পানশালা
ভিনদেশের এক কানাগলিতে দাঁড়িয়ে আমি
পথচারির দিকে হাত বাড়িয়ে
একটি দুটি মুদ্রা হাতে পড়ে
জমিয়ে এবার ফিরবো বাড়ি।
হাতের তালু আধেক হলেই
ফুরোয় তা পানশালাতে।
বাড়ি ফেরার সঞ্চয় আমার কবে হবে?
ডাক পাই ধুলোয়
কিছু একটা আমাকে ডাকে
যখন মুখগুলো ধেয়ে যাচ্ছে দিগন্তকে ছাড়িয়ে
কোলাহলের কুয়াশা আর মায়ার আর্দ্রতা
অন্তরে বেড়ি পরায়
মুক্তির সময়টাতে তাই রক্তক্ষরণ হয়।
যে কোনো বাঁক বদলই মানুষকে
অচল করে দেয় ক্ষণিকের জন্য হলেও
পেছন থেকে একটা টান, ছিঁড়ে আসতে বেদনা ঘিরে ধরে
তাইতো চিৎকার শিশুর মাতৃজঠর থেকে বেরিয়ে।
তবুও কিছু একটা ডাকে
কথা বলে পাখির স্বরে
বাতাসে পাতার শিরশির কাঁপুনিতে
জলের বয়ে যাওয়ায়
ডাক পাই ধুলোয় যা উড়ে যায়।
কাছের জলে দূরের বিরান
এ শূন্যতা আমি কী করে ফেলে আসি
যে নদীর কোনো নাম নেই
অথবা যে সীমান্ত কোনো দেশের নয়
তেমনি একটি অনতিক্রম্য বোধ আমি সাঁতার কেটে যাই।
ডুবন্ত একটি পাথর নিরুদ্দেশের কান্নায় তরল
আর অমাবস্যার হৃদয়ের তাপ কেমন বিষণ্ণ বধির।
সুনসান হাওয়া তরল পাথরটিকে উড়িয়ে নিয়ে যায়
উড়ে যায় সব, নামহীন নদীর ঘ্রাণ
উড়ে যায় সীমান্তের অদৃশ্য কাব্য
কেবলই একটি বোধ যা অনতিক্রম্য
ইশারা দেয় দেহের ভেতর দেহের বাহির থেকে
দূরের কোনো বিরান ভিজে যায়
কাছের জলে আমি তার ছায়া দেখি।
আমার মুঠোয় তোমার শরীর
আমার হাতের মুঠোয় তোমার শরীর
বিস্তীর্ণ সুখ হয়ে শুয়ে থাকে।
আমি হাতের মুঠোয় সময়কে বিকল করে দিয়ে
অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করি, এভাবেই অশরীরী তোমাতে
আমার শরীর উৎক্ষিপ্ত হয়,
বিমূর্ত তোমার শরীর আমার হয়ে যায়
তুমি তা জানলে না।
এভাবেই অদৃশ্য, অস্তিত্বহীন একটি লোকালয়
আমার হাতের করতলে প্রলম্বিত হতে থাকে
সূর্যের রশ্মি তাকে দৃশ্যমান না করলেও।
এভাবেই আমি অক্ষরের সীমানা পার হয়ে
কিছু শব্দ তৈরী করি
যার কোনো উচ্চারণ নেই।
এভাবেই তোমার শরীর আমার হয়ে গেছে
যদিও তুমি তা জানলে না।
একটি বৃক্ষ তো নিজস্ব ভাষাতেই
আরেকটি বৃক্ষের সাথে দূরত্ব ঘুচিয়ে নেয়
আর মানব তার সম্মিলিত ভাষায়
সবার হয়ে গিয়ে সবার সাথে দূরত্ব বাড়ায়
নিজস্ব ঠিকানা হারিয়ে ফেলে করতল শূন্য হয়ে যায়।
শরীরের ভাঁজে শরীর ঢুকিয়ে দিয়ে
সংসারের জ্যামিতিতে একটি কোলাহল
কবেই তো মানব শুধুই একটি ছায়া হয়ে গেছে।
শব্দের ভেতর এবং বাইরে
আমরা শব্দের ভেতর ঢুকে গিয়ে
শব্দের বাইরে চলে যাই।
স্মৃতির ভেতর শব্দের মতো
আমরাও ভাষার ভেতর অর্থহীন
আমাদের পিতামহের কফিনে
শব্দ লিপি হয়ে আটকে আছে।
আর অনুচ্চারিত শব্দে তুমি অবিরাম বলে যাও
তোমার চোখ দুটো দেখছে আমায়—
অ্যাকুরিয়ামের জলের ভেতর আমি সোনালী মাছ।
তোমার হাত অনুভব করছে-
সংগমের উত্তাপে আমি বালিহাস।
এমনি করেই তোমার অক্ষয় বানিয়ে দ্যায় আমার ভাষা
তোমার অক্ষরে সাজানো আমার ভাষায় আমি ঢুকে যাই,
এমনি করেই আমি তোমার বাইরে চলে যাই
এমনি করেই আমি আমার বাইরে চলে যাই।