X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

রূপকথার জন্মবৃত্তান্ত

অভিষেক সরকার
২৮ জুলাই ২০২২, ১৬:২৬আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২২, ১৬:২৬

হাঙ্গেরীয় অ্যানিমেশন চিত্রপরিচালক ইস্তভান ওরোজের ‘মাইন্ড দ্য স্টেপস’ মুক্তি পায় ১৯৮৯ সালে। হাঙ্গেরির, বা বলা যেতে পারে, গোটা বিশ্বের ইতিহাসে সে এক সন্ধিক্ষণ। ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রবল শৈত্য কাটিয়ে উঠতে উঠতেই ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে সাবেক সোভিয়েতের সাধের ইস্টার্ন ব্লক। কম্যুনিস্ট শাসিত হাঙ্গেরি, যুগের দাবি মেনেই, গণতন্ত্রে দীক্ষিত হচ্ছে। গত শতকের আটের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে নয়ের দশকের শুরু পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ঘটনাবহুল অধ্যায়গুলোর মধ্যে একটি বললে অত্যুক্তি দোষে দুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই পালাবদলের অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার ছবি আঁকছেন ইস্তভান ওরোজ। আবার এ এক হাঁফ ছাড়ার সময়ও বটে। বহু বছরের অবদমিত ভীতি, ক্ষোভ, ক্রোধ গলগল করে বেরিয়ে আসছে কলমে বা ক্যামেরায়। বার্লিনের বিভাজিকা ভেঙে পড়ার পরের যে উচ্ছ্বাসের ফুটেজ ইন্টারনেট ঘাঁটলে আজও দেখতে পাওয়া যায় তার প্রতীকি গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। অপেক্ষাকৃত স্বল্পচর্চিত অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরির মাঝের কাঁটাতারের বেড়াটিও এই ১৯৮৯ সালেই সরিয়ে ফেলা হয়। ‘মাইন্ড দ্য স্টেপস’-এ ফুটে উঠছে এই অবদমিত ভয়, যুগসন্ধির অনিশ্চয়তা ও ইতিহাসের আপাত বিলুপ্তির এক মহাকাব্য। অথচ, ওরোজের ছোট্ট ৬ মিনিটের অ্যানিমেশনে না আছে সংলাপ, না আছে ঠাসবুনোট কাহিনি, না কোনো রাজনৈতিক ঘটনার সুস্পষ্ট উল্লেখ। পর্দায় ফুটে উঠছে আসবাববাহীর দল। একটি আলমারি নামানো হচ্ছে এক বহুতলের সিঁড়ি দিয়ে। এশার শৈলীর অনন্ত সিঁড়ি বেয়ে তারা নামছে তো নামছেই। যেন আদতে কোনো গন্তব্য নেই কোথাও, এই অনন্ত স্থানান্তরণের কোনো শেষ নেই। থিতু হতে না পারা সময় ইতিহাসকে ছুটি দিয়েছে। এই ভবিষ্যৎহীনতায় অতীতেরও বিলুপ্তি ঘটে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা আবাসিকদের ছায়া দৈত্যাকৃতি, যেন শরীরকে গিলে নিতে চায়। ধোপদুরস্ত আপিসবাবুদের যাতায়াতে কর্তৃত্বের জৌলুসটুকু লেগে থাকলেও সিঁড়ি বেয়ে আদতে তাদেরও কোথাও পৌঁছানোর নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই অস্থিরতা বা ইতিহাসহীনতা কিংবা ছায়াসন্ত্রাসের পাঠ আমি কী করে আমার অভিজ্ঞতায় ধরতে পারছি? সামান্য ঠিকানা বদলের নাতিদীর্ঘ ছায়াছবি দর্শকের কাছে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের দ্যোতক হয়ে উঠছে কী করে? কিছু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য দৃশ্য আমার কাছে তাৎক্ষণিকতা অতিক্রম করে এক বৃহত্তর অর্থের ঠিকানা হয়ে উঠল কী উপায়ে? 
আমার ইন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্রে যে বৈদ্যুতিক সংবেদন পাঠাচ্ছে, তার উৎসই-বা কী? চোখে যা দেখছি তা তো নিতান্তই কিছু দ্বিমাত্রিক বা বড়োজোর ত্রিমাত্রিক চিহ্ন। সেই চিহ্নের শরীরে না ইতিহাস লেখা আছে, না আছে রাজনীতি। তাহলে? এই প্রশ্নই গত শতকের আট-নয়ের দশকে মনোবিজ্ঞানের দুনিয়ায় এক স্পষ্ট বিভাজিকা হয়ে দাঁড়ায়। মনোবিজ্ঞানের যে ধারাটি অধুনা কগনিটিভ সায়েন্স (এর যথার্থ বাংলা পরিভাষা খুঁজে পাওয়া শক্ত, তবে একান্ত ইচ্ছে হলে প্রতীতি বিজ্ঞান বলে ডাকা যেতে পারে) নামে পরিচিত, তার প্রথম যুগের বিজ্ঞানীদের হাতে সদ্য এসে পৌঁছেছিল কম্প্যুটার-প্রযুক্তি বিপ্লবের চোখ-ধাঁধানো আলো তখন জ্ঞানচর্চার অন্য শাখাগুলোর দখল নিচ্ছে ক্রমশ। প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী নোয়াম চমস্কি কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক অ্যালান টুরিং বা আলোনজো চার্চ তাঁদের তত্ত্বে দেখাচ্ছেন যে একটি নির্দিষ্ট অন্বয়কে মানব মস্তিষ্কের (অথবা কম্প্যুটারের) অন্দরমহলে সাজানো কিছু গাণিতিক সূত্রাবলির সাহায্যে বিশ্লেষণ করে ফেলতে পারলেই বোঝা যাবে মানুষের চিন্তনের স্বরূপ। ধরা যাক, বোঝার চেষ্টা করছি, ‘আনোয়ার রাধার বাড়ি গিয়েছিল’ বাক্যটি রামবাবু কী করে তৈরি করলেন? চমস্কির সঞ্জননী ব্যাকরণ বলছে বাক্যে একটি বিশেষ্য এবং একটি ক্রিয়াপদগুচ্ছ থাকা জরুরি। উক্ত বাক্যটির কর্তা, আনোয়ার, ওই বিশেষ্য পদগুচ্ছের অংশ। আর ‘রাধার বাড়ি গিয়েছিল’ ক্রিয়া পদগুচ্ছ। আবার এই ক্রিয়াপদগুচ্ছের ভেতর আছে একটি ক্রিয়াপদ ‘গিয়েছিল’ এবং আরেকটি বিশেষ্য পদগুচ্ছ ‘রাধার বাড়ি’। আরো তলিয়ে দেখতে গেলে এই ক্রিয়া পদগুচ্ছের উদরস্থ বিশেষ্য পদগুচ্ছটিকেও দুটি ভাগে ভেঙে ফেলা যায়—বিশেষ্য ‘বাড়ি’ এবং সেই বাড়িটিকে সংজ্ঞায়িত করছে যে সম্বন্ধ পদ, সেই ‘রাধার’। অর্থাৎ, বাক্যটির অন্বয় থাকে থাকে সাজানো পিরামিডের মতো। 
[[আনোয়ার]বি.প. [[[রাধার]স.প [বাড়ি]বি.]বি.প. [গিয়েছিল]ক্রি.]ক্রি.প.]

জটিলতর বাক্যে অন্বয় জটিলতর। কোথাও বিশেষ্য পদগুচ্ছের দৈর্ঘ্য খুব বেশি হলে বাক্যের ভেতর তার নড়াচড়া বিশেষ সূত্রমাফিক হয় (Heavy NP shift)। আবার বাক্যের ভেতর কোন পদ অন্য কোন পদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক পাতাতে পারে তারও নানান নিয়ম আছে (Binding principles)। যা হোক, তাত্ত্বিক মূলত যা বলছেন তা হলো, এই যে শব্দগুলো দেখতে পাচ্ছি, তার অর্থ চারপাশ থেকে কুড়িয়ে পাওয়া এবং মনের কোণে কোনো এক ভাঁড়ার ঘরের তাকে আমরা তাদের সাজিয়ে রাখি। মনের ভেতর তার চাষ হয় না। আসলে মনকে বুঝতে হলে বুঝতে হবে চিহ্নের সঙ্গে চিহ্ন মিলছে কী শর্তে–সিনট্যাক্স–অন্বয়। অ্যানালিটিক্যাল দর্শনের ধারা মেনে মন্টেগের বাচ্যার্থ বিজ্ঞানও এ বিষয়ে একমত। বিভিন্ন ভাষিক এককের নিজস্ব অর্থগুলো নানান ধরনের বীজগাণিতিক সূত্রে গেঁথে গেঁথে আমরা বাক্য নির্মাণ করি (compositionality)। সুতরাং এই মনস্তাত্বিকচর্চার কেন্দ্রে একধরনের চিহ্ন মিলন্তির খেলা দেখতে পাচ্ছি। ঠিক কম্প্যুটারের মতো মানুষের মনও চিহ্নের সঙ্গে চিহ্ন মেলানোর এক প্রকাণ্ড কারখানা। আরো দুটো বিষয় খেয়াল করা জরুরি—প্রথমত, কার্তেসীয় (দেকার্ত প্রণীত) দর্শনের দেহ-মন দ্বিত্বে ভর করে প্রথম প্রজন্মের কগনিটিভ সায়েন্স আমাদের জ্ঞানতন্ত্রকেও অন্দর ও বাহিরে ভাগ করে ফেলছে। বিশুদ্ধ মন হলো চিহ্নের কারখানা। তার বাইরে যা আছে, সে রাজনীতি হোক বা সমাজনীতি, সে সবই সক্রিয় দেহের সঙ্গে বহির্বিশ্বের ঐতিহাসিক লেনদেনের ফল। হ্যাঁ, মন যে তাতে একেবারে কাজে লাগে না, তা নয়। তবে এসবের সঙ্গে মূল কারখানাটির চরিত্রের তেমন কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই (epiphenomenal)। দ্বিতীয়ত, এই কার্তেসীয় মন, অতএব এই চিহ্নাবলি, ইন্দ্রিয়নির্ভর নয়। বরং আমাদের মনের ভেতর নানান কুঠুরি রয়েছে। এক একটি কুঠুরি একেকরকম কাজের কারখানা। চমস্কি ভাষাবিষয়ক কুঠুরিটির নাম দিয়েছিলেন ‘ল্যাঙ্গোয়েজ অ্যাকুইজিশন ডিভাইস’ (সংক্ষেপে, LAD)। 
আপাত দৃষ্টিতে নিখুঁত যুক্তি সমৃদ্ধ এই বৌদ্ধিক চর্চা দ্বিবিধ সংকটের মুখোমুখি হলো ওই ঘটনাবহুল দশকগুলোতেই (গিলবার্ট রাইলের তাত্ত্বিক অবস্থান জ্ঞানচর্চার এই অঞ্চলে বিশেষ প্রভাবশালী ছিল না)। প্রথম সংকট কেঠো প্রমাণবিষয়ক ইন্দ্রিয় নিরপেক্ষ চিহ্ন যে আদৌ আছে, তার প্রমাণ কী? বাচ্যার্থ বিজ্ঞানীর ল্যাম্বডা ক্যালকুলাস অথবা বিবিধ কোয়ান্টিফায়ারের অস্তিত্বের প্রমাণ কী? দার্শনিক পাল্টা প্রশ্ন তুলবেন, এরা না থাকলে আমি তাদের পেলাম কোথ্থেকে? এই বেলা বলে রাখা ভালো যে প্রশ্নকর্তা চিহ্নের অস্তিত্বের প্রমাণ চাইছেন না, তার ইন্দ্রিয়-নিরপেক্ষতার প্রমাণ চাইছেন। দ্বিতীয় সংকটটি সংকেতান্তরণ সংকট (transduction problem) বলে পরিচিত—যদি চিহ্ন ইন্দ্রিয় নিরপেক্ষ হয়, তাহলে আমাদের নানান অনুভূতি, রোজের অভিজ্ঞতা চিহ্নে অনূদিত হয় কী করে? আমি ভয় বলতে এক বিশেষ অনুভূতি বুঝি, ওরোজ শুধু ছায়ার আকার দিয়ে সেই অনুভূতিকে কী করে উসকে দিলেন? চালু পরিভাষায় একে শিকড়হীনতার সংকটও (grounding problem) বলা হয়। 
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়েই দ্বিতীয় প্রজন্মের কগনিটিভ সায়েন্সের জন্ম। নতুন ধারার এই মনোবিজ্ঞানের দার্শনিক জমি তৈরি করে রেখেছিলেন ব্রেনতানো, হাসার্ল, মার্লো পন্তির মতো ফেনোমেনোলজিস্টরা। মনোবিজ্ঞানের আদি যুগের উইলিয়াম জেমস বা উইলহেল্ম উন্ড এবং পরবর্তীকালে বাস্তুতান্ত্রিক মনস্তাত্ত্বিক গিবসন বা গেশটল্ট চিন্তকরা দরকারি যন্ত্রপাতির সরবরাহে কার্পণ্য করেননি। প্রশ্ন উঠল, নৈর্ব্যক্তিক চিহ্ন-নির্ভর জ্ঞান কি আদৌ সম্ভব? মানুষ কি আর পাঁচটা প্রাণীর থেকে সত্যিই এতটা আলাদা? এতই বিশেষ? ১৯২৯ ও, পরবর্তীকালে, ১৯৪৭-এ কোলারের (Köhler, তবে ö-এর প্রতিবর্ণীকরণ বাংলা ভাষায় বেশ শক্ত) পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা গেছে ‘বুবা/কিকি’ প্রতিক্রিয়ার কথা। আমরা জেনে গেছি একটি নির্দিষ্ট ধ্বনির সঙ্গে মানুষের মন জুড়ে ফেলে নির্দিষ্ট আকারকে। যেমন, কৃত্রিম শব্দ ‘বুবা’ গোলাকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, আর ‘কিকি’ তীক্ষ্ণতার দ্যোতক। অথচ ধ্বনি তো শ্রাব্য, আকার দৃশ্য। ম্যাকগার্কও অন্য একটি পরীক্ষায় দেখিয়েছেন যে দৃশ্যের অনুভূতির সঙ্গে শ্রবণের যোগাযোগ প্রত্যক্ষ ও স্পষ্ট। নতুন ধারার কগনিটিভ সায়েন্সের নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেল একইভাবে স্পর্শও প্রভাবিত করে অন্যান্য ইন্দ্রিয়লব্ধ চিহ্নগুলিকে। উল্টোটাও সত্যি। মার্লো পন্তির দার্শনিক প্রতর্ক-নির্ভর দ্বিতীয় প্রজন্মের কগনিটিভ সায়েন্স দাবি করল চিহ্ন ইন্দ্রিয় নিরপেক্ষ তো নয়ই, এমনকি চিহ্ন ও চিহ্নায়িতের সম্পর্ককেও একেবারে খামখেয়ালি বলা যাবে না (ফার্দিনান্দ দ্য সোস্যুরের চিহ্নতত্ত্বের একেবারে গোড়ার কথা এই খামখেয়ালিপনা)। চিহ্নগুলি কোনো বিমূর্ত মনের ভেতর বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে, এই ধারণাও ভ্রান্ত। আসলে চিহ্নের অর্থের উৎস নিজ নিজ প্রতিবেশে বা বিশ্বে উপ্ত (worlded : সাহিত্য তাত্ত্বিকের গায়ত্রী চক্রবর্তীকে মনে পড়ে যাবে নিশ্চয়ই) চেতন দেহ–মস্তিষ্ক নয় শুধু, জ্ঞানের আধার সমগ্র দেহ। সময়ের দুর্বোধ্য অস্থিরতা আমার স্নায়ুতন্ত্রে, ইন্দ্রিয়ে ও পেশিতে যে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, তার নির্দিষ্ট চিহ্নায়ন সম্ভব কারণ আমার দেহে চিহ্নদের বাস। আসলে আমি যা দেখি, শুনি, স্পর্শ করি তা কিছু চিহ্নমাত্র। সে সিনেমার পর্দায় হোক বা সাহিত্যে। বস্তুবিশ্বে হোক বা ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। পন্তির সুরে সুর মিলিয়ে ন্যাচারালিস্ট দার্শনিকরা (টমাস নাগেল, মাইকেল ডামেট, ড্যান ডেনেট, ইলিনর রশ, অ্যান্ড্রু মার্ভিস এবং আরো অনেকে) বললেন মন কোনো দেহবন্দি বিমূর্ত অস্তিত্ব নয়। লেখকের চিন্তা সাদা পাতার ওপরের অক্ষরগুলোতেই ঘটছে। মস্তিষ্কের স্নায়বিক বিশ্লেষণে তার হদিশ পাওয়া যাবে না। প্রশ্ন উঠতে পারে, চৈতন্য ছাড়া সাদা অক্ষরগুলো কি সম্ভব হতো? না, হতো না। মন হলো এই বিরাট চিহ্নতন্ত্রের সঙ্গে দেহের বোঝাপড়া থেকে উৎসারিত–সমুৎপাদিত–পতীচ্য সমুপ্পাদ। তাই বস্তুবিশ্বের অভিজ্ঞতার অনায়াস অনুবাদ ঘটে যেতে পারে ওরোজের চিহ্নায়নে। এখানেই শিল্পীর মুনশিয়ানা। আসলে বহু চিহ্নকে একই অনুভূতি গ্রন্থিতে বেঁধে রাখে দেহ। বিবর্তনের দীর্ঘযাত্রায় পরিবেশের নানান অনুপ্রাণনায় সাড়া দেওয়ার যে স্বাভাবিক প্রবণতা প্রাণীকুলের উদ্বর্তনের জন্য অপরিহার্য, তা আদতে কিছু চিহ্নের সঙ্গে দেহের লেনদেনের ফল। চিহ্ন বদলে যেতে পারে, কিন্তু সেই প্রণোদনাকে ধারণ করার জন্য নানান চিহ্নতন্ত্রে নানা উপায় আছে। শিল্পীর স্বজ্ঞা তাঁকে বলে দেয় কোন উপায় কার্যকরী। ধরা যাক, কিছু মনে রাখার জন্য আমি কাগজে তা লিখে রাখছি। ওই লিখন প্রক্রিয়ায় অক্ষর, ভাষা, পেশি সঙ্কোচন বা প্রসারণের ধরন সব মিলিয়ে মিশিয়ে যে অভিজ্ঞতা লাভ করছি, স্মৃতিকে তার বাইরে কোথাও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু সব চেতন প্রাণীই যদি এই চিহ্নতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে থাকে তাহলে অন্য প্রাণী শিল্পের জন্ম দেয় না কেন? কেনই-বা ব্যাকরণ ও দর্শনের চর্চা করে না? অন্য কোনো পরিসরে সে আলোচনাও হবে একদিন। আশা করা যাক সেদিন এই প্রতার্কিক পরম্পরার খামতিগুলোও নিবন্ধে ধরা পড়বে। আপাতত লক্ষ্যণীয়, এই পরম্পরার বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা শুধু জ্ঞানকে ইন্দ্রিয়াতীত বলছেন না তাই নয়, বলছেন অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা নিরপেক্ষ নৈর্ব্যক্তিক জ্ঞান আদৌ সম্ভব নয়। চারপাশে যা দেখছি, শুনছি ও বুঝছি, সেই সবই আসলে দেহ ও পরিবেশের নিরন্তর ও নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ থেকে জাত। বস্তুর প্রকৃতি কিংবা দেশ ও কালের নির্দিষ্ট প্রকৃতি আমাদের ইন্দ্রিয়গোচর হয় না। যাকে বাস্তব বলে চিনি তা আসলে এক চিহ্নময় রূপকথা।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
জাবি ছাত্রলীগের সেই ৩ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ 
জাবি ছাত্রলীগের সেই ৩ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ 
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়