১
আমার ঘুম-সাজানো বিদ্যালয় তুমি;
ছুটির ঘণ্টা বেজে যায় অবিরাম।
ঘোর লাগানো অবাধ্য মুখোশগুলোর মাঝে লুকানো
মুখটাকে আমি ছুয়েছিলাম—অপরূপ বাধ্য সেই ক্লান্তমুখ।
নক্ষত্রবোঝাই ট্রাকে গতিরা ফিরে গেলে
স্তব্ধতা প্রেমের সততা যাচাই করে।
বুকে পাথর নিয়ে নদী খুঁজে বেড়ানো মানুষ
জেনে রেখ, আজও নির্বাক সাঁওতালি অভিমান আমার প্রেমিকা।
২
ভেবেছিলাম বৃক্ষ আমাকে আশ্রয় দেবে
এক বিকেলে সখ্য হবে শুধুই রোদ্রের পুরোহিতরা।
তারপর সাধক হয়ে দ্রবীভূত হবো ছায়াতলে।
কিন্তু নারী, তোমার হাসিতে যে,
সমস্ত যৌবন নৃত্য করে পাতায় পাতায়।
আমার সন্ন্যাস-জীবন বাজি ধরি
তোমার সাথে হাস্যজ্জ্বল গৃহীজীবনের বাসনায়।
৩
সাতশ কোটির পৃথিবীতে শুধু একজোড়া চোখ
সুদক্ষ তীরন্দাজের মতো বিদ্ধ করে তোমার হৃদয়।
তোমার ভক্তবৃন্দ যোদ্ধারা জিজ্ঞাসা করত—
এত ঘোড়সাওয়ার, জিহাদী আর বিপ্লবীদের মাঝে
এক সামান্য ধনুর্বিদকেই কেন মনে ধরল তোমার।
প্রতিবেশী রূপসীরাও জানতে চাইতো এর কারণ।
বাজারে এবং ময়দানে এ প্রশ্নের উত্তর জানার আগ্রহ ছিলো আরও অনেকের।
ঘোড়া ছুটিয়ে দ্রাঘিমারেখা পেরিয়ে তোমাকে মুগ্ধ করার চেষ্টা চলেছিল।
দুই চারটি সম্রাজ্যের পতন ডেকে এনেছিলো বিপ্লবীরা।
তবুও তোমার হৃদয়ে বিঁধে থাকা তীর প্রেমের জয়গান রচনা করলো।
যারা প্রশ্ন করতো, তারা কখনোই জানেনি ‘প্রেম’ শব্দের মাহাত্ব্য।
কার্যকারণের দুনিয়ায় তা আদি কারণের মতই অদ্ভুত।
৪
মেহমান চলে গেলে জমানো চায়ের কাপে
কালো পিঁপড়েদের ভাবনাগুলো জমা থাকে।
কবিতা ভিজিয়ে রাখা লিকার একাকি বিষন্নতাকে সঙ্গী জোটায়।
রোদের ডোরাকাটা জামা পরে সকালের বারান্দা,
দেয়ালে ভ্যানগগের সেল্ফপোর্ট্রেট অলস চেয়ে থাকে আয়নায় প্রতিফলিত রবীন্দ্রনাথের দিকে।
উইন্ড চাইমের ঝোলানো মাছটা ঈর্ষান্বিত হয় আ্যকুরিয়ামের দিকে চেয়ে,
আর জেব্রাফিশটা আমার দিকে চেয়ে জিতে যায় বারবার।
আমার জুবুথুবু অনুভূতির ম্যানিপ্ল্যান্ট আর বাড়ে না।
ভাবি—এই ঘরেই ছড়িয়ে আছে আমার অবদমিত ঘর।
৫
উড়ন্ত সারসের নিচে আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্তময়;
সদ্যজাতের প্রথম ক্রন্দনের জন্য অপেক্ষারত মায়ের মতো তোমার চোখ।
সেই মমতা উপেক্ষা করে জায়তুন ফলের মধ্যে আমার প্রেমিকারা ঘুমায়, তাদের ঘুম সময়ের শেষ সীমানা পর্যন্ত।
ঈশ্বরের রাজ্যের স্বপ্ন তাদের ডর্মিক্যাম!
সুতরাং আমরা গ্যালিলিতে মাছ ধরার দিনগুলোতে ফিরবো।
আমরা তাহরীমা বেঁধে নিষিদ্ধ করবো সব নতুনকে।
সব হারালে তবেই প্রহরগোনা প্রাচীন প্রহরী বাইসনগুলো ফিরবে সময়ের শেষ সীমানায়।
৬
গল্পই প্রেম;
সব জমাট বরফ গলে যাবে গল্পে গল্পে
সরোবরে হিমশীতল স্নান শেষে
তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে পান করবো
এক মগ উষ্ণতা।
উষ্ণতায় বাস্প হবে দীঘির জল,
তারপর মেঘার্ত আকাশপানে তাকিয়ে অন্ধ হলে
এক জীবনের সমস্ত স্বপ্ন জমে ক্লান্তির বরফ হবে।
কবিতার বই খুলে বসবো সেদিন, লেখা:
‘নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়’।