X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

যে গ্রামে শত শত যমজের বসবাস

নওশীন মুবাশশিরা রোদেলা
১২ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:০০আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০১৯, ১২:১৪

কোডিনহি গ্রাম কখনও কখনও কিছু খবর বিস্ময়কর মনে হয়। চমকপ্রদ এমনই একটি ব্যাপার হলো, ভারতে কেরালার মালাপ্পুরাম জেলার প্রত্যন্ত কোডিনহি গ্রামে শত শত যমজের বসবাস! এজন্য জায়গাটির প্রতি অনেকের কৌতূহল। নীল রঙা বোর্ডে পর্যটকদের স্বাগত জানানোর বার্তা লেখা আছে।

ভারত সরকারের হিসাবে, কোডিনহি গ্রামের দুই হাজার পরিবারে আছে ২২০ যমজ শিশু-কিশোর। খালি চোখে অস্বাভাবিক ঘটনাই বলা চলে। বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় বিষয়গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এর জট খুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় চিকিৎসকরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গোটা বিশ্বে গড়ে যত যমজ জন্মে কোডিনহি গ্রামে এর চেয়ে প্রায় ছয় গুণেরও বেশি যমজ আলোর মুখ দেখে। কোডিনহির বাসিন্দারা তাই নিজেদের গ্রামের ডাকনাম রেখেছে ‘যমজ শহর’।

কোডিনহি গ্রামের কিছু যমজ ২০০৮ সালে গ্রামটির ৩০০ অন্তঃসত্ত্বা নারীর মধ্যে প্রায় ১৫ জন যমজ সন্তানের মা হন। জনসংখ্যা শুমারি অনুযায়ী, কোডিনহি গ্রামে ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬০ যমজ শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। যমজ জন্মের এই হার ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারাভারতে একহাজার সন্তানসম্ভবা ৯ যমজ সন্তান পেলেও কোডিনহিতে একহাজারের মধ্যে ৪৫ জন নারী জোড়া ছেলে অথবা মেয়ের মা হয়েছেন। 

সাধারণত বেশি বয়সী নারীদের গর্ভে দুটি কিংবা তিনটি শিশু আসে। কিন্তু কোডিনহিতে ব্যতিক্রম চিত্র। এখানে ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। আর তারা অল্প বয়সেই মা হন। তাদের উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চির মধ্যে। গ্রামটির নারীদের উচ্চতা গড়ে ৫ ফুট।

গ্রামের অধিবাসীরা গ্রামের যমজ ও তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ‘টুইন্স অ্যান্ড কিন অ্যাসোসিয়েশন’ (টাকা) নামক সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছেন। কারণ যমজদের লালন-পালন করা ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। আর এসব সন্তানের মায়েদের তুলনামূলক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। তাই শিক্ষাদানসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকে এই সংগঠন।

২২ জন মা-বাবার সঙ্গে ১৫৬ যমজ সন্তান কোডিনহির যমজদের বেশিরভাগের বয়স ২০ বছরের মধ্যে। তাদের অনেক মজার মজার গল্প আছে। টাকা’র সভাপতির ছেলে ১৬ বছর বয়সী অনু ভাস্করণ বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ৩০-৪০ যমজ আমার সহপাঠী ছিল।’ তার দুষ্ট প্রকৃতির ভাই অভি যমজ ভাই থাকার সুবাদে বন্ধু ও শিক্ষকদের বোকা বানানোর সুযোগ নিতেন হরহামেশা।

পাঁচ বছরের শাহালা পড়ে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শিক্ষকরা প্রায়ই তার সঙ্গে যমজ বোন শাহানাকে গুলিয়ে ফেলেন। দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে হলে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেয়। সামিরা ও ফামিনা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় দেখেছেন, তাদের আরও সহপাঠীদের মধ্যে আছে আট যমজ। অন্যান্য ক্লাসেও তারা যমজ শিক্ষার্থী দেখেছেন। 


কোডিনহি গ্রামের কিছু যমজ কেরালার চিকিৎসক ড. কৃষ্ণান শ্রীবিজু গ্রামটিতে এতসংখ্যক যমজ সন্তান জন্মানোর রহস্য নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার দাবি, কোডিনহিতে যমজদের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে বেশি। তিনি বলেন, ‘আমার মেডিক্যাল অভিমত বলছে, ৩০০ থেকে ৩৫০ যমজ আছে এই গ্রামে। প্রতি বছরই এই সংখ্যা বেড়ে চলছে। গত ১০ বছরে কোডিনহিতে যমজের সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।’

গ্রামবাসীদের মন্তব্য, কোডিনহিতে যমজ সন্তান জন্মানোর প্রবণতা তিন প্রজন্ম আগে শুরু হয়। তবে ড. শ্রীবিজু মনে করেন, ৬০-৭০ বছর আগে থেকে এমনটি হয়ে আসছে। তার মতে, এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে এখানকার মানুষের খাদ্যাভাস ও পানি। তিনি যোগ করেন, বংশগত কারণে অথবা গ্রামের বাসিন্দাদের ওপর অজানা দূষিত উৎসের প্রভাব থেকে স্থানীয় প্রকৃতি এমন হতে পারে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা