X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা ভাইরাস: করণীয় ও বর্জনীয়

ডা. আবীর শাকরান মাহমুদ
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:০০আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:০৫
image

সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত বিষয় হচ্ছে নোভেল করোনা ভাইরাস। এ নিয়ে সকলের ভয়-ভীতি এবং জানার আগ্রহের কমতি নেই। তার চেয়েও ঘাটতি নেই এ বিষয়ে ছড়ানো ভুল ধারণার। গত কয়েকদিন ধরে বিমানবন্দর মেডিক্যাল সেন্টারে করোনা ভাইরাস নিয়ে সরাসরি কাজের সুবাদে এ বিষয়ে কিছু সুস্পষ্ট ধারণা গড়ে উঠেছে আমার। সে সূত্রে নোভেল করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে আলোচনা করছি পাঠকদের জন্য।

করোনা ভাইরাস: করণীয় ও বর্জনীয়

নোভেল করোনা ভাইরাস সম্পর্কে এখন সচেতন মানুষ সবারই কম-বেশি ধারণা আছে। এজন্য এ নিয়ে ভূমিকা কম লিখলাম। আসলে জোর দিচ্ছি কীভাবে নিজেকে আর নিজের পরিবারকে এই রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। কয়েকটি সাধারণ অভ্যাস মেনে চললে এ থেকে বেঁচে থাকা খুবই সহজ হয়ে যায়–
ঘন ঘন ভালো করে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। যদি সম্ভব হয়, প্রতি ২ ঘণ্টা পর পর হাত ধোয়া উচিত। ভালো করে বলতে অ্যালকোহল বেসড সলিউশন, যা বাজারে হেক্সিসল বা হেক্সিরাব নামে পাওয়া যায়, সেসব দিয়ে হাত ধুতে পারলে ভালো। না পারলে ভালো সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করা উচিৎ। অন্তত ২০ সেকেন্ড প্রবাহমান পানির নিচে হাতের তালু, আঙুলের ফাঁকা জায়গা, নখ ভালো করে ঘষে কবজি পর্যন্ত হাত ধোয়া। বাইরে থেকে এসে এবং খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে হাত ধুতে হবে।

বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করা ভীষণ জরুরি। এন৯৫ বা এন৯৯ মাস্ক ব্যবহার করতে পারলে ভালো। তবে, আমাদের দেশে এগুলো অপ্রতুল বিধায় আর যেহেতু এখনও দেশে করোনা ভাইরাসের আউটব্রেকের খবর পাওয়া যায়নি, অন্তত সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহারের অনুরোধ করছি। সার্জিক্যাল মাস্কগুলো সাধারণত ৩ লেয়ারের হয়। যেগুলো সাধারণ ক্ষেত্রে ভাইরাসকে আটকাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে গবেষণা চলছে। বিতর্কেরও শেষ নেই। এজন্য বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করে অন্তত ২টা মাস্ক একত্রে ব্যবহার করতে পারলে ভালো হয়। আর নীল-সাদা কোন পাশ বাইরে রাখতে হবে, সেটা নিতান্তই ব্যক্তিগত। উভয় ক্ষেত্রেই তিনটি লেয়ার থাকে যেহেতু, সুরক্ষাও একই থাকে। সাধারণত নীল পাশ বাইরেই রাখা হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, মাস্কের যে পাশ সামনে থাকে তাতে আড়াআড়িভাবে থাকা ভাঁজ গুলো যাতে নিম্নমুখী থাকে। তাহলে ভাঁজেভাঁজে ধুলোবালি আটকে থাকার সম্ভাবনা কমে যায়।
এ ভাইরাসগুলো সাধারণত কয়েক মিটার দূরত্ব গিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য রোগাক্রান্ত ব্যক্তির থেকে অন্তত ২ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে চলাই উত্তম। আর যাদের উপসর্গ দেখা দেবে, তাদের থেকেও নিরাপদ দূরত্ব রেখে চলতে হবে। হাঁচি দেওয়ার সময় অবশ্যই নাক-মুখ ঢেকে হাঁচি দিতে হবে। প্রয়োজনে টিস্যু দিয়ে ঢেকে সেই টিস্যু ফেলে দিতে হবে যাতে সে টিস্যু থেকেও আবার জীবাণু না ছড়ায়। আর হাতের কাছে টিস্যু বা রুমাল না থাকলে হাতের কনুই বাকা করে সে ভাঁজ দিয়ে নাক ঢেকে হাঁচি দিতে হবে। হাতের তালু ব্যবহার না করাই ভালো। হাতের তালু দিয়ে সব জায়গায় স্পর্শ করা হয়, এজন্য হাতের তালু নাক বা মুখের কাছে নিলে তা থেকেও বাইরে থেকে শ্বাসনালীতে জীবাণু ঢুকার সম্ভাবনা থেকে যায়।
এ ভাইরাস রোদে বেশিক্ষণ থাকলে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য বাইরে থেকে এসে ব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদ ভালো করে রোদে বা উচ্চ তাপমাত্রায় শুকাতে হবে। ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের পাবলিক প্লেস এড়িয়ে চলতে হবে। জ্বর-কাশি-সর্দি থাকলে তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব (অন্তত ২ মিটার) বজায় রাখতে হবে। করমর্দন পরিহারযোগ্য।
বাজারে বা কসাইখানায় নাক ঢেকে প্রবেশ করতে হবে। বাজার থেকে কিনে আনা মাংস ভালো করে সেদ্ধ করে রান্না করতে হবে। পশু-পাখির সংস্পর্শ কিছুদিন পরিহার করাই ভালো।
এখন যেহেতু ঋতু পরিবর্তনের সময়, জ্বর-অ্যালার্জিজনিত হাঁচি কাশি বা কমন কোল্ড, কিছুটা শ্বাসকষ্ট- এগুলো খুবই নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। তাই জ্বর, মাথাব্যাথা, বমি বা শ্বাসকষ্ট হলেই প্যানিক না হয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যদি কারোর এক্সপোজার হিস্ট্রি থাকে বা যে দেশগুলো বা শহরে কনফার্ম করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে বলে জানা গেছে কিংবা সাম্প্রতিককালে যদি চীনে ভ্রমণ করে থাকেন, তাদের মধ্যে যদি উপসর্গগুলি দেখা দেয়, তবে Institute of Epidemiology Disease Control And Research (IEDCR) এর কন্ট্রোল রুমের হটলাইনে নিজে থেকে জানানোর জন্য বলা হয়েছে। নম্বরগুলো হচ্ছে ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪
আশার কথা হলো, এ লেখার আগ পর্যন্ত জানা সংবাদ অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এ ভাইরাসটি ছড়ায়নি বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। এজন্য গুজব না ছড়িয়ে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়। ম্যাস হিস্টিরিয়া বা প্যানিক ছড়িয়ে পড়া কারোরই কাম্য নয়। আমরা নিজেরা সাবধান থাকি, অন্যকে সচেতন করি।

লেখক: সহকারী বিমানবন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (সাময়িকভাবে সংযুক্ত), হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা।

/এনএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চাঁদপুরে লঞ্চে আগুন, হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত ১০
চাঁদপুরে লঞ্চে আগুন, হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত ১০
ঈদযাত্রার সময় দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত: জরিপ
ঈদযাত্রার সময় দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত: জরিপ
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দেওয়া ব্যক্তির মৃত্যু
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দেওয়া ব্যক্তির মৃত্যু
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার বিকল্প নেই
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার বিকল্প নেই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া