার ও নতুন সংবিধান রচনা বাদে নির্বাচন হলে আমরা অংশ নেবো না: নাহিদ
ভোট ছাড়াই চেয়ার দখল করতে বগুড়া চেম্বারের কার্যালয়ে তালা
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিভোট ছাড়াই চেয়ার দখল করতে বগুড়া চেম্বারের কার্যালয়ে তালা
ফিরে দেখা: ৩ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ৩ জুলাই ২০২৪
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
সর্বাধিক পঠিত
নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
সংযুক্ত কর্মচারী প‌রিষ‌দের জরু‌রি সভানবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন