চল্লিশ বছর পূর্ণ করলো জনপ্রিয় রম্য ম্যাগাজিন উন্মাদ। এ উপলক্ষে ‘জগৎ জুড়িয়া শুধু ভেজালের ফাঁদ, তার মাঝে খাঁটি আছি আমি উন্মাদ। সেই ১৯৭৮ সাল থেকে’- প্রতিপাদ্যে রাজধানীর ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে ৫ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী উন্মাদ উৎসব। আজ ৯ জুলাই এ উৎসবের শেষ দিন।
চল্লিশ বছরপূর্তি উপলক্ষে ম্যাগাজিনটির পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছিল কার্টুন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী কার্টুনগুলো নিয়ে দৃক গ্যালারির উৎসবে আয়োজন করা হয়েছে কার্টুন প্রর্দশনীর।
উন্মাদের অসংখ্য ভক্ত, পাঠক, অনুরাগীর পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে এই উৎসব। উৎসবে আসছেন দেশবরেণ্য ব্যক্তিরাও। তৃতীয় দিনের উৎসবে যোগ দেন জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমীন হক। উন্মাদের চল্লিশ বছর পূর্তিতে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি রম্য ম্যাগাজিনের চল্লিশ বছর টিকে থাকা নিঃসন্দেহে একটা বড় অর্জন। আমি আশা করি, উন্মাদ আরও অনেক অনেক বছর এভাবে সমান জনপ্রিয়তায় পার করবে এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্রান্তিকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ ড. ইয়াসমীন হক বলেন, ‘এটা খুবই গর্বের যে, বাংলাদেশের বেশিরভাগ কার্টুনিস্টই উন্মাদ থেকে বের হয়েছে এবং হচ্ছে।’ এই ধারা অব্যাহত রেখে আগামী দিনগুলোতেও উন্মাদ মানুষকে নির্মল বিনোদনের খোরাক জুগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
চল্লিশ বছর পূর্তিতে দৃক গ্যালারির উৎসবে রয়েছে উন্মাদের বিভিন্ন প্রকাশনা, টি-শার্ট, মগ ও অন্যান্য উপকরণ নিয়ে স্টল। রয়েছে ফ্রি চায়ের স্টল, উন্মাদ আসন, মন্তব্য লেখার বোর্ড, উন্মাদের স্যুভেনির, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন। তবে সবচেয়ে ভিড় দেখা যায় উন্মাদ কার্টুনিস্টদের হাতে নিজের ছবি আঁকিয়ে নেওয়ার লাইনে। অটোগ্রাফ, সেলফি আর উন্মাদের বিভিন্ন সময়ের বন্ধুদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে এ উৎসব।
উন্মাদ এর সম্পাদক আহসান হাবীব বলেন, ‘একজন কার্টুনিস্টকে শুধু কার্টুন আঁকলেই হয় না, তাকে কমিকস করতে হয়। কমিকসের জায়গায় উন্মাদ অনেক বেশি এগিয়ে তাই এই বিপুল জনপ্রিয়তা। এই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে উন্মাদ নতুন নতুন অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছে যা পাঠকদের আগামীতে আরও বেশি বিনোদিত করবে।’ উন্মাদকে নিজের সন্তানের মতো লালন করেন জানিয়ে আহসান হাবীব বলেন, ‘সারাজীবন উন্মাদের সঙ্গে কাটাতে চাই।’ ভক্ত পাঠকদের জন্য উন্মাদ শীঘ্রই একটি অ্যানিমেশন মুভি প্রকাশ করতে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
উন্মাদের লেখালেখি বিভাগের নির্বাহী সম্পাদক ছড়াকার অনিক খান বলেন, ‘উৎসবে বিপুল মানুষের সমাগমই জানান দেয় যে উন্মাদ কতখানি জনপ্রিয়।’ উন্মাদের চল্লিশ বছরের মধ্যে নিজেই বাইশ বছর ধরে জড়িত জানিয়ে তিনি বলেন, উন্মাদের কোন টার্গেট পাঠক নেই। একটা জেনারেশন উন্মাদ পড়তে পড়তে বড় হয়, বাই জেনারেশন এভাবেই চলছে তাই উন্মাদের পাঠক বিভিন্ন বয়সের এবং বিভিন্ন মাধ্যমের। বাংলা, ইংরেজি এবং মাদ্রাসা সকল মাধ্যমেই উন্মাদের পাঠক সংখ্যা সমান। আর এবারের উৎসবে এত মানুষের উপস্থিতি দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছি। মনে হচ্ছে উন্মাদের আগামী সংখ্যাগুলো আরও বেশি মজার করতে হবে। বিশেষ করে লেখালেখি বিভাগের সম্পাদককে আরও বেশি সিরিয়াস হতে হবে বলে স্বভাবসুলভ রসিকতা করেন তিনি। সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্যাটায়ারের ভূমিকা প্রসংগে তিনি বলেন, ‘কোথাও কোনও অংসগতি কিংবা ভুল দেখা গেলে সেটাকে বিদ্রুপ করাই স্যাটায়ার ম্যাগাজিনের কাজ, তো সে জায়গাতে উন্মাদ অনেক বেশি এগিয়ে। স্যাটায়ার শুধু কার্টুন নয়, লেখালেখির মাধ্যমেও হতে পারে। নব্বইয়ের দশকে আমরা প্রচুর পলিটিক্যাল স্যাটায়ার করতাম। এরশাদ সরকারের আমলে আামাদের একটি সংখ্যা বাজার থেকে তুলে নিতে হয়েছিল। পরে সেটাকে কালো কালি দিয়ে ঢেকে প্রকাশ করেছিলাম। সেটা ছিলো চল্লিশতম সংখ্যা, পরে আমরা সাড়ে চল্লিশতম সংখ্যা নামে আরেকটি সংখ্যা বের করি। এখন অনেকেই পলিটিক্যাল স্যাটায়ার করছে। আসলে পলিটিক্যাল স্যাটায়ার করাটা অনেক সহজও। অতিমাত্রায় পলিটিক্যাল স্যাটায়ার হওয়ার একঘেয়েমিতে পাঠকও অনেকটা বিরক্ত। আমরা এখন পাঠক চাহিদার কথা মাথায় রেখে সফট স্যাটায়ার বা জেনারেল স্যাটায়ারটা বেশি করছি। এজন্যই হয়তো উন্মাদেও জনপ্রিয়তা সবার চাইতে উপরে।’