X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১
পূর্ণাঙ্গ

আর্ট অব ফিকশন ।। কাজুও ইশিগুরো

অনুবাদ : এমদাদ রহমান
১২ এপ্রিল ২০১৮, ১১:৩২আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০১৮, ১৫:০৮

আর্ট অব ফিকশন ।। কাজুও ইশিগুরো

অক্টোবর মাসের সেই বৃহস্পতিবারে গ্রেট ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে আমাকে নিয়ে চলল ওয়েস্ট ড্রাইটন স্টেশন থেকে বেসিংস্টোকে, সেখানে ধরতে হবে লন্ডন ওয়াটারলু থেকে ছেড়ে আসা সাউথ-ওয়েস্টার্ন ট্রেন। তিন ঘণ্টার পথ। এর মধ্যে একজন লেখক আত্মায় ঝড় তুলছিলেন—কাজুও ইশিগুরো। সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন তিনি!

অক্টোবরের সেই বৃহস্পতিবারে—যাত্রা শুরু হয়েছিল ভোরে, হ্যাম্পশায়ারের অ্যান্ডওভার থেকে ইলিং ব্রডওয়ে, হ্যানস্লো; তারপর কাজে ফেরার তাড়া। সাহিত্যে নোবেল পাওয়া লেখকের নাম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। গার্ডিয়ান-এর সংবাদটিই প্রথমে চোখে পড়ল, তারপর বিবিসি, টেলিগ্রাফ... ট্রেনে যেতে যেতে বুঝতে চাইছিলাম এই লেখককে। অ্যামাজন-এ দেখলাম তার প্রতিটি বইয়ের সঙ্গে 'বেস্ট সেলার' ট্যাগ লাগান!

বৃহস্পতিবার! মুঠোফোনে খুঁজে চলছিলাম ইশিগুরোকে। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ঠিক কীভাবে নিজেকে প্রকাশ করেছেন, কোথায় লেখার শৈলী নিয়ে ভাবনার বিস্তার ঘটিয়েছেন—ইত্যাদি ছিল  আমার অনুসন্ধানের বিষয়। খুঁজে পাওয়াও গেল। ট্রেন ছুটে চলেছে উইনচেস্টারের দিকে, আমি মুঠোফোনে ইশিগুরোকে পড়ে চলেছি। নেটে তার একটি মূল্যবান কথা খুঁজে পেলাম—সাধারণত আমার উপন্যাসে, বর্ণনাকারী গল্পটিকে এমনভাবে বলতে শুরু করে যেন সে স্মৃতিকথা বলছে। স্মৃতিগুলিকে তখন মনে হতে থাকবে তারা নানারকমের ঘটনা দিয়ে নির্মিত হতে চলেছে। আর ঠিক এভাবেই আখ্যানভাগ বর্ণনাকারীর নিজের স্মৃতি ও ভাবনা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট আকার পেতে চায়।'    

'গার্ডিয়ান' তাদের সম্পাদকীয়তে বলেছে—উপন্যাসগুলিতে তিনি অর্থময়তা ও নশ্বরতার এক দার্শনিক অনুসন্ধানে নেমেছেন। ব্যক্তিক স্মৃতি আর জাতিসমূহের বিস্মৃতিকেই তিনি তার দার্শনিক অভিপ্রায় হিসেবে গ্রহণ করেন।

অনুসন্ধান চলছিল পুরো সপ্তাহ জুড়ে। অ্যামাজন থেকে কিনে ফেললাম প্যারিস রিভিউয়ের ২০০৮ সালে প্রকাশিত ১৮৪ নং সংখ্যাটি যেখানে ইশিগুরো'র আর্ট অব ফিকশন সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। পেয়ে গেলাম 'গোয়ের্নিকা' নামের ওয়েভম্যাগ।

গোয়ের্নিকা'য় প্রখ্যাত সমালোচক রেবেকা রোকেসার লিখেছেন—ইশিগুরো এমন এক লেখক যিনি মুখোমুখি হন অতীতে হারিয়ে যাওয়া দুঃখ কিংবা দূরত্বের বেদনার। সেই দূরত্ব শারীরিক। তার চরিত্রগুলি জীবনপ্রবাহে যাত্রা করে সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্নতায় পতিত হয়, কিন্তু সে বিচ্ছিন্নতা ট্র্যাজিক নয়। আমাদের পরস্পরের মধ্যে যে-দূরত্ব, সময় বাহিত যে-অদেখা, যে-দূরত্ব সৃষ্টি হয় অবদমিত আকাঙ্ক্ষা থেকে; আর সেই দূরত্ব—আমাদের জীবনের নানামুখী ঘাত-প্রতিঘাত যা আমাদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে, পরস্পর থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে—ইশিগুরো সে কথাই লেখেন।

ইশিগুরো বলেন, স্মৃতি আমার কাছে সব সময়ই মূল্যবান। স্মৃতি হচ্ছে এমন এক ছাঁকনি—যার মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনটাকে একেবারে নিংড়ে গভীরে গিয়ে দেখতে পারি। স্মৃতি ঝাপসা, কুয়াশাচ্ছন্ন, অন্ধকারময়। এখানে আত্মপ্রতারণার সুযোগ রয়েছে।

'... সারা জীবনই আমি এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, কারণ, প্রথম দিকে যখন আমি উপন্যাস লিখতে শুরু করি, জাপানের পটভূমিতেই শুরু করেছিলাম; এটা করার পেছনে কিছু ব্যক্তিগত কারণও ছিল; আবেগের তাড়নায় আমি চাইতাম আমার নিজস্ব জাপানকে আমি আমার মতো করে নির্মাণ করব; এবং তাই করতে চেয়েছি।'

কথাগুলি ২০১৫ সালে, দ্য টেলিগ্রাফের গাবি উড-কে বলছিলেন ইশিগুরো। গাবি উড আমাদেরকে জানিয়ে দেন—ইশিগুরো জাপান ত্যাগ করেছিলেন মাত্র পাঁচ বছর বয়সে, মায়ের মুখে সামুরাইদের গল্প ও অন্যান্য জাপানি গল্প শুনে বেড়ে উঠেছেন তিনি ইংল্যান্ডে। এই দেশ সম্পর্কে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন—বহুজাতি ও সংস্কৃতির এক মিলনস্থল হয়ে ওঠবার আগে থেকেই, বলতে পারেন নানাভাবে আমি এমন এক ইংল্যান্ডের জন্য নস্টালজিয়ায় কাতর হই যা এখন পুরোপুরি হারিয়ে গেছে। আমার ছেলেবেলার ইংল্যান্ডকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইংল্যান্ড আমার কাছে এক মিথিক্যাল স্থান।

ইশিগুরোকে আমি উদযাপন করতে চাইলাম। হ্যাম্পশায়ার লাইব্রেরিতে তার বই পাওয়া গেল— 'নেভার লেট মি গো'। ‘হোয়েন উই ওয়্যার অরফ্যানস’। নেটে তার সাক্ষাৎকারগুলি পড়তে লাগলাম। হ্যাঁ। পড়ার মতোই লেখক তিনি। নোবেল কমিটিও তাকে যে পড়তে হবে তা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে।

প্যারিস রিভিউ-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি কিছু শব্দ উচ্চারণ করলেন যার সঙ্গে আমার আট বছরের বিলেতবাস নস্টালজিক হয়ে উঠল—ফিশ এন্ড চিপস, ক্যামডেন টাউন, ক্যান্টারবেরি, ওকিং কাউন্টি গ্রামার স্কুল, গিলফোর্ড স্টেশন, ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়া, ইউনিভার্সিটি অব ক্যান্ট, নর্থ লন্ডন, গোল্ডার্স গ্রিন, সাউদার্ন ইংল্যান্ড, সারি কাউন্টি!

'মনে রাখতে হবে, আপনি শুধু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লোকদের জন্য লিখছেন না। আপনি লিখছেন বিভিন্ন যুগের অভিজ্ঞতা নিয়ে'—এভাবেই ইশিগুরো তার পাঠককে চমকে দেন; সেই পাঠক হয়তো তার কোনো লেখা আগে পড়েনি; নোবেল পাওয়ার পর হাতে নিয়েছে; নিয়েই আশ্চর্য হয়ে গেছে—এ জগত অন্যরকম আনন্দের এক জগত।   

ঠিক এভাবে খুঁজতে খুজতে আমাদের অন্যরকম এক যাপনও হয়ে ওঠে; আমাদের মন প্রস্তুত হতে থাকে তার উপন্যাসগুলি পড়বার জন্য। একদিন দেখি হ্যাম্পশায়ার লাইব্রেরির তাকে ইশিগুরোর একটি বইও নেই! 

পাঠক পড়ছে তার বইগুলি।  

'কোনো কিছু ঘটলে কী ঘটেছিল তার চেয়ে আমার বেশি আগ্রহ থাকে লোকেরা ঘটনাটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে কীভাবে কথা বলছে'— 

যে লেখক বলতে পারেন এরকম কথা, তিনি খাঁটি লেখক।

প্যারিস রিভিউ-এ ষাটটিরও বেশি প্রশ্নে ইশিগুরো'র লেখার জগতটিকে তুলে ধরা হয়; সুজানা হানওয়েলের নেয়া দীর্ঘ সেই সাক্ষাৎকার থেকে এখানে পড়ে নেয়া যাক কাজুও ইশিগুরো'র কথাগুলি—

 

সাক্ষাৎকারী : লেখালেখির শুরু থেকেই আপনি ঔপন্যাসিক হিসেবে সফল হয়েছে। এমন কোনো লেখা কি আর আছে যা এখনও প্রকাশিত হয়নি?

ইশিগুরো : ইউনিভার্সিটির পড়াশোনা শেষ করে আমি পশ্চিম লন্ডনে হোমলেস লোকদের জন্য কাজ করছিলাম যখন ঠিক সে-সময়ে আধঘণ্টার এক বেতার নাটিকা লিখে ফেলি। তারপর সেটা বিবিসি-তে পাঠিয়ে দিই। লেখাটিকে তারা গ্রহণ করেনি, কিন্তু তাদের কাছ থেকে আমি উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পাই। নাটকটি যথাযথভাবে লিখিত হয়নি, আর এর রচয়িতা যথেষ্ট তরুণ বলে প্রাজ্ঞ হয়ে উঠতে পারেননি। লেখাটির নাম দিয়েছিলাম 'পোটেটোস এন্ড লাভারস'। বিবিসি-তে আমি যখন পাণ্ডুলিপিটি জমা দিই, সেখানে ইংরেজি 'পোটেটোস' শব্দটিকে ভুল বানানে লিখি। আমার গল্পটি ছিল একজোড়া তরুণ-তরুণীকে নিয়ে যারা ফিশ-এন্ড-চিপস ক্যাফেয় কাজ করত; দুজনই ছিল একেবারে চূড়ান্ত রকমের ট্যারা; ঘটনা হলো তাদের দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে; কিন্তু তারা কাউকেই বলে না যে তারা ট্যারা। দুজনের মধ্যে এই ব্যাপারটিই অনুক্ত থাকে। গল্পের শেষ পর্যায়ে তারা বিয়ে করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়; বর্ণনাকারী তখন অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখেন; যে-স্বপ্নে তিনি একটি পরিবারকে দেখতে পান যারা তাঁর কাছে এসেছে উপকূলের কাছের এক ঘাটে; স্বপ্নের সেই পরিবারের ছেলেমেয়েরা সবাই ট্যারা, পিতা-মাতা ট্যারা এমনকি তাদের কুকুরটিও ট্যারা; আর তখন তিনি বলেন—ঠিক আছে, আমরা বিয়ে করব না।

 

সাক্ষাৎকারী : আপনারা স্বপরিবারে বিলেতে চলে এসেছিলেন কেন?

ইশিগুরো : প্রাথমিক পর্যায়ে এটা একটা অল্পদিনের যাত্রা ছিল। আমার বাবা একজন মহাসমুদ্রবিদ। ব্রিটিশ ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ওশেনোগ্রাফি বাবাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তার নিজস্ব উদ্ভাবিত একটি পদ্ধতিকে পরীক্ষা করে দেখবার জন্য যা সম্পর্কিত ছিল মহাসামুদ্রিক ঝড়ের সঙ্গে। আমি কখনো বুঝতে পারিনি ব্যাপারটি আসলে কী ছিল। এই প্রতিষ্ঠানটি স্নায়ুযুদ্ধোত্তর সময়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল; তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষাকে গোপনীয়তার ঘেরাটোপে রাখা হতো। জঙ্গলের একেবারে মাঝখানে আমার বাবাকে নিয়ে যাওয়া হল। আমি সেখানে মাত্র একবারই গিয়েছিলাম।

 

সাক্ষাৎকারী : এই যে দেশে ছেড়ে একেবারে চলে আসা—ব্যাপারটিকে কীভাবে দেখেন?

ইশিগুরো : মনে করি না যে আমি এই ব্যপারটিকে কখনো বুঝতে পেরেছি। আমার দাদা আর আমি নাগাসাকির একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গিয়ে অসাধারণ একটি খেলনা কিনেছিলাম— খেলনাটিতে ছিল একটা মুরগির ছবি আর একটি বন্দুক। খেলার কৌশলটি এমন—মুরগিটিকে তাক করে গুলি ছুঁড়তে হবে। যদি সঠিক জায়গাটিতে আঘাত করতে পারেন তাহলে একটি ডিম বের হবে—খেলনাটিকে সঙ্গে রাখার অনুমতি পাওয়া গেল না। আমার সমস্ত মন খারাপের আসল  কারণই ছিল এটা। ব্রিটিশ ওভারসিজ এয়ারওয়েজের একটি জেটে করে আসতে আসতে আমাদের ৩দিন লেগে গেল। এখনো মনে আছে—যাত্রীদের আঙুর খাওয়া দেখতে দেখতে প্লেনে আমি ঘুমোবার চেষ্টা করেছিলাম। আর বারবার আমাকে জাগিয়ে দেওয়া হচ্ছিল ঠিক যতবার জ্বালানি ভরবার জন্য প্লেনটিকে অবতরণ করতে হয়েছিল। দ্বিতীয়বার প্লেনে চড়ার সময় আমার বয়স ছিল উনিশ।

যদিও কখনোই আমি মনে করতে পারি না যে ব্রিটেনে আমি অসুখী ছিলাম; বয়স যতোই বাড়ছিল অসুখী হওয়াটাও কঠিন হয়ে উঠছিল। এমনকি এখানকার ভাষা নিয়েও আমাকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়েছিল বলে মনে পড়ে না; যদিও এই ভাষাটিকে শিখতে কোথাও আমি ভর্তিও হইনি। কাউবয় সিনেমা আর টেলিভিশনের ধারাবাহিকগুলো খুব পছন্দ করতাম। ইংরেজি ভাষার বেশ কিছু ব্যপার আমি এইসব দেখে দেখেই আত্মস্থ করে নিয়েছিলাম। আমার প্রিয় ধারাবাহিকটি ছিল রবার্ট ফুলার এবং জন স্মিথের 'লারামি'; তারপর মজে গিয়েছিলাম—সেই 'লন রেঞ্জার্স' ধারাবাহিকটিতে যে ধারাবাহিকটি জাপানেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। আমি এই কাউবয়দের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করি। 'ইয়েস' না বলে সব সময়ই 'শিওর' শব্দটি ব্যবহার করত। আমার টিচার তো একদিন বলেই ফেললেন—কাজুও, তুমি 'শিওর' দিয়ে কী বোঝাতে চাও? আমি তখন খুঁজে বের করবার চেষ্টা করি লন রেঞ্জাররা কীভাবে কোন অবস্থায় শব্দটির ব্যবহার করে; চার্চের ধর্মসংগীত গায়কদেরকে যারা প্রশিক্ষণ দেয় তাদের সঙ্গে রেঞ্জারদের পার্থক্য কোথায়!  

 

সাক্ষাৎকারী : গিলফোর্ড সম্পর্কে কী ভাবেন?

ইশিগুরো : এখানে আমরা ঠিক ইস্টারের সময় এসেছিলাম। গিলফোর্ডের একটি বাড়িতে, আমার মাকে যেন অনেকটাই দমিয়ে দিল রক্তাক্ত আর বিদনাবিদূর একটা ছবি—ক্রুশে বিদ্ধ হয়ে আছে লোকটা; রক্ত ঝরছে—ছবিগুলি বাচ্চারা দেখছে। আপনি যদি জাপানি চোখ দিয়ে এইসব দৃশ্যটি কখনো দেখে থাকেন, এমনকি ভীনগ্রহের কোনো প্রাণির দৃষ্টিকোণ থেকে—পুরো ব্যপারটিকেই আপনার কাছে হিংস্র এবং আদিম বলে মনে হবে।

আমার মা-বাবা তো খ্রিস্টান নন। জিসাস ক্রাইস্টকে তারা ঈশ্বর মনে করেন না; তবুও তারা নীরব হয়ে রইলেন। কোনো বিশেষ একটি ধর্মসম্প্রদায়ের জীবনাচরণের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের মতোই তারা আচরণ করলেন; যদিও আমরা সেই অপরিচিত পরিবারটির আতিথ্য গ্রহণ করি।

আমার কাছে গিলফোর্ড ছিল সবচেয়ে ভিন্নধর্মী স্থান। গিলফোর্ড ছিল গ্রামীণ, নিরাভরণ; আর সর্বত্র যেন একটাই মাত্র রঙ—গাঢ় সবুজ। গিলফোর্ড কোনো যন্ত্র ছিল না। জাপানে কোথাও এই ব্যপারটি নেই। সবখানেই শুধু যন্ত্রের উপস্থিতি আর তারে বাঁধা জীবন। গিলফোর্ডে এসব নেই। আমার এক চমৎকার ইংরেজ মহিলার কথা মনে আছে—অ্যান্ট ম'লি-শপে আইসক্রিম কিনতে গিয়েছিলাম; এরকম শপও আমি আগে আর দেখিনি—একেবারে ফাঁকা একটি শপ-কাউন্টারে শুধু তিনিই দাঁড়িয়ে রয়েছেন; আর দোতলা বাসগুলো। ইংল্যান্ডের প্রথম দিনগুলোতে এদের কয়েকটিতে চড়ে কোথাও কোথাও গিয়েছি। এই যাওয়াটা ছিল এক কথায় দারুণ রোমাঞ্চকর একটা ব্যাপার। যখনই আপনি সরু রাস্তায় বাসগুলোতে চড়বেন মনে হবে এক অদ্ভুত প্রাণির পিঠে সওয়ার হয়েছেন। আর শজারুগুলি! এদের সম্পর্কে জানেন তো!

    

সাক্ষাৎকারী : তীক্ষ্ণ কাঁটাওলা কোনো প্রাণির কথা বলছেন?

ইশিগুরো : আজকের দিনে তাদেরকে হয়তো কোথাও আর দেখতেই পাবেন না; মনে হয় এই প্রাণিগুলি অধুনালুপ্ত। কিন্তু আমরা যেখানে থাকি সেখানে সর্বত্র দেখতে পাবেন তাদের। তারা দেখতে কিছুটা শজারুর মতোই কিন্তু মোটেও বিষাক্ত নয়—ছোট্ট আর সুন্দর এক সৃষ্টি; রাত হলেই তারা বেরিয়ে পড়বে; দৌড়াতে থাকবে ইতস্তত; দ্রুত পায়ে ঘুরে বেড়াবে তারা। এদেরকে আপনি দেখতে পাবেন গাঁ ভর্তি কাঁটা, কাঁটাগুলির ফাঁক দিয়ে দেখতে পাবেন তাদের নাড়ীভুঁড়ি— যেন বের হয়ে ছিটকে পড়বে এখনই। তাদের আপনি দেখতে পাবেন রাস্তার পাশের নালায় পড়ে আছে যেন ময়লা আবর্জনা সব ঝেটিয়ে বিদায় করছে। এখন এসব মনে পড়লেই কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি; আমি এদের থ্যাঁতলানো শরীর দেখেছি—বাসগুলি তাদেরকে পিষে মেরে ফেলেছিল!  

 

সাক্ষাৎকারী: ছেলেবেলায় খুব বই পড়েছেন?

ইশিগুরো : জাপান ছাড়বার আগ মুহূর্তে গেকো কামেন নামের এক সুপার হিরো অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে যান। বইয়ের দোকানগুলোয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইলাস্ট্রেশন করা ছোটদের বইগুলি দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়লাম। বইয়ের ছবি দেখে গেকো কামেনের অভিযানগুলিকে মগজে গেঁথে ফেলতে থাকলাম। ঘরে ফিরে নিজের মত করে তাদেরকে এঁকে ফেলতাম। তারপর মাকে রাজি করে ফেললাম আমার আঁকা ছবির পাতাগুলিকে বইয়ের মতো সেলাই করে দিতে—তাতে একত্রে তাদেরকে একটা বইয়ের মতো দেখাবে। বালকবেলায়, গিলফোর্ডে, সম্ভবত 'লুক এন্ড লার্স'  নামের এই কমিকসটি আমি পড়েছি; আর পড়েছি 'দেখে দেখে শেখা' টাইপের শিক্ষামূলক কিছু বই। কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয়—এ ধরনের একঘেয়ে নীরস সব লেখা। এগুলি আমার মোটেও পছন্দ হতো না। জাপান থেকে আমার দাদার পাঠানো কিছু বইয়ের সঙ্গে তুলনা করে  দেখলাম এখানকার বইগুলি একেবারেই রঙহীন। জাপানে এরকম কিছু সিরিজ আছে, আমার মনে হয় এগুলি এখনো সেখানে চলে; যা এইসব 'দেখা থেকে শেখা' বইগুলির চেয়ে বহুগুণ বেশি আনন্দময়। বইগুলি আকারেও বড়, ডাইজেস্টের মতো; কোনোটা আবার নিখাদ বিনোদন। কমিকসগুলোয় ছিল দারুণ সব ইলাস্ট্রেশন। শিখবার সমস্ত কিছুই তুচ্ছ হয়ে যাবে যখন আপনি এই বইগুলি খুলবেন। বইগুলি আমি চলে আসবার পর অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। জেমস বন্ডের জাপানি সংস্করণও খুব জনপ্রিয়তা পায়। তাকে যদিও জেমস বন্ডই বলা হতো কিন্তু এই বন্ড কোনোভাবেই ইয়ান ফ্লেমিং কিংবা শোন ক্লনারি'র বন্ড নয়। এই বন্ড এক জাপানি কমিক চরিত্র। আমিও তাকে খুব আকর্ষণীয় এক চরিত্র হিসেবে ভেবেছিলাম। সম্মানিত ব্রিটিশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছে জেমস বন্ডকে আধুনিক সময়ের এক হিরো হিসেবে উপস্থাপন করা হয় যা নিতান্তই ভুল। বন্ড সিরিজের ছবিগুলিও বিরক্তিকর; ফাউল ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। ছবিতে বন্ডের কোনই নৈতিকতা নেই। সে অন্যদের এমনভাবে পরাস্ত করে যা ঠিক ভদ্রজনোচিত নয়। ছবিতে যে মেয়েগুলি অভিনয় করে সবাই তারা বিকিনি পরে; তাদেরকে অবধারিতভাবেই বন্ডের সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হতে হয়। এই ছবিগুলি দেখেছে এরকম একজন লোকও খুঁজে পাবেন না যার কাছে বন্ডকে সভ্যতা বিধ্বংসী এক চরিত্র ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পেরেছে। কিন্তু জাপানে বন্ডের আবির্ভাব হয়েছে এক শিশুসুলভ আর প্রাসঙ্গিক চরিত্র হিসেবে যা আপনাকে দেখিয়ে দেবে চরিত্রের আচরণভঙ্গি কতোটা ভিন্নধর্মী হতে পারে।    

সাক্ষাৎকারী : লেখার অভ্যাসটি কি স্কুল থেকেই শুরু হয়েছিল?

ইশিগুরো : হ্যাঁ। আমি এখানকার এমন এক প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম যে-স্কুলে আধুনিক শিক্ষণপদ্ধতিগুলিকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হতো। তখন মধ্য ষাট, সেই সময়ের এই স্কুলটিতে পাঠ্য বিষয় পূর্ব নির্ধারিত ছিল না; আপনি সাধারণ মানের হিসাবযন্ত্র নাড়াচাড়া করতে পারবেন; কাদা ছেনে গরু ঘোড়া তৈরি করতে পারবেন। তখন গল্প লেখার ব্যপারটা আমার খুব প্রিয় কাজে পরিণত হয়েছিল কারণ এটা ছিল একটা সম্মিলিত কাজ। যে যার ইচ্ছামতো গল্প লিখবে, তারপর সবাই সবাই লেখা পড়বে; পড়তে হবে গলা ছেড়ে, জোরে।

আমি মি. সিনিয়র নামে একটি চরিত্র সৃষ্টি করে ফেললাম। নামটি আসলে আমার এক বন্ধুর স্কাউট শিক্ষকের। মনে হয়ে যেকোনো এক গুপ্তচরের জন্য এটাই সবচে উপযুক্ত নাম। বেশকিছু প্রস্তুতির পর শার্লক হোমসের জগতে আমার পদার্পণ হয়। আমি ভিক্টোরিয়ান ডিটেকটিভ গল্পের স্টাইলটি অনুসরণ করে—সেই তখন থেকেই লিখতে শুরু করি। যেখানে একজন ক্লায়েন্ট আসবে আর খুব দীর্ঘ একটি গল্প বলতে শুরু করবে; কিন্তু গল্প বলার চেয়েও আমাদের শক্তির বেশিরভাগ খরচ হয়ে যেত দোকানে সাজিয়ে রাখা পেপারব্যাকগুলির মতো করে আমাদের লেখালেখির একটা বই তৈরি করতে গিয়ে। বইয়ের ওপরে বুলেটের একটা গর্ত, আর পেছনে পত্রিকা থেকে উদ্ধৃতি লিখে রাখা— 'চমৎকার, শ্বাসরুদ্ধকর'— ডেইলি মিরর।     

 

সাক্ষাৎকারী : ডিটেকটিভ গল্পগুলির পর এখন কি আপনাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে?

ইশিগুরো : রক মিউজিক। শার্লক হোমস পড়ার পর জীবনের প্রথম বিশ বছর পর্যন্ত বই পড়াটা বন্ধই রেখেছিলাম। কিন্তু পাঁচ বছর বয়স থেকেই পিয়ানো বাজাই, গিটার বাজাতে শুরু করি পনেরো বছর বয়স থেকে; আর পপ গানের রেকর্ডগুলিও শুনতে শুরু করি— সেইসব চরম পপ রেকর্ড—যখন ঠিক এগারোয় পা দিয়েছি। আমি ভাবতাম যে এই গানগুলি বিস্ময়কর। প্রথম যে রেকর্ডটিকে আমি সত্যিকার অর্থে ভালোবেসেছিলাম, টম জোনস যেখানে 'দ্য গ্রিন, গ্রিন গ্রাস অব হোম' গানটি গেয়েছিলেন। টম জোনস ওয়েলস-এর লোক, কিন্তু এই 'দ্য গ্রিন, গ্রিন গ্রাস অব হোম' কাউবয়দের গান। তিনি কাউবয়দের দুনিয়ার গানগুলিই গাইতেন—এ ব্যাপারটি আমি টিভি থেকেই জেনেছিলাম।

আমার কাছে সনি'র ছোটোখাটো রিল-টু-রিল রেকর্ডার ছিল গান শোনার জন্য, বাবা জাপান থেকে এনেছিলেন, আমি করতাম কী, রেডিও'র স্পিকার থেকেই গানগুলি আমি ফিতায় রেকর্ড করে ফেলতাম, এটাকে বলতে পারেন গান ডাউনলোডের প্রারম্ভিক ফর্ম। রেকর্ডকৃত গানগুলির বোঁ বোঁ ঘেঁষঘ্যাঁসে শব্দের ভেতর থেকে কথাগুলিকে বারবার শুনতাম। তারপর, আমি যখন বয়স যখন তেরো হলো—কিনে ফেললাম 'জন ওয়েসলি হার্ডিং'—যা ছিল আমার প্রথম কেনা ডিলানের কোনো এ্যালবাম; বের হওয়া মাত্রই কিনেছিলাম!         

 

সাক্ষাৎকারী : ডিলানের ঠিক কোন দিকটি আপনাকে আকৃষ্ট করেছিল?

ইশিগুরো : গানের কথাগুলি। ডিলান যে এক মহান গীতিকার—এ ব্যাপারটি আমি অবিলম্বে বুঝতে পারলাম। আমার জীবনের সেইসব দিনগুলিতে যখন খুব আগ্রহ তৈরি হয়েছে গানের প্রতি; দুটি বিষয়ে আমি তখন নিজের ওপর আস্থাশীল ছিলাম—কার গানে আছে মনে রাখবার মতো কথা; আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে—ভালো কাউবয় ফিল্ম কোনটি। ডিলানের গানের সূত্র ধরেই আমার স্ট্রিম-অব-কন্সাসনেস কিংবা স্যুররিয়াল লিরিকের সঙ্গে প্রথম প্রত্যক্ষ যোগাযোগ হয়েছিল। তখন আমি কোহেনকেও খুঁজে পাই, লিওনার্ড কোহেন, যার লিরিকের ছিল সাহিত্যের কাছাকাছি চলে আসবার প্রবণতা। কোহেন দুটি উপন্যাস আর কবিতার কয়েকটি ভলিয়্যুম প্রকাশ করেছিলেন। ইহুদি হওয়ায় তিনি ক্যাথোলিক চিত্রকল্পের ব্যবহার করতেন। চিত্রকল্পগুলি ভরা থাকত সন্ত আর মেরি দিয়ে। কোহেন অনেকটাই ছিলেন ফরাসি প্রার্থনার গানের শিল্পীর মতো। আমি এই আইডিয়াটিকে পছন্দ করলাম—একজন মিউজিসিয়ান অবশ্যই হবেন সব দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শিল্পী স্বয়ং গান লিখছেন, গাইছেন, নিজেই সুর সংযোজন করছেন; আমার মনে এই ব্যাপারটি গভীর আবেদন তৈরি করে ফেলে আর আমিও গান লিখতে শুরু করি।        

 

সাক্ষাৎকারী : প্রথম গানটি কী ছিল?

ইশিগুরো : প্রথম গানটি কোহেনের গানের মতই হয়েছিল। প্রথম কলিটি ছিল, মনে আছে—যদি তোর চোখ কোনোদিন আর দেখে না তাকে, এই সমুদ্রতটে একদিন আমরা ঘর বেঁধেছিলাম। 

 

সাক্ষাৎকারী : প্রেমের গান ছিল?

ইশিগুরো : ডিলান আর কোহেনের মিশ্রণে গানে এমন এক আবেশ তৈরি করতে চেয়েছিলাম যাতে ধরা না যায় গানটি আসলে কী নিয়ে। আপনি নিজেকে প্রকাশ করার অবিরাম চেষ্টায় যুদ্ধ করছেন কিন্তু আপনি সব সময়ই যেন এমন কিছু বিষয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন যাদের আপনি পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারছেন না, আর আপনাকে এগুলি বুঝে ফেলবার ভান করতে হচ্ছে। আমরা যখন তরুণ ছিলাম, তারুণ্যের সেই দিনগুলিতে যখন হাতে সময় ছিল অনেক, আর আমরা তখন কতকিছুর ভান করেছি না বোঝে, আর লজ্জিত হয়েছি। যেভাবেই হোক, তাদের লিরিকগুলি এমন করেই আমাদের সেই অবস্থার যেন এক প্রতিমূর্তি নির্মাণ করে।  

 

সাক্ষাৎকারী : আপনি কি এই ভ্রমণ সম্পর্কে কখনো কিছু লিখেছিলেন?

ইশিগুরো : আমি ডায়রিতে টুকে রেখেছিলাম; কেরুয়াকের গদ্যের সেই অনন্য রীতিটিকে অনুসরণ করে। প্রায় প্রতিদিনই আমি ডাইরি লিখতাম; যা কিছু ঘটছিল—৩৬টি দিন; তার এবং তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ; আমরা যা কিছু করতে পেরেছি। ঘরে ফিরলাম যখন—পাতাবহুল  ডাইরিটিকে বারবার দেখতে লাগলাম, এভাবে লিখেও ফেললাম একটি লেখার দুটি পর্ব। পূর্ণাঙ্গ দুটি পর্ব; বর্ণনাকারী হিসেবে উত্তমপুরুষ ব্যবহার করলাম। দুটি লেখার একটি সানফ্রানসিসকোতে আমার গিটার চুরি হয়ে যাওয়া সম্পর্কে; ঠিক এই সময়টাতেই আমি স্ট্রাকচার নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলাম; আটলান্টিকের অপর পারের ভাষিক সুরটিকে লেখায় ধরতে চাইছিলাম; কারণ আমি আমেরিকান না; আর সে কারণেই ভাষাটাকে মনে হচ্ছিল কৃত্তিম, নকল। 

 

সাক্ষাৎকারী : আপনার জীবনের সেই কাউবয় পর্বের মতো?

ইশিগুরো : সেই পর্বেরই একটা অনুরণন ছিল এটা। আমেরিকান উচ্চারণরীতি তখন আমার কাছে একটা বিশেষ ব্যাপার হয়ে দেখা দিল। সেখানে তারা মোটরওয়ে বলবে না, তারা বলবে ফ্রিওয়ে; এক সময় আমিও তা বলতে পছন্দ করে ফেললাম—ফ্রিওয়ে কতদূর এখান থেকে?

 

সাক্ষাৎকারী : আপনি তো দেখছি সেই তরুণ বয়স থেকেই কয়েকটি বিশেষ সময় পর্বের ভিতর দিয়ে এগিয়ে চলেছেন, নিজেকে সেই বিশেষ গড়নে গড়ে নিয়েছেন, তারপর তার মিমিকিরিও করছেন; একেবারে তারুণ্যে শার্লক হোমস, তারপর এসেছে লিওনার্দ কোহেন, আর তারপর কেরুয়াক।

ইশিগুরো: আপনি যখন কৈশোর ও যৌবনের মধ্যবর্তী সময়ে আছেন—আপনি কিন্তু তখন এভাবেই শিখছেন। গান লেখা আসলেই এমন একটা বিশেষ ব্যাপার যেখানে আমি চাই হুবহু নিকল না করে আরও একটু বেশি কিছু করে ফেলা। কোনোদিন যদি আমি আমার কোনো বন্ধুর  সঙ্গে কারও পাশ দিয়ে যেতে যেতে শুনে ফেলি লোকটির গিটার বাদন—যেন বব ডিলানের হুবহু  নকল, তাহলে তার জন্য আমাদের ভিতরে অবজ্ঞার ভাব ফুটে উঠবেই। এখানে নিজের স্বরটিকে খুঁজে পাওয়ার একটা ব্যাপার আছে। আমি ও আমার সেই বন্ধু আমরা যে ব্রিটিশ এই ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন ছিলাম। কিন্তু আমরা কিছুতেই আমেরিকান—ঘরানার গান লিখতে চাইতাম না। আপনি যখন বলছেন 'অন দ্য রোড'; আপনি তখন হাইওয়ে সিক্সটি ওয়ান—কেই কল্পনা করছেন, ব্রিটেনের হাইওয়ে এম-সিক্স-কে নয়; তখন মনে হয় ইংরেজভাষী স্রোতার জন্য ভারসাম্যপূর্ণ কথাই লিখতে হবে যাকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে কোনো একা এক পথে আটকে গেলে; কিংবা স্কটিশ সীমান্তে কোনো প্রায়ান্ধকার ধূসর রাউন্ডঅ্যাবাউটে গাড়ি চালাতে চালাতে যে অনুভূতি তা মনে হয় আমেরিকার কোনো লিজেন্ডারি ফ্রিওয়েতে দামি ক্যাডিলাকের ভেতরে বসে থেকেও পাওয়া যাবে না। 

 

সাক্ষাৎকারী : আত্মকথায় তো নিজেকে খেদাড়ে হিসেবে বর্ণনা করেছেন।  

ইশিগুরো: স্কুল শেষ করার পর প্রথম গ্রীষ্মকালটা আমার কেটেছিল বালমোরাল দুর্গে; রানি'র মা'র সঙ্গে; গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে রাজপরিবার তখন এই দুর্গেই জমায়েত হতেন। ছুটির এই দিনগুলিতে স্থানীয় ছাত্রদেরকে তারা খেদাড়ে হিসেবে নিয়োগ করত। রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ লোকদের তখন আমন্ত্রণ জানানো হতো তাদের এস্টেটে। সেখানে রানির মা'র আত্মীয়রা শর্টগান আর হুইস্কি নিয়ে ল্যান্ড রোভারে চড়ে বসতেন, গাড়িগুলো গিয়ে থামত তেপান্তরের মত বিস্তৃত অনাবাদি জমিতে; যেখানে তারা শিকারের উদ্দেশ্যে নিশানা ঠিক করতেন। শিকারের দিকে গুলি ছুঁড়তেন। আমরা পনেরো জন খেদাড়ে সেই বিস্তৃত উন্মুক্ত জমিতে গোল হয়ে বুনো হাঁসগুলিকে খেদিয়ে ১০০ গজের মত একটা জায়গায় ঘিরে রাখতাম। বুনো হাঁসগুলি এই জংলি জায়গায় লতাগুল্মের ঝোপে বাস করত। যখনই তারা আমাদের উপস্থিতি টের পেতো, সঙ্গে সঙ্গেই তড়পাতে শুরু করত। আমরা সেই হাঁসগুলিকে খেদিয়ে নাগালের ভেতর নিয়ে আসতাম রানির মা'র সঙ্গে তার অতিথিরা যেখানে শর্টগান নিয়ে অপেক্ষা করছেন। উপায়ান্তরহীন হাসগুলির তখন উড়াল দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা ছাড়া বাঁচবার আর কোনো পথ খোলা ছিল না। ঠিক এই অবস্থাতেই গুলি ছোঁড়া শুরু হতো। তারপর আমাদের যেতে হতো পাশের কোনো উন্মুক্ত জায়গায় শিকারের সন্ধানে—জায়গাটা কিছুটা গলফের মাঠের মতো।    

 

সাক্ষাৎকারী: রানির মা'র সঙ্গে কখনো সাক্ষাৎ হয়েছিল?

ইশিগুরো : হ্যাঁ, প্রায় নিয়মিতই বলা যায়। একবার তো তিনি আমাদের আতংকিত করে দিয়ে কোয়ার্টারেই চলে এলেন! সেই মুহূর্তে আমাদের বুঝেই আসছিল না যে এখন তার জন্য কী করতে হবে। আমাদের সঙ্গে একটুখানি কথা বলেই দ্রুত চলে গিয়েছিলেন তিনি। নিতান্তই ঘরোয়া একটা ব্যপার ছিল এটা। শিকারের জন্য তেপান্তরের মাঠের মতো সেই বিশাল উন্মুক্ত জায়গাগুলিতে তাকে আমরা খুব কাছ থেকেই দেখতে পেতাম। তাকে কোনোদিনই আমরা গুলি করতে দেখিনি। অভ্যাগতরা প্রত্যেকেই মাত্রাতিরিক্ত এলকোহল পান করতেন, আর সকলেই ছিল অত্যন্ত বন্ধুভাবাপন্ন। 

 

সাক্ষাৎকারী : এই অভিজ্ঞতা কি আপনার জীবনে এই প্রথমবার হলো?

ইশিগুরো : এটা আমার জীবনের শেষবারের মত পাওয়া একটা অভিজ্ঞতা।

 

সাক্ষাৎকারী : এ সম্পর্কে উপলব্ধিটা কী হয়েছিল আপনার?

ইশিগুরো : দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সবচে বেশি আকর্ষণীয় ছিল সেই লোকগুলির নিজস্ব জগত যারা শিকারের জন্য রাজপরিবারের এস্টেটে ছুটে বেড়াত। দৌড়ত শিকারের পিছু পিছু। লোকগুলির স্কটিশ উচ্চারণে বলা কথাগুলি আমরা এবং আমাদের সঙ্গের স্কটিশ ছাত্ররাও মাঝে মাঝে ধরতে পারতাম না। তারা ব্রিটেনের পাহাড়গুলির মধ্যকার জংলি ঝোপে ছাওয়া খোলা প্রান্তরের মেজাজটাকে সত্যিই বুঝতে পারতো। তারা ছিল সব জটিল চরিত্রের লোকজন। যতক্ষণ গুলি করে শিকার করা চলত ততক্ষণ আমাদের সঙ্গে তাদের ব্যবহারটিও হতো বন্ধুর মতো কারণ আমরা তো কেবল ছাত্র;  আমাদেরকে দিয়ে সঠিকভাবে কাজটি করানোই ছিল তাদের একটা দায়িত্ব। আমরা কেউ যদি কোনোভাবে যথাযথ অবস্থানে এসে না দাঁড়াতাম, তখনই শিকারের প্রাণিগুলির উড়াল দিয়ে পালিয়ে যাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যেত। একদম সেনাবাহিনীর উন্মত্ত সার্জেন্টদের মতোই হয়ে উঠতেন তারা। খাড়া পাহাড়ের ওপরে উঠে দাঁড়াতেন তারা এবং তাদের অদ্ভুত স্কটিশে আমাদের ধমকাতেন, শুধুমাত্র তাদের মাথাটিকে নুইয়ে তীব্র চিৎকার ভেসে আসতো—ব্লাডি বাস্টার্ড! কিছুক্ষণ পর অবশ্য খাড়া পাহাড়ের ওপর থেকে নেমে আসতেন তারা এবং পুনরায় বন্ধুর মতো হয়ে যেতেন।      

 

সাক্ষাৎকারী : আপনি কি এটা বলবেন—রাইটিং প্রোগ্রাম আপনার লেখক হতে কিছুটা হলেও সাহায্য করেছে?

কাজুওইশিগুরো : বিষয়টিকে ঠিক আমি যে-চোখে দেখেছি; আমি লিরিক লিখতে চেষ্টা করছিলাম—কিন্তু সেই বন্ধ দরোজা আমার জন্য কখনোই খুলেনি। চলে গেলাম ইস্ট অ্যাংলিয়া; রাইটিং প্রোগ্রামের সকলেই আমাকে উৎসাহ যোগালেন; মাসখানেকের মধ্যেই ম্যাগাজিনগুলোয়  কয়েকটি গল্পও ছাপা হয়ে গেল; এদিকে চুক্তি হয়ে গেল প্রথম উপন্যাসের প্রকাশকের সঙ্গে। রাইটিং প্রগ্রামের ব্যাপারগুলি লেখক হওয়ার পথে আমাকে কৌশলগতভাবে সাহায্য করছিল। আমি কখনোই বুঝতে পারিনি একটা নির্দিষ্ট মেজাজের আকর্ষণীয় গদ্য লিখতে পারার জন্য এই প্রোগ্রাম আমাকে পথ দেখাচ্ছে; কারণ—তখনও আমার গদ্য অনেকটাই গতানুগতিক, মামুলি ধরনের। একসময় নিজেই বুঝতে পারলাম খসড়াগুলির মধ্য থেকে ধীরে ধীরে আমার গদ্য বেরিয়ে আসছে। একটি খসড়ার পর আরেকটি খসড়া—এভাবে একটু একটু করে আমার লেখাটির  ডালপালা গজাতে শুরু করত, বহু নতুন আইডিয়া যুক্ত হতো পরের খসড়ায়।

ম্যালকম ব্রাডবারি'র পর এঞ্জেলা কার্টার হলেন আমার দ্বিতীয় পথপ্রদর্শক যিনি লেখালেখির বহু খুঁটিনাটি বিষয়ে আমাকে শেখালেন। ডেবোরা রজার্স-এর সঙ্গে তিনিই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন; যিনি এখনও আমার সাহিত্যিক এজেন্ট। এঞ্জেলা একসময় করলেন কী, গ্রান্টা ম্যাগাজিনের বিল বুফোর্ডের দপ্তরে কিছু লেখা পাঠিয়ে দিলেন আমাকে কিছু না জানিয়ে। ফ্ল্যাটের রান্নাঘরের পে-ফোনটি—যে লাইনটি এনেছিলাম কার্ডিফ থেকে—একদিন বেজে উঠল। ভাবলাম—পে-ফোনে রিং হচ্ছে, এ অসম্ভব! কিন্তু অন্যপ্রান্তে যিনি ছিলেন তিনি আর কেউ না— বিল বুফোর্ড! 

 

সাক্ষাৎকারী : 'রিমেইন্স অব দ্য ডে' বুকার পুরষ্কারে সম্মানিত হয়েছে। এর ফলে আপনার কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে?

ইশিগুরো : আমি যখন 'অ্যান আর্টিস্ট অব দ্য ফ্লোটিং ওয়ার্ল্ড' প্রকাশ করি, তখনও আমি এক অখ্যাত লেখক। আর এই বইটি প্রকাশের ছয় মাসের মাথায় কেবল এক রাতেই পাল্টে গেল সব—যখন বইটি বুকারের জন্য মনোনীত হলো। তারপর বইটি পেল হুইটব্রেড অ্যাওয়ার্ড আমরা যখন ফোনকলের জন্য 'আনসারিং মেশিন' কিনবার সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়ে ফেলেছি। হঠাৎ করেই, আমরা যাদেরকে নামমাত্র চিনতাম তারা ডিনারের আমন্ত্রণ জানাতে লাগলেন। ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়াল যে আমি সবাইকেই হ্যাঁ কথাটি বলতে পারার মতো সমর্থ হলাম না। এমনটা না হলে আপনি নিজের জীবনের ওপর আর নিয়ন্ত্রণই করতে পারবেন না। কেবলমাত্র সময়বাহিত হয়েই বুকার পাওয়ার তিন বছর পর আমি শিখে নেব কীভাবে অত্যন্ত নম্রভাবে মানুষকে না করতে হয়!    

 

সাক্ষাৎকারী : একজন লেখকের জীবনের প্রচার-প্রচারণার দিকটি—বইপ্রকাশ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন যায়গায় ভ্রমণ, সাক্ষাৎকার—লেখালেখিকে কি কোনোভাবে প্রভাবিত করে থাকে? 

ইশিগুরো : এই ব্যাপারগুলি লেখালেখিকে দুটি স্পষ্ট উপায়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। একদিকে আপনার কাজের সময়ের এক তৃতীয়াংশ ব্যয় হয়ে যায় এসব করতে করতে, আবার আপনাকে জীবনের উল্লেখযোগ্য কিছু সময় খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকতে হয় অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন বোদ্ধা কিছু লোকের সঙ্গে যারা আপনাকে প্রশ্ন করবে। কেন সবসময়ই তিনপায়ের একটি বিড়াল আপনার লেখায় খুঁজে পাওয়া যায়, কিংবা ঘুঘুর মাংসের পিঠা কেন আপনাকে আচ্ছন্ন করে রাখে? আপনার অবচেতনেই অজস্র অজস্র 'কেন' আপনার কাজের ভেতর ঢুকে পড়ে; কিংবা অজস্র না হলেও অন্তত এইসব প্রশ্নের ঘর থেকে তৈরি ছবি অজান্তেই এক ধরনের প্রতিধ্বনিময় অনুরণন তৈরি করে যাকে হয়ত সচেতনভাবে আর বিশ্লেষণ করছি না! বইয়ের প্রকাশ উপলক্ষ্যে ভ্রমণের এটাই বোধহয় সবচেয়ে কঠিন দিক। আগে ভাবতাম এই ব্যাপারগুলি ভালো, তাই নিজেও কিছুটা স্বস্তি বোধ করতাম কিন্তু নিজের ক্ষতিটা একদিন নিজেই দেখতে পেলাম। কিছু লেখক আছেন যারা এসব অগ্রাহ্য করেন। শেষে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন, বিরক্তি প্রকাশ করেন; এবং রেগেও যান। আপনি যেভাবে লেখেন—তার ওপর এইসবের একটা বাজে প্রভাবও এসে পড়ে। আপনি লিখতে  বসে গেছেন, ভাবছেন—আমি একজন বাস্তববাদী, এবং ধরে নিচ্ছি যে আমিও অনেকের মতোই কিছুটা উদ্ভট।

 

সাক্ষাৎকারী : অনুবাদকের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কি কখনো কিছু ভেবেছেন?

ইশিগুরো : যখনই আপনি নিজেকে বিশ্বের নানান জায়গায় দেখতে পাবেন, তখন কিন্তু আপনি যথার্থ অর্থেই সংস্কৃতিগতভাবে কখনোই যা অনুবাদ করা যায় না সে সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়বেন। মাঝেমাঝে আপনি হয়তো চারদিন ব্যয় করে ফেলবেন একটি বইকে তার দেশজ সংস্কৃতি, তার ইতিহাস ও মূল্যবোধ, বইটির উৎসভূমি সম্পর্কে বলতে গিয়ে; কিন্তু অনুবাদকরা একটি বইকে কখনই তার ভৌগলিক বিষয়গুলি মাথায় রেখে অনুবাদ করবে না। আপনি শুধু বিভিন্ন দেশের পাঠকদের লিখছেন না, আপনি লিখছেন বিভিন্ন যুগের জন্য।

 

সাক্ষাৎকারী : আপনার লেখালেখির কোনো রুটিন আছে?

ইশিগুরো : আমি সাধারণত দশটা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ছ'টা পর্যন্ত লিখি, তবে ইমেইলগুলির উত্তর দেওয়া আর টেলিফোনে কথা বলা মোটামুটি চার'টের পর থেকেই শুরু হয়।

 

সাক্ষাৎকারী : লেখালেখির কাজটা কি কম্পিউটারেই করেন?

ইশিগুরো : আমার দুটি ডেস্ক আছে। লেখালেখির সুবিধার্থে একটি ডেস্ক ঢালবিশিষ্ট, অন্য ডেস্কে থাকে কম্পিউটার। আমার কম্পিউটারটি ১৯৯৬ সালের। ইন্টারনেট সংযোগ নেই। ঢালবিশিষ্ট ডেস্কে প্রাথমিক খসড়াটিকে আমি কলম দিয়ে লিখতে পছন্দ করি। আমি চাই এই খসড়াটি কম—বেশি দুষ্পাঠ্য হয়ে উঠুক, শুধু যেন আমিই বুঝতে পারি। খসড়াটি দিনে দিনে তালগোল পাকানো কাগজের বড় এক তোড়া হয়ে ওঠে, তখন আমি কোনো লিখন—শৈলীর দিকে মনোযোগ দিই না। খসড়াটি খুব যে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে ওঠে— তা কিন্তু নয়। আমি শুধু মাথায় আসতে থাকা কথাগুলিকে যেকোনো উপায়ে কাগজে টুকে ফেলি। যদি লিখতে লিখতে হঠাৎ নতুন কোনো আইডিয়া পেয়ে  যাই, লিখিত অংশের সঙ্গে যা হয়তো খাপ খাচ্ছে না বা যাচ্ছে না— তাকেও টুকে ফেলি। কিছুটা পেছনে গিয়ে নোট নিয়ে নিই। পরে সেই নোট অনুসারে আইডিয়াটিকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। তারপর পুরো লেখাটির একটা ছক বা বিন্যাস করতে শুরু করি। অধ্যায়গুলিকে নাম্বার দিয়ে চিহ্নিত করার পর আবার শুরু হয় পুনর্বিন্যাস। তখন দ্বিতীয় খসড়াটি লিখবার সময় এসে পড়ে। তখন আমি আসলে কী লিখতে চাচ্ছি তার একটা স্পষ্ট আইডিয়া পেয়ে যাই। এই পর্যায়ে আমি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে লিখতে থাকি।

 

সাক্ষাৎকারী : খসড়া লেখাটা সাধারণত কয়বার লেখেন?

ইশিগুরো : তৃতীয় খসড়া আমি খুব কমই করেছি, আর যে কথাটি এখানে প্রাসঙ্গিক তা হচ্ছে—খসড়াগুলিতে এমন কিছু অনুচ্ছেদ থাকে, যে অনুচ্ছেদ্গুলিকে আমি বারবার লিখি।

 

সাক্ষাৎকারী : প্রথম তিনটি বই সম্পর্কে আপনি যে ভালো রিভিউগুলি পেয়েছেন। এরকম কিন্তু খুব কম লেখকের বেলাতে ঘটেছে। তারপর তো 'দ্য আনকলসোলড্' বের হল; কিছু ক্রিটিক যাকে আপনার শ্রেষ্ঠ কাজ বলেছেন, আবার কেউ কেউ তাদের পড়া সবচেয়ে বাজে বইয়ের তালিকাতেও ফেলে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে কি আপনার অনুভূতি কী? 

ইশিগুরো :এই ধরনের সমালোচনামূলক লেখাপত্রের মধ্য দিয়ে, আমার ধারণা, নিজেকে আমি যেন কিছুটা বিতর্কের পরিসরে ঠেলে দিচ্ছিলাম। যদি প্রথম তিনটি বইয়ের ভিত্তিতে আমার কাজের সমালোচনা হয়; তাহলে হয়তো এটাই বলতে হবে যে সেগুলি যথেষ্ট সাহসী ছিল না, তবে সম্ভবত সত্য আবিষ্কারের একটা ঝোঁক ছিল। রিমেইন্স অব দ্য ডে'র একটি রিভিউ হয়েছিল নিউ ইয়র্কারে; রিভিউটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে মনে হবে একটি দারুণ উজ্জ্বল সমালোচনা! রিভিউটি' শেষ হয়েছে এভাবে—উপন্যাসটি'র সমস্যা হলো—এখানে সব কিছু নিখুঁত ঘড়ির মত চলে।

 

সাক্ষাৎকারী : একেবারে ঠিক।

ইশিগুরো : হ্যাঁ। তাতে কোনো তালগোল পাকানো বিষয় ছিল না, সাহসিকতাপূর্ণও কিছু ছিল না। সবকিছুই পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। অন্য কেউ অবশ্যই ভাববে না যে এই যে এত বেশি সমালোচিত হচ্ছে লেখাটিকে আরও নিখুঁত করে তোলার জন্য। ওয়াউ (বিস্ময়ে), কেমন সব সমালোচনা! কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যাপারটি এমন একটা কিছুর সঙ্গে বারবার ফিরে এল যা আমি অনুভব করছিলাম। আমি একই উপন্যাসকে বারবার, বারবার পরিমার্জন করছিলাম। মনে হচ্ছিল এই পরিমার্জনার ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটিয়ে ফেলতে আমি যেন একেবারে মরিয়া হয়ে পড়েছি যা সম্পর্কে আমি আগে থেকে কিছুই নিশ্চিত ছিলাম না।

'দ্য রিমেইন্স অব দ্য ডে' প্রকাশের কয়েকদিন পর আমি ও আমার স্ত্রী তৈলাক্ত চামচ হাতে বসে আছি আর কথা বলছি—কীভাবে আন্তর্জাতিক পাঠকসম্প্রদায়ের জন্য উপন্যাস লিখতে হয়, এবং  কীভাবে একজন লেখককের কাছে লেখার বিষয় হিসেবে বিশ্বজনীন থিম ধরা দেয়। আমার স্ত্রী জোর দিয়ে বললেন যে দেখো—স্বপ্নের ভাষাই হচ্ছে বিশ্বজনীন ভাষা। প্রত্যেকেই এই ভাষাটিকে বুঝতে পারে, তা সে যে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকেই আসুক না কেন। সপ্তাহ যেতে না যেতেই আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করতে শুরু করে দিলাম—স্বপ্নের ব্যাকরণটি কী? ঠিক যখন, আমরা দুজন একটি কক্ষে আলাপ করছি; যেখানে আর কেউই উপস্থিত নেই। এরকম একটি দৃশ্যের সঙ্গে তৃতীয় একজন এসে উপস্থিত হলো। এখানে ব্যাপার হলো—রীতিমাফিক ঘরে প্রবেশের পূর্বে দরোজায় কড়া নাড়তে হবে, তারপর কেউ একজন ভেতরে আসবেন, আর আমরা তাকে সম্ভাষণ জানাব হ্যালো বলে। স্বপ্নাচ্ছন্ন মন এই পরিস্থিতিতে উৎকণ্ঠিত হয়, অধৈর্য হয়ে পড়ে। এখানে, সাধারণভাবে যা ঘটবে—আমরা এই কক্ষে কেবলমাত্র দুজনই বসে থাকব, আর আচমকা আমরা সচেতন হয়ে লক্ষ্য করব যে, তৃতীয় একজন ব্যক্তি পুরোটা সময় ধরেই আমার কনুইয়ের কাছে বসে ছিল। এখানে কিন্তু মৃদু একটু বিস্মিত হওয়ার মত অবস্থার তৈরি হয় অত্যাবশ্যকীয়রূপে, কারণ আমরা দুজনের কেউই সচেতন ছিলাম না, তৃতীয় লোকটির উপস্থিতির ব্যাপারে; কিন্তু তার অস্তিত্ব বুঝতে পেরেই আমরা সমস্ত মনোযোগ তার প্রতি নিবেদিত করি। আমি মনে করি এই ব্যাপারটি কমবেশি কৌতূহলোদ্দীপক। আমি তখন স্মৃতি ও স্বপ্নকে প্যারালাল হিসেবে দেখতে শুরু করি। আপনার নিজের আবেগে প্রকাশের প্রয়োজনে এ সময় আপনি স্মৃতি ও স্বপ্নকে এভাবেই নিজের পক্ষে ব্যবহার করতে পারবেন। স্বপ্নের ভাষা আমাকে এমন একটি গল্প লিখতে সমর্থন দেয়, পাঠক যাকে পড়বে রূপকশোভিত একটি গল্প হিসেবে যেখানে হয়তো কোনো একটি নির্দিষ্ট লোকসমাজের সমালোচনাকে বিরোধিতা করেছে। তারপর কয়েক মাস ধরে আমি একটি ফোল্ডার তৈরি করি, টুকে রাখা অজস্র নোট দিয়ে, আর এর পরিণামে বুঝতে পারি একটি উপন্যাস লেখার জন্য আমি প্রস্তুত।

 

সাক্ষাৎকারী : আপনি যখন গল্পটি লেখেন তখন কি প্লট সম্পর্কে কোনো পরিষ্কার ধারণা ছিল?

ইশিগুরো : আমার কাছে প্লট ছিল দুটো। একটিতে ছিল রেইডারের গল্প; একটি লোক যে বেড়ে উঠেছিল অসুখী পিতামাতার কাছে যারা দাম্পত্য সম্পর্কের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছিল। সে ভাবল এখন একমাত্র একটি পথই খোলা আছে যে পথে এগোলে হয়তো তাদের মধ্যে আবার সম্পর্কের সুবাতাস বইবে; সবকিছু মিটমাট হয়ে যাবে যদি সে তাদের সব প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে। তখন সে করে কী, পিয়ানো বাদকের চমৎকার কাজটি সে ছেড়ে দেয়। সে ভাবতে শুরু করে যদি সে কনসার্টটিতে বাজাতে যায় তাহলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে। যদিও সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। যা কিছু তার জীবনে ঘটছে তার সবই তার পিতামাতার জীবনে ঘটেছিল—বহু বছর আগে। আর, আরেকটি প্লট, সে গল্প ব্রডস্কি'র; যে একজন জরাজীর্ণ বৃদ্ধ যে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে কিছু সম্পর্কের মধ্যে বিরোধগুলি মিটিয়ে ফেলতে। সম্পর্কগুলি টিকছে না। একেবারে কিনারে এসে ঠেকেছে। সে ভাবতে থাকে অর্কেস্ট্রার পরিচালকের মতোই যদি সেও আবার ফিরে আসে তাহলে সে তার নিজের জীবনের প্রতি হারানো ভালোবাসা আবারও ফিরে পাবে। গল্প দুটি সমাজের এমন একটা জায়গাকে স্পর্শ করতে চায় যেখানে এই বিশ্বাসের জন্ম হয়—সংগীতের ভুল প্রয়োগের ফলে সকলে নিদারুণ মর্মপীড়ায় ভুগছে।     

 

সাক্ষাৎকারী : সমালোচকরা আপনার উপন্যাসকে কীভাবে দেখেছেন?

ইশিগুরো : আমি ভেবে দেখেছি 'নেভার লেট মি গো' উপন্যাসটি আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় ঘটনাগুলির একটি। এর আগে আমি যা লিখেছি তাতে চরিত্রদের ক্রমাগত তলিয়ে যাওয়া ছিল, ব্যর্থ হওয়া ছিল; ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এই উপন্যাসটিতে—চরিত্ররা যেন নিজেদেরকে সতর্ক করতে ব্যস্ত ছিল; কিংবা কেন তুমি জীবনকে যাপন করছ না—এই ধরনের একটি বই। 'নেভার লেট মি গো' যত লিখছিলাম ততোই আমি যেন এই প্রথমবারের মত উপলব্ধি করলাম—মানুষের জীবনের ইতিবাচক দিকগুলির ওপর জোরালো আলো ফেলতে আমি যেন নিজেকে অনুমতি দিচ্ছি! মানুষে মানুষে সম্পর্কে চিড় ধরে যায়; সে তার আবেগতাড়িত ঈর্ষার কারণে প্রতিহিংসায় উন্মুখ; সে তার সমস্ত ক্ষুদ্রতা নিয়ে এই জীবন যাপন করতে চায়; কিন্তু আমি এই উপন্যাসটিতে তিনজন মানুষকে দেখাতে চাইলাম যারা অপরিহার্যভাবেই শালীন, শিষ্টাচারসম্মত এবং সজ্জন। তারা যখন চূড়ান্তভাবে উপলব্ধি করল তাদের সময় অত্যন্ত সীমিত; তখন আমি চাইলাম তাদের সামাজিক অবস্থান দিয়ে, আমি যেন তাদেরকে আচ্ছন্ন করে না ফেলি। তারা যেন পারিবারিকভাবে অশান্তিতে পতিত না হয়। চাইলাম তারা যেন পরস্পরের প্রতি অনেক বেশি মনোযোগ প্রদান করে; এবং যথোচিত মানবিক হয়ে ওঠে। এই উপন্যাসে, আমার জন্য জন্য তো অবশ্যই; মানুষের নীতিধর্ম কিংবা সামগ্রিক আচরণের অন্ধকার দিকগুলির বিপ্রতীপে মানুষের ভেতরকার ইতিবাচক ব্যাপারটিকেই আমি লিখতে চেয়েছি।   

 

সাক্ষাৎকারী : উপন্যাসের নাম কীভাবে রাখেন?

ইশিগুরো : এই নামের ব্যাপারটি কিন্তু সন্তানের নামকরণের মতোই কিছুটা; কোন নামটি রাখা হবে এটা নিয়ে আত্মীয়দের মাঝে মতভিন্নতা তৈরি হয়। আমার ক্ষেত্রে, দেখুন, উপন্যাসের নামগুলি কিন্তু আমি ভাবিনি, যেমন—'দ্য রিমেইন্স অব দ্য ডে'র নামটি। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত লেখকদের একটি উৎসবে যোগ দিতে গেছি; তো একদিন সমুদ্রতটে মাইকেল ওন্দাতসি, ভিক্টোরিয়া গ্লেন্ডেনিং, রবার্ট ম্যাকক্রম, এবং নেদারল্যান্ডের লেখক জুডিথ হার্টজবার্গ-এর পাশে বসে আছি; সেখানে আমরা মোটামুটি সিরিয়াস একটি খেলার আয়োজন করে ফেললাম; উদ্দেশ্য আমার সদ্য সমাপ্ত উপন্যাসের যুতসই একটা নাম খুঁজে বের করা। মাইকেল ওন্দাতসি প্রস্তাব করলেন, 'গরুর নিতম্ব : একটি রসালো কাহিনি।' আমি তাকে উপন্যাসের সেই বাটলার সম্পর্কে আরও একটু ব্যাখ্যা দিলাম। জুডিথ হার্টজবার্গ তখন ফ্রয়েডের একটি বিশিষ্টার্থক শব্দের উল্লেখ করলেন; ফ্রয়েড যাকে তাঁর স্বপ্নের ব্যাখ্যায় ব্যবহার করেছেন; যা 'দিনগুলির ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভগ্নাংশ' বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়; যখন তিনি খেলাচ্ছলে মাথা নামিয়ে নিহিত পাতালছায়ার ভঙ্গিতে ভাষান্তর করলেন, আমাদের কাছে কথাটি তখন স্পষ্ট হলো 'রিমেইন্স অব দ্য ডে'; উপন্যাসের আবহের সঙ্গে যা একেবারে মিলে গেল!

পরের উপন্যাসটির বেলায়, 'দ্য আনকলসোলড’ এবং 'পিয়ানো ড্রিমস' এই দুটি নামের মধ্য থেকে একটিকে বেছে নেওয়ার ব্যাপার ছিল। এক বন্ধু আমাদেরকে তখন প্ররোচিত করেছিলেন, তাতে আমার স্ত্রী আমাদের মেয়ের জন্য উপযুক্ত নামটি বেছে নিলেন। আশামি আর নওমি—এই দুটি নাম নিয়ে আমরা দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম; বন্ধুর কথা হলো, ধ্বনি হিসেবে আশামি-কে মনে হয় সাদ্দাম আর সিরিয়ার একনায়ক আসাদের নামের এক মিশ্রণ; মজার ব্যাপার কী জানেন— সেই বন্ধুটি বলেছিলেন—দস্তয়ভস্কি অবশ্যই 'দ্য আনকলসোলড'কে নাম হিসেবে বেছে নিতেন, এলটন জন হলে বেছে নিতেন— 'পিয়ানো ড্রিমস'কে।

আমি 'দ্য আনকলসোলড'-কেই গ্রহণ করলাম।      

 

সাক্ষাৎকারী : আপনি তো দস্তয়ভস্কি'র অনুরাগী!

ইশিগুরো : হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই, এছাড়াও আছে ডিকেন্স, অস্টিন, জর্জ এলিয়ট, শার্লট ব্রন্টি, উইলকি কলিন্স—যাদের রচিত উনিশ শতকের পূর্ণগর্ভ উপন্যাসগুলিকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি।

 

সাক্ষাৎকারী : তাদের প্রতি আগ্রহ জন্মানোর কারণটি কী?

ইশিগুরো : তাদের সৃষ্টিগুলি এই দৃষ্টিকোণ থেকে বাস্তবধর্মী— ফিকশনগুলি পাঠের মধ্য দিয়ে  আমাদের ভেতর যে—জগতের সৃষ্টি হয়, তা কমবেশি আমরা বাস্তবে যে—জগতে বাস করছি তার অনুরূপ। আবার এই রচনাগুলির গভীরে পৌঁছে নিজেকে আপনি হারিয়েও ফেলতে পারবেন। এদের ন্যারেটিভে আছে এক ধরনের বিশেষ দৃঢ়তা। প্লট, বিন্যাস আর চরিত্রে চিরায়ত বৈশিষ্ট্যগুলিকে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, আমি কিন্তু অবুঝ বালকের মত যা পেয়েছি তাই পড়িনি, নিজেকে তৈরি করার জন্য আমার একটা মজবুত ভিত্তি দরকার ছিল। শার্লট ব্রন্টি'র 'ভিলেতে' এবং 'জেন আয়ার', দস্তয়ভস্কি'র চারটি বড় উপন্যাস, চেখভের ছোটোগল্প, টলস্টয়ের 'যুদ্ধ ও শান্তি', ব্ল্যাক হাউজ; আর জেন অস্টিনের কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয়টি উপন্যাস—আপনি যদি পড়ে ফেলেন তাহলে মনে করবেন আপনার একটি মজবুত ভিত্তি তৈরি হয়ে গেছে। আর আমি প্লেটোর বিশেষ অনুরাগী।

 

সাক্ষাৎকারী : কেন?

ইশিগুরো: তার মুখে বর্ণিত সক্রেটিসও সংলাপগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয় কী, কিছু লোক রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ভাবে যে তারা সবকিছু জানে, তখন সক্রেটিস তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ান, এবং যুক্তি দিয়ে তাদের নস্যাৎ করেন। ব্যাপারটিকে অবশ্যই বৈনাশিক মনে হয়, কিন্তু এভাবে উত্তম—প্রকৃতির যে ধারণার জন্ম হয়, যা কিছুকে আমরা উত্তম বলে মনে করি—সেই ধারণা কিন্তু যুক্তির পর যুক্তিতে বদলে যেতে থাকে। মাঝেমাঝে আমাদের সমগ্র জীবন পরম নির্ভরতায় আঁকড়ে ধরা একটি বিশ্বাসের ওপর ভর করে চলতে থাকে যা হয়তো ভুলও হতে পারে। একারণেই আমার প্রথম দিকের বইগুলি ছিল সেইসব লোকদের নিয়ে যারা ভাবে যে তারা সব জানে, কিন্তু তাদের মাঝে কোনো সক্রেটিস নেই, তারা নিজেরাই নিজেদের সক্রেটিস।

প্লেটো'র সংলাপের এক জায়গায় সক্রেটিস বলছেন, আদর্শবাদী লোকেরা প্রায় সময়ই মানবজাতির প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে, যখন তারা দুই থেকে তিনবারের বেশি হতাশায় নিমজ্জিত হয়। এই অবস্থায় প্লেটো'র পরামর্শ—উত্তমের মানে সম্পর্কে অনুসন্ধান করো। আপনি কখনোই মোহমুক্ত হতে পারবেন না যদি অনুসন্ধানে ব্যর্থ হন। শেষ ধাপে আপনি যা খুঁজে পাবেন, তা হলো—এই অনুসন্ধান কঠিন। দুঃসাধ্য এক কাজ। তবে আপনার সব সময়ের দায়িত্ব হবে অনুসন্ধানে ডুবে থাকা।

 


অলঙ্করণ : আল নোমান

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক