X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

লাল শাপলার কালবিলায়

ফারুখ আহমেদ
০১ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৩০আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৩১
image

সকাল সাড়ে ছয়টা হবে। নৌকা ধীর গতিতে ছুটে চলেছে। এটা লাল শাপলার সাম্রাজ্য। নৌকায় বসে শাপলার মাথা ধরলেই একেবারে মাটি থেকে ডাটাসহ ফুল চলে আসে। এসব উপভোগ করার সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরাবন্দি করে এগিয়ে চলছিলাম। ঠিক সে সময় পেট কামড়ে ক্ষুধা শব্দটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। এত সকালে নাস্তা বা প্রাতরাশ খাওয়ার সুযোগ কমই হয়। কিন্তু আজ এই সাতসকালে নাস্তা খাওয়ার তাড়া অনুভব করলাম। মনে মনে অবশ্য ভাবছিলাম উপায় নেই। এমন উপায় নেই অবস্থায় সোহানুর রহমান সোহান সেই জলপথে হাত উচিয়ে ঝরনা বাড়ৈর মুদি দোকান দেখালো। স্বস্তি পেলাম। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে চলে এলাম দোকানে। চারদিকে পানি, মধ্যেখানে দ্বীপের মত ঝরনা বাড়ৈর বাড়ি। বিলের পারে মুদি দোকান দেখে ঝরনা বাড়ৈকে হালকাভাবে নেবেন না। তিনি এসডিএফের সভাপতি।

ঝরনা বাড়ৈর দোকানে
ডিম, চা-পান বিস্কিট, বাটার বান ছাড়া এখানে অন্য কিছু বিক্রি হয় না। আমরা ডিম খেলাম, চা-বিস্কিট ও বাটার বান খেয়ে দিদির সঙ্গে গল্পে মজলাম। এটা পশ্চিম কালবিলার গল্প। আমরা কালবিলা এসেছি শাপলা ফুল দেখতে, বরিশালের বিখ্যাত লাল শাপলা।

লাল শাপলা
আগেরদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় এম ভি টার্ন স্টিমারে চেপে বরিশাল যাত্রা করে পরদিন ভোর চারটায় বরিশাল নামি। মধ্য শরতের সেই ভোরবেলা ঘুম ঘুম চোখে বরিশাল স্টিমার ঘাটে নামলাম। ঘাট চত্বর নিঝুম। আলো আঁধারিতে ফিরোজ মোস্তফার ডাকে সংবিৎ ফিরল। বরিশাল স্টিমার ঘাটে তখন টিকেট চেকার ছাড়া আমি আর দুজন এবং ফিরোজের সঙ্গী পাঁচজন। ফিরোজ সোহান ও সোহেল মোল্লাসহ পাঁচজন ওরা রাত জেগে অপেক্ষা করেছিল। ফিরোজের সঙ্গে এখন আমরা উজিরপুর যাব।

লাল শাপলার কালবিলায়
একঘন্টা ৩০ মিনিট দূরের উজিরপুর বরিশালের একটি উপজেলা। একসময় উজিরপুর যেতে বাইক একমাত্র ভরসা ছিল। এখন বাসসহ মাহেন্দ্র অটো রিকসার যাতায়াত এই পথে। আমরা রফিকের মাহেন্দ্র অটোরিকসায় চেপে রওনা হলাম, সে অটো আমাদের অন্ধকার পথ ধরে ফজরের আজান শুনিয়ে শুনিয়ে এগিয়ে চলল। সোহানের ডাকে ঘুম ভাঙল, দেখি আমরা গন্তব্যে চলে এসেছি। রাস্তার বাম পাশে ব্যানার টানানো। তাতে লেখা পশ্চিম কালবিলা শাপলা পর্যটন কেন্দ্র। বাম পাশে নৌকার মাঝিদের হাঁকডাক। আমরা মাঝির সঙ্গে দরদাম করে পছন্দসই একটা নৌকায় চড়ে বসলাম। বৈঠা নয়, ইঞ্জিনচালিত নৌকা। মাথার ওপর সামিয়ানা টাঙ্গানো। নৌকায় উঠে পাটাতনে ক্যামেরার ব্যাগ বাগিয়ে বসে পড়লাম সামনের দিকে মুখ করে, আমার পেছনে বাকি সবাই। তখন সময় সকাল ছয়টা হবে।

লাল শাপলার কালবিলায়
মেঘলা আকাশের জন্য তখনও চারপাশ প্রায় অন্ধকার। নৌকা এগিয়ে চলল আপন গতিতে। ইঞ্জিনচালিত না হয়ে লগি বা বৈঠা চালিত নৌকা হলে ভালো হতো, বিষয়টা আমরা ভালোভাবেই অনুধাবন করলাম। কারণ একটু পরপরই নৌকার পপুলার স্যাফটে শাপলা আটকে শুধু আমাদের যাত্রা বিলম্ব করছিল বলবো না, আসলে বিল ও শাপলার বারোটা বাজাচ্ছিল! যাই হোক, শাপলা সুন্দরীর আড্ডাখানায় ঢুকে পড়তে বেশি সময় লাগলো না। কালবিলা বিলে চলতে সেই সাতসকালে কোথাও পাখির কিচিরমিচির না পেলেও পানিপথে একটা অপূর্ব সুন্দর সূতানলীর দেখা পেলাম। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি দেখে ক্যামেরা বের না করায় সূতানলীর ছবি না তোলার আফসোস ছিল। আবার ভালো লাগাও ছিল, আসলে শুধু ছবি না তুলে মাঝে মধ্যে উপভোগও করতে হয়। আমাদের প্রাত:রাশ হয়নি। আর এত সকালে কখনো এটা হয়ও না। নৌকা আধা ঘন্টা চলার পর প্রচণ্ড ক্ষুধা অনুভব করলাম, তারপরের গল্প শুরুতেই বলেছি!

লাল শাপলার কালবিলায়
পুরো কালবিলা বিলজুড়েই শাপলা সুন্দরীর বসবাস। আমরা চারপাশে কাছে দূরে শাপলাদের সংসার দেখছিলাম। এখানে বিলের এত্ত এত্ত শাপলার মূল বৈশিষ্ট্য এরা সবাই লালরঙা। বিক্ষিপ্তভাবে এখানে ঘিয়ে রঙা শাপলার সঙ্গেও দেখা হয়ে যাচ্ছিলো। প্রচুর চাঁদমালা ফোটার অপেক্ষায়। শাপলা যেমন রাতের বেলা ফোটে, চাঁদমালা ফোটে দিনে। কালবিলা বিলে লাল শাপলার পরই চাঁদমালার অবস্থান। অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জলায় ফুটে আছে নীল শালুক। এভাবেই বিস্তীর্ণ বিলের জলপথে চলতে চলতে হঠাৎ খেয়াল করি ফিরোজ পানিতে কিছু খুঁজছে। একসময় সে তার কাঙ্ক্ষিত চাওয়াটা পেয়েও যায়। দেখি তার হাতে অনেকগুলো ঢ্যাপ। অসংখ্য লাল শাপলার ভিড়ে এসব জলজ সৌন্দর্য আপনার দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে বাধ্য!

লাল শাপলার কালবিলায়
নৌকা আবার থামানো হলো। ফিরোজ এশিয়ান টিভির বরিশাল প্রতিনিধি। ঘুরতে এসে তো এমন কাজ পাগল লোকের বসে থাকার ফুরসত নাই। সে শাপলা দর্শনার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করতেই আমি ব্যস্ত হলাম শাপলা সুন্দরীর ছবি তুলতে। সাক্ষাৎকার নেওয়া বা বিল ও লাল শাপলা দেখার অনুভূতি জানা শেষ হলে নৌকা আবার এগিয়ে চললো আপন গতিতে। এভাবেই কালবিলার ভোর, শাপলা, ঝরনা বাড়ৈ ও তপন ভৌমিকের কোলাজ ফ্রেমবন্দি করতে করতে ফিরে চলি বাইশ মাথা খেজুর গাছের কাছে। ২২ মাথা খেজুর গাছ বিশাল ব্যাপার। আপনাদের তো ২২ মাথা খেজুর গাছ সম্পর্কে বলিনি, সে গল্প আরেকদিন!

লাল শাপলার কালবিলায়
জেনে নিন
শাপলা বিলে বেড়ানোর সেরা সময় সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস। কালবিলা থেকে সাতলার দূরত্ব ১০ মিনিটের। চাইলে দুটো বিলই ঘুরে দেখতে পারেন তাই। শাপলা বিল দেখা শেষ হলে এবার ভাসমান পেয়ারা বাজারসহ বরিশালের সব সৌন্দর্য উপভোগ করুন প্রাণভরে।

লাল শাপলার কালবিলায়
ঢাকা থেকে বরিশাল যাত্রা খুব সহজ। স্টিমার ঘাট শ্যামবাজার। ছাড়ার সময় সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টা। বিষ্যুদবার রাতে রওনা হলে বিশাল মধুমতির যাত্রী হতে পারবেন। এছাড়া এ পথে রয়েছে বিলাসবহুল সব লঞ্চ। যাত্রার সময় রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা। ডেকে যেতে চাইলে সদরঘাটের বরিশাল নতুন ঘাট চলে যান। কেবিন নিলে আগেই ঘাটে গিয়ে বুকিং দিয়ে রাখুন। ডেকের ভাড়া ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা। কেবিন ভাড়া সিঙ্গেল ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। ডাবল ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। বরিশাল ভোর চারটায় পৌঁছে যাবেন। আগে থেকেই তাই মাহেন্দ্র অটোরিকশা বুকিং দিয়ে রাখলে ভালো, না রাখলে ঘাট থেকে কিংবা নখুল্লাবাদ এসে দরদাম করে মাহেন্দ্র/অটোরিকশায় চেপে বসুন। আসা যাওয়া ভাড়া ২ হাজার  থেকে ৩ হাজার টাকা।

লাল শাপলার কালবিলায়

আগেই বলেছি উজিরপুর যেতে সময় লাগে দেড়ঘন্টা। এখানে কালবিলা কিংবা সাতলা যে অংশেই যান, নৌকা ভাড়া এক থেকে দেড়ঘন্টার জন্য ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা নেবে। ছুটির দিন হলে আগে বুকিং দিয়ে নেবেন। নাহলে এসব ভাড়া আকাশ ছোঁয়! শাপলা বিলে শাপলার সঙ্গে সাপেরও বসবাস। সুতরাং বিষয়টা মাথায় রাখবেন। অযথাই নৌকায় বসে বিলের পানিতে পা ঝোলাবেন না। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে রাখুন। যেকোনো সময় বৃষ্টিও চলে আসতে পারে। সুতরাং সঙ্গে বর্ষাতিও রাখুন।

লাল শাপলার কালবিলায়
সতর্কতা
লঞ্চে দেরি করা যাবে না। ঘাটে লঞ্চ ভেরার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রা শুরু করুন। সঙ্গে খাবার পানি শুকনা খাবার ও ক্যাপ বা গামছা নিয়ে নেবেন। নৌকায় বসে কোলাহল করবেন না। বিস্কুট, চকলেট, চিপস, কোমল পানীয় খেলে এসবের পলিথিন বা বোতল সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। শাপলা বিল দেখার পর হাতে প্রচুর সময় পাবেন। সুতরাং ইচ্ছেমত বরিশাল ঘুরাফেরা করে তবেই ফিরতি লঞ্চ ধরুন।

/এনএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
সর্বাধিক পঠিত
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ