সূর্য সত্য, চন্দ্র সত্য, সত্য নববর্ষ
আমার কবিতায় বহুরূপে বহুবার সূর্যের প্রসঙ্গ
এসেছে। তার মানে এই নয় যে, আমি খুব সূর্য-
প্রেমিক বা আমি সূর্যকে খুব ভালোবাসি।
তুলনামূলকভাবে সূর্যের চেয়ে চাঁদই বরং আমাকে
আনন্দ দিয়েছে বেশি। আমার কবিতায়, আমার
গানের মধ্যে আমি সূর্যের চেয়ে চাঁদের কথাই
বেশি বলেছি।
‘ও আমি রাগ করেছি চাঁদের সাথে,
মুখখানি সে দেয়নি ছুঁতে আমার হাতে।’
বিশেষত পূর্ণিমার রাতে আকাশের চাঁদ
আমার খুব ভালো লাগে। ভীষণ, ভীষণ।
আকাশ উন্মাদ করা চাঁদের স্নিগ্ধরূপ
আমি লুকিয়ে-লুকিয়ে দেখি, একা একা।
একদিন গভীর রাতে, বিশ্ব যখন নিদ্রামগ্ন,
গগন মেঘে ভরা, তখন চাঁদ আমাকে,
সবার সামনে বলা যায় না এমন একটা ইঙ্গিত দিয়েছে।
আমি তার ইঙ্গিতের প্রতি আস্থা স্থাপন করে
চন্দ্রপৃষ্ঠে একটি ছোট্ট বাংলোবাড়ি তৈরি করেছি।
আমার মৃত্যু হলে, যদি কখনও হয়, হতেও তো পারে।
মৃত্যু কি কখনও কোনো জীবনকে ছাড়ে?
তখন আমি কোথায় যাবো?
ভাগ্যিস চাঁদ নামমাত্র মূল্যে তার আট শতাংশ জমি
আমাকে লিজ দিয়েছিল। তা না হলে ওরকম পশ এলাকায়
আমার কবিতাকুঞ্জ গড়া কখনও সম্ভব হতো না।
আমি জানি, সূর্যের চেয়ে চাঁদের ক্লাইমেটই আমার স্বাস্থ্যের
জন্য উপযোগী হবে।
তবে আপনারা ভুল বুঝবেন না আমাকে।
আমি সূর্যকেও ভালোবাসি, কম আর বেশি।
তার তেজ খুব বেশি হলেও,
তার প্রতি আস্থা আমার কম নয় মোটেও।
আমি জানি, আমি তাকে খুব প্রেমচোখে না দেখলেও,
তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা অবিচল।
আমি জানি মেঘে, ঝড়ে বা ঘন কুয়াশায় যদি ঢেকে যায়
এই সৌরজগৎ, তারপরও সূর্য উঠবেই।
তার তো অমাবস্যার ছুটি নেই,
নেই পূর্ণিমার চাঁদের মতো মাসিক-উল্লাস। কক্ষপথে ধাবমান
চঞ্চল চন্দ্রের মতো সে নয়। মহান বিজ্ঞানী
গ্যালিলিওর মতোই সে আপন অবস্থানে
এবং আপন বিশ্বাসে স্থির, দীপ্যমান।
আমি বিশ্বাস করি, যতদিন আকাশ আছে,
যতদিন চাঁদ আছে আকাশে—যতদিন রবে
পদ্মা-মেঘনা, গৌরী-গঙ্গা বহমান, ততদিন রবে
আকাশে সূর্য, মাটিতে শেখ মুজিবুর রহমান।
আর আমি? আমার গন্তব্যের কথা তো আমি
আগেই বলেছি। আমি চলে যাবো চাঁদের নদীর
তীরে তৈরি করা আমার কবিতাকুঞ্জে। সেখানে
আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে কবিতার মতো
এক চন্দ্রমুখী নারী।
আমি বিশ্বাস করি, মহাকাশে যত বিপর্যয়ই
ঘটুক না কেন,
কাল সকালে পুবের আকাশে সূর্য উঠবেই এবং
বাঙালি সাড়ম্বরে পালন করবেই তাদের প্রিয় নববর্ষ।
আমি তাকে উঠতেও দেখি না, ডুবতেও দেখি না বহুদিন।
তবু আমি সর্বপাপঘ্ন সূর্যকে বিশ্বাস করি এবং তাকে
মহাবিশ্বের সকল শক্তির অনন্য উৎস বলে মানি।
নয়াগাঁও
১ বৈশাখ ১৪২৫
কবিতাকুঞ্জের গান
নির্জন নীলাকাশতলে, মগরা নদীতীরে,
যখন সন্ধ্যার আলো জ্বলে,
তখন কবিতাকুঞ্জ কবিতার কথা বলে।
বিশ্ববীণায় বাজে মহাজীবনের গান।
বিচ্ছিন্ন মানবজাতি কবিতাকুঞ্জে বসে
শোনে মহামিলনের ঐকতান।
বুড়িগঙ্গার জল ও কাজল
মেঘে ঢাকা আকাশের তলে
বুড়িগঙ্গা সাজ করিতেছে,
দু’চোখে কাজল মেখে
বঙ্গের নারীরা যেমন সাজে।
শ্রাবণ-সূর্যের অস্ত-আভায়
হঠাৎ উদ্ভাসিত,
প্রসাধনরতা নদী কাঁপিতেছে
যৌবনের, সৌন্দর্যের লাজে।
আরও পড়ুন—