X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

চারটি কবিতা

বনানী চক্রবর্তী
১৯ অক্টোবর ২০২০, ২২:৩০আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২০, ০১:৩৬

চারটি কবিতা
পুরুষ সিংহ

সেদিনও কি মেঘ ছিলো, সূর্যমিলন এক মেঘ, বলা না বলার

মাঝে আকাশ আমার মতো, আমাদের মতো জল ভরে চেয়েছিলো

নাকি শুধুই তোমার দিকে... তুমি এসে হাত ধরে একটা একটা

করে চৌকাঠ পার করে দেবে কিনা কিছু সংশয়... তাই বুঝি

আকাশে অনেক মেঘে ধোঁয়ার কবিতাগুলো একে একে লেখা হয়ে

যায়... তবুও তোমার কাছে দাঁড়াবার ভয় তো পেয়েছি অনেক

অনেকবার... তুমি তো পুরুষ, তোমারও তো থেকে যেতে পারে,

তোমারও তো তৈরি হয়ে যেতে পারে পেশীর শরীর সুঠাম পুরুষ

অঙ্গ যত... বল বীর্য আর যত কিছু... দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে বহু

বছরের বহু বহু বছরের প্রতীক্ষায় দেখেছি তোমার পথ চলা... এ

কোন পুরুষ এ কোন অপ্রচলিত কিছু মানবিক কলা... গ্রহণ

বর্জনে দৃঢ় মুঠি বৃহৎ মস্তকধারী এ কোন পুরুষ... দীর্ঘ পা ফেলে

ফেলে মেঘগুলো ছিঁড়ে ফেলে, চলেছো আলোর দিকে... জাগতিক

খিদে তেষ্টা ভয়, উপবীত পুতুল প্রতিমা কোথায় লুকালে তুমি...

নিঃসঙ্গ একক... এক হাতে শাণিত কুঠার উত্তরীয়ে জল মুছে

চলো আর হাতে... শিশু নারী খিদে তেষ্টা ভয় কোথায় রেখেছো

বলো... আমরাও এইভাবে গ্রহণে বর্জনে যাই যদি, হাত ধরো,

হাত ধরে যেইভাবে চৌকাঠ পার করিয়েছো... সেইভাবে ঠিক

সেইভাবে আরবার ছুঁয়ে দিয়ে যাও...

 

আগুন ও ওম সর্বংসহা

এই দেখো সকাল হয়েছে, পৃথিবীর শেষ বায়ু অকুলান আমার

হাপরে তো আজ আর কোনোভাবে আগুন জ্বালেনি... শান্ত

চারিধার... স্থলপদ্ম সাদা হতে গোলাপি হয়েছে, কিছু পরে দুধ ও

আলতা রঙে সেজে গেলে আজকে বোধহয় মুগ্ধতার এই চোখ খুলে

যেতে পারে... দুইচোখ তোমাতে যে বিদ্ধ নেই আর... আর

কোনোভাবে বায়ু বায়ু বিশুদ্ধ বায়ু খোঁজে যাবো না কাহারো

কাছে... বলবো না কোনো কথা যেইখানে তুমি রয়ে গেছো...

আজও কেমন সকালের মাঝখানে হলুদ দোপাটি হয়ে কত কত

কথাগুলো ভিড় করে এসেছিলো, সন্তর্পণে সরিয়ে দিয়েছি... কি

হবে কথার দেওয়ালে রঙ তুলি কালির আঁচড়... এই এ

দৃশ্যপটরাজি, এইসব লেখাজোকা... সব কিছু কেমন কেমন

আকাশের ভেলায় ভেসেছে... চলে যাবে, বহুদূর চলে

যাবে... যেইখানে তুমি আছো বুঝি...

তাইবা কি করে হবে, আমাদের ধমনী শিরায়, আমাদের চেতনার

মাঝখানে, সকাল হবার আগে তুমি বসে আছো... তুমি অসহায়

চোখ নিয়ে বসে রবে, যেইভাবে বসেছিলে এইতো সেদিন...

অসহায়তার ভাষা সেইদিন লুকিয়ে ফেলেছি আমি, আজও

লুকোই... তুমি বোঝোনি তো বলো... আজ বলি, যেইদিন পাহাড়ের

বুক ঘেঁষে দীর্ঘ পাথর সব কিছু ঘষে দিয়ে মুছে দিয়েছিল বহু জনপদ

তুমিও সেদিন চোখে এঁকেছিলে জল ও বিস্ময়... সেইদিন সেইদিন

লেখা হয়ে গিয়েছিলো বুঝি, আমাদের নবাধ্যতার উপকথা যত...

নজরে আসেনি...

 

নীরবতা

রাত্রি গভীর হলে, এসো আজ এইভাবে, শুধু এইভাবে

নীরবতাটুকু পান করি... কি হবে কথার দেওয়ালে, রং তুলি বহু

ব্যবহৃত, ভোঁতা, ভোঁতা ক্ষয়ে ক্ষয়ে ক্লিশে হয়ে গেছে... মাটির

সানকি ভরে চলো না চোখের জল ধরি... টুপ টুপ টুপ টুপ

যেভাবে বিষণ্ন দুপুর মেঘেদের সাথে আড়ি করে ওই পাত্র ভরে

দিয়েছিলো, সেইভাবে ঠিক সেইভাবে...

 

আমার এখানে জানো অফুরন্ত জল... নোনা জল, কষ জল, পেয়

ও অপেয় জল... তৃষ্ণা মেটাবো কী গো... জিভেতে ভীষণ ক্ষত,

জ্বালা শুধু জ্বালা অনুভব... গলায় দারুণ ব্যথা প্রহরীর মতো সে

যে কৃপাণ হাতেতে আছে... উষ্ণতা চায়, শুধু উষ্ণ উষ্ণ কিছু

জীবনের কথা বলে... আমার এ ধ্যানমগ্ন জোনাকির আলো এক

হাতে দুই হাতে মুছে দিতে চায়... আমি কেন দেবো বলো, আমি

কেন এইভাবে আত্মসমর্পণে যাবো...

 

চারিদিকে গুপ্ত সুপ্ত আলিঙ্গনে মানুষের শেষদিন ছোঁয়া যেন

চলেছেই অবিরত... আমি যদি ঘ্রাণ নিতে পারি, বলবো তোমাকে

সেইকথা... অন্ধকারে নিশ্চুপে তুলোর বীজের মতো এক থেকে

একাধিক তারা উড়ে উড়ে কোথায় চলেছে যেন... এসব এখন

তবে গোপনীয় থাক, তুমি এলে সাক্ষাতে হবে...

 

গোবর পিটুলি দিয়ে এই দেখো পুতুল গড়েছি... তুমি এইখানে

গাছ, তুমি এক দুর্ভেদী তির... দুরন্ত হংসলতাই হবে যেন...

আমার যে কাঁসার প্রদীপ ছিলো, তেঁতুলে তেঁতুলে ঝকঝকে করে

করে গুছিয়ে রেখেছি... সোনার মতোন হয়ে জ্বলবে এখানে... তুমি

এলে তাপ দেবো, তুমি এলে সবটুকু আলো হয়ে যাবে...

 

অনুভূতি

বহুদিন বহুদিন হয়ে গেলো গলার কাছেতে কিছু জমা হয়ে আছে

যেন... জমাট বাঁধানো এক ব্যথা ও বিভ্রমের তীব্র মিশেল...

কতবার পা টিপে টিপে এসেছি তোমার কাছে... ওই উপত্যকা,

তালুতে স্পর্শ করে মাটি সাক্ষী রেখেছি, সাহসের সঙ্গী হয়েছে

কিছু এলোমেলো হাওয়া...

 

কটা কথা, কিছু সংবাদ নিয়ে নেবো, নিয়ে নেওয়া প্রয়োজন

যেন... ওমনি তোমার ওই পল্লবিত হৃদয়ের ডানা দুইহাতে

পাখিরে নিয়েছে, খাঁচায় বন্দি করে টুপ টুপ টুপ টুপ দানা

খাইয়েছে, আমি পিছিয়ে পিছিয়ে গেছি... বলা যায়! এইকথা

বলবো কিভাবে... থাক থাক সেইসব থাক, পৃথিবীর যাবতীয়

ইতিহাস, ভূগোলের জ্ঞান, কবে কোন যুদ্ধ ঘটেছে, সন্ধি ও

পরাজয়কথা প্রত্নখনন হয়ে থাক... অনুরাগ কথাগুলো উচ্চারিত

হয়ে গেলে হৃদয়ের শোণিতের ধারাজল দুরন্ত দুর্বার ঝর্নাই হয়ে

যাবে যেন... তিরতিরে ব্যথা নিয়ে তোমার পাশেতে শুয়ে একা

একা একা একা চাঁদের দেশেতে যাবে, পরীদের সাথে কিছু,

হাওয়া বেলুনের সাথে সাথে দীর্ঘশ্বাস ভাগ করে নেবে...

 

আমার এ জমিনের সীমানা চিহ্নিত কোনো দাগ খতিয়ান নেই,

আমার আমার কিছু দখলদারিও নেই... ভাবি যেই কেমন কেমন

যেন হয়ে যাই বিদ্যুৎলতা... ঝড় বাদলের মতো তোমারেই ছিন্ন

ভিন্ন করি এসে... দীর্ঘদেহী ওই গাছ ভূমিতে লুটায়... আশ্রয়

প্রশ্রয় লজ্জায় লজ্জায় একটা একটা করে জনপদ সংস্কারে আবার

আবার মেঘ জমে... আজকে আবার দেখো নতুন সূর্য এসে বাসি

বিছানার ওই নববধু সিঁদুরের মতো এলিয়ে পড়েছে যেন...

আমিও আবার গোলা পায়রাই এক বুকে বুকে হাওয়া জমা করে

করে আকাশে আকাশে আজ ওলটপালট... এইবার বলি তবে

তোমারেই বিভ্রমে বিভ্রমে জেগে... বলো না সত্যি কথা বলতেই

হবে হাত রেখে, তোমার প্রথম অনুভূতি আমারে ছোঁবার কালে

কী গো, বলো না নতুন হয়েছে...

/জেডএস/
সম্পর্কিত
দোআঁশে স্বভাব জানি
প্রিয় দশ
প্রিয় দশ
সর্বশেষ খবর
যে কারণে ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ছাড়তে উৎসাহী হবে
যে কারণে ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ছাড়তে উৎসাহী হবে
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবস পালিত হলো কলকাতায়
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবস পালিত হলো কলকাতায়
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, বেতন স্কেল ৯৩০০-২২৪৯০ টাকা
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, বেতন স্কেল ৯৩০০-২২৪৯০ টাকা
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
সর্বাধিক পঠিত
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
তৃতীয় ধাপে যেসব উপজেলায় ভোট
তৃতীয় ধাপে যেসব উপজেলায় ভোট