X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
বুকার জয়ী জর্জ সেন্ডারসের ‘লিংকন ইন দ্য বার্ডো’

কাহিনি সংক্ষেপ : পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ

রাফিক হারিরি
২১ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৫২আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৫৮

কাহিনি সংক্ষেপ : পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ ‘লিংকন ইন দ্য বার্ডো’ আমেরিকান ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার জর্জ সেন্ডারসের একটি পরীক্ষামূলক উপন্যাস। এটাই তার প্রকাশিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস এবং ২০১৭-এর নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলার গ্রন্থ। এবছর উপন্যাসটি ম্যান বুকার পুরস্কার পেয়েছে।

কাহিনি সংক্ষেপ

উপন্যাসে আব্রাহাম লিংকনের জীবনের একটা রাতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সমস্ত ঘটনা সেই রাতকে কেন্দ্র করে ডালপালা মেলেছে। মূল ঘটনা ছিল, ১৮৬২ সালের একটা রাত, যখন লিংকনের ১১ বছর বয়সি ছেলে উইলিয়াম ওয়ালেস মারা যায়। পুরো উপন্যাসেই বর্ণনা করা হয়েছে সন্তান হারানো পিতার মনোবেদনার নানা বিষয়। পাশাপাশি বার্ডো নামের মৃত্যু পরবর্তী এমন এক অতিন্দ্রিয় জায়গার কথা বলা হয়েছে- যেখানে মৃতব্যক্তিরা জেগে ওঠে।

উইলিয়াম ওয়ালেসকে কবর দেয়া হয় ওয়াশিংটনের কবরস্থানে। ওয়াশিংটনের রাতের কবরস্থানের সাথে সন্তানের মৃত্যুর ভেতর দিয়ে আধ্যাত্মিকতার একটা নিবিড় সংযোগ জর্জ এত মেধা আর তুলনাহীনভাবে ঘটিয়েছেন যে, তেমনটা আর দেখা যায় না। তিব্বতিয়ান বুদ্ধীজমের মতে, মৃত্যুর মাধ্যমে পরবর্তী শরীরের জেগে ওঠা কেবল একটা আধ্যাত্মিক স্থানান্তর- এই বিষয়টা জর্জ তার উপন্যাসে দারুণ রহস্য আর অতিন্দ্রিয়বাদের মতো করে বর্ণনা করেছেন। গার্ডিয়ানের মতে, সমসাময়িক উপন্যাসগুলোর মধ্যে জর্জ সেন্ডারস তার ’’লিংকন ইন দ্য বার্ডো’ উপন্যাসটিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এবং পাঠকদের জন্য উন্মোচিত করে দিয়েছেন এক নতুন জগত।

জর্জ সেন্ডারস এই উপন্যাসের বিষয়ে বলেন, অনেক বছর আগে ওয়াশিংটন ডিসি ভ্রমণের সময় আমার স্ত্রীর চাচাতো ভাই একটা সমাধির দিকে আঙুল তুলে আমাকে দেখান। সমাধিটা ছিল আব্রাহাম লিংকনের ১১ বছরের ছেলে উইলিয়াম উইলসের। ১৮৬২ সালে তার ছেলে মারা যায়, লিংকন তখন  আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রিয় সন্তানকে সমাধিস্থ করা হয়। লিংকনের সেই মুহূর্তের ভাবনা, দুঃখ বেদনা অনুভূতি আমার মনের মধ্যে গেথে যায়। আমার মনের মধ্যে যেন সন্তান হারা পিতার একটা চিত্র ভাসতে থাকে। সেই চিত্রটা আমি গত বিশ বছর বহন করেছি। ২০১২ সাল থেকে ভাবনাটাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা শুরু করলাম।

আব্রাহাম লিংকন ও উইলি লিংকন ১১ বছর বয়সে উইলি লিংকন যখন অসুস্থ হয় তখন ডাক্তারদের ধারণা ছিল এটা নিছক ঠাণ্ডা জ্বর। সুস্থ হয়ে উঠবে শিঘ্রই। সেই রাতে লিংকন তার স্ত্রী মেরি টড লিংকনকে সাথে নিয়ে আগে থেকে প্রস্তুত নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন। কুটনীতিকদের সাথে শলা-পরামর্শ করেন। সেনাবাহিনীর অফিসারদের নানা বিষয় নির্দেশ দেন। আনন্দেই কাটছিল তার রাত। আর ওদিকে ঘরে সন্তান উইলি জ্বরের ঘোরে মারা পড়ে।
উপন্যাসে বার্ডো নামের একটা অতিন্দ্রিয় জায়গার বর্ণনা দেয়া হয়েছে- যেখানে মানুষ মৃত্যুর পরে জেগে ওঠে। উইলি মারা যাওয়ার পর বার্ডোতে আবার জেগে ওঠে। সেখানে তার সাক্ষাৎ হয় হেনস ভোলমেনের সাথে। ৪৬ বছর বয়সে তাকে হত্যা করা হয়। উইলির সাথে আরো পরিচয় হয় রজার বেভিনসের। বেভিনস আত্মহত্যা করেছিল। বার্ডোতে উইলির সাথে যাদের পরিচয় হয় তাদের সবাইকে একই কবরস্থানে কবর দেয়া হয়েছিল। কবর দেয়ার পর যদিও তারা বার্ডোতে ছিল কিন্তু তারপরেও সমাধিস্থলের সব কিছু সকলেই দেখতে পেত। তাদের ধারণা ছিল তারা মারা যায়নি। বরং অসুস্থ হয়ে আছে। বার্ডোর বয়স্ক লোক ভোলমেন সব সময় উইলিকে উৎসাহ দিত সে যেন বার্ডো ছেড়ে পরবর্তী জগতে চলে যায়। কারণ বার্ডো তরুণেদের জন্য বিপদজনক জায়গা। তারা জানত এখানে একবার এক অল্পবয়স্ক তরুণী দীর্ঘদিন থাকার পর বার্ডোতে আটকা পড়ে গিয়েছিল। সে আর এখান থেকে মুক্তি পায়নি। এভাবে ভোলমেন উৎসাহ দিতে থাকল উইলিকে সে যেন এখান থেকে বের হয়ে যায়। উইলি যখন সিদ্ধান্ত নিল সে এখান থেকে বের হবে তখন বার্ডোর সকলে দেখল উইলির বাবা আব্রাহাম লিংকন সমাধিস্থানে এসে কবরের মধ্যে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে। তার সাথে কথা বলছে। তারপর আবার ছেলেকে রেখে চলে গেল।

এই দৃশ্য দেখে বার্ডোর সকলে খুব আশান্বিত হলো। তারা বিশ্বাস করল যে উইলির বাবার ভালোবাসা আর সাহায্য দিয়ে উইলি এখান থেকে বের হয়ে যেতে পারবে। তখন বার্ডোর অন্যান্য মৃত আত্মারা উইলির কাছে এসে তাদের ঘটনা বলতে শুরু করল। যাতে করে উইলি যখন তার স্বাভাবিক পৃথিবীতে ফিরে যাবে তখন সেও যেন বার্ডোর অন্যান্য আত্মাকে পৃথিবীতে ফিরে যেতে সাহায্য করতে পারে।

এরমধ্যে আব্রাহাম লিংকন যখন সমাধির জায়গা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন তখন ভোলমেন আর বেভিনস লিংকনের পিছু নিল আর তাকে পুনরায় সন্তানের সমাধিতে ফিরিয়ে আনতে মন্ত্রণা দিতে থাকল। তখন হঠাৎ লিংকনের মনে হলো সে তার ছেলের সমাধিটা বন্ধ করতে ভুলে গেছে। লিংকন তাই আবার উইলির সমাধিতে ফিরে আসে।

লেখক আব্রাহাম লিংকন সন্তানের কবরের কাছে ফিরে আসার পর ভোলমেন আর বেভিনস তখন উইলিকে উৎসাহ দিতে থাকল সে যেন তার বাবার সাথে মিশে যায়। বাবার মনের কথাগুলো উদ্ধার করে। কিন্তু উইলি বাবার কাছে যাওয়ার আগেই আব্রাহাম লিংকন উঠে দাড়ায়। হাঁটতে হাঁটতে সমাধির বাইরে চলে যায়। উইলি বাবার কাছে যেতে পারে না। তখন বারডো নামের অতিন্দ্রিয় জায়াগার মাটি থেকে নানা ধরনের লতা-পাতা মাটি ফুড়ে বের হয়ে এসে উইলিসহ অন্যান্য সকলকে পেচিয়ে ধরতে থাকে।
তখন থমাস উইলিকে শক্ত করে ধরে পেচানো লতাপাতা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তারা দুজনে ছুটতে থাকে চার্চের ভোজনালয়ে যেখানে উইলির বাবা আব্রাহাম লিংকন বসে আছেন।
উইলি তখন বাবার সাথে মিশে যায় আর তখনি সে বুঝতে পারে সে আসলে মারা গেছে। উইলি তার অন্য বন্ধুদেরকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলে। তারপর তারা মৃত্যুর পরের আরেক জীবনের দিকে যাত্রা শুরু করে। আর ঠিক তখনি আব্রাহাম লিংকন বুঝতে পারেন তার বুকের ভেতর থেকে পুত্রশোক আস্তে আস্তে সহনীয় হয়ে উঠছে।
বার্ডোতে উইলির ঘোষণার পর সেখানে বাকি আত্মাগুলো যারা এতদিন নিজেদের জীবিত মনে করত ভোলমেন এবং বেভিনস সহ তারা সবাই বুঝতে পারে তারা আসলে মৃত। তখন তারা বার্ডো থেকে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের দিকে যাত্রা শুরু করে।
এভাবে বার্ডো নামের অতিন্দ্রিয় জায়গা থেকে পিতার ভালোবাসা আর শোকের শক্তি দিয়ে এক মৃত সন্তানের ফিরে আসার যে আকুলতা তার গল্প জর্জ সেন্ডারস অত্যন্ত অলৌকিক আবহের ভেতর দিয়ে লিংকন ইন দ্য বার্ডো উপন্যাসটিতে বর্ণনা করেছেন।

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তামাকে বিষ, তবুও ঝুঁকছেন কৃষক 
তামাকে বিষ, তবুও ঝুঁকছেন কৃষক 
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা বিলে ভোট আজ
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা বিলে ভোট আজ
ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করলো ইরান, তদন্ত চলছে
ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করলো ইরান, তদন্ত চলছে
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা