X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেন ওকরি’র গল্প যুদ্ধের আরোগ্যকারী

অনুবাদ : মিলন আশরাফ
১০ জানুয়ারি ২০১৮, ১৫:১০আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০১৮, ১৫:১২

বেন ওকরি’র গল্প যুদ্ধের আরোগ্যকারী
রণক্ষেত্রে দুই দল যুদ্ধগোষ্ঠীর মাঝখানে নিজেকে রাখলেন তিনি। পেছনে প্রচণ্ড বুলেটের আওয়াজ। এরিমধ্যে তিনি আহতদের ক্ষতস্থান সারান ও করেন মৃতদের সৎকারের ব্যবস্থা। তিনি একজন ফটোগ্রাফার ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীর মতো যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এলাকাগুলো তিনি দেখতেন। এসব দেখে দেখে একদিন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন তিনি। যুদ্ধ থামানোর কোনো ক্ষমতা হয়তো তার নেই। ভাবতে ভাবতে নিজের মধ্যে অস্পষ্ট রূপান্তর অনুভব করলেন। চাকরিটা দিলেন ছেড়ে। সিদ্ধান্ত নিলেন, একজন আরোগ্যকারী হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করবেন। এরপর তিনি যুদ্ধের মাঠে আহতদের সেবা ও  মৃতদের সমাধির ব্যবস্থা করার কাজে নেমে পড়লেন।

প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল নিষ্ঠুর কাজ। তিনি একাই এই দুরুহ কাজটি করতেন। প্রথম বছরটাতে একদম নিখুঁতভাবে কাজটি করেছিলেন তিনি। সকালে উঠে তিনি সোজা চলে যেতেন যুদ্ধক্ষেত্রে। এরপর নির্ধারিত ভয়ানক জবজবে রক্ত পরিষ্কারের কাজে হাত লাগাতেন। ভোরে তিনি পরে আসতেন ধবধবে সাদা জামা। দুপুরবেলা জামাটি ভরে উঠতো ছিটানো রক্তে। সন্ধ্যা হলে পর তার চশমার গ্লাস জমাটরক্তে ভেসে যেতো। ক্ষয় হয়ে যেত তার হাতের চামড়া। মৃতদেহ পরিষ্কারের টিস্যুগুলো হয়ে যেত নোংরা। সারাদিন আহতদের চিকিৎসা ও মৃতদের সৎকারের কাজ করতেন অবিরত। মরুভূমির নোম্যানসল্যান্ডের প্রচণ্ড গরম আবহাওয়া ও শত্রুপক্ষের চরম নির্দয় আচরণ সহ্য করে কাজগুলো করতে হতো তাকে। তিনি যে বেঁচে আছেন, তাকে যে তখনো হত্যা করা হয়নি, এইভেবে তিনি আশ্চর্য হতেন!

প্রচুর গুলি ও বোমাবর্ষণের ভেতরও দিনের পর দিন তিনি বেঁচে যাচ্ছিলেন। কেউ তার সঙ্গে সেখানে যোগ দেয়নি। এই কাজের জন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিকও পেতেন না।  কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা তার কাজের প্রতি দেখাতো না কোনো সহমর্মিতা। সেখানে তিনি একাকী কী কাজ করতেন? সেটাও জানার প্রয়োজন মনে করতো না কেউ। যুদ্ধরত দুই পক্ষ কখনো জানতে পারেনি, কী নিরলসভাবে তাদের মাঝখানে থেকে আহতের সেবা ও মৃতদের কবরের ব্যবস্থা করে চলেছিলেন তিনি।

তারপর একদিন তিনি বিয়ে করার প্রয়োজন অনুভব করলেন। ঘরে নিয়ে আনলেন বউ। খুব ভালো মেয়ে ছিল সে। তার ইচ্ছে ছিল বিয়ের দিন তিনি কোনো কাজ রাখবেন না। তিনি আশার থাকলেন একটি পবিত্র দিনের। যেদিনে কোনো যুদ্ধ হবে না। উভয় পক্ষের জন্য নিঃসন্দেহে সেই দিনিটি পবিত্র।

দিনটি এলো। সুন্দর পোশাকে তারা নিজেদের সাজালেন। বিয়ের সাদা পোশাকে তার বউকে লাগছিল খুব সুন্দর। তিনি পরেছিলেন সাধারণ একটি কালো স্যুট। কিন্তু তার হৃদয় ভেঙে গেল যখন দেখলেন, ওইদিন শত্রুরা আবারও যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। ঠিক যেন নারকীয় বাদকদল। তিনি তার বিয়ে ফেলে আবারও যুদ্ধক্ষেত্রের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালেন। ব্যস্ত হয়ে আহতদের সেবা ও মৃতদের সমাহিত করতে লাগলেন।

ওইদিনটিতে তার স্ত্রীও যোগ দিলেন তার সঙ্গে। পরনে বিয়ের গায়না, সাদা হাতমোজা। বিয়ের পরিহিত পোশাকের ভেতর দুঃখ লুকিয়ে ছিল বহু। যুদ্ধক্ষেত্রে একসঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করলেন। স্ত্রীর বিবাহের পোশাক রক্তে ভরে উঠল, জবজবে রক্তে ও কাদায় কালো হয়ে গেল সব।  বোমাবর্ষণে মস্তিষ্ক ছিন্নভিন্ন, নাড়িভুড়ি বমির মতো বের হয়ে এলো।

সন্ধ্যার দিকে তাদের দৃষ্টি আটকে গেল কলুষিত হয়ে যাওয়া বিয়ের পোশাকের দিকে। নির্দয় শত্রু ও পবিত্র দিনের প্রতারণায় তাদের হৃদয় খণ্ডবিখণ্ড হল। ওইদিনের রক্তপাতের অদ্ভুত হিংস্রতার ঘটনা কাটিয়ে ওঠা সত্যিই দুরুহ ছিল।

মন এমন বিক্ষিপ্ত হল যে, পুনরায় যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে তাদের আগ্রহ হল না আর। দিনে দিনে আদর্শ স্বামী-স্ত্রী হয়ে উঠলেন তারা। স্ত্রী তার কাছে জানতে চায়লেন, কীভাবে তিনি এতোদিন এই রকম এক অকৃতজ্ঞ পেশায় থেকেছেন? এমন কেউ নেই যে, তার এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রতিদান দেয়। এমন কেউ নেই যে জানে, যুদ্ধক্ষেত্রে দুইপক্ষের মধ্যে কী ভয়ানক ঘটনা ঘটে!  তিনি আরো বললেন, এটাকে দায়িত্ব মনে করে শর্তগুলো গ্রহণ করেছিলেন তিনি। যার ফলে ভাঙা হৃদয়েও তিনি যুদ্ধক্ষেত্রের মাঝখানে থেকে কাজ করে গেছেন দিনের পর দিন। তিনি লাশ কবর দিতেন ও আহতদের সারিয়ে তুলতেন ভোর থেকে গোধূলি পর্যন্ত। কিন্তু তিনি কখনো কোনো অবস্থায় একা ছিলেন না। এটা এখনো আশ্চর্যের হয়ে রইল যে, কোনো বুলেট ও বোমাবর্ষণ তাকে আঘাত হানেনি। কাজে থাকাকালীন তার সঙ্গে এমনটি ঘটেনি কখনো। এমনকি পরেও।

এমনসব ভয়ানক কাজ তিনি করেছিলেন ভয়হীনভাবে। এরপর বছর পার হল। তার স্ত্রী তাকে একটি সুন্দর বাচ্চা উপহার দিলেন। বদলালো পৃথিবী। কিন্তু ক্ষমাহীন শত্রুরা এখনো নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ভয়ানক যুদ্ধের সময় তিনি কাজ করেছিলেন। যখন তারা একে অন্যকে হত্যা ও জঘম করতো, তিনি তখন ক্ষতস্থান সারিয়ে তুললেন, সৎকারের ব্যবস্থা করতেন মৃতদের।

পৃথিবীতে এখন কেউ কারো কথা শোনে না, প্রয়োজন মনে করে না কাউকে পরোয়া করার। এখানে ভালোবাসার চেয়ে ঘৃণা মহৎ। হৃদয় এখন প্রতিহিংসা ও অহংকারে কঠিনতর। শান্তির চেয়ে অশান্তি গ্রহণযোগ্যতা পায়। এখানে তিনি আর কী করতে পারেন? তবুও তিনি চিরদিন যুদ্ধভূমিতে আহতদের দিয়েছেন শুশ্রুষা, করেছেন মৃতদের সৎকার।

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’