ইন্দোনেশিয়ার কমোডো আইল্যান্ড পর্যটকদের জন্য বেশ জনপ্রিয়। বিশ্বের বৃহৎ গিরগিটি প্রজাতির প্রাণী কমোডো ড্রাগনের অভয়ারণ্য এটি। কিন্তু পর্যটন স্পটটি বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল দেশটির সরকারের। আশার কথা হলো, সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে তারা। যদিও আগের মতো মাত্র ১০ ডলারের বিনিময়ে ঢোকা যাবে না দ্বীপটিতে। এজন্য প্রত্যেক পর্যটককে গুনতে হবে একহাজার ডলার।
কমোডো আইল্যান্ডে বিশাল বিশাল গিরগিটির বিচরণ দেখা যায়। তাদের সুরক্ষায় পর্যটক সংখ্যা সীমিত রাখতে চায় ইন্দোনেশিয়া সরকার। তাই নতুন নিয়মে চলবে এটি। ক্রুজ জাহাজ চলাচলের ওপর থাকবে কঠোর নিয়মকানুন। অঞ্চলটির গভর্নর ভিক্টর বাংতিলু লাইসকোদাত এসব তথ্য জানান।
ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্র বিষয়ক মন্ত্রী লুহুত বিনসার পান্ডজাইতানের বরাত দিয়ে অন্তরা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, দ্বীপটিতে বেড়াতে আগ্রহীদের জন্য বার্ষিক সদস্যপদের ব্যবস্থা রাখা হবে। মন্ত্রী বলেন, ‘কমোডো আইল্যান্ড বন্ধ হচ্ছে না। তবে পর্যটক সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন পদ্ধতি চালু করা হবে।’
অন্তরা নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদন অনুযায়ী, পর্যটকদের জন্য দ্বি-স্তরের সদস্যপদ থাকবে। এর মধ্যে প্রিমিয়াম মেম্বারশিপ আছে যাদের, তারাই কমোডো আইল্যান্ডে ঢোকার সুযোগ পাবেন। বাকিরা কাছের কমোডো ন্যাশনাল পার্কে শুধু বেড়াতে পারবেন। সেখানেও ড্রাগন প্রজাতির দেখা মেলে।
সরকারি তথ্যানুযায়ী, কমোডো আইল্যান্ডে ১ হাজার ৭০০ বৃহৎ গিরগিটি রয়েছে। ধারণা করা হয়, পাশের রিনকা দ্বীপে আরও একহাজার ড্রাগনের আবাস। ইউনেস্কোর তথ্যানুযায়ী, এসব প্রাণী গড়ে দুই-তিন মিটার (১০ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রাণীবিজ্ঞানীরা এগুলোর মধ্যে বৈজ্ঞানিক মান রয়েছে বলে মনে করেন। ধারালো দাঁত ও বিষাক্ত কামড়ের জন্যও তারা পরিচিত।
কমোডো আইল্যান্ড ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত। ২০১১ সালে বৈশ্বিক ভোটে প্রকৃতির সাত আশ্চর্যের তালিকায় স্থান পায় এটি। সাম্প্রতিক সময়ে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ২০১৮ সালে এই দ্বীপ দেখতে ১ লাখ ৮০ হাজার পর্যটক সমাগম হয়। ২০০৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার।
পর্যটকদের ভিড়ভাট্টার কারণে সামুদ্রিক পরিবেশ ও গিরগিটিদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। তাই কয়েক মাস ধরে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা ও বন্যজীবন সংরক্ষণে কাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া সরকার গত এপ্রিলে জনপ্রিয় দ্বীপটিতে একবছরের জন্য বেড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
এ বছরের মার্চে কমোডো আইল্যান্ড থেকে ৪১টি ড্রাগন চোরাচালানের ঘটনা ফাঁস হয়। অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোর প্রতিটি প্রায় ৩৫ হাজার মার্কিন ডলারে বিদেশে বিক্রি হয়েছে। মূলত এ কারণে ৩৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ করার কথা ভেবেছে ইন্দোনেশিয়া সরকার।
দ্বীপটিকে বিশেষ সংরক্ষিত অঞ্চলে উন্নীত করাই এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য, যেখানে প্রতি বছর অল্পসংখ্যক পর্যটক আসতে পারবেন। কিন্তু এতে জীবনমানের ক্ষতি হবে জানিয়ে দুশ্চিন্তা করছিলেন স্থানীয় দুই হাজার বাসিন্দা। তাই গত ১ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে গত বছরের ২ অক্টোবর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরেক দেশ থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় মায়া বে সৈকত। এর আগে প্রবালপ্রাচীর উদ্ধার কাজের সুবিধার্থে চার মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় আন্দামান সাগরঘেষা সৈকতটি। উষ্ণ তাপমাত্রা আর পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়ের কারণে সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি থাই সরকারের। জানা গেছে, মায়া বে’র প্রবালপ্রাচীর, ম্যানগ্রোভ ও সৈকতকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অন্তত এক বা দুই বছর কিংবা তারও বেশি সময় প্রয়োজন।
সূত্র: সিএনএন, বিবিসি
আরও পড়ুন-
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফেরাতে থাই সৈকত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ