নরওয়ের কবি স্তাইন মেহরান কবিতার পাশাপাশি নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক হিসেবেও খ্যাত। বলা হয়ে থাকে, ১৯৬০ সালে তিনি প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একরাতের নীরবতার মধ্য দিয়ে’ প্রকাশের মাধ্যমে নরওয়েজিয়ান কবিতায় নতুন স্বর যুক্ত করেছেন। সেই স্বরের ভিত্তি প্রকৃতি, কিন্তু দর্শনে অস্তিত্বের অন্তর্গত অমিমাংসিত প্রশ্ন। আলো ও স্বপ্নের দ্বান্দ্বিক কবি হিসেবে স্তাইন মেহরান সমধিক পরিচিত। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি। কবিতায় অবদানের জন্য তিনি নরওয়ের সকল বিখ্যাত পুরস্কার লাভ করেছেন।
হিম
এরকমই তারাদের স্বাদ
অক্টোবর দিনের শেষে হিম-লোহার
আয়নায় যেন ধারালো ছুরি।
ভয়ের কাঁপন কাটে টুকরো টুকরো করে জলের ভেতর
আমরা শুনতে পাই মৃতদেহের কাঁপন আবরনের মাঝে
এবং একটি বরফের ফলক, শক্ত হয়ে
মাটিতে কাঁপছে
এবং আয়না-উজ্জ্বল সমুদ্র হিমশীতল হয়ে যায় ও গান করে।
তোমার হাতে আমার শির
আমার হাত ধরে আছে তোমার শির
যেমন হৃদয় আমার তোমার কোমলতায় ধরা
এভাবেই সবকিছু অন্য কিছু ধরে আছে
এবং অন্য কেউ ধরে আছে আমাদের
আমরা অন্য কিছু জড়িয়ে ধরি নিজেকে ছাড়া।
যেমন সমুদ্র একটি শিলাকে তার সৈকতে তুলে আনে
হেমন্তের বৃক্ষ ধরে রাখে পাকা ফল
প্রান্তর ধরে রাখে পৃথিবীকে
কিছু একটা তেমনি আমাদের দুজনকে ধরে রেখেছে
এবং তোমার রহস্য তার নিজের রহস্যেই ধরা।
শুরু
ভোর-জাগ্রত উপসাগর
আলোর হাতুড়ির ঘা
জলপ্রবাহের মুখে
পাখির গান কিচিরমিচির ওয়ার্ক-ইয়ার্ড থেকে।
একটি নতুন দিনের জন্য সবার সমাবেশ
একটি সূর্য শীঘ্রই আরম্ভের জন্য প্রস্তুত।
কারখানা
এই শরতে একটি বিশালাকার গাছ পড়ে গেল
এবং উপড়ানো শিকড় মাটিতে ডুবে
বজ্রপাতের ভয়-জাগানিয়া আলোর মতো
ধীরে একটি গর্ত খুঁড়ল ধরণিতে
যেখানে কীট ও পতঙ্গের বাস।
প্রতিটি কীট একটি রোদ
খণ্ডে খণ্ডে কাটা
সৃষ্টিতে দ্রবীভূত এবং আলাদা হয়ে আছে স্ফটিকে।
তারা এবং সূর্য এবং গ্রহ
রূপকথার চুম্বক
সবাই মহাজাগতিক চক্রের।
আর প্রতিটি সেল
জীবনের সূর্য-ঝিল্লিরসের ভেতর জারিত।
আমাদের চারপাশের নির্মাণকাজ এবং নতুন রাস্তা
দিনরাত চালিত যন্ত্রগুলো
অন্তর্নিহিত জ্বলন্ত বৃত্তাকার শিখার ভেতর
নর্দাণ-লাইটের স্পর্শে
দোলা দিয়ে চলছে ইস্পাত এবং তারা
হিম হয়ে যাওয়া কব্জির ভেতর।
উড়ে আসা পাতা শহরগুলোকে ভাঁজ করে
কিন্তু বর্ণহীন আলো, বিষাক্ত বৃষ্টি
কাদামাখা রাস্তা আমাদের প্রতিফলিত করে
প্রকাশ করে আমাদের উদ্বেগ
তাদের চেষ্টা আমাদের ভেতরে ঢোকার।
আবরন যা পাথর ও কনক্রিটের
তার ভেতর প্রতিদিনের সূর্য ওঠে
ডানার জন্মের মতো
এখানে ট্র্যাফিক, পোকামাকড়ের ঝাঁক
জীবনকে একটি ভাঙা তারায় ঢেউ হতে উৎসাহ দেয়।
তবে রাতে
তারারা ঝিকমিক করে, ঠান্ডা এবং শুকনো
গাছের হাসিমাখা আঙুলের ভেতর দিয়ে
শহরগুলো পৃথিবীতে শুয়ে কাঁপছে
ডানাবিহীন পাখির মতো।