করোনায় আমরা ভীত নই। বরং মোকাবেলা করছি গৃহে অন্তরীণ থেকে। এতে হয়ত কিছুটা বাড়তেও পারে মানসিক চাপ। তাই আসুন, খুলে দেই মনঘরের জানালা। নিজেকে চালিত করি সৃজনশীলতায়। আপনি নিয়মিত লিখছেন, বা এটাই হতে পারে আপনার প্রথম গল্প। লিখুন ফেসবুকে। চটজলদি ৫০০ শব্দের গল্প, বাংলা ট্রিবিউনের জন্য। একইসঙ্গে নমিনেট করুন আপনার পছন্দের আরও ১০ জন লেখককে। সেরা ১০ জন লেখক পাচ্ছেন কাগজ প্রকাশনের বই। আর অবশ্যই হ্যাশট্যাগ দিন #বাংলাট্রিবিউনসাহিত্য
ক্ষুধা যখন জানান দেয় পেট খালি, তখন পেটের কাছে কী দুর্যোগ, কী মহামারি। দুঃসময়ে সকল ভাষণ তখন ধনীদের কথার বাণীর মধ্যেই আবদ্ধ। তেমনি খুব কষ্টের দিন অতিবাহিত হচ্ছে শিবুদের। ছোট্ট শিবু ক্ষুধা পেলেই কাঁদে দুধের জন্য। দুধ পেলে তার আর কিচ্ছু লাগে না। কিন্তু দেশের এমন অবস্থায় কাজ নেই, খেটে খাওয়ারও উপাই নেই। দরিদ্রের দিন যায় বছর পরিমাণ।
শিবুর মা শুনতে পেলো ত্রাণ দেবে এলাকায়। তাই রওনা দিলো মনে আলো নিয়ে। ভিড় ঠেলে যেতে যেতেই শেষ হয়ে গেলো গরীবের ভাগ্য।
এলাকার চেয়ারম্যানকে একবারের চেয়ে দু’বার জিজ্ঞেস করতেই ধমক আর অকথ্য ভাষায় গালাগালি। বলেন, ‘ওডি তোর বাড়ি না ইয়েন? দেরি গরি আয়্যুরদ্দে জমিদারের বেডি হত্তুন।’
আমি তো ঠিক সময়ে...।
চেয়ারম্যান তার কথা কেড়ে নিয়ে বলেন, ‘ছুপ একদম মুখঅর উরে আবার হথা হছ? সাহস হত অমা।’ ‘ছোঁয়াড় মারি দাঁত বেয়াজ্ঞুন ফালাই দিইয়্যুম।’
মুহূর্তেই শিবুর মায়ের চোখের জল গড়িয়ে পড়ে সারা মুখে টপটপ করে। আত্মসম্মানে খুব লাগে কথাগুলো। ভাবে আমরা কী? আমরা কি এই পৃথিবীর কিছুই না? গরীব হওয়াই কি কোনো দাম নেই আমাদের? দাঁতে দাঁত চেপে ভাবতে ভাবতে নিজ ঘরে খালি হাতে ফিরে আসে।
ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে তার নিজেকে শেষ করে দিতে। মন চায় ছুটে যেতে অন্য কোথাও। সেখানে কোনো হালের আশায়। কিন্তু নাহ পারে না পিছুটানে। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সব ছাড়। ঘরে ফিরে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে। চারখানি বেড়ায় ঘেরা মাথার ওপরে ফুঁটা চালের ভেতরে চাঁদ-সূর্য উঁকি মারে আর বর্ষা এলে পানিতে ভিজে ভাসিয়ে নিয়ে যায় এমন ঘরে তাদের বসবাস। জরাজীর্ণ দু’হাত জায়গায় মাথা গোঁজার ঠায় শুধু। সন্তানকে কোল থেকে নামিয়ে কোনোরকম দুই মুঠো মুড়ি আর পানি খেলো নিজে। আর মনে মনে বলল, আমার অংশ যে ভাগ করে নিয়েছে তার পেটে পিড়া হোক। আমি অভিশাপ দিচ্ছি এই অমানুষগুলোকে যারা গরীবের হক খেয়ে বেড়ায়। হে আমি দু’হাত তুলে অভিশাপ দিচ্ছি যারা আমাদের হক মেরে তাদের সন্তানের পেট ভরায়। মায়ের চোখে জল দেখে শিবু বলে, তুমি কাঁদছ কেন মা?
সত্য তো আর বলা যাবে না সন্তানকে, তাই বলে, পেটের ব্যথায় বাবা।
তুমি না বলেছ আজ অনেক খাবার নিয়ে আসবে আমার জন্য, কই এনেছ?
যেতে দেরি করে ফেলেছি, বাবা তাই আনতে পারিনি।
তুমি এতো দেরি করলে কেন? এখন আমি কী খাবো?
শিবু কান্না জুড়ে দেয়। সন্তানের কান্না বেড়েই চলে। ভেবে পায় না কী করবে। নিজের ক্ষুধা হজম করলেও ছোট্ট শিশুটিকে কী বলে চুপ করাবে সে।
সব সহ্য করা যায় কিন্তু নিজ সন্তানের কান্না কোন মা-ই সইতে পারে না।
ভাবে মিথ্যে কিছু বানিয়ে বলতে হবে আজ। কাল কী হবে কাল দেখা যাবে।
কেঁদো না বাবা, আজ রাতটা পার করি, কাল তোমায় চাঁদপাহাড়ে নিয়ে যাবো।
সেটা আবার কোথায় মা?
এখন বোঝাতে পারবো না। কাল গেলে নিজ চোখে দেখে নিও। চাঁদপাহাড়ে আছে দুধের রাজ্যে।
সত্যি ওখানে বুঝি অনেক দুধ পাওয়া যায়?
হুম?
কেউ মারবে না তো আমায়?
কেউ মারবে না তোমায়। আমি তোমার সঙ্গে থাকলে কেউ তোমাকে মারতে পারবে না।
তাহলে আমি অনেক দুধ খাবো।
হুম খেও। কিন্তু একটা কথা বাবা।
কী কথা মা?
এখন শুধু চিনির শরবত খেয়ে লক্ষ্মী ছেলের মতো চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে যেতে হবে। যাবে তো?
জী মা, আমি এক্ষুনি ঘুমিয়ে পড়বো চিনির শরবত খেয়ে।
এইতো লক্ষ্মী ছেলে আমার।
শিবু মায়ের কথামতো শরবত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। শিবু ঘুমিয়ে গেলে শাড়ির আঁচলে মুখ গুঁজে মা কাঁদে আর বলে, অভাব খুব নিষ্ঠুর জিনিস বাবা। এর চেয়ে আমাদের মৃত্যুই ভালো।