X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফিজিক্যাল বুকশপের বিকল্প নেই

সাক্ষাৎকার : মুশফিকুর রহমান
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:০৩আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:০৩

[শাখাওয়াৎ নয়নের লেখালিখির শুরু ২০০৮ থেকে। জন্ম ২০ মে ১৯৭৪, মাদারীপুর জেলায়। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ব্যাপ্টিস্ট চার্চ এবং একটি টিকটিকির গল্প’ ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়। তারপর ‘অদ্ভুত আঁধার এক’ প্রথম উপন্যাস; ‘নিয়তিপাড়ে গলে যাওয়া ডিমগুলি’ প্রথম নিবন্ধগ্রন্থ; এবং ‘অল্প ভাঙ্গা গল্প’ দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ। অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়য়ে অধ্যাপনা এবং গবেষণামূলক পেশায় তিনি নিয়োজিত। অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২২ প্রসঙ্গে কথা বলেন এই লেখক।]

প্রশ্ন : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২ বইমেলা কেমন চান?
উত্তর : উৎসবমুখর বইমেলা চাই।

প্রশ্ন : এ বছর আপনার কি কি বই আসবে? কোন প্রকাশনা থেকে?
উত্তর : ঘাসফুল প্রকাশনী থেকে আমার দ্বিতীয় উপন্যাস এসেছে ‘বোহেমিয়ান।’

প্রশ্ন : বইটি সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : ‘বোহেমিয়ান’ মূলত কয়েকজন বন্ধুর জীবনে গল্প। অনেকে প্রশ্ন করেন, ‘বোহেমিয়ান নাম দিলেন কেন?’ ‘বোহেমিয়ান শব্দের অর্থ ‘উদাসীন’, ‘ছন্নছাড়া মানুষ যারা পথে পথে ঘুরে বেড়ায়’। আমাদের প্রত্যেকের বুকের মধ্যেই একজন উদাসীন মানুষ বাস করে। সেই উদাসীনতা কারো মধ্যে বেশি অথবা কম হতে পারে। তাই তো যার ঘর আছে, সে ঘরের বাহির হতে চায়। আর যার নেই সে ঘর চায়, ঘরে ফিরতে চায়। মানুষের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকেই এই অস্থিরতা বিদ্যমান। বোহেমিয়ান উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মধ্যে এই দিকগুলো প্রবলভাবে আছে।

কয়েকজন সাহিত্যানুরাগীর কাছ থেকে আরেকটি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি—‘বোহেমিয়ান উপন্যাসটি লেখার সময় আপনি কোন দিকটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন?’ আমার কাছে মনে হয়—বাংলাদেশে এখন আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটার আছে। আন্তর্জাতিক মানের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি আছে। কিছু ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানিও হয়েছে। একটু খেয়াল করে দেখুন, এক সময় আমাদের রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবন বাবুর মতো কবি ছিলেন। মানিক, বিভূতি, তারাশংকরের মতো বিশ্বমানের কথাসাহিত্যিক ছিলেন। কিন্তু এখনকার অধিকাংশ কবি-লেখকদের মধ্যে আখ্যানের নির্মাণের সময়, ভৌগোলিক ব্যাপ্তি কিংবা চিন্তার সেরকম গভীরতা খুঁজে পাচ্ছি না। আমি তাই আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে উপন্যাস লেখার চেষ্টা করেছি। পামুক, কুন্দেরা, মার্কেজ, বোরহেস, মুরাকামিদের পথে হাঁটতে চেয়েছি।

প্রশ্ন :  অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১-এর অভিজ্ঞতা কেমন?
উত্তর : আমি তখন দেশে ছিলাম না, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ছিলাম। পত্রপত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুবই হতাশাজনক চিত্র উঠে এসেছে। কবি-লেখক-প্রকাশক-পাঠকরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যার কুপ্রভাব থেকে আমরা এখনো বের হতে পারিনি। বাংলাদেশে এখনো অনেকে জানেনই না, এ বছর বইমেলা হবে কি না? কিংবা কবে থেকে শুরু হবে?

প্রশ্ন : বইমেলার পর আমাদের বই খুঁজে পাওয়া যায় না এবং বইয়ের দোকানও স্বল্প। এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে আপনার ভাবনা যদি জানাতেন।
উত্তর : এটা একটা সিরিয়াস সমস্যা। প্রতিবছর বইমেলায় চার হাজারেরও বেশি নতুন বই প্রকাশিত হয়, অথচ সেই বই বিপণের তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। যা-ও কিছু ছিল সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা শহরে বইয়ের দোকান মোট কতটি? এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। হাতেগোনা কয়েকটি বুকশপ (বাতিঘর, প্রথমা, পাঠক সমাবেশ, উজান) ছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় কিছু বইয়ের দোকান দেখতে পাবেন, যেগুলোকে অনেকে ‘লাইব্রেরি’ বলে। সেগুলোতে মূলত স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার পাঠ্য বই, নোট-গাইড বিক্রি হয়। এই শহরে এত এত শপিং সেন্টার হয়েছে, সেখানে সৃজনশীল বইয়ের দোকান নেই কেন? আপনি বলবেন, বই বিক্রি করে দোকানের খরচ চালানো সম্ভব নয়, তাই কেউ আগ্রহ দেখায় না। তা সত্য।

এই সমস্যা সমাধানে কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে—১) সরকার যদি নীতিমালা করে দেয়, বাংলাদেশের সকল শপিং সেন্টারে কম পক্ষে ১০ শতাংশ দোকান সৃজনশীল বইয়ের জন্য বরাদ্দ থাকতে হবে। নতুবা শপিং সেন্টার নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে সরকার ভর্তুকি দেবে, প্রণোদনা দেবে। এটা কি খুব কঠিন? কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এ ব্যাপারে সরকার কিংবা বিরোধীদলগুলোর কোনো পরিকল্পনা কিংবা প্রতিশ্রুতি নেই। (২) সারা বাংলাদেশের পাবলিক লাইব্রেরির একটি অংশকে সৃজনশীল বুকশপে পরিণত করা যেতে পারে। কারণ জেলা শহরে সৃজনশীল বই পাওয়া সত্যিই কঠিন। (৩) বই বিক্রির ওপর থেকে পাঁচ বছরের জন্য ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার করা উচিত, তাতে এই খাত উপকৃত হবে।

আরেকটি ব্যাপার লক্ষ্যণীয়, সারা পৃথিবীতে এখন ব্যবসা-বাণিজ্য অনলাইনে চলে যাচ্ছে। বইয়ের বাজারেও তাঁর প্রভাব পড়েছে। এটা একটা সমাধান বটে, তবে ফিজিক্যাল বুকশপের বিকল্প নেই। বাংলাদেশে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার (ফেসবুক, ব্লগ, ওয়েবসাইট) করে শাড়ি-চুড়ি-জামা-জুতা কিংবা অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর যে ব্যাপক বিপণন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, বইয়ের ক্ষেত্রে সেটা হলে দারুণ কাজ হতে পারত। সিডনিতে Porosh Sydney নামের একটি শাড়ি-গয়না বিক্রির বুটিকশপ এখন বইও বিক্রি করছে। বাংলাদেশে কি এটা করা যায় না?

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আট বছর পর জাবিতে ডিন নির্বাচন
আট বছর পর জাবিতে ডিন নির্বাচন
তামাকে বিষ, তবুও ঝুঁকছেন কৃষক 
তামাকে বিষ, তবুও ঝুঁকছেন কৃষক 
এফএ কাপে হাল্যান্ডকে নিয়ে সংশয়ে সিটি
এফএ কাপে হাল্যান্ডকে নিয়ে সংশয়ে সিটি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা