X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

চাষী নজরুল ইসলামের সিনেমায় দুর্বৃত্তের ধর্মের ব্যবহার

বিধান রিবেরু
১১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৫:৪৭আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৬:১৩

চাষী নজরুল ইসলাম (অক্টোবর ২৩, ১৯৪১-জানুয়ারি ১১, ২০১৫)
“What, fundamentally, is colonization? To agree on what is not: neither evangelization, nor philanthropic enterprise, nor a desire to push back the frontiers of ignorance, dieseas, and tyranny, nor a project undertaken for the greater glory of God, nor an attempt to extend the rule of law.” –Aimé Césaire
“Except in Ora Egarojon and Sangram most other films appear to use the phenomenon of war time rape as substitute for similar acts when portrayed in a normal commercial Bengali movie.” –Alamgir Kabir

ঔপনিবেশিক শক্তি কখনোই উপনিবেশকে নিজের সমপর্যায়ে উন্নত করার ইচ্ছা তো পোষণ করেই না, বরং তাদের শোষিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত করে নিজেদের সম্পদ আহরণের চেষ্টা করে। আর একারণেই বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। মার্তিনিকের ফরাসি ভাষার কবি ও লেখক এইমে সেজেয়ের উপনিবেশবাদের মর্মার্থ ঠিক যেভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন ১৯৫০ সালে, তাঁর বিখ্যাত ‘উপনিবেশবাদের কথা’ বইতে, ঠিক সেটাই মর্মে মর্মে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ বুঝতে পারছিল সেই পঞ্চাশের দশক থেকেই। তারই পরিণতি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই বাংলাদেশের নির্মাতারা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে শুরু করেন। মূলত দুজনই ছিলেন এই পর্যায়ের কাণ্ডারি- একজন জহির রায়হান ও অপরজন আলমগীর কবির। পরবর্তীকালে, স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশে প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাহিনীচিত্র নির্মাণ করেন চাষী নজরুল ইসলাম, ছবির নাম সকলেই জানেন- ‘ওরা ১১ জন’ (১৯৭২)। বলা বাহুল্য নয়, এই ছবিটিই ছিল নজরুল ইসলামের প্রথম পরিচালিত ছবি। এর আগে তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। প্রথম ছবি করেই তিনি সাফল্য পান। ‘ওরা ১১ জন’ ছবির মূল ১১ জন বাস্তবজীবনেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, আর যুদ্ধ শেষের কয়েকদিনের মধ্যেই এই ছবি মুক্তি পাওয়ায়, বাস্তবজীবনের নায়কদের মানুষ বড় পর্দায় দেখতে প্রেক্ষাগৃহে ছুটে যান। এছাড়া যুদ্ধকালের কিছু হৃদয়বিদারক কাহিনী ছবিতে থাকায় আরো বেশি সাড়া জাগায় ছবিটি।
প্রথম ছবির পর দ্বিতীয় ছবিটিও নজরুল ইসলাম করেছেন মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে। ছবির নাম ‘সংগ্রাম’ (১৯৭৪)। এই ছবিতেও সত্যিকারের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা অংশ নিয়েছিলেন। এরপর একে একে চাষী নজরুল ইসলাম নির্মাণ করেন ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ (১৯৯৭), ‘কামালপুরের যুদ্ধ’ (তথ্যচিত্র, ২০০১) ‘মেঘের পর মেঘ’ (২০০৪) ও ‘ধ্রুবতারা’ (২০০৬)। এসব মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র-সহ তিনি নির্মাণ করেছেন মোট ২৯টি ছবি। ছবির প্রাপ্যতা ও পরিচিতির উপর ভিত্তি করে আমরা এই আলোচনায় নজরুল ইসলামের তিনটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র- ‘ওরা ১১ জন’, ‘সংগ্রাম’ ও ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’- নিয়ে আলাপ করবো। এই তিনটি ছবির ভালোমন্দ নিয়ে অনেক চলচ্চিত্র সমালোচনা হয়েছে। এসব ছবির ভুলত্রুটি নিয়েও কথা হয়েছে। তবে আমাদের লক্ষ্য এসব ছবির ত্রুটি ধরা নয়। নির্দেশনা, সম্পাদনা, সংলাপ, চিত্রনাট্য ইত্যাদি নিয়ে সমালোচনা করা যেত, তবে সেটি করছি না, কারণ বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত। সাম্প্রতিক বাংলাদেশে যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক ও জঙ্গীদের চরমপন্থী কার্যকলাপ বাড়ছে তাতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের সমালোচনা নয়, বরং এসব চলচ্চিত্র থেকে কিভাবে আমরা অনুপ্রাণীত হতে পারি সেটাই হওয়া উচিত মূখ্য বিষয়।

দুই.
১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের দেয়া ১১ দফা দাবি, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১১ জন সেক্টর কমান্ডার এবং ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা- এই তিনটি বিবেচনা থেকেই ছবিটির নাম রাখা হয় ‘ওরা ১১ জন’। ছবিটি পাঠক একাধিকবার দেখেছেন হয় তো, তারপরও সংক্ষেপে যদি বলি- ছবির কাহিনী শুরু হয় ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে। সূচনা পর্বে দেখানো হয় ইয়াহিয়া খানের অ্যাসেম্বলি ঘোষণা না করা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ। এরপর সংক্ষেপে দেখানো হয় ২৫ মার্চের পাকিস্তানি হানাদারদের হত্যাযজ্ঞ। পূর্বপরিকল্পিত ঐ হামলার পর ছবির সকল চরিত্র বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় একে অন্যের কাছ থেকে। এরপর দেখানো হতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিপীড়ন ও নির্যাতন। এবং পরিশেষে বিজয় ও স্বাধীনতা। এর মধ্যেই পরিচালক দেখানোর চেষ্টা করেন রাজাকার ও বীরাঙ্গনাদের। নিজের মুক্তিযোদ্ধা মেয়ের হাতে এক রাজাকারের করুণ পরিণতি দেখানো হয় এতে। ছবির একটি চরিত্র পারভেজ (রাজ্জাক), প্রেমিকা মিতা (শাবানা) বীরাঙ্গনা হওয়া সত্ত্বেও তাকে গ্রহণ করে। এমন আরো ছোট ছোট অনেকগুলো গল্প বলার চেষ্টা করেন নজরুল ইসলাম। খসরুর বন্ধু মিজানের স্ত্রীকন্যা হারানোর গল্প। ক্ষুদিরামের আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে গান লেখা এক মুক্তিযোদ্ধার করুণ মৃত্যুর গল্প। মিতা অর্থাৎ শাবানা যে কিনা ছবিতে রাজ্জাকের প্রেমিকা, গ্রামে গিয়ে তার চিকিৎসা সেবা দেয়া এবং নির্যাতিতা হওয়ার গল্প। এমন ছোট ছোট গল্প নিয়ে গড়ে ওঠে ‘ওরা ১১ জন’।
চাষী নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় ছবিটিও মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে। তবে এই দ্বিতীয় ছবি ‘সংগ্রাম’ আগের ছবির চেয়ে একটু আলাদা, কারণ এখানে দেখানো হয় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে বাঙালি সেনাকর্মকর্তা ও সদস্যদের লড়াই। মূলত তৎকালের মেজর খালেদ মোশারফের দিনলিপি অবলম্বনে এই ছবির চিত্রনাট্য লেখা হয়। দিনলিপির মতই ছবির কাহিনীও ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিস্তৃত। ছবিতে দেখা যায় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সেনাকর্মকর্তা ও সদস্যরা জীবনপণ রেখে যুদ্ধ করছেন, কেউ বা বন্দীদশা থেকে পালিয়ে যুদ্ধে যোগ দিচ্ছেন, কেউ অকাতরে সহযোদ্ধার জন্য প্রাণ দিচ্ছেন। ছবিতে মেজর খালেদ মোশারফের চরিত্রের নামকরণ করা হয় মেজর হাসান। ‘ওরা ১১ জন’ ছবির মতো এই ছবিতেও হাসপাতাল, হাসপাতালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আর্তি, তাদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও সেবিকার ভূমিকাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখানো হয়। দুটি ছবিতেই ধর্ষণের ঘটনাগুলোকে শৈল্পিক উপায়ে, বলতে পারেন রূপকাকারে উপস্থাপন করা হয়। আর এই বিষয়টির প্রশংসা করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংবাদিক আলমগীর কবির। তিনি বলেছেন, এই দুটি ছবিতে অন্য দশটি বাণিজ্যিক ছবির মতো ধর্ষণের ঘটনাকে উপস্থাপন করা হয়নি।
আলোচ্য তৃতীয় ছবিটি কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ থেকে নির্মিত হয়েছে। একই নামের এই ছবিতে দেখানো হয় এক মায়ের কথা, যার নাম বুড়ি। হলদি গাঁয়ের বুড়ি বালিকা থেকে বৃদ্ধ হয়- সাতচল্লিশের দেশভাগ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা- এই সময়টাকে বুড়ির জীবনের সমান্তরালে দেখানোর একটি চেষ্টা করা হয় ছবিতে। তবে মূখ্য বিষয়টি হল মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে বুড়ির নিজের সন্তানকে উৎসর্গ করা। বিপত্নিক চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে হওয়ায় বুড়ির দুটি সৎ ছেলে ছিল। তাদের সাথে সৎভই ছিল তার। কিন্তু নিজের একমাত্র সন্তান হয় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, নাম রইস। যুদ্ধ চলাকালে বুড়ির দুই সৎছেলে দেশের জন্য কাজ করলেও বুড়ি আক্ষেপ করতে থাকে তার ‘বোকাশোকা’ ছেলেটি কি দেশের কোনো কাজেই আসবে না? একদিন তাড়া খেয়ে দুই মুক্তিযোদ্ধা যখন বুড়ির ঘরে আশ্রয় নেয়, তখন তার উঠানে হাজির হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সেসময় রইসের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে পাকসেনাদের হাতে তুলে দেয় বুড়ি, বলে এটাই মুক্তিযোদ্ধা। তখন সেনারা রইসকে নির্মমভাবে গুলি করে মারে বুড়ির সামনেই। এভাবেই দেশের জন্য নিজের ছেলেকে উৎসর্গ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচায় এই নারী। অথচ এই রইসকে পেতেই একসময় বুড়ি মানত করেছিল মাজারে, অনেক আকাঙ্ক্ষার ধন ছিল এই রইস। কিন্তু দেশের জন্য তাকে বিসর্জন দিতে কার্পণ্য করেনি বুড়ি।
পোস্টার উল্লিখিত তিন ছবি সম্পর্কেই সম্পাদনা, কাহিনী বিন্যাস ও নির্দেশনা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। যেমন ‘ওরা ১১ জন’ সম্পর্কে আলমগীর কবির বাস্তবের মুক্তিযোদ্ধা ব্যবহার করাকে প্রশংসা করলেও, সমালোচনা করেন চিত্রনাট্য নিয়ে। তাঁর মতে চিত্রনাট্য লেখার দুর্বলতার কারণে ছবির বিভিন্ন অংশ শেষ পর্যন্ত জোড়া লাগেনি, বিচ্ছিন্ন থেকে গিয়েছে। আর এই কারণে মনে হয়েছে ছবির এগার জন মুক্তিযোদ্ধা বিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। চলচ্চিত্র সমালোচক অনুপম হায়াৎ বলছেন, বাজারি ফর্মুলা মেনেই বানানো হয়েছে ‘ওরা ১১ জন’।
দ্বিতীয় ছবি ‘সংগ্রাম’ সম্পর্কে আলমগীর কবির মনে করেন, ছবিটি বাস্তবের মত করে নিয়মিত সেনাবাহিনীর গেরিলা অভিযান ফুটিয়ে তুলতে পারেনি। এজন্য অনভিজ্ঞতাকেই দায়ী করেন কবির। আর চলচ্চিত্র সমালোচক চিন্ময় মুৎসুদ্দী মনে করেন, ছবিটির সঙ্গে বাড়তি যেসব কাহিনী যুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। আর এই কারণে ছবিটি আবেদন হারায় বলে মন্তব্য করেন মুৎসুদ্দী।
‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ ছবির চিত্রনাট্য ও সংলাপে যথেষ্ট দুর্বলতা ছিল বলে আমার মনে হয়েছে। ছবিটি যেভাবে শুরু হয়েছে- বুড়ির খেলার মধ্য দিয়ে- এই সূচনাটি অর্থহীন ঠেকেছে আমার কাছে। ছবির প্রতিটি ফ্রেম গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। কিন্তু এই ছবিতে বহু অযথা শট ব্যবহার হয়েছে বলে বোধ হয়েছে। সংলাপেও ছিল আনাড়িপনার ছাপ- কখনো শুদ্ধ বাংলা আবার কখনো আঞ্চলিক বাংলার মিশেল। তাছাড়া ছবিতে বাউল নারীর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তেমনি প্রশ্ন রয়েছে বাউলের কণ্ঠে আধুনিক গান ও গায়কি নিয়েও। তবে এসব সমালোচনা একদিকে সরিয়ে রেখে আমরা নজর দিতে চাই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা আর বর্তমান সময়ের দিকে।

তিন.

দুই নম্বর বিশ্বযুদ্ধের আগে পশ্চিমারা সভ্যতা বিস্তারের নামে যে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে সেটার ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে এইমে সেজেয়ের দেখেছেন, তারা একটি সূত্র হাজির করে নিজেদের লুটপাটকে জায়েজ করেছিল। সূত্রটি এমন : খৃস্টবিশ্বাস= সভ্যতা, পৌত্তলিকতা= বর্বরতা। পশ্চিম পাকিস্তানিরা যখন বাংলাদেশেকে উপনিবেশে পরিণত করে শোষণ করছিল এবং এদেশের মানুষ যখন সেটার বিরোধিতা করছিল তখন একইরকম সূত্র তারাও হাজির করে। সূত্রটি এমন: ইসলাম= পাকিস্তানের অখণ্ডতা, স্বাধীকারের পক্ষে= বিশ্বাসঘাতক। এই সূত্রের প্রমাণ আমরা আলোচিত তিনটি চলচ্চিত্রেই পাই।

‘ওরা ১১ জন’ ছবিতে দেখা যায় এক রাজাকার পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে গিয়ে দাবি করছে তারা ‘সাচ্চা মুসলমান’, পরিতাপের বিষয় এই ‘সাচ্চা মুসলমান’ দাবিদাররাই খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন এমন কোনো কাজ নেই যা পাকিস্তানি সেনাদের সহযোাগে করেনি। ছবিতে দেখা যায় মুক্তিবাহিনীর সমালোচনা করে এক রাজাকার আরেক রাজাকারকে বলছে, মুসলমানের পোলা হইয়া জয়বাংলা করে বেশি লাফালাফি করছে। অর্থাৎ ধর্মকে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে স্বাধীনতার বিপক্ষে। উল্টো করে বললে ইসলামকে করা হয়েছে পাকিস্তানের অখণ্ডতার সমার্থক। মুক্তিবাহিনীকে দেশের দুশমন উল্লেখ করে রাজাকারেরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আনুকল্য পাওয়ার চেষ্টা করে। অর্থাৎ স্বাধীনতার পক্ষ মানেই সে দুশমন বা বিশ্বাসঘাতক। রাজাকার পর্ব দেখানোর আগে এই ছবিতেই দেখা যায় পারভেজ ও শিলার বাবার অফিসে এক পাকিস্তানি কর্মকর্তা বলেন, জয়বাংলা বলা বাঙালিরা কাফের ও জারজ, যেহেতু তারা স্বাধীকার চায়। কিন্তু বিষয়টির প্রতিবাদ করায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দিয়ে পারভেজ মানে রাজ্জাকের বাবাকে ধরিয়ে দেয়া হয় ও হত্যা করা হয়। জয়বাংলার লোক মানেই কাফের- এটা বলা তো উল্লিখিত সূত্রেরই প্রতিধ্বনি।
‘সংগ্রাম’ ছবিতে খসরুর মাকে দেখা যায় বলছেন, তার ছেলে যদি সেনাবাহিনী থেকে বেরিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় তাহলে চরম ভুল করবে। তবে কিছু মানুষ আছে যারা সত্যিকারের পাকিস্তানের অখণ্ডতায় বিশ্বাস করে। খসরুর মা উদাহরণ হিসেবে বলেন তাদের গ্রামের দলিলউদ্দিনের কথা। অথচ এই দলিলউদ্দিনই পাকিস্তানি সেনাদের এনে খসরুর বোনকে ধরে নিয়ে যায়। খসরুর মায়ের আকুতির উত্তরে তখন দলিলউদ্দিন বলেছিল- যুদ্ধে সব জায়েজ। অথচ এর আগেই খসরুর মা বলেছিলেন তারা মুসলমান, পাকিস্তানি সেনারা মুসলমানদের কিছু বলে না। কিন্তু মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর তার ভুল ভাঙে, যে সূত্র ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল যে ইসলাম আর পাকিস্তানের অখণ্ডতা সমার্থক, সেই সূত্র ভুল প্রমাণিত হয়। তবে সেসময় পাকিস্তানি সেনাদের দোসর দলিলউদ্দিনের মতো রাজাকারেরা লাগাতার প্রচার করতে থাকে ‘মালাউন’দের সাথে মিশে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানকে ধ্বংস করে ফেলছে। ‘মালাউন’ শব্দটি দুই ধরনের অর্থ বহন করে- একটি সনাতন হিন্দু ধর্ম ও আরেকটি ভারত। আপনি চাইলে বলতে পারেন আরেকটি পরিপূরক সূত্রও এই রাজাকার, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা চালু করেছিল, সেটি হল : মালাউন তথা হিন্দু ও হিন্দুরাষ্ট্র ভারতের প্রতিপক্ষ হল ইসলাম। পাকিস্তানের অনেক মানুষ এখনও মনে করে ভারতের ষড়যন্ত্রেই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। আফসোস তারা বোধহয় ইতিহাসের পাঠ এখনও সঠিকভাবে নিতে পারেননি। আর সেটা পারেননি বলেই এখনও তারা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হলে সেখানকার সংসদে শোক প্রস্তাব পাশ করেন আর রাস্তায় প্রতিবাদ জানাতে নেমে পড়েন।
‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ ছবিতেও, তবে যে ডিসকোর্সের কথা উপরে বলা হল, সেটি উত্তমরূপে ফুটে ওঠে ছবির শেষ দৃশ্যে। যেখানে দেখা যায় বুড়ি তার বোকা ছেলে রইসকে মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে তুলে দিচ্ছে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে, সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে। রইসকে পাওয়ার সাথে সাথেই গুলি করে হত্যা করে পাকসেনারা, আর যাওয়ার সময় বুড়িকে বলে যায় সে সাচ্চা পাকিস্তানি, সাচ্চা মুসলমান। এর মানে ইসলাম= পাকিস্তানের অখণ্ডতা, স্বাধীকারের পক্ষে= বিশ্বাসঘাতক। ভাবুন তো উপনিবেশ, স্বাধীনতার আন্দোলন আর যুদ্ধ- এই পুরো বিষয়টির মধ্যে কি চমৎকার করে ধর্মকে মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল ১৯৭১ সালে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করছে যারা, যারা পাকিস্তানের অখণ্ডতা তথা ঔপনিবেশিক শাসন ও জুলুমকে সমর্থন করছে তারাই সত্যিকারের মুসলমান- এমন ভুয়া মন্ত্রই আওড়ানো হয়েছে সেসময়। আরেকটি ভিন্ন দৃশ্যে দেখা যায়, মনসুর রাজাকার পাকসেনাদের মুক্তিযোদ্ধাদের খবর বলে দেয়, সেসময় সে দাবি করে, সেই সত্যিকারের পাকিস্তানি। এর অর্থ মুক্তিযোদ্ধারা বিশ্বাসঘাতক।
ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করার নজির ব্রিটিশ আমলে যেমন ছিল, তেমনি দেখা গিয়েছে পাকিস্তান আমলেও। ১৯৭১ সালে এসে ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহারের রূপ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া এক বক্তৃতায় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এই প্রসঙ্গে বলছেন-
“ইসলামরক্ষার নামে, মুসলিম রাষ্ট্রের নামে, কী অমানুষিক অত্যাচারই না হলো দেশের মানুষের উপর! পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এদেশী দোসররা ধর্মের নামে সকল বর্বরতার প্রতি সমর্থন জানালেন। ইসলাম ও পাকিস্তানকে অভিন্ন বলে দাবি করে তাঁরা ঘোষণা করলেন যে, পাকিস্তানের বিরোধিতা মানেই ইসলামের বিরোধিতা। যেন পাকিস্তান-সৃষ্টির আগে ইসলামের কোনো অস্তিত্ব ছিল না।”

১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সম্প্রচারিত কথিকায় আলমগীর কবিরও ধর্মকে ব্যবহারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন-
“ইয়াহিয়ার মধ্যযুগীয় পশুরা দিনে ২০ বার, ৩০ বার, ৫০ বার করে ধর্ষণ করত বলে প্রত্যেক দুর্ভাগা নারীকে নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। তারা চোখ বন্ধ করে এসব কাজ করত ইসলামকে ঢাল বানিয়ে, আর ইয়াহিয়া যে দেশকে নিজের রাজত্ব ভাবত, সেটার অখণ্ডতা রক্ষার নামে।”

পাকিস্তানি শাসককূলের এমন সাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠার পেছনে কার্যকারণ তো ছিলই। ব্রিটিশ সাম্রাজাবাদ যে সাম্প্রদায়িকতার আগুনকে ছড়িয়ে দিয়েছিল সেই আগুনেই আলু পোড়া দিতে চেয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানিরা। তারা চেয়েছিলেন মুসলমান অধ্যুষিত পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু বা ‘মালাউন’দের শায়েস্তা করতে পারলে নানা রকম ফায়দা আছে। তারা ভেবেছিল হিন্দুদের উপর অত্যাচার করলে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের মন পাওয়া যাবে। তাই যুদ্ধের প্রথম ভাগে হিন্দুদের স্থাপনা ও হিন্দু ব্যক্তিরাই হয়ে ওঠেন পাকিস্তানিদের হামলার লক্ষ্যবস্তু। কেন সেটা হয়েছিল তা বেশ ভালোভাবেই গুছিয়ে বলেছেন মহাত্মা আহমদ ছফা। তিনি বলছেন, এক কোটির মতো হিন্দু জনগোষ্ঠীকে যদি সীমান্তের ওপারে ঠেলে দেয়া যায় তাহলে মোটা দাগে দুটি ব্যাপার হবে। এক হলো, এই চলে যাওয়া বিপুল জনগোষ্ঠীর ধনসম্পত্তি স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া যাবে। জমিজমা, দোকানপাট, ব্যবসা ও ঘরবাড়ি পেলে পূর্বাঞ্চলের মানুষের বিক্ষোভ কমবে ও যুদ্ধ করার বাসনা মরে যাবে। আর দুই নম্বর হলো, পশ্চিমবঙ্গে সেসময় রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল, এমন অবস্থায় যদি বিপুল পরিমাণ শরণার্থী ঢুকিয়ে দেয়া যায় তাহলে ভারত অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, পাকিস্তানের সমস্যায় তারা নাক গলাবে না। কিন্তু পাকিস্তানিদের এই কাঁচা হিসাব খরকূটোর মতো ভেসে যায়, কারণ তখন এই ভূখণ্ডে স্বাধীনতাকামী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বেশ জোরদার হয়ে উঠেছিল। এটা বোঝার পরই গোটা দেশের উপরই ঝাপিয়ে পড়ে তারা, হত্যা করে ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে।
পশ্চিম পাকিস্তানিদের ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে কিন্তু এদেশের কিছু মানুষ, যারা রাজাকার-আলবদর-আলশামস হয়েছিল, তারা যুক্ত হয়েছিল। কেন যুক্ত হয়েছিল? কারণ কিছু মানুষ সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি ও সম্পদ লুটের মানসিকতা থেকে বেরুতে পারেনি। তাই পাকিস্তানিদের দেয়া ধর্মভিত্তিক সূত্রকে তারা গলায় ঝুলিয়েছিল। একইরকম সূত্র সাম্প্রতিক সময়েও আমরা হাজির হতে দেখি। তবে এগুলো যে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত সেটা শিক্ষিত ও রাজনীতি সচেতন মানুষ মাত্রই বুঝতে পারেন। এই বোঝাটা কার্যকরী করতে হলে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে ইতিহাস থেকে, চেতনার জায়গাটি শাণিত করতে হবে মুক্তিযুদ্ধ থেকেই। যে মুক্তিযুদ্ধ সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যয়বিচারের চেতনাকে ধারণ করে শুরু হয়েছিল, সেই চেতনাকেই আজ সমুন্নত রাখতে হবে, মোকাবেলা করতে হবে সাম্প্রতিক অপশক্তির উত্থানকে।

চার.
পোস্টার ২০১৩ সাল। কুখ্যাত রাজাকার কাদের মোল্লার ফাঁসিকে কেন্দ্র করে শাহবাগে গড়ে ওঠে নতুন আন্দোলন। যে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র। এই গণজাগরণ থেকে দাবি করা হয় যুদ্ধাপরাধীরা যেন সর্বোচ্চ শাস্তি পায়। এমন ন্যয়বিচারের দাবিতে যখন পুরো দেশ উত্তাল তখনই হঠাৎ করে ছড়িয়ে দেয়া হল গণজাগরণ মঞ্চের সাথে যারা যুক্ত, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় তারা সকলে নাস্তিক। এক নতুন সূত্র আমরা আবির্ভুত হতে দেখি, সূত্রটি এমন : যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রার্থী= নাস্তিক। এমন সূত্র দেশের বড় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও আওড়াতে থাকেন। আর এতে পাল্টে যায় পুরো আন্দোলনের গতিমুখ। যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে সেটির বিরোধিতা করতে করতে একটি গোষ্ঠী পৌঁছে যাচ্ছে গুলশান বা শোলাকিয়ার হামলা পর্যন্ত। মাঝে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে খুন করা হল লেখক ও ব্লগারদের। এসব খবর কারো অজানা নয়। প্রশ্ন হল এধরনের অপশক্তিকে রোধ করার কৌশল কি হতে পারে?
আগেই বলেছি মোকাবেলা করার একটি অস্ত্র হতে পারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আবারো বলছি একটি অস্ত্র, একমাত্র নয়। তো এই অস্ত্র নিশ্চয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমাদের সামনে হাজির হবে না। এই অস্ত্র হাতে দেয়া সম্ভব চাষী নজরুল ইসলামের মত আরো নির্মাতাদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র বেশিবেশি করে প্রদর্শনের মাধ্যমেই। সেখানেই লুকিয়ে আছে আমাদের শক্তি। উল্লিখিত তিনটি ছবিতে তো বটেই অন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবিতে আমরা দেখি পাকিস্তানি উপনিবেশের বিরুদ্ধে, পেশাদার সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে, বলতে গেলে নিরস্ত্র অবস্থাতেই নয়মাস লড়াই করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স ও লিঙ্গ নির্বিশেষে এই ভূখণ্ডের মানুষ মনেপ্রাণে চেয়েছে দখলদারিত্বের অবসান ও নিজেদের ন্যায্য অধিকার। এখনো মানুষ ন্যায় বিচার ও অধিকারের জন্য লড়ছে। আর সেই সুযোগে কতিপয় গোষ্ঠী ব্যবহার করছে এদেশেরই গুটিকয়েক বিপথগামী বিষণ্ণ তরুণদের।
তারা নানা নাম নিয়ে এদেশের মানুষের ভেতরকার অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি শুধু নয়, অর্থনীতিকেও ধ্বসিয়ে দিতে বেশ তৎপর। এসবের পেছনে দেশি ও বিদেশি ইন্ধন যে আছে, সেটা পত্রিকার খবরে এরইমধ্যে প্রকাশিত। সাম্প্রতিক এই অস্থিরতার পেছনে সেই পুরনো শকুনের ওড়াওড়ির নজিরও পাওয়া যাচ্ছে বলে সংবাদে রাষ্ট্র হয়েছে।
নয়া উপনিবেশবাদের এই যুগে শত্রু চেনা একটু কঠিনই বৈকি। এইমে সেজেয়ের যে যুগের আলাপ করেছেন ‘ডিসকোর্স অন কলোনিয়ালিজম’ কিতাবে, সেই সাম্রাজ্যবাদের যুগের মত স্বশরীরের এখন ঔপনিবেশিক শক্তি হাজির হয় না। তাদের হয়ে অনেকেই আছে, যারা সাময়িক লাভালাভের কাঙ্গাল, তাদের দিয়ে যুদ্ধ ও দখলদারিত্ব চালানো হয়, ইংরেজিতে এর নাম হয়েছে প্রক্সি ওয়ার। সম্প্রতি লিবিয়া ও সিরিয়ায় তেমনটাই ঘটেছে। সেখানে জনগণকে দ্বিধাবিভক্ত করার উপাদান ছিল এবং সেটাকেই কাজে লাগানো হয়েছে। বাংলাদেশেও নানা উপাদান আছে, যার দরুণ আপনার ভক্তি উবে যাবে, আপনি বিভক্ত হয়ে যাবেন। কিন্তু এর উল্টো উপাদান রয়েছে বাংলাদেশের, যা অন্য অনেক দেশেরই নেই। সেটি হল মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করার ইতিহাস। সেসময়ে অধিকাংশ মানুষ যেমন একটি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী চিন্তা থেকে, শোষণমুক্ত হতে চেয়েছে, এখনও সেই চেষ্টা চালাতে হবে।
জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনগণের আস্থা অর্জন। রাষ্ট্রের পরতে পরতে চেষ্টা চালিয়ে এই আস্থা অর্জন করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার- এই তিনটিকে প্রতিষ্ঠা করা গেলেই জনগণের আস্থা অর্জিত হবে। এতে দেশি বা বিদেশী, কোনো অপশক্তিই সুবিধা করতে পারবে না। ঠিক এমন একটি কথাই ২০০৫ সালে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে চাষী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব পরিবর্তিত হয়েছে, তবে সাক্ষাৎকারে বলা কথাগুলোর সপক্ষেই বোধহয় অধিকাংশ বাংলাদেশি দাঁড়াবেন। চাষী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন-
“আজ দেশে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তার কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হারিয়ে ফেলেছি। যে কারণে মুক্তিযুদ্ধ করেছি সেই কারণগুলো আমরা মনে রাখতে পারিনি। আমাদের সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে সব সংকট বিরাজ করছে তা দূর করতে হলে আমাদের দেশপ্রেমিক হতে হবে, বিভাজন ভুলে একমঞ্চে আসতে হবে।”

ঘরের বিবাদে তৃতীয় পক্ষকে যে কোনোভাবেই হোক সুযোগ দেয়া ঠিক নয়। তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে দ্বিতীয় পক্ষকে ঘায়েল অথবা একই তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে প্রথম পক্ষকে ঘায়েল করার নীতি মেনে চললে তা শেষ পর্যন্ত বানরের পিঠা ভাগের গল্পের পরিণতি পায়। আসুন আমরা বেশি বেশি মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র দেখি, আর বর্তমান যুদ্ধের জন্য রণকৌশল শিখি ইতিহাস থেকে।


 

দোহাই
১. আনিসুজ্জামান, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা, বিপিএল (২০১৫), ঢাকা।
২. আহমদ ছফা, বঙ্গভূমি আন্দোলন, রাষ্ট্র ধর্ম, মুক্তিযুদ্ধ: বাংলাদেশের হিন্দু ইত্যাকার প্রসঙ্গ, মোরশেদ শফিউল হাসান সম্পাদিত আহমদ ছফা : নির্বাচিত প্রবন্ধ, মাওলা ব্রাদার্স (২০০২), ঢাকা।
৩. মির্জা তরিকুল কাদের, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প, বাংলা একাডেমী (১৯৯৩), ঢাকা।
৪. অনুপম হায়াৎ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র (১৯৭১-২০০৭), বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ (২০১১), ঢাকা।
৫. খন্দকার মাহমুদুল হাসান, চলচ্চিত্র, ঐতিহ্য (২০০৬), ঢাকা।
৭. Alamgir Kabir, Film in Bangladesh, Bangla Academy (1979), Dacca.

৮. Alamgir Kabir, This was Radio Bangladesh 1971, Bangla Academy (1984), Dhaka.

৯. Aimé Césaire, Discourse on Colonialism, Translated by Joan Pinkham, Monthly review press (2000), New York.

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ