X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

অমিয় চক্রবর্তী : কবিতায় নতুন ছবি আঁকিয়ে

আবু আফজাল সালেহ
১০ এপ্রিল ২০২২, ১৩:৫৩আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২২, ১৩:৫৩

আধুনিক বাংলা কবিতার গোড়াপত্তন হয় মূলত তিরিশ দশক থেকে। এই গোড়াপত্তন যাদের হাত ধরে হয়েছে তাদের ভেতর অন্যতম অমিয় চক্রবর্তী (১০ এপ্রিল ১৯০১ খ্রি.—১২ জুন ১৯৮৬ খ্রি.)। বুদ্ধদেব বসু অসংকোচে অমিয় চক্রবর্তীকে বলতেন ‘কবির কবি’। তাঁর কবিতার ভেতরে আবেগের সঙ্গে মিশে আছে মননশীলতা। সময় ও সমাজ-সচেতনতা এবং প্রগাঢ় দার্শনিকতার মধ্যে অন্তর্লীন হয়ে আছে তাঁর কবিতা। সমকালীন বাংলাসাহিত্যের অন্যতম আধ্যাত্মিক কবি অমিয় চক্রবর্তী। তাঁর কলাকৌশলে নতুনত্ব, চমকপ্রদ ভঙ্গিমা কবিতায় প্রোথিত হয়েছে। তিনি কোথাও-কোথাও মিস্টিসিজম-এর প্রান্তে এসে পৌঁছেছেন; যাকে অনুভব করার জন্য একটি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় প্রয়োজন হতে পারে।

অমিয় চক্রবর্তীর কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই কবিতাবলী (১৯২৪-২৫)। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ : খসড়া (১৯৩৮), এক মুঠো (১৯৩৯), মাটির দেয়াল (১৯৪২), অভিজ্ঞান বসন্ত (১৯৪৩), দূরযানী (১৯৪৪), পারাপার (১৯৫৩), পালাবদল (১৯৫৫), ঘরে ফেরার দিন (১৯৬১), হারানো অর্কিড (১৯৬৬), পুষ্পিত ইমেজ (১৯৬৭), অমরাবতী (১৯৭২), অনিঃশেষ (১৯৭৬), নতুন কবিতা (১৯৮০)। প্রবন্ধ সংকলন : সাম্প্রতিক (১৯৬৩)। তাছাড়া ইংরেজি ভাষায় রচিত তাঁর ৯টি বই রয়েছে। কবিতার জন্য তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। বাংলাসাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য অমিয় চক্রবর্তী পেয়েছেন ইউনেস্কো পুরস্কার, পদ্মভূষণ পুরস্কার, সাহিত্য একাডেমিসহ বিভিন্ন পুরস্কার। চলো যাই ভ্রমণগ্রন্থের জন্য ‘ইউনেস্কো পুরস্কার’ (১৯৬৪) পান। আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ‘ওয়াটুমল ফাউন্ডেশন’ পুরস্কার লাভ করেন।

পাঠক একই জিনিস বা ঘটনা বারবার দেখতে চান না। এমনকি একই ঘটনা দুইবার প্রয়োগ বা প্রকাশও পাঠকের নিকট বিরক্তিকর হতে পারে। তাই নতুন কিছু পাঠক সবসময়ই প্রত্যাশা করেন। সময়ের সঙ্গে গতি বা সমন্বয় রেখে নতুন স্বাদ দিতে পারলে পাঠক তৃপ্তিবোধ করেন। এর জন্য দরকার শব্দ বা চিত্রকল্পে নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য। কবি অমিয় চক্রবর্তী এক্ষেত্রে সফল। তিনি কবিতায় নতুন একটি টোন বা স্বর সৃষ্টি করে একটি নতুন জগৎ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। পঞ্চকবির অন্য চারজন থেকে নিজেকে পৃথক করতে পেরেছেন কবি অমিয় চক্রবর্তী। তাঁর নান্দনিক ভাবাদর্শ সূর্যের মতোই স্বচ্ছ। নিরবিচ্ছিন্ন নদীর স্রোতের মতো বয়ে চলে তাঁর ভাবকল্পনাগুলো। তাঁর কবিতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, জীবন ও জগৎ থেকে আনন্দ নিংড়ে নেওয়ার রূপান্তর; অসীম বিস্ময়বোধ থেকে প্রেরণা পাওয়া। সময়সচেতন হতে হয় কবিকে। কবি অমিয় চক্রবর্তীও সময়বোধের প্রকাশ লক্ষ করি। ছবি এঁকে সেগুলোকে সমন্বয় করার ক্ষমতা ভালো কবিতার গুণ। কবিতায় আশ্চর্য বাচনিক বৈচিত্র্য ও বহুমাত্রিকতার সন্ধান পাওয়া যায়। যৌগিক, হাসপাতাল, চায়ের পেয়ালা, সমুদ্র, ঠারে ঠারে, পুষ্পদৃষ্টি, মেঘদূত, কুয়াতলা কবিতাগুলির সহাবস্থান তারই প্রমাণ দেয়। ‘চাওয়া ও পাওয়া’র কথা অতি সহজেই লিখে ফেলতে পারেন বড়ো কবিরা। অমিয় কিন্তু পেরেছেন; খুব সফলভাবেই পেরেছেন। সুন্দর সুন্দর জিনিস দিয়ে সৌন্দর্য প্রকাশ করেছেন তিনি। উৎপাদিত, পুনঃউৎপাদিত ক্ষমতা রয়েছে তাঁর কবিতায়। কাজে বা ঘোরার জন্য তিনি অনেক দেশে ভ্রমণ করেছেন। ফলে তিনি কবিতায় চলতি-পথের বিদেশি ছবি নিপুণতার সঙ্গে আঁকতে পেরেছেন। এসব কবিতায় ভৌগোলিক আবেদন সমীহ করার মতো। তাঁর ব্যবহৃত ছবিগুলো হয়ে ওঠে চমৎকার সব চিত্রকল্প। সপক্ষে প্রমাণক হিসেবে 'বৈদান্তিক', 'বিনিময়', 'ওক্লাহোমা', 'পারাপার', 'পালাবদল', 'অতন্দ্রিলা', 'ছবি', 'বৃষ্টি', 'চিরদিন' প্রভৃতি কবিতাগুলো পড়া যায়।

'আমি যেন বলি আর তুমি যেন শোনো (চিরদিন)', 'কেঁদেও পাবে না তারে বর্ষার অজস্র জলধারে (বৃষ্টি)', 'দুজনার যেতে ঐ নীল সিন্ধু-পাখি-ওড়া তীরে (শ্রীমান-শ্রীমতি)', 'কাছাকাছি ফিরে আসা দুজনের বেদনা বাতাসে (মিলন দিগন্ত)', 'কেন দুজনার তবুও ধরণীতে স্বচ্ছ অন্তরাল (দুই স্বপ্ন)', 'চলো, কার্মেলিতা, চলো আবার তোমার নিজ দেশে (পরিচয়)' ইত্যাদি ভাষ্য প্রেমের কবিতায় নতুনত্ব এসেছে। পাওয়া ও না-পাওয়ার অনুভূতি পাঠককে নাড়া দিতে সক্ষম। এসব কবিতার মতো প্রেমের অন্য কবিতাগুলো অমিয় চক্রবর্তী সম্ভবত প্রথম (সম্ভবত একমাত্র) প্রেমের কবি যিনি নারীর শরীরে প্রবেশ করেননি বলে বলে ধরে নেওয়া সঙ্গত হবে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং দেহ বাদ দিয়ে শুধু 'ভাব'-কে প্রস্ফুটিত করেছেন, বিকশিত করেছেন। দেহের বিষয়ে মৌন থাকলেও তাঁর কামনা ও বাসনার আবেদনে কোনও ঘাটতি নেই; বরং এসব চিত্র কবিতাকে রঙিন করেছেন কাঙ্ক্ষিত চাওয়ারও বেশি। রবীন্দ্রনাথের গান যেমন প্রথমেই ভালো লাগে না; কিন্তু একবার উপলব্ধি করতে পারলেই সেখান থেকে ইচ্ছে করলেও বের হওয়া কঠিন। একই কথা প্রযোজ্য অমিয় চক্রবর্তীর কবিতার (বিশেষত প্রেমের কবিতা) ক্ষেত্রেও। তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ 'খসড়া (১৯৩৮)' প্রকাশিত হওয়ার পর অমিয় চক্রবর্তীর কবিপ্রতিভা বা কবিশক্তির সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। অমিয় চক্রবর্তীর কবিতায় দৈহিকতা আছে, তবে রক্তমাংসের আক্রমণ খুব কমই। দৃষ্টভঙ্গিতে তিনি মার্জিত ও পরিশীলিত। কিছু ‍উদাহরণ :

১. 'ফুলে নোওয়ানো ছায়া ডালটা
বেগুনি মেঘের ওড়া পালটা
ভরল হৃদয়তল (বিনিময়)'

২. 'যেখানে রওনা শুরু তার থেকে ঘড়ি বলে, শুধু
মিনিট খানিকও নয় : দাঁড়িয়েছি একাকিনী তবু
বসেছি পায়ের কাছে (অ্যান আর্বার)'

৩. 'শোনো চেনা কণ্ঠ, দেখ চেনা চোখ তবে
মুহূর্তেই মূর্ছায় সব শেষ হবে।
দুই জন্ম দুই থাক, মধ্যে সাঁকো পারাপার,
কার্মেলিতা, দেখ এক প্রেম পারাবার (পরিচয়)'

৪. অতন্দ্রিলা,
হঠাৎ কখন শুভ্র বিছানায় পড়ে জ্যোৎস্না,
দেখি তুমি নেই (রাত্রী)

৫. কেঁদেও পাবে না তাকে বর্ষার অজস্র জলধারে।
ফাল্গুন বিকেলে বৃষ্টি নামে।
শহরের পথে দ্রুত অন্ধকার।
লুটোয় পাথরে জল, হাওয়া তমস্বিনী;
আকাশে বিদ্যুত্জ্বলা বর্শা হানে
ইন্দ্রমেঘ;
কালো দিন গলির রাস্তায়।
কেঁদেও পাবে না তাকে অজস্র বর্ষার জলধারে। (বৃষ্টি)

‘কোথায় চলছে পৃথিবী।/ আমারও নেই ঘর/ আছে ঘরের দিকে যাওয়া (কোথায় চলছে পৃথিবী)। গদ্যকবিতা অমিয় চক্রবর্তীর প্রধান বৈশিষ্ট্য। কোথাও কোথাও ছন্দ এবং অন্ত্যমিলের দারুণ কারুকার্জের; আবার একই কবিতায় একাধিক ছন্দ প্রয়োগ দেখা যায়। গদ্যের ফাঁকে ফাঁকে পদ্য জুড়ে দিয়েছেন তিনি। সত্যিকারের মুক্তকছন্দে অমিয় হয়ে ওঠেন জাত কবিতাশিল্পী।

১. 'ভেবেছি ওড়াব মানস বাতাসে ফিরে
তোমার সবুজ চুলে ঢেউ তুলে
মৃদু শিরি, কোরাল দ্বীপের
ওগো নারকেল, সারি নারকল, একাকী সিন্ধুতীরে।
(দীপান্তরে/ কবিতা পত্রিকা, বর্ষ ২১ সংখ্যা ৪)

২. 'অন্তে দেখে দরজা খোলা—
এক দিকে নীল
জ্যোতির শূন্য মাটির থালায়,
আকাশে চিল' (মৃত্যু, কবিতা পত্রিকা, পৌষ ১৩৬২)

৩. 'প্রবাসকুসুম ফোটে ঝরে, সমুদ্রে ঢেউ ভঙ্গিধারা
ঘরে তোমার আসুক না দোল
অনন্ত রোল,
সূর্যচন্দ্র তোমাকে চায়, তারই অনুরঙ্গী তারা।'
(দুই ছন্দে, কবিতা পত্রিকা, পৌষ ১৩৬২ সংখ্যা)

অমিয় চক্রবর্তীর কবিতায় ইমেজ বা চিত্রকল্প-নির্মাণে বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। তাঁর কবিতার অধিকাংশ ইমেজ বস্তুজগৎ থেকে আহরিত। এই বস্তুজগতের সঙ্গে মননজগতের সংযোগ ঘটেছে। অনেক চিত্রকল্প ব্যবহৃত হয়ে প্রতীকে পরিণত হয়েছে; যেমন—সিঁড়ি, বাড়ি, বৃক্ষ, বৃষ্টি, এরোপ্লেন। বর্ণনামূলক ভাষা, প্রচুর বৈচিত্র্য বিশেষণ, বিশেষ্য ও ক্রিয়ার ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে কবি অমিয় চক্রবর্তী চিত্ররূপ নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। পঞ্চপাণ্ডবের আগে যা দেখা যেত না। উপমা-উৎপ্রেক্ষা, রূপক ইত্যাদির সফল ব্যবহার করে তিনি ইউরোপীয় কবিতার ওজস্বিতা ঢুকিয়ে দিয়েছেন বাংলা কবিতায়। বৈচিত্র্য চিত্রময়তা কবিতায় নিজস্ব একটি স্বর সৃষ্টি করতে পেরেছেন। অনেক নতুন (অব্যবহৃত ও যৌগিক শব্দ গঠন ইত্যাদি) শব্দ ব্যবহার করেছেন তিনি। আবার কোনো-কোনো স্থানে উপভাষা ও কথ্যভাষার ব্যবহার করেছেন। চিত্রকল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে তার এ নির্বাচন বা প্রায়োগিক ক্ষমতা কবিতায় গতি এনে নবদিগন্ত সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। এসবের মাধ্যমে জীবনের গভীরতম স্তরকে স্পর্শ করেছেন। যেমন, 'তুমি হীন জীবন/ তাতে রাঙা হয়ে বেলা নামে'। আধুনিকতার নামের ফাঁকিবাজ বা লুকিয়ে রাখার প্রবণতা এড়িয়ে গেছেন তিনি। জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশের ছবি এঁকেছেন কবিতায়। 'ফুলকে ছোঁব। দেখব। এক হব মাধুরীর ডুবে/ ধ্যানে নয়, টবে নয়, নয় মালায়, বোতলে গন্ধ ফোঁটায়/ —ফুলকে পাব বোঁটায়।' কী সুন্দর ছবি অঙ্কন! ফুলকে তিনি বোঁটায় দেখতে চান, দেখতে চান ধ্যানেও। অথবা যদি অমিয় চক্রবর্তী বলেন এভাবে, 'স্পষ্ট চাওয়া এই। পাব একবার পাব।/ শঙ্খচক্রআঁকা তার রঙিন দ্বারে যাব'। কবির অভিজ্ঞতার বুননে সমুদ্রকে কারখানা, আকাশকে হাতঘড়ি, কুয়োকে চোঙ বলে মনে হয়। কবিতায় তিনি দুরবিন, ফ্রিজ, কম্পাস, ট্রেন, ঘড়ি, এরোপ্লেন, ট্রাক্টর, অনুবীক্ষণযন্ত্র, মাইক্রো, কলকারখানার চিত্র তুলে এনেছেন। আসলে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা, বিজ্ঞানের নানাবিধ বিষয় মেনে নেওয়ার প্রবণতা অগ্রসর নাগরিক বা পাঠকের বৈশিষ্ট্য। বিজ্ঞান ও আবিষ্কার সম্পর্কে কবি অমিয় চক্রবর্তীর ভালো ধারণা ছিল বলে কবিতায় ধরা দেয়। যেমন :

১. 'চাঁপার কলিতে কবি ধরো অণুবীক্ষণযন্ত্র
খুলে যাবে কোমল দিগন্তে দিগন্তে
জ্যামিতিক গড়নের অঙ্গন। সবুজের ঝাঁঝরিতে
আলো ঢোকে, কোষে কোষে'

২. 'নীল আদ্যন্ত হাওয়া
তরী নাক্ষত্রিক
চেতনা
ছোটে কোন এরোড্রামে'।

৩. 'অন্ধকারে ওঠে দেখি হাতঘড়ি
হাতে নয়, খোলা আকাশে।
রেডিয়ম জ্বালা সময়
দপ দপ করছে শূন্য জুড়ি,
চোখ নামাই'

(৪) 'প্লেনের চলার যন্ত্র পায়ে-চেপে, ঐ
বসেছে, পাইলট উড়বে বলে—
রূপোলি আবর্ত গতি শূন্যতলে
রেডারের নিরঙ্কিত দূরে স্পর্শহীন,
আসন্ন মুহূর্তে লীন।' (স্ট্রাটো স্কোয়াড্রন : জে. বি. নম্বর ১৩২/ কবিতা পত্রিকা, বর্ষ ২১ সংখ্যা ৪)

কবিমানসে ফুটে ওঠে স্বদেশ ভাবনা। মাটির প্রতি টান যা মাটিকেই স্পর্শ করে। 'বাস্তুভিটে পৃথিবীর সাধারণ অস্তিত্ব/ যার একখণ্ড এই ক্ষুদ্রচাকরের আমিত্ব'। কবি মনকে কাচ, পুকুর, আকাশ, আয়না প্রভৃতির মতো মনে করেছেন। 'ছোট জলের আয়না/ টুকরো আকাশ লুকিয়ে রাখো'—সমাজের চিত্রণ তাঁর কবিতায়। 'পালানোর ট্রেনভরা শিয়ালদহ', মধুর গ্যাঙ্টক বাজারে নোংরা পেয়ালায় তিব্বতী চা', 'কলিঙ্গ মেয়ে কাঁখে শিশু গায়ে' ইত্যাদি ভাষা তারই প্রমাণ করে। সমাজ-চিত্রণের ‍আরও কয়েকটি উদাহরণ :

১. 'সূর্য অস্তে জানালার শাসি
রঙে যায় ভাসি
রাত্রি নামে'

২. 'অদৃশ্যের চাকা ঘোরে
আঁধি দিয়ে দৃষ্টি দিল ঘিরে।
সর্বস্বে-ধুলো...'

৩. 'বেনুড়ি গ্রামের মানুষ
দাঁড়া, এই থালাটা মেজে নিই, একটু বোস।'

৪. '—ধান খেতে কালো ছায়া
ঐ জমিদারের পেয়াদা'

কবি আধুনিক কোন গুণে হন? ভাষাব্যবহারে কিছুটা, প্রতীক, উপমা উৎপ্রেক্ষায় কিছুটা, কিছুটা নিজের অজান্তে কালধর্মিতাকে বরণ করে। কিন্তু এ-সবই বাহ্য। আধুনিকতার প্রাণ যে-মনোভঙ্গি, যার উদ্ভব বিশেষ করেই বর্তমানের উপলব্ধি ও চেতনা থেকে, তার যদি অভাব কারো কাব্যে ঘটে তাহলে তাঁকে পঙক্তি থেকে বাদ দিতে হয়। (কবিতা পত্রিকা, আশ্বিন সংখ্যা ১৩৬৩)। কবিকে ভেতর থেকেই শুরু করতে হয়; এরপর বাইতে প্রস্ফুটিত হতে হয়, বিকশিত হতে হয়। কবিতা মননশীল। কবির মনের অবস্থার বহিঃপ্রকাশই হচ্ছে কবিতা। কবিতা আলোচনা করতে গেলে চারটি প্রধান গুণ বা চরিত্র আলোচনা করা দরকার। আবেগ, চিত্রকল্প, চিন্তা ও বোধিশক্তির প্রয়োগ, প্রকাশভঙ্গি বা প্রকাশের ক্ষমতা। নানাবিধ অলংকারের নিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ কবিতায় সুষমা বৃদ্ধি করে থাকে। কবি অমিয় চক্রবর্তীর চিন্তার নিজস্বতা, চিন্তার সত্যতা, চিন্তার অস্তিত্ব বা মৌলিকতা, স্থান-কাল-ভেদে বাস্তবতা ইত্যাদি কবিতার মান উন্নীত করতে সহায়তা করেছে।


সহায়কসূত্র

১. কবিতার বহুস্বর, তপোধীর ভট্টাচার্য;
২. বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত 'কবিতা পত্রিকা'র কয়েকটি সংখ্যা;
৩. বিভিন্ন ম্যাগাজিনের প্রবন্ধ/ গবেষণাপত্র;
৪. কবি অমিয় চক্রবর্তীর কাব্যগ্রন্থ।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আইসিসি এলিট প্যানেলে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার সৈকত
আইসিসি এলিট প্যানেলে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার সৈকত
অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে ভুটানের রাজার সন্তোষ প্রকাশ
অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে ভুটানের রাজার সন্তোষ প্রকাশ
ট্যুর অপারেশনে ব্যাংকে থাকতে হবে ১০ লাখ টাকা
ট্যুর অপারেশনে ব্যাংকে থাকতে হবে ১০ লাখ টাকা
এনভয় টেক্সটাইলসের ২৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা
এনভয় টেক্সটাইলসের ২৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে