X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

একটি ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টের দৃশ্য ।। সেরজিও গুতিএররেস নেগরন

ভাষান্তর : সৌম্য সরকার
২৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:৩২আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:৩৫

একটি ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টের দৃশ্য ।। সেরজিও গুতিএররেস নেগরন ২০১৫ সালে এসে য়ুয়ান কার্লোসের যখন তেরো বছর আগের সেই বিকালের কথা, এই Wendy’s -এর একই ফাস্টফুড দোকানে বসে, মনে পড়ল, মারিয়েলিস—তার প্রাক্তন প্রেমিকা—ততদিনে মারা গেছে।

সত্যি বলতে, এই তো কয়েক মাস আগে ফেসবুকে সে প্রথম দেখল চার বছর আগে থেকে টিউমারটা মারিয়েলিসকে দুর্বল থেকে দুর্বল করে ফেলছিল। পুরো ব্যাপারটা যখন ঘটল য়ুয়ান কার্লোস সেখানে ছিল না কিন্তু লোকে বলেছিল যে দৃশ্যটা ছিল ভয়ানক!

‘অনেকটা সিনেমায় যেমন হয়’-তার ও মারিয়েলিস দুজনেরই এক বন্ধু কমেন্টে লিখেছিল। এরকম কিছু ঘটেছে এমন কোনো সিনেমা অবশ্য য়ুয়ান কার্লোস দেখেনি। তবে হয়তো কোনো টিভি ধারাবাহিক!

Wendy’s-এর এই শাখাটা বারিও শহরে ঢোকার একটি পথে লুইস মুনুওস মারিন আভেনুয়ে ও পি.আর-১ রাস্তার কোণাটাতে পড়েছে। য়ুয়ান কার্লোস বড় হয়েছে এর পাশেই। আজ বিকালে সেই একই রেস্টুরেন্টে সে বসে আছে। অনেকদিন পর এই প্রথম একটা কম্বো আইটেম অর্ডার দিল সে, ডলার মেন্যুটা পাশ কাটিয়ে, আর একজনের চেয়ারে না বসে বসল গিয়ে জানালার পাশের দুইজনের টেবিল নিয়ে। এখান থেকে আভেনুয়েটা সে দেখতে পারছিল।

আর তখনই তার সেই নির্দিষ্ট বিকালের কথা তার মনে পড়ল

মারিয়েলিস কী বলেছিল স্পষ্ট শুনতে পেল সে:

‘যদি পজেটিভ হয়, তো?’ চোখদুটো একটু ডলে নিয়ে বলল। কাঁদছিল না, কাঁদার মেয়েই নয় সে তবু মনে হলো কাঁদছে। ওর হাত কাঁপছিল।

কাঁপছিল য়ুয়ান কার্লোসের হাতও।

দুজনেই তাকিয়ে ছিল টেবিলের দিকে। টেবিলে দুটো Frosty চকোলেট ভ্যানিলা ডেইরি ডিজার্ট, অনেকখানি ফ্রেন্সফ্রাই আর একটা ডায়েট কোক। এগুলোর কোনো একটির দিকেও না তাকিয়ে তারা টেবিলের মাঝখানে রাখা প্লাস্টিক টিউবটার দিকে তাকিয়ে ছিল।

এর বিশ মিনিট আগে তারা রেস্টুরেন্টে ঢুকেছে। মারিয়েলিস সোজা ঢুকেছে রেস্টরুমের দিকে আর য়ুয়ান কার্লোস কাউন্টারের দিকে খাবার অর্ডার করতে—একই খাবার, যেটা তারা সবসময় নেয়। এতক্ষণ কেন লাগছে মারিয়েলিসের, সেটা সেদিন য়ুয়ান কার্লোসকে বিরক্ত করল না অন্য দিনের মতো।

এরও আগে তারা দুজনে মিলে পাশের ওয়ালগ্রিন ফার্মেসিতে গেছে। তখন ছিল দুইটা বিশ।

স্কুল থেকে মারিয়েলিস সেদিন আগে-ভাগে বেরিয়েছে আর য়ুয়ান তার ভাইয়ের SUV গাড়ি করে গেছে তাকে তুলতে। সকালে মারিয়েলিস তার মাকে বলেছে তাকে যেন সেদিন না নিতে আসে কারণ সে তার বন্ধুর সাথে নাচের অনুশীলন করতে যাবে। কয়েক সপ্তাহ পর একটা ট্যালেন্ট শোতে তাদের অংশগ্রহণ করার কথা।

ফার্মেসিতে কেউ যেন তাদের দেখে না ফেলে সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করল মারিয়েলিস আর য়ুয়ান কার্লোস, যদিও সেটা প্রায় অসম্ভব ছিল ।

য়ুয়ান কার্লোস ততদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে উঠেছে। মঙ্গল এবং বৃহস্পতিবারগুলোতে তার ক্লাস থাকত না যদিও সে প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে যেত ক্লাস না থাকলেও বৃহস্পতিবারগুলোতে তো অবশ্য—কারণ সেদিন একটা পাঠচক্রে যোগ দিত সে। তার ভাইয়ের কাছে বিষয়টা অদ্ভুত ঠেকল যে বৃহস্পতিবার হলেও য়ুয়ান সেদিন ক্যাম্পাস যায়নি।

পাঠচক্রের এদের সাথে তার পরিচয় হয় ইউনিয়ন অফ সোশ্যালিস্ট ইউথ-এর মিটিংয়ে। সেই একটাই মিটিংয়ে সে গিয়েছিল অবশ্য। সে অথবা পাঠচক্রের অন্যরা কেউই ইউ.এস.ইউ-র সদস্য ছিল না। ওরা ছিল মাওবাদী।

আগের সপ্তাহের মতোই সে সপ্তাহেও তারা ১৯৪৪-এ দেয়া মাও সে তুং-এর একটি ভাষণ ‘মানুষের সেবা করো’ পড়ছিল। মারিয়েলিসের সাথে যা হচ্ছিল তাতে, লেখাটার ওপর একবার চোখও বোলানোর সুযোগ পায়নি য়ুয়ান! তবু সে পাঠচক্রে গিয়েছিল। নিজে সে একফোটা মুখও খোলেনি।  তবে অন্যরা বকে যাচ্ছিল-কেউ কারো চেয়ে কম নয়, বরং পারলে একটু বেশিই অন্যের চেয়ে-আসন্ন বিপ্লব নিয়ে যা শুধু পুয়েরতো রিকোরই মুক্তির পথ নির্দেশ করবে না, বিশ্ব পুঁজিবাদেরও পতন ঘটাবে।

রেমন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে য়ুয়ানের চার-পাঁচ বছরের বড়। সে বলেছিল, যা ঘটার কথা তা যদি ঘটত, ব্যাপারগুলো অনেক নোংরা হয়ে যেত কিন্তু সবটাই হতো ভালোবাসার জন্য। য়ুয়ানের মনে হয়েছিল রেমন্ড বুঝি মাও সে তুং থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছে কিন্তু আসলে তার কোনো ধারণা ছিল না রেমন্ড কী বোঝাতে চেয়েছিল।

য়ুয়ান কার্লোস দেখল মারিয়েলিস বাথরুম থেকে বেরুলো। মারিয়েলিস এমনিতে দেখতে সুন্দর তবে তিরিশ বছরের দিকে তাকে অপূর্ব লাগবে বলে য়ুয়ানের মনে হলো। এখন তাকে একটু ম্লান দেখাচ্ছে। দুই হাত দিয়ে জিনিসটা সে ধরে রেখেছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকল য়ুয়ান। তিনটা হোন্ডা সিভিক গাড়ি পার্ক করা সেখানে আর এই সারির শেষ মাথায় জ্বলজ্বলে ঝকমকে হলুদ রঙের একটা গাড়ি।

বুদ্ধি বা পড়াশোনায় মারিয়েলিস বিশেষ মেধাবী ছিল বলা যাবে না। একই কথা য়ুয়ানের ক্ষেত্রেও সত্যি। তার ভাই বা ক্লাসের অন্য বন্ধুদের তুলনায় তো সেটা বলাই যায়। ওদের কেউ অবশ্য প্রতিভাবান হওয়ার ভণিতাও করেনি কখনো। তবে বিশেষ কিছু একটা হতে পারলে মন্দ হতো না, ভেবেছে য়ুয়ান। মারিয়েলিস হিপহপ নাচ করে এবং পরের বছর যখন স্কুল শেষ হবে তখন সে ‘টোয়ারকিং’ ডান্স-এর ভিডিওতে অংশ নেবে। এই ছিল তার লক্ষ। শুধু সেটাই সে করতে চেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন অবশ্য করে রেখেছে-না করলে তার মা তাকে মেরেই ফেলত।

তার মা তাকে এমনিতেই মেরে ফেলতে পারে এই অবস্থায়।

রাজনীতি নিয়ে মারিয়েলিসের কোনো কালেই এতটুকু আগ্রহ ছিল না। য়ুয়ান কার্লোসেরও না। অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার আগে তো নয়ই। ব্যাপারটা কেবল সে ধরতে পারা শুরু করেছে, তার তাই মনে হচ্ছিল।

মারিয়েলিস বসল এসে আর জিনিসটা একটু ছুড়েই মারল বলতে গেলে টেবিলের ওপর খাবারের কার্টনগুলোর মধ্যে। তারপর ন্যাপকিন দিয়ে ঢেকে দিল।

য়ুয়ান পিঠের ব্যাগ থেকে মাও-এর লেখার ফটোকপি বের করল আর পড়ার ভান করল।

‘পড়বে তুমি এখন, এই বলতে চাও’? ক্লান্ত গলায় বলল মারিয়েলিস।

‘অপেক্ষা তো আমাদের এমনিতেই করতে হবে’ য়ুয়ানের উত্তর।

‘আমার সাথে কথা বলতে পারো, অবশ্য যদি তুমি চাও?’ অভিযোগের সুরে মারিয়েলিস বলল, ‘এবং আমার সঙ্গ তোমার কাছে একঘেয়ে, বিরক্তিকর না লাগলে!’

য়ুয়ান কার্লোস ফটোকপির পাতাগুলো ওটার ঠিক উপরেই রাখল। সে মারিয়েলিসকে বলল যে তারা এই মুহূর্তে যে সমস্যা মোকাবেলা করছে এর চেয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা আছে। মারিয়েলিস জানতে চাইল কী এমন সেটা যে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ! য়ুয়ান বলল : বিপ্লব। মারিয়েলিস বলল, দুঃখিত, কী! য়ুয়ান বলল, ব্যাপার না। মারিয়েলিস খোলাসা করে বলল যে সে আসলে বোঝাতে চেয়েছে, দুঃখিত, তুমি কি আবার বলবে এইমাত্র কী বললে? আর য়ুয়ান তাই করল এবং এমনকি এও বলল যে, বিপ্লব হচ্ছে এই সবকিছুর অতীত, মহান এবং যা-যা ঘটেছে সব কিছু প্যাচ খেয়ে যেত যদি যেভাবে যা হওয়ার কথা সেটা হতো।

‘কী সব যা-তা পাগলের মতো বকছ?’

য়ুয়ান কার্লোস ঝগড়া এড়াতে চেয়েছিল কিন্তু ব্যাপারটা সে ঝেড়েও ফেলতে পারল না। সে মারিয়েলিসকে বলল সে যা এইমাত্র বলল তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরো দেশের ভালোর জন্য। আগত ভবিষ্যতের জন্য। য়ুয়ান মারিয়েলিসকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করল, যেভাবে তারা বেঁচে আছে একে বেঁচে থাকা বলে না, এভাবে চলতে পারে না। একটা উপনিবেশ হয়ে বেঁচে থাকা মানে একটা জাতির দম বন্ধ হয়ে যাওয়া। ধনতন্ত্র শ্বাসরোধ করে দিয়েছে জাতীয় অর্থনীতির, এখন শুধু হাঁসফাঁস করে মরা। শুধু টিকে থাকার বাইরে কিছু একটা আছে নিশ্চয়ই, শুধু গা ঘিনঘিন করা পুনরুৎপাদনের বাইরে কিছু একটা থাকবে-এমন এক জীবনব্যবস্থা যার একটা অসাধারণ তাৎপর্য আছে, গুরুত্ব আছে যেমন মাও বলেছেন যে, সে জীবন হয়তো চাইনিজ পর্বতের চেয়েও ওজনদার ও ওজস্বী। কথাটা মাও বলেছিল নাকি রেমন্ড বলেছিল যে মাও বলেছিল সেটা অবশ্য মনে ছিল না তার। তাতে কী? য়ুয়ান কার্লোস আরো বলেছিল যে এইরকম একটা সমাজব্যবস্থা প্রণয়নের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় সে-কোনো মিথ্যা মোহে পড়ে নয়, সত্যি-সত্যি। একশতভাগ মানুষের সেবা করার উদ্দেশ্য নিয়ে ঘুনে ধরা এই রাজনীতিকে বদলে ফেলার কাজে নামতে চায় সে। কথা বলার সময় য়ুয়ান কার্লোস যেন সব চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিল কী-কী কীভাবে ঘটছে!

 চোখের সামনে সে ভবিষ্যতের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলো দেখতে পাচ্ছিল-কীভাবে দেশকে ধীরে ধীরে অচল করে দেয়া হবে, ছিন্ন-ভিন্ন করে দেয়া হবে। তারপর বোমা, বোমারু বিমান, তীব্র জাতীয়তাবাদীর দল, প্রচণ্ড স্বাধীনতাকামী, আর ধনবাদ-বিরোধী এইসব শক্তির জঙ্গলে আশ্রয় গ্রহণ ইত্যাদি। সেখান থেকে তারা শুরু করবে বীরত্বপূর্ণ গেরিলা যুদ্ধ। জীবন হবে কঠিন, বিশেষ করে পাহাড়ে-পাহাড়ে খোলা আকাশের নিচে, জঙ্গলে-কেননা সে বেড়ে উঠেছে বিলাসিতায় ভরা বড় গেটওয়ালা আবাসিক এলাকায় : নিত্য সহযোগী ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর, টেলিভিশন আর ভিডিও গেইমস। নদীতে কখনো স্নান করেনি সে। কিন্তু করবে, মানিয়ে নেবে। একটু সময় লাগবে তা আর এমন কী! কমরেডরা কেউ সন্দেহও করবে না যে ভিতরে-ভিতরে এই বিপ্লবের জয়ী হওয়ার বিষয়ে তার একটু হলেও দ্বিধা থাকবে। দ্বিধা-টিধা সব সে ঝেটিয়ে বিদায় করবে। সে যা করবে তা দেশের জন্য নিশ্চয়ই, দুজনের জন্যও। তার আর মারিয়েলিসের জন্য।

প্রশ্নটা হলো মারিয়েলিস কি তার সাথে যোগ দিয়ে মাতৃভূমির জন্য প্রাণ দিতে রাজি আছে কিনা, আর যদি না থাকে তবে য়ুয়ান তার সাথে সম্পর্ক ভেঙে দেবে কিনা!

সে পর্যন্ত মারিয়েলিসই তার প্রথম ও একমাত্র প্রেমিকা ছিল এবং অন্য কাউকে সে ভাবতেও পারত না মারিয়েলিস-এর জায়গায়। তক্ষুণি যদি মারিয়েলিসকে সে জনগণের সেবা করার লক্ষ্যের কথা বলত এবং উত্তর যদি আসত ‘না’, যে সে হুয়ানের মতো করে চিন্তা করে না তবে য়ুয়ান কি পারবে তাকে ছেড়ে ছুড়ে ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সাথে পাহাড়ে গিয়ে ঘাঁটি গাড়তে? ভিতরকার দ্বিধা ও দ্ব›দ্বটা তার ভিতর ভয় ধরিয়ে দিল-পারবে না সে? মারিয়েলিসের জন্য সে তার সব দিনবদলের স্বপ্ন ছুড়ে ফেলে দেবে? হয়তো না, ফেলবে না, হয়তো মারিয়েলিসকে ফেলবে। অথবা, এমন হতে পারে, ধরি, ন্যাপকিন আর মাও সে তুং-এর বক্তৃতার ফটোকপি দিয়ে ঢাকা প্রেগনেন্সি টেস্ট-এর প্লাস্টিকের কাঠিটার মাঝখানের ছোট্ট গোল জায়গাটা বলল ‘পজিটিভ’ : তখন? মারিয়েলিস যা সিদ্ধান্ত নেবে এক নিমিষে সব সে মেনে নেবে, হতে পারে এমন। মারিয়েলিসের মা তাদের ধরে বিয়ে দিয়ে দেবেন, মারিয়েলিসও ভয়ে রাজি হবে। যে ভয়টা সে পায় তার মাকে! য়ুয়ানও বলবে, হ্যাঁ, মারিয়েলিস যা ভালো মনে করবে তাই সে করতে রাজি। হতে পারে।

অনেক বছর পর মারিয়েলিস হয়তো নিজেকে দায়ী করবে যে য়ুয়ানকে বাধ্য হয়ে এই বিয়েতে রাজি হতে হয়েছিল। কিন্তু সত্যি বলতে, ভিতরে ভিতরে য়ুয়ান কার্লোস হয়তো খুশিই হবে যে ব্যাপারটা তেমন ঘটেছিল, মানে বিয়ে, সন্তান ইত্যাদি। সে হয়তো মনে মনে স্থিরতাই চেয়েছিল। খুশিই হয়তো হবে সে তাদের সন্তান কীভাবে চোখের সামনে বড় হলো দেখে, কার মতো দেখতে হলো সেটা নিয়ে খুনসুটি করে সময় কাটিয়ে ইত্যাদি। তাছাড়া মারিয়েলিসকেও সে তার সাথে পরিণত হয়ে উঠতে দেখতে চাইতে পারত। এইসব।

অত সহজ হতো না অবশ্য পথ চলাটা। অনেক বেশি করে কাজ করতে হতে হতো তাকে, টাকা আয়ের জন্য হন্যে হতে হতো। হয়তো অনার্স করার পর মারিয়েলিসের বাবা ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি ইউনিয়নে তার একটা চাকরির ব্যাপারে সাহায্য করতেন এবং সে পরিশ্রমও করত সেইরকম কষে এবং একসময় ভালোই থাকত তারা। ভালোই। হতে পারত এমন। হয়তো।

অথবা হয়তো এমন নয়। হয়তো মারিয়েলিস জীবনের ওপর ক্লান্ত বিতশ্রদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নিত নাহ সব ভুল ছিল। সব। সব ছিল মূল্যহীন এবং সে তার জীবনটা একরকম নষ্ট করেছে এবং বলত ‘যাহ! আর না, এভাবে আর না’। তারপর ছেড়েছুড়ে চলে যেত হঠাৎ, প্রস্তুতির সময় না দিয়েই। বাচ্চাটাকে নিয়ে কী করত তখন য়ুয়ান? হয়তো সে প্রথম থেকেই জানত এমন একটা কিছু মারিয়েলিস করবে কখনো না কখনো : সে ক্ষমতা এবং মানসিক শক্তি তার বরাবরই ছিল, নিজের পথ নিজে বেছে নেয়ার ক্ষমতা। সম্ভবত।

 ‘চলো দেখি, সময় হয়েছে’ মারিয়েলিস বলল। খুট করে বাস্তবে ফেরত এলো য়ুয়ান। সে মারিয়েলিসের হাত ধরল। ঠান্ডা হাত। ঠান্ডা আঙুল। ভীষণ ঠান্ডা। আঙুলগুলো দিয়ে সে একটা উষ্ণ অনুভূতি দেয়ার চেষ্টা করল। এক চুমুক করে ঠান্ডা কোমল পানীয় খেলো দুজন। ভীষণ ঠান্ডা কোমল পানীয়। তারপর তাকালো প্রেগনেন্সি টেস্টের কাঠিটার দিকে।

 তের বছর পর, একটু দুঃখের বোধ নিয়ে হাসল য়ুয়ান কার্লোস। নস্টালজিয়া নয়, নিজেকে দ্রুত বোঝাতে চাইল সে-যদিও সে না ভেবে পারল না কী হলো সেই সেইসব তীব্র ইচ্ছার, জীবনের স্পন্দনের!

ইংরেজি অনুবাদ : নিক কাইস্টর

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিভিন্ন জেলায় নামাজ আদায়
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিভিন্ন জেলায় নামাজ আদায়
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর বোল্ট
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর বোল্ট
রানার্সআপ হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ওয়ান্ডারার্স 
রানার্সআপ হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ওয়ান্ডারার্স 
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা