X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
হাসান আজিজুল হক

আমাদের সাহিত্যের শিক্ষক

পারভেজ হোসেন
১৬ নভেম্বর ২০২১, ০২:৪৪আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২১, ০২:৪৪

হাসান আজিজুল হকের চলে যাওয়া আমার কাছে এই মুহূর্ত বর্জপাতের মতো। আমাদের মাথার ওপর থেকে সাহিত্যের অভিবাবকগণ একে একে চলে যাচ্ছেন। আমার ভক্তি ও শ্রদ্ধার মানুষ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস অনেক আগেই চলে গিয়েছেন। আমার দীর্ঘদিনের শিক্ষক শওকত আলী—ইন্টারমিডিয়েট থেকে মাস্টার্স—পুরোটা সময়জুড়ে তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। তাঁকে হারিয়েছি। যদিও রাজশাহীতে হাসান আজিজুল হক স্যারের সঙ্গে আমার দেখা-পরিচয় হয়েছে খানিক পরে। অর্থাৎ, আশির দশকের শুরু থেকে হাসান স্যারের সৃষ্টির সঙ্গে পরিচয় এবং পরবর্তীতে ঘনিষ্ঠতা। তাঁর লেখা পড়ে আমরা উদ্দীপ্ত হতাম। কবে তাঁর নতুন বইয়ের প্রকাশ হবে তার জন্য অপেক্ষা করতাম। পরে যখন স্যারের সঙ্গে আরও সাহিত্যিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হলো আমাদের আলাপ হতো দীর্ঘ সময় ধরে। অনেক কিছু শিখেছি স্যারের আলাপ থেকে। আমাদেরও বয়স বাড়ছে, এখন বুঝি অভিভাবক হারানোর যন্ত্রণা কতটা তীব্র! কিছুদিন আগে চলে গেলেন আমাদের প্রিয় সৈয়দ শামসুল হক। তার সঙ্গে বহুদিনের সম্পর্ক হয়তো ছিল না। তবে শেষ দিকে তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হকের কল্যাণে তাঁর সঙ্গেও খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম। তাঁর চলে যাওয়াও আমার প্রাণে তীব্র আঘাত হেনেছিল।

আব্দুল মান্নান সৈয়দ হকের সঙ্গে ভীষণ ঘনিষ্ঠ ছিলাম। তার সঙ্গে ছোটকাগজকেন্দ্রিক আলাপ-আলোচনা হতো; ছোটকাগজ কি? ছোটকাগজ কেন আমরা করব? এইসব বিষয়ে যার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি আলাপ হতো, তিনিই হলেন কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ। তিনিও আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন অনেক আগেই। এই পীড়ন আজও বয়ে বেড়াচ্ছি। কিছু করার নেই, এই তো জীবনের নিয়ম। কেউ চিরদিন থাকবেন না, চলে যাবেন। হাসান স্যারের চলে যাওয়ার আচমকা সংবাদে আমার আত্মা আঁতকে উঠেছে।

হাসান আজিজুল হকের লেখাজোখার বৃহৎ অংশজুড়ে রয়েছে রাঢ়বঙ্গ। তাঁর সৃষ্টির বড়োঅংশ জুড়ে আছে সাতচলিস্নশের দেশভাগ; দেশ হারানো মানুষের ব্যথা, যন্ত্রণা, হাহাকার—প্রথমদিককার গল্পগুলো তার পরিচায়ক। আমরা যখন তার প্রথম বই সমুদ্রের স্বপ্ন : শীতের অরণ্য পড়ি। তারপর জীবন ঘষে আগুন, আত্মজা ও একটি করবী গাছ আরও পরে পড়ি নামহীন গোত্রহীন, পাতালে হাসপাতালে, মা-মেয়ের সংসার। এই বইগুলোর ধারাক্রম পাঠ অনুযায়ী আমার বিবেচনায় তিনি ধীরে ধীরে বাংলাভাষার সার্থক লেখক হয়ে উঠেছেন। তিনি রাজনীতি সচেতন, অর্থনীতি সচেতন মানুষ। এবং বিশ্বদরবারেও অগ্রগন্য মানুষ। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো মানুষের জীবন সম্পর্কে তার যে ধারণা এবং চরিত্রের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা—তা এককথায় অসাধারণ।

সাবিত্রী উপাখ্যান উপন্যাসটি এত চমৎকার যে, এটি যদি অন্য কোনো ভাষায় রচিত হতো তাহলে আমরা অনুবাদ পড়ে হইচই করতাম। হাসান আজিজুল হক হলেন আমাদের সাহিত্যের শিক্ষক। তার লেখা পড়ে আমরা প্রতিনিয়ত শিখি। সত্যি বলতে কি, হাসান আজিজুল হকের লেখা পড়তে গেলে প্রস্তুতি লাগে। সবার লেখা পড়তে প্রস্তুতি লাগে না। কিন্তু তাকে পড়তে গেলে অবশ্যই প্রস্তুতি লাগে। নানান রকম লেখা তিনি লিখেছেন। এর মধ্যে প্রবন্ধ, নাটক, শিশুসাহিত্য, স্মৃতিকথাও রয়েছে। আসলে তার লেখা শুরু থেকেই আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। আমাদের মাথার ওপর থেকে এমন একজন লেখক চলে গেলেন যা ভাষায় অবর্ণনীয়। তাঁর এই চলে যাওয়া মানে অভিভাবকহীন হয়ে পড়া। আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়লাম।

শ্রুতিলিখন : অরবিন্দ চক্রবর্তী

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা