X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাস্তুসংস্থান

আঁখি আক্তার
২০ এপ্রিল ২০২০, ২১:০০আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২০, ২১:০০

করোনায় আমরা ভীত নই। বরং মোকাবেলা করছি গৃহে অন্তরীণ থেকে। এতে হয়ত কিছুটা বাড়তেও পারে মানসিক চাপ। তাই আসুন, খুলে দেই মনঘরের জানালা। নিজেকে চালিত করি সৃজনশীলতায়। আপনি নিয়মিত লিখছেন, বা এটাই হতে পারে আপনার প্রথম গল্প। লিখুন ফেসবুকে। চটজলদি ৫০০ শব্দের গল্প, বাংলা ট্রিবিউনের জন্য। একইসঙ্গে নমিনেট করুন আপনার পছন্দের আরও ১০ জন লেখককে। সেরা ১০ জন লেখক পাচ্ছেন কাগজ প্রকাশনের বই। আর অবশ্যই হ্যাশট্যাগ দিন #বাংলাট্রিবিউনসাহিত্য বাস্তুসংস্থান চড়ুই দম্পতি নতুন আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়েছে। আর কদিন পরই মেয়ে চড়ুই ডিম পাড়বে, ওতে পালা করে ওরা তা দেবে। তারপরই না ডিম ফুটে তুলতুলে চিঁচিঁ আওয়াজ তুলে ছানা বেরিয়ে আসবে।ওরা তন্ন তন্ন করে উড়ে ঘুরে বেড়ায় একটি নিরাপদ আবাসের জন‍্য। যেনতেন জায়গা হলে তো চলবে না। জায়গাটা তার ওতার অনাগত সন্তানের জন‍্য অনুকূল হতে হবে। খাবারের সহজলভ‍্যতাও সেই সঙ্গে সমান গুরুত্বপূর্ণ।
অবশেষে ওদের মুখে হাসি ফোটে। যে জায়গাটা পেয়েছে একদম খাসা! বারান্দার উঁচুতে এক পুরাতন মাটির হাড়ি বাঁধা। ধুলো আর ময়লায় একদম মাখামাখি অবস্থা। দেখে মনে হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবত এটার গায়ে কোনো মানুষের হাতের স্পর্শ পড়েনি। এমন একটা আবাসেরই তো খোঁজে ছিল ওরা। হাড়ির ভেতরে কয়েকবার করে ঢুকে চড়ুই দম্পতি সবকিছু নিরাপদ কিনা তা দেখে নেয়। আর খাবারেরও অভাব হবে না। আবার দরকারি গাছ-গাছড়াও আছে দেখি! ছানাদের জন‍্য বাসাটা উপযুক্ত করতে খড়কুটো নিয়ে তারা বাসাটা ঠিক করে নেয়।

চড়ুই দম্পতির সঙ্গে আরও অনেক পাখিই থাকে। তবে ওরা দেশি যে নয় তা বোঝা যায় ওদের গায়ের রং, আকার আর গলার আওয়াজ শুনলে।এরা সারাদিন খাচায় অলস সময় পার করে। দানাপানির কোনো চিন্তা নেই। ওই বাসার বউটা দেখি নিয়ম করে ওদের দেখভাল করে।
পুরুষ চড়ুইটা চট করে ওদের সঙ্গে মিষ্টি কথায় খাতির করে ফেলে। বিদেশি পাখিগুলো অবাক এই পুরুষ চড়ুইকে দেখে। খাঁচার বাইরে যে কোনো পাখি মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াতে পারে এটা তো ওরা ভুলেই গেছে।কারণ ওরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই খাঁচাতেই কাটিয়ে দিয়েছে। এখানেই ওদের জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং অবশেষে মৃত্যু।

মুক্ত আকাশে স্বাধীনভাবে উড়ে বেড়াবার যে আনন্দ তা ওরা কী করে বুঝবে! ডানা তো আছে কিন্তু উড়বার ক্ষমতা নেই।এসব দেখে পুরুষ চড়ুইর মন খারাপ হয়। সে স্ত্রী চড়ুইর সঙ্গে বসে দুঃখে বিলাপ করে। আর বলে এইখানে থাকা ঠিক হবে না। যদি ওই বউটা আমাদেরও খাঁচায় পুরে ফেলে তখন!

স্ত্রী চড়ুই অভয় দেয়। আর বলে, ‘তুমি অত চিন্তা করো না তো। আমাদের কিচ্ছু হবে না। আর দুদিন পরই ছানারা আসবে। কী শুরু করলে বলো তো। আমরা খারাপ কি আছি? আর বউটা তো আমাদেরকে দেখেছে। কিছু তো বলেনি। এখন একটু শান্ত হও।’

পরেরদিন পুরুষ চড়ুইটা বিদেশি পাখিদের খাঁচার কাছে যায় এবং ওদেরকে বিভিন্ন বিষয়ের গল্প শোনায়। সেখানে থাকে আকাশের কথা, বন ও গাছের কথা, নদী ও পুকুরের কথা, দুষ্ট মানুষের কথা এবং সেই সঙ্গে তার স্ত্রী চড়ুই ও অনাগত ছানাদের কথাও থাকে। ওরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে চড়ুইর গল্প শোনে। তারপর খুশি হয়ে খাবারের টোপা থেকে ঠোঁট নেড়ে খাঁচার বাইরে খাবার ফেলে আর চড়ুই পেটপুরে খেয়ে নেয়। যাওয়ার সময় হলে চড়ুই হাসিমুখে বিদায় নেয় আবার নতুন কোনো গল্প শোনাবে বলে।

দুদিন পর হন্তদন্ত হয়ে পুরুষ চড়ুইটা এলো। এসেই সেকি তাড়াহুড়ো। বিদেশি পাখিরা তার ব‍্যস্ততার কারণ জানতে চায়। চড়ুই জানায় ‘ছানারা চলে এসেছে। এখন আর বেশি গল্প বলা যাবে না। এক্ষুনি আবার বেরিয়ে পড়তে হবে।’

সবাই ছানাদের জন‍্য শুভকামনা জানায় এবং খাবারের প্রয়োজন হলে যেন অবশ্যই এসে খেয়ে যায় এই আমন্ত্রণও দিয়ে রাখে। চড়ুই বাসায় ঢোকার আগে ঠোঁটে করে ছানাদের জন‍্য তুলসি পাতা ও বীজ নিতে ভোলে না।

ছানাগুলোর চোখ ফুটেছে, বয়স দশদিন। এখন ওদের আরও বেশি খাবার চাই। তাই চড়ুই দম্পতির দুজনকেই খাবারের সন্ধানে বের হতে হয়। ওদের তো আর এক খাবার খাওয়ালে চলবে না, যা বিদেশি পাখিরা খায়। এই গাছের ফলরে ওই গাছের বীজরে, আরেক গাছের পোকারে। এত জোগাড়-যন্ত করতে করতেই সময় পার।

ছানাদের কাছে ফিরতে বারান্দার কাছে এসে দেখে সব পাখিদের চেঁচামেচি আর ওই বউটা হুলস্থূল কাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলেছে!সব পাখিদের খাঁচা বারান্দা থেকে সরিয়ে ফেলছে। সবাইকে ধরে গাদাগাদি করে এক খাঁচায় পুরেছে। ওদের সেকি কান্না!

চড়ুই দম্পতি চিঁচিঁ আওয়াজ তুলে ছানাদের জন‍্য অস্থিরতা প্রকাশ করছে কিন্তু বউটা ওইখানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকায় বাচ্চাদের কাছে যেতে পারছে না। ছানাগুলোও ক্ষুধায় চিঁচিঁ করে কাঁদছে! চড়ুই দম্পতি এ বাড়ির কার্নিস তো ও বাড়ির গ্রিলে অসহায়ের মতো চিঁচিঁ করতে করতে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। আর প্রর্থনা করছে, বউটা যেন চলে যায়। তাদের ছানাগুলোকে যেন ছেড়ে দেয়।

অন‍্য পাখিদের সঙ্গেকী হলো ওই বউটা ওদের কী করল চড়ুই দম্পতির কিছুই জানা নেই।ওরা এখন নিঃস্ব! ছানাদের হারিয়ে শোকে স্তব্ধ। ওই বারান্দায় এখন আর কোনো প্রাণ নেই!ওরা শুনেছে, কী এক ভাইরাস পুরো পৃথিবী গ্রাস করেছে। তাই মানুষ এখন পরিষ্কার থাকার নামে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। আবার সেই সঙ্গে নাকি ডেঙ্গু-চিকনগুনিয়াও যোগ হয়েছে। তাই মানুষ অন‍্য জীব ও প্রাণীদেরকে নিজেদের জন‍্য হুমকি মনে করে চারপাশে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে। এই মানুষ নামের প্রাণীগুলো এই পৃথিবীকে যে অনেক আগেই বাসের অযোগ্য করে বতর্মান সময়ে নিয়ে এসেছে এটা কি ওরা জানে!

আফসোস! যদি ওরা জানত, একদিন এর ক্ষতিপূরণ অবশ্যই দিতে হবে। তাহলে আজকের পৃথিবীর জন‍্য মানুষ কখনো দায়ী থাকত না। এই করোনা কি শুধুমাত্র মানুষের জন‍্য ধ্বংস ডেকে এনেছে নাকি সঙ্গে করে অন‍্য প্রাণীদের জীবনও হুমকিতে ফেলে দিয়েছে।

বাস্তুসংস্থানের একটা চেইন ভেঙে গেলে যে তা অন‍্য সব প্রাণীদেরও বিপদের কারণ এই কথা মানুষ কবে বুঝবে?

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
২৩ মিনিটে জামালকে তিন গোল দিয়ে সেমিফাইনালে পুলিশ
২৩ মিনিটে জামালকে তিন গোল দিয়ে সেমিফাইনালে পুলিশ
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
উত্তর গাজায় আবারও হামলা জোরদার করলো ইসরায়েল
উত্তর গাজায় আবারও হামলা জোরদার করলো ইসরায়েল
ফরিদপুরে দুই নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি
ফরিদপুরে দুই নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী