X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেবেশ রায়ের পথ ধরে ‘অপরাধ ও শাস্তি’র জগতে

জাকির তালুকদার
১৫ মে ২০২০, ০১:২০আপডেট : ১৫ মে ২০২০, ০১:২৩

দেবেশ রায় ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পাবনা জেলার বাগমারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সাল থেকে তিনি এক দশক ‘পরিচয়’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তার প্রথম উপন্যাস ‘যযাতি’, উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হলো : মানুষ খুন করে কেন (১৯৭৬), মফস্বলী বৃত্তান্ত (১৯৮০), সময় অসময়ের বৃত্তান্ত (১৯৯৩), তিস্তাপারের বৃত্তান্ত (১৯৮৮), লগন গান্ধার (১৯৯৫) ইত্যাদি। তিস্তাপারের বৃত্তান্ত উপন্যাসটির জন্য তিনি ১৯৯০ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দেবেশ রায়ের পথ ধরে ‘অপরাধ ও শাস্তি’র জগতে

 সেন্ট পিটার্সবার্গে মিখাইল নামের দোভাষী যুবক দেবেশ রায়ের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে জানতে চেয়েছিল, তিনি রাসকোলনিকভ-এর বাড়িটা দেখতে চান কিনা।

রাসকোলনিকভ!

এই নামে কোনো রুশ লেখকের কথা কি আমরা জানি? অথবা অন্য কোনো শিল্পের ও জ্ঞানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি কি তিনি? অথবা রাজনীতিবিদ? অথবা বিপ্লবী? হতে তো পারেই। বিশাল রুশভাণ্ডারের কয়জনের নাম আর কর্মকাণ্ডের সাথেই আমাদের মনোযোগের সমন্বয় ঘটেছে!

তারপরেই স্মৃতির প্রবল আলোড়ন ঘটে। এবং মনে পড়ে যায়—আরে রাসকোলনিকভ তো দস্তয়ভস্কির ‘অপরাধ ও শাস্তি’র চরিত্র! কেন্দ্রিয় চরিত্র। এই কথাটি আগে মনে না পড়ার জন্য নিজেকে কিঞ্চিৎ ধিক্কার জানাতেই হয়। বলা হয়ে থাকে, ঈশ্বরের পরে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ সৃষ্টি করেছেন শেক্সপীয়র। তবে আরও অনেক লেখকই করেছেন মানুষ সৃষ্টির কাজটি। সংখ্যায় হয়তো কম। কিন্তু লেখকসৃষ্ট সেই মানুষগুলো, যেমন রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’, গ্যোয়েথের ‘ফাউস্ট’, তলস্তয়ের ‘আন্না বা আনা’, ‘নেখলিউদফ’, দস্তয়েভস্কির ‘কারমাজভ ভাইয়েরা’, এবং ‘রাসকোলনিকভ’।

তো উপন্যাসের চরিত্রের বাড়ি কি বাস্তবে বিরাজ করে? উপন্যাস লেখার দেড়শো বছর পরেও? নাকি উপন্যাস পাঠ করে করেই বাস্তবে সেই রকম একটি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে?

এমন কথা তো আমরা জানিই যে, উপন্যাস কেবলমাত্র ইতিহাসকে ধারণ করে তাই নয়, অনেক সময় ভূগোলকেও, তার পরিপূর্ণ স্থাপত্য নকশাসহ, ধারণ করে। বিশিষ্ট জনেরা বলেন যে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহর যদি কোনো কারণে পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়, তাহলে তাকে আবার নির্মাণ করা সম্ভব জেমস জয়েসের ‘ডাবলিনার্স’ গ্রন্থটিতে দেওয়া বর্ণনা সামনে রেখে, পিকাসোর ছবি ও নানা লেখকের লেখা থেকে যেভাবে পুনঃনির্মাণ করা সম্ভব প্যারিসকে। ডিকেন্স পাঠ করে ছকে নেওয়া যাবে লন্ডনকে, আর জেন অস্টিন থেকে ইংল্যান্ডের গ্রামকে।

‘অপরাধ এবং শাস্তি’তে যে সেন্ট পিটার্সবুর্গের বর্ণনা আছে, যা লিখিত হয়েছিল ১৮৬৬ সালে, তা কি ১৯৮৪ সালেও কেউ হুবহু দেখতে পাওয়ার আশা করতে পারে? কিন্তু দেবেশ রায় মিখাইলের সাথে গিয়ে ঠিকই খুঁজে পেলেন রাসকোলনিকভের ঘর। রাসকোলনিকভ, ২৪ বছরের যুবক, পয়সার অভাবে যে ছয় মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, যার খাওয়াদাওয়া নেই, ঘরভাড়ার পয়সা নেই, টিউশনি করে সে কোনোমতে চলার চেষ্টা করছিল, গ্রামে থাকা বোন বা মায়ের জন্য কিছুই করতে পারছিল না সে। এমন একটা পরিস্থিতিতে নিরুপায় এই যুবক মাত্র হাজার তিনেক রুবলের জন্য ছক কষে কষে একটা খুন করে, সেই খুনের পরম্পরায় আরেকটি খুন করে, আর খুনের অপরাধবোধ থেকে বাঁচতে চায়। মিখাইল দেবেশ রায়কে নিয়ে গেল ঠিকই একটা রাস্তায়। ‘এই হল স্রেফনায়া মেসচেনস্কায়া স্ট্রিট, রাসকোলনিকভের রাস্তা। এইটা ৯ নম্বর বাড়ি। রাসকোলনিকভ ভাড়া থাকে।’ বলে সে ডানদিকে একটা বাড়ির দেউড়িতে ঢুকল। ঢোকার পরেই ডাইনে আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দিল, ‘ঐ দারোয়ানের ঘর। ঐ যে কয়লার জায়গা।’ তখনো কয়লা ছিল। ‘ওখান থেকেই সেই ছোট কুড়ুলটা নিয়েছিল।’ মিখাইল আবার ডানদিকে ঘোরে- ‘সিঁড়ি’। এই সিঁড়ি বেয়েই রাসকোলনিকভ ওঠানামা করত। গুনে-গুনে দেখো। নভেলে যে-কটা সিঁড়ি লেখা আছে, সে-কটাই’।

পরের দিনও দেবেশ রায় সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁর ভাষাতেই শোনা যাক—'আগের দিন যে-বাড়িটাতে ঢুকেছিলাম, সেটাই, তবে সেটা স্রেফনায়া মেসচেনস্কায়া স্ট্রিটে নয়। উপন্যাসে বলা আছে, স্টলিয়ারনি লেন। অমন খোপ খোপ অনেক বাড়িই সেখানে। বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বাড়িটাকে দেখলাম, বাইরে থেকে। পরে, সোনিয়া যে-বাড়িতে ঘর নিয়ে ছিল আর সেই বন্ধকি-ব্যবসার বুড়ি আলিওনা ইভানোভনার বাড়ি, এসব দেখে বুঝি, সব একই রকম- একটা বড় দেউড়ি বা ফটক, তার একদিকে সিঁড়ি, এক-একটা তলায় দুদিকে সব ঘর।

সেদিনও মিখাইল আমাকে দারোয়ানের ঘরটার দিকে আঙুল তুলে দেখাল, ‘ঐ কয়লার পাঁজা থেকে কুড়ুলটা নিয়েছিল।’ দারোয়ানের ঘরে মুখ ঢুকিয়ে দেখলাম—কয়লা এখনো আছে। মিখাইলকে বললাম, চলো রাসকোলনিকভের ঘর থেকে নামি, সেদিনের মতো।’

আমরা পাঁচতলার চিলেকোঠায় উঠলাম। দরজা খোলা। খোলাই থাকে? ভিতরটা চাপা, ঘুপচি, নোংরা। অথচ আকারে উপন্যাসে যেমন বলা হয়েছে, ‘বড় জোর ছয় পা’ তা নয়, তার চাইতে বেশ বড়, সেই তিনটে চেয়ার, একটা টেবিল আর একটা শোয়ার সোফার পক্ষেও বড়। আমরা ঘর থেকে বেরলাম, সেদিনের রাসকোলনিকভের মত। গুনে-গুনে তেরটি ধাপ নেমে চারতলায় এসে ডানদিকে তাকালাম। বাড়িওয়ালির রান্নাঘরের দরজা খোলা, সেদিনের মতই সেখান থেকে কুড়ুল নেয়া হল না—নাস্তাসিয়া কাজ করছে। ‘রাসকোলনিকভ চোখ ফিরিয়ে নিয়ে এমনভাবে জায়গাটা পার হয়ে গেল যেন ওকে লক্ষ্যই করেনি।’ ‘রাগে জ্বলেপুড়ে নিজেকে নিয়ে নিজেরই হাসতে ইচ্ছে করছিল তার।’ ‘তার দুই পা দূরে দারোয়ানের খুপড়ির ভেতরে ডানদিকের বেঞ্চের তলা থেকে কীসের একটা ঝলক ঠিকরে পড়ছে তার চোখে।... কুড়ুলই বটে।’

আমরা এর পর রাসকোলনিকভের মতই একটু ঘুরপথে হাঁটতে-হাঁটতে যাব সেই বুড়ির বাড়িতে, যাকে খুন করা হবে। সেটা থেকে আর এদিকে ফিরে আসা হবে না বলে মিখাইল নিয়ে গেল সোনিয়ার ঘরে, ঐ স্টলিয়ারনি লেনেই, রাসকোলনিকভের বাড়ি থেকে পিঠোপিঠি দু-সারি বাড়ি পরে। সোনিয়ার ঘর বলে আলাদা কিছু নেই তবে যে-কোনো ঘরে গেলেই বোঝা যায় সোনিয়ার ঘরের সেই টেবিল আর চেয়ার, সেই মেঝে, যেখানে বিমূঢ় সোনিয়ার পদচুম্বন করেছিল রাসকোলনিকভ, ‘আমার এই প্রণতি তো তোমাকে নয়, মানুষের এই যে দুঃখ-যন্ত্রণা তাকেই।’ যেখানে ‘শাশ্বত গ্রন্থ’ পাঠের জন্য মিলিত হয়েছিল ‘এক পুরুষ আর এক নারী—একজন খুনি, অন্যজন ভ্রষ্টা’। সেই ঘরে সোনিয়া, বেশ্যা, দৈবগ্রস্ত, ওরাকল-এর মত, নির্দেশ দিয়েছিল রাসকোলনিকভকে—‘যে মাটিকে তুমি অপবিত্র করেছ প্রথমে তাকে চুমু খাও, তারপর চারদিকে ঘুরে ঘুরে দুনিয়াশুদ্ধ সবাইকে মাথা নুইয়ে প্রণাম জানাও।’

সোনিয়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে মিখাইল দেখালো সাদোভায়া স্ট্রিট যেখানে ওবুখোবস্কি প্রসপেক্টে মিশেছে, রাসকোলনিকভ আর সোনিয়ার স্টোলিয়ারনি লেনের উল্টোদিকে, সেই হে-মার্কেট স্কোয়্যার। সেখানে রাসকোলনিকভ আত্মসমর্পণের আগে সোনিয়া যা যা বলেছিল ঠিক তাই তাই করেছিল—মাটির ধুলোতে ঠোঁট ঠেকিয়েছিল, তারপর আবার নত হয়ে চারদিকের মানুষজনকে প্রণাম জানিয়েছিল।

এইবার আমরা কোকুশকিন ব্রিজ দিয়ে ইউসপভ গার্ডেনের পাশ দিয়ে আলায়েনা ইনাভনার বাড়ির দিকে হাঁটি। বন্ধকী-ব্যবসা করেন। তাঁকেই খুন করতে যাচ্ছে রাসকোলনিকভ তার বাড়ি থেকে গুনে-গুনে ৭৩০টি পা ফেলে। পরে, অতিরিক্ত খুন করতে হবে তাকে, ইভানভনার বোন লিজাভেতাকেও।

এ কীভাবে সম্ভব?

সেন্ট পিটার্সবুর্গকে কি তাহলে সেই ১৮৬৬ সালের মতো করেই সাজিয়ে রাখা হয়েছিল সোয়া শো বছর পরেও? কিংবা শুধু সেই এলাকাটুকুকে? এমন কোনো দ্রষ্টব্য-নির্দেশিকা আমরা পাই না রুশ নথিপত্রে। তাহলে সবকিছু প্রায় অবিকল রইল কীভাবে? মিখাইল কীভাবে দেবেশ রায়কে দেখাতে পারলো সবকিছু মিলিয়ে মিলিয়ে? এমনকি গুনে-গুনে সিঁড়ির ১৩টি ধাপ, আর দুই বাড়ির ৭৩০ পা দূরত্ব?

উত্তরে কেবল এটুকুই বলা যায় যে, সম্ভবত এই অঞ্চলটিকে পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন পড়েনি রুশ কর্তৃপক্ষের। অন্য কোনো কাজেও লাগানোর প্রয়োজন হয়নি। তাই সব আগের মতোই রেখে দেওয়া হয়েছে। ‘আগের মতো রেখে দেওয়া’ কেবলমাত্র রাশিয়া নয়, সমস্ত ইউরোপেরই স্বভাব। তাদের প্রাচীন আমাদের প্রাচ্য-প্রাচীনের মতো এতটা প্রাচীন নয় বলেই বোধহয় যে কোনো নতুন-প্রাচীনকেও সংরক্ষণ করা তাদের প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২.

ফিওদর দস্তইয়েভস্কির ‘অপরাধ ও শাস্তি’ উপন্যাসের অরুণ সোম অনূদিত সংস্করণের ভূমিকাতে দেবেশ রায় আমাদের এতটা পথ নিয়ে এলেন।

বইয়ের ভূমিকা আমরা অনেকই দেখে থাকি। পড়ার কথা নয়, দেখার কথা হচ্ছে। এই ধরনের একটি ভূমিকা সব বইতে না থাকলেও এটি বর্তমানে একটি চালু রীতিই বটে। কিন্তু অনেক গ্রন্থে আমরা দেখতে পাই, ভূমিকা নিতান্তই দায়সারা। দেবেশ রায় বলছেন যে তিনিও বন্ধুকৃত্য করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু সেই বাধ্যবাধকতা তিনি এমন আন্তরিক হৃদ্যতার সাথে পালন করছেন যে এই ভূমিকাটিও হয়ে গেছে গ্রন্থের অপরিহার্য অংশ। রাসকোলনিকভের কথা বলতে বলতে বলে দিচ্ছেন সেন্ট পিটার্সবুর্গের জন্মকথা। জানাচ্ছেন যে এটি রাশিয়ার প্রাচীন শহর নয়, স্থায়ী শহর নয়, পরম্পরা সমর্থিত শহর নয়। পিটার দি গ্রেট এই শহরটি তৈরি করেছিলেন নর্থ সি’র একটি সামুদ্রিক জলা ভর্তি করে, সেই জলাগুলি খাল হয়ে শহরের ভিতর ছড়িয়ে ছিল, আর এ-শহর টুকরো-টুকরো হয়ে ছিল কয়েকটি দ্বীপে, সেই দ্বীপগুলোর মধ্যে সংযোগ রাখত এই খালগুলো আর শহরের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নেভা নামের নদীটি। এই শহরটিকে অনেকেই বলে থাকেন- পিটার দি গ্রেটের দানবীয় জেদের ফসল। সেই শহর হয়ে দাঁড়িয়েছিল সমগ্র রাশিয়ার ক্ষমতাকেন্দ্র। একই সাথে দেবেশ রায় মনে করিয়ে দিচ্ছেন পুশকিন, গোগোল, লেরমন্তভ, দস্তয়েভস্কি, গোর্কি—প্রমুখকে বিভিন্ন সময় নির্বাসন দেওয়া হচ্ছে দূরে দূরে। যেন তাঁরা সেন্ট পিটার্সবুর্গকে বিদ্রোহের কেন্দ্রে পরিণত করতে না পারেন। রুশ লেখকরা তখন মানুষের চিরন্তন মানবসত্তাকে এবং রুশসত্তাকে আবিষ্কারে মন দিয়েছিলেন। এই ‘অপরাধ ও শাস্তি’ উপন্যাসেই তো রাসকোলনিকভ তার বোনকে দুনিয়াকে বলে—‘আমি নীচ হতে পারি, কিন্তু তোর হওয়া সাজে না।’ এই উপন্যাসেই তো সভিদ্রিগাইলভ তার আত্মহত্যার আগের রাতে এক দুঃস্বপ্নে মোড় নেয়া সুখস্বপ্ন দেখে। একটি অল্পবয়সী কিশোরী মেয়েকে সে হোটেলের এক কোণ থেকে তুলে এনে কম্বলের গরম দিয়ে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু ‘হঠাৎ তার মনে হল মেয়েটার চোখের পাতা কাঁপছে, পিটপিট করছে, নড়ছে পাতার দীর্ঘ কালো লোমগুলো।... তলা থেকে উঁকি মারছে ধূর্তের তীব্র চাহনি—যে ভাবে চোখ টিপছে তা কেমন যেন।... ও মুখ তো এখন মোটেই শিশুর মুখ নয়। এ তো ব্যভিচার। এ মুখ তো বারবণিতার মুখ, ফরাসী উপন্যাসের সেই নির্লজ্জ লাস্যময়ী ক্যামেলিয়ার মুখ।... দুচোখের দৃষ্টিতে সে লেহন করছে সভিদ্রিগাইলভকে, তাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।... এ কী পাঁচ বছরের বাচ্চা মেয়ে!’ আশ্চর্য! পরিস্থিতি কতটা অসহ্য হলে পাঁচ বছরের শিশুর মুখ মিলে যায় ফরাসী যৌন-উপন্যাসের মলাটের মুখের সঙ্গে। এতটা নষ্টামি সহ্য করতে পারে না বলেই আত্মহত্যা করে সভিদ্রিগাইলভ।

এই ধর্মবোধ দস্তইয়েভস্কির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে মিশে থাকা একটি জিনিস। দেবেশ রায় এটিকে যৌক্তিক করে তোলেন এই কথা বলে যে যুক্তিবাদ এখনো সবকিছুর উত্তর দিতে পারেনি, সবকিছুর অবলম্বন হয়ে উঠতে পারেনি। তাঁর ভাষায়—‘যুক্তিবাদ, বিজ্ঞান—এইসব চেতনা খুব বেশি হলে তিন-চারশ বছরের মাত্র। সে চেতনা এমনকী পাশ্চাত্যের দেশগুলিতেও মানুষজনের পারিবারিক ব্যক্তিগত জীবনে কোনো বিশ্বাসের ভঙ্গি বা মুদ্রা এখনো স্থায়ীভাবে গড়ে তুলতে পারেনি। যুক্তিবাদ বা বিজ্ঞান বা সমাজরূপান্তরের নীতিশাস্ত্র এখনো গড়ে ওঠেনি। সেখানে ধর্মীয় আস্তিক্য প্রতিষ্ঠানের বাইরে মানুষের নেহাৎ ব্যক্তিগত সব ভঙ্গি, নীরবতা এবং উচ্চারণের সঙ্গে মিশে আছে।’

৩.

দেবেশ রায়ের পথ ধরে ‘প্রেস্টুপেনিয়ে নাকাজানিয়ে’ বা ‘অপরাধ ও শাস্তি’র জগতে প্রবেশের সময়, উপন্যাস পাঠের আগেই আমরা বাড়তি একটা পাওনা পেয়ে যাই। যে সত্য অনেকদিন আগে আবিষ্কৃত হবার কথা ছিল, সেই সত্য দেরিতে হলেও উপলব্ধিতে আসে যে—বড় লেখকরা যা-ই লেখেন, সেটি যে তাঁর মেধাচিহ্নিত হয়ে আমাদের সামনে আসে, তার কারণ হচ্ছে, তাঁরা, দেবেশ রায়ের মতো লেখকরা, যেটাই লেখেন, সেটাই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে লেখেন। অথবা, অনেক গুণের পাশাপাশি এই গুণটার কারণেও, তাঁরা, দেবেশ রায়ের মতো লেখকরা, সত্যিকারের বড় লেখক।পুনর্মুদ্রণ   

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী