প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে কবি আল মাহমুদের ৩৫টি অপ্রকাশিত ও অগ্রন্থিত কবিতা নিয়ে নতুন কাব্যগ্রন্থ ‘ইতিহাস দেখ বাঁক ঘুরে গেছে ফের ইতিহাসে’। বইটি প্রকাশ করবে ‘সরলরেখা প্রকাশনা সংস্থা’। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ, দাম রাখা হয়েছে ১৫০ টাকা। বইটির ভূমিকা এবং গ্রন্থনা করেছেন আবিদ আজম। গ্রন্থমেলায় ‘সরলরেখা প্রকাশনা সংস্থা’-এর ৬১৮ নম্বর স্টলে পাওয়া যাবে বইটি।
আজ কবি আল মাহমুদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে বইটি থেকে ৫টি কবিতা প্রকাশ করা হলো।
নিশিডাক
তার আহবান ছিলো নিশিডাকের শিসতোলা তীব্র বাঁশীর মত।
প্রতিটি মানুষের রক্তবাহী শিরায় কাঁপন দিয়ে তা বাজত
নদীগুলো হিসহিস শব্দে অতিকায় সাপের মতো ফণা তুলে দাঁড়াতো
অরণ্যের পাখিরা ডাকাডাকি করে পথ ভুলে উড়ে যেত সমুদ্রের দিকে।
সে যখন বলল, ‘ভাইসব।’
অমনি অরণ্যের এলোমেলো গাছেরাও সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে গেল
সে যখন ডাকলো, ‘ভাইয়েরা আমার।’
ভেঙ্গে যাওয়া পাখির ঝাঁক ভিড় করে নেমে এল পৃথিবীর ডাঙায়
কবিরা কলম ও বন্দুকের পার্থক্য ভুলে হাঁটতে লাগলো
খোলা ময়দানে।
এই আমি
নগন্য এক মানুষ
দেখি, আমার হাতের তালু ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে
এক আগুনের জিহবা।
বলো, তোমার জন্যই কি আমরা হাতে নিইনি আগুন?
নদীগুলোকে ফণা ধরতে শেখায় নি কি তোমার জন্য—
শুধু তোমার জন্য গাছে গাছে ফুলের বদলে ফুটিয়েছিলাম ফুলকি,
আম গাছে গুচ্ছ গুচ্ছ ফলেছিল
গ্রেনেড ফল। আর সবুজের ভেতর থেকে ফুৎকার দিয়ে
বেরিয়ে এলো গন্ধকের ধোঁয়া। আহ্
আমি এখন আর চোখ মেলতে পারছি না।
ছিন্ন-ভিন্ন হলো হৃদয়
ভালোবাসি এই কথাটা বলবো কারে,
দেখি, সবাই দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে।
আলোর চিহৃ নেই কোথাও দেখি না’তো,
ছিন্ন-ভিন্ন হলো হৃদয়, পুড়ছে গা’তো।
যা মেনেছি তার নাম কি ভালবাসা,
তার উপরে নাইতো তৃষ্ণা নাই-পিপাসা।
ইতিহাস দেখ বাঁক ঘুরে গেছে ফের ইতিহাসে
পৃথিবীর বাঁকে দাঁড়িয়ে শুনছি
নাম ধরে ডাকে আমাকে কে যেন
আমি হেসে বলি-এইতো রয়েছি তোমার পাশে-
ইতিহাস দেখ বাঁক ঘুরে গেছে ফের ইতিহাসে।
ভুলে যেতে হবে
একটি কবিতা চেয়ে আছে মুখপানে
আমি তারে সাধি আমি তারে বাঁধি
আমি তারে সাধি যৌবনে গানে গানে।
ভালোবাসি তারে স্মৃতির মিনারে
ছুঁতে চাই তারে বুকের ভিতরে।
আমি ডাকি তারে; সে জবাব দেয়—
মনে প্রাণে
সবখানে।
আমি তো একাকি শুধু চেয়ে থাকি—
তার মুখপানে।
সব শেষ হলো-সন্ধ্যা ঘনালো
বেলা শেষ তবে, দূরে যেতে হবে
ভুলে যেতে হবে নাম ও ঠিকানা
নাহি কোনো মানা।
শ্রুতিলিখন : নাজমুস সায়াদাত
অশ্রুজলে সিক্ত আছে আমার নাম’ই
ক্ষমা ক্ষমা-একটি শব্দ, রক্তে আমার
বইতে থাকে সিজদা দেবার অক্তে আমার
মাটির উপর ঠেকাই আমার ললাট খানি
অশ্রুজলে গড়িয়ে যায় সকল গ্লানি।
চোখের পানি ছলকে গেল বুকের উপর,
যেন কবে সিক্ত হলো তপ্ত দুপুর।
যাক ধুয়ে যাক ক্লান্তি আমার ভ্রান্তিসহ,
দু’হাত ভরে অঞ্জলি দিই লহ-লহ।
কে নেবে গো আমার দেয়া এ অঞ্জলি,
কেবল শুনি পায়ের আওয়াজ-যেমন চলি।
লাগছে এসে আমার বুকে পাপড়ি নরম,
কে যেন গো বলছে মৃদু-শরম শরম।
করজোড়ে ঠেকাই মাথা এমন মাটি,
কে বিছিয়ে রাখলো সবুজ শীতল পাটি।
গড়িয়ে যায় দেহ আমার সেই পাটিতে,
ঘুমে আমি স্বপ্ন দেখি এই মাটিতে।
বাংলাদেশের ছবিখানি স্বপ্নে দেখা—
আমিই দেখি আমিই ছিলাম অশ্রুলেখা।
আমার নামই অশ্রুজলে সিক্ত আছে,
আমার নামটি শাখায় শাখায় গাছে গাছে।