X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণ : বিশ্বব্যাপী সামাজিক ব্যাধি

সালমা বাণী
০২ নভেম্বর ২০২০, ১২:০৬আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২০, ১২:০৮

ধর্ষণ : বিশ্বব্যাপী সামাজিক ব্যাধি বাংলাদেশে পর পর কয়েকটা ধর্ষণের ঘটনা ঘটে গেল। যা কিনা সমাজের অস্থির নগ্ন দশার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। বিগত কয়েক মাসে ধর্ষণের সবগুলোই সংগঠিত হয়েছে সংঘবদ্ধ অপরাধীদের দ্বারা। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় একটি দুটি নয়, পাতার পর পাতা দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছে ধর্ষণের খবর। নারী, শিশু, কিশোরী ও কিশোর সব এই নির্যাতনের তালিকায়। বিচার না পেয়ে ধর্ষিতা, নির্যাতিতার বাবার সন্তানসহ ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা! এমন সব হৃদয়বিদারক সংবাদ আমাদের পাঠের তালিকাভুক্ত! যদিও এ নতুন কোনো ঘটনা নয়!

ধর্ষণের এই আধিক্য শংকিত করে তোলে দেশের সচেতন নাগরিকদের। এই পর্যায়ে দেশের যুব নারী ও পুরুষ দুটো সমাজ সোচ্চার হয়ে বেরিয়ে আসে রাজপথে। মিছিলে মিছিলে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের রাজপথ। আর সমন্বিত কণ্ঠের চিৎকার ওঠে ধর্ষণের বিচার চাই। ক্ষ্যাপা কণ্ঠে সবাই চাই ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

ধর্ষণ অপরাধ বৃদ্ধির আজকের যে অবস্থা সেটা বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের দুর্বল দিকের প্রমাণ বটে। তবে ধর্ষণ অপরাধ শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বের প্রতিটা দেশে নারীরা এই অপরাধ-মহামারির শিকার! সমগ্র বিশ্বের জন্য ধর্ষণ নতুন কোনো অপরাধ নয়। পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন অপরাধের একটি হচ্ছে ধর্ষণ।

হয়ত এতদিন এই সংবাদ আড়ালে থেকে যেত। অথবা প্রকাশ পেত অতি সামান্য। কদাচিৎ পত্রিকায় এলে গুটি দৃষ্টি আকর্ষণ করতো কিছু পাঠকের। কিন্তু বর্তমান সোস্যাল মিডিয়ার কারণে সেটা দ্রুত চলে আসছে মানুষের নজরে। প্রচার পাচ্ছে ব্যাপক হারে, শুধু দেশের সীমানার মধ্যে নয়, বরং সারা বিশ্বে একযোগে!

লেখক বন্ধু শিহবন জেমিসনের অপরিসীম আগ্রহ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে। কারণ এই ভাষার কবি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। আমার সাথে বন্ধুত্বের কারণে হয়ত ওর সেই আগ্রহ হয়েছে আরও প্রবল। ওর সাথে বন্ধুত্বের শুরু ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোর ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এ পড়ার সময়।

ফেসবুকে বাংলাদেশের ধর্ষণ নিয়ে অন্যান্য মিডিয়ার সাথে ইংরেজি মিডিয়াতে তোলপাড় দেখে আমার কাছে জানতে চাইলো কী ঘটেছে? সত্য আড়াল করার কোনো উপায় নাই! ইচ্ছা হয় না নিজের দেশ মা, নিজের মাতৃভূমির লজ্জা প্রকাশ করতে। কিন্তু ডিজিটাল যুগে আমি কেমন করে লুকাবো আমার লজ্জা। তাছাড়া ওর বয়ফ্রেন্ড আলেসান্দ্রো পেশায় একজন সাংবাদিক। সুতরাং ওর কাছে গোপন করার একেবারেই কোনো উপায় নাই, যেমন গোপন করার উপায় নাই আজ সারা পৃথিবীর কাছে। বাংলাদেশে সংঘটিত দলবদ্ধ ধর্ষণ বা সিরিয়াল রেপ নামের নগ্নতা আজ সারা বিশ্বের কাছে প্রকাশ পেয়ে গেছে!

শিহবনের প্রশ্নে বাধ্য হলাম দেশের বর্তমান ধর্ষণ পরিস্থিতি বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দিতে।

প্রশ্ন হলো ধর্ষণ কেন মহামারি আকারে বেড়ে চলেছে?

৬ মাসের শিশু থেকে ৯০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না ধর্ষকের বিকৃত মানসিকতা থেকে। বাংলাদেশের ধর্ষণ পরিস্থিতির অবনতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এবং ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার মামলা দ্রুত নিস্পত্তির জন্য বর্তমান আইন সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে। [বিডিনিউজ ২৪, অক্টোবর ২০২০]

বিবিসি বাংলার নিউজে প্রকাশ পেয়েছে, ২০১১ জুন থেকে ২০১৮ এই সময়ে ছয়টি জেলায় ৪৩৭২টি ধর্ষণের মামলায় সাজা হয়েছে মাত্র ৫ জনের। এপ্রিল থেকে আগস্ট ২০২০, এই সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ১৫৩ দিনে ৬৩২টি নারী ধর্ষিত হয়েছে। ধর্ষনের প্রচেষ্টায় আহত হয়েছে ১৪২ জন। ধর্ষণ লজ্জা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য আত্মহত্যা করেছে ৫ জন। [সূত্র: আইন ও সালিশ কেন্দ্র।]

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী আনুমানিক এক হাজারের অধিক যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এসেছে জানুয়ারি ২০২০ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত। এই কেন্দ্রের তথ্য সূত্র অনুযায়ী বিগত দুই বছরে হঠাৎ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে ধর্ষণ ও নির্যাতনের পরিমাণ।

সামাজিকভাবে অধিকাংশ মানুষ মনে করেছে ধর্ষণের এই মহামারি শুধু ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ায় এবং বিচারহীনতার কারণেই বেড়েছে। একটি রাজনৈতিক অপশক্তির হীন পরিকল্পনা পরিকল্পিত অপরাধ ঘটিয়ে চলেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এই শক্তির উদ্দেশ্য নারী শিক্ষা, সচেতনতা সার্বিক উন্নয়নে বাঁধা দেওয়া।

যে কারণেই অপরাধ বৃদ্ধি পেয়ে থাকুক না কেন, ধর্ষণ অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে এটাই সত্য। পরপর কয়েকটি দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের যুব সমাজ। উল্লেখযোগ্য হারে সোচ্চার হয়ে ওঠে যুবনারী সমাজ। এই আন্দোলনকে বলা হয় ধর্ষণ প্রতিরোধ আন্দোলন বা রেপ ক্রাইসিস মুভমেন্ট। এই প্রথম ব্যাপক আকারে শুরু হলো বাংলাদেশে। মধ্যরাতে ঢাকা শহরের নারীরা মশাল মিছিল নিয়ে ধর্ষণ বিরোধী স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলে ঢাকার রাজপথ। বাংলাদেশের আন্দোলন চত্বর নামে পরিচিত শাহবাগে শুরু হলেও ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলাদেশের প্রতিটা শহরে, এমনকি গ্রামে পর্যন্ত।

শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের তীব্রতায়, এবং দেশের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আইন প্রণয়ণ করে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হওয়ায় অনেকটা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো এই দাবি ও আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা। শান্ত হলো আন্দোলনে ক্ষিপ্ত রাজপথ।

কিন্তু ইতিহাস কী বলছে? মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হলেই ধর্ষণের মতো অপরাধ কমে আসবে? যে সব দেশ সমূহে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড সে সব দেশের অভিজ্ঞতা এই সাক্ষ্য দিতে পারেনি—মৃত্যুদণ্ড ধর্ষণ রোধ করতে সক্ষম হয়েছে অথবা কমিয়ে আনতে পেরেছে! বরং ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আইন যে সব দেশে প্রণীত হয়েছে সে সব দেশে পরবর্তীতে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিটি হত্যা ও খুনের শিকার হয়েছে। ধর্ষকের চাইতে নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুর হত্যার হার বেড়েছে ধর্ষণের পর।

মানবাধিকার কণ্ঠের সোচ্চার প্রশ্ন বিরাট আকারে আওয়াজ তুলেছে—মৃত্যুদণ্ড কি পেরেছে নারীর প্রতি সহিংস আচরণ বন্ধ করতে?

ইতিহাস এবং প্রমাণাদি বলছে যে সব দেশে ধর্ষণ অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডাদেশ শাস্তি বিধান করেছে সেসব দেশে ধর্ষণের মাত্রা হ্রাস পায়নি অথবা বন্ধ হয়নি। দশটির বেশি দেশে বর্তমানে ধর্ষণ অপরাধের পরিমাপ ভেদে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ধর্ষণ অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড সাজা প্রদান কি খুনের বদলে খুন এর মতো প্রতিশোধ নাটক নয়? কারণ একজন ধর্ষণ নির্যাতনের শিকার নারীকে যেভাবে সমাজ অবহেলা ও ঘৃণার চোখে দেখে সেটা তার জন্য হত্যার সমান। সমাজ মূলত ধর্ষণের শিকার নারীকে মূলত হত্যাই করে থাকে। সে বেঁচে থাকে জিন্দা লাশের মতো।

বাংলাদেশ ও ভারতে ধর্ষণের অপরাধে অপরাধীদের শাস্তি পাওয়ার সত্যতা কম। আইনের শাসন প্রতিনিয়ত ফাঁকি দিচ্ছে অপরাধ চক্র। এবং অপরাধের শিকার, ভুক্তভোগীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে বিচারহীনতায়। অপরদিকে ধর্ষণের মতো সামাজিক লজ্জা ও ধিক্কার জড়িয়ে থাকে ধর্ষকের শরীরে নয়, ভুক্তভোগীর শরীরে, নির্যাতিতার শরীরে ও পরিবারে। সুতরাং সামাজিক লজ্জা অপবাদ থেকে মুক্ত থাকার জন্য ধর্ষণের শিকার নারীটি পালিয়ে বেড়ায়। নিজেকে আড়াল করে রাখে অথবা নীরবে গোপন রাখে এই অপরাধ!

মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তির বিধান মগজ ধোঁয়ার মতো মিথ্যে প্রক্রিয়া মাত্র। ভারতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেল ২০১৯ সালে যৌন অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৩%।এবং সেখানে মৃত্যুদণ্ড-প্রাপ্ত আসামির সংখ্যা মাত্র ৪ (চারজন) জন। নারীর প্রতি যৌন নির্যাতন প্রতি বছর ভীতিজনক হারে বেড়ে চলেছে ভারতে। ধর্ষণের শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে চীন পৃথিবীর কঠিনতম শাস্তির দেশ হিসেবে পরিচিত। ধর্ষণের নিষ্ঠুরতার ওপর নির্ভর করে শাস্তির পরিমাণ। যেমন ধর্ষকের লিঙ্গ কর্তন থেকে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত। কিন্তু তদুপরি ধর্ষণমুক্ত সমাজ তৈরি হয়নি। কারণ একই ধর্ষিতার জন্য সামাজিক লজ্জা ও দায়! চীনের পরেই শাস্তির কঠিনতম অবস্থানে আছে আফগানিস্তান।এই দেশে ধর্ষকের শাস্তির সর্বোচ্চ অথবা সর্বনিম্ন কোনো স্তর-বিন্যাস নাই। একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এবং এই মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয় অত্যন্ত নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে। চার দিনের ভেতর অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এবং এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় মাথায় গুলি ছুড়ে। এবং গুলি ছোড়ার দায়িত্ব পালন করে ধর্ষিতা। তবে ধর্ষিতা গুলি ছুড়তে রাজি না হলে ফাঁসি দিয়েও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। অনুমান করা হয় শাস্তির নির্মমতার কারণে আফগানিস্তানে ধর্ষণের পরিমাণ কম। কিন্তু এটা বলা যাবে না একেবারেই ধর্ষণ অপরাধ মুক্ত দেশ! ইরানেও ফাঁসির সাজা মৃত্যুদণ্ড। ফাঁসি অথবা গুলি ছুড়ে প্রকাশ্য জনসম্মুখে কার্যকর করা হয় মৃত্যুদণ্ড। সৌদি আরবের ফাঁসির শাস্তিও ইরানের অনুরূপ কঠিন মৃত্যুদণ্ড। শরিয়া আইন অনুযায়ী এই মৃত্যুদণ্ড জনসম্মুখে দেয়া হয়। দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করা হয়, অতঃপর বিচ্ছিন্ন মস্তককে দেহের সাথে জোড়া দেওয়া হয়। অপরাধের ক্ষেত্র বিশেষে পাথর ছুড়ে মারা হয় যতক্ষণ না পর্যন্ত মৃত্যু ঘটে। এই শাস্তি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু এত এত মৃত্যুদণ্ডের সাজা ধর্ষণ নামক হীন অপরাধটির অস্তিত্ব সমাজ থেকে চিরতরে নির্মূল করতে পারেনি।

আমেরিকার ২২টি প্রদেশে মৃত্যুদণ্ড শাস্তির বিধান আছে। জানুয়ারি ২০২০-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২৬২০ (দুই হাজার ছয়শত কুড়ি জন) মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আছে। এই সব আসামিরা সকলেই অপেক্ষায় আছে, এদের ভেতর অনেক আসামি আছে যারা মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় আছে ১৫ বছরের বেশি সময় যাবৎ। ১৯৭৬ সাল থেকে এই সময় পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ১৫১২ জন আসামিকে।

ফ্রান্সে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আইন নেই, কিন্তু অপরাধীদের দীর্ঘ সময় কারা ভোগ করতে হয়। পনের থেকে ত্রিশ বছর পর্যন্ত এই কারাদণ্ডের মেয়াদ।

নেদারল্যান্ডে ধর্ষণের শাস্তি চার বছর থেকে পনের বছর পর্যন্ত। যদি অপরাধীর মৃত্যুও ঘটে তদুপরি তার শাস্তি পনের বছর নির্ধারিত থাকবে।

মৃত্যুদণ্ডের ভয় অপরাধ হ্রাস করে না। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন দেশে মৃত্যুদণ্ডের ভয়ে ধর্ষণ অপরাধ হ্রাস পেয়েছে বলে প্রমাণিত হয়নি। মৃত্যুদণ্ডের চাইতে বরং দীর্ঘমেয়াদী মৃত্যুদণ্ড আইন অধিক কার্যকরী। ১৯৭৬ সালে কানাডা মৃত্যুদণ্ড আইন বিলোপ করে। এবং লক্ষ করা যায় মৃত্যুদণ্ড নিষেধ আইন প্রণয়নের পর কানাডা হত্যা, খুন এসবের মতো অপরাধ হ্রাস পেয়েছে। তবে এদেশও ধর্ষণ অপরাধ মুক্ত নয়।

আমাদের দেশে এখনও যৌন নির্যাতন বলতে শুধু ধর্ষণকেই বোঝায়! কিন্তু উন্নত বিশ্বে ধর্ষণ ছাড়াও শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন প্রকারভেদে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি সংজ্ঞার আওতাভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে যৌন নিপীড়ন, যৌন অপদস্ততা অথবা হেনস্তা, শিশুদের প্রতি যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন, অস্ত্র অথবা ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে যৌন নিপীড়ন, অশ্লীল মন্তব্য, অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব (বাংলাদেশে ইভটিজিং হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে), অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত ও অনুরূপ উদ্দেশ্যে অনুসরণ। এবং অতি সাম্প্রতিক সাইবার অথবা অনলাইন হেনস্তা ও অপদস্ত করাও যৌন নির্যাতনে সমন্বিত হয়েছে। এছাড়া আছে যৌনকর্মী বানানোর উদ্দেশ্যে অপহরণ ও যৌনকর্মী ব্যবসায়ে বিনিয়োগ অথবা ব্যবহার করা। আছে যৌন বিনোদনের উদ্দেশ্যে সংগোপনে নগ্ন চিত্র ধারণ, অবলোকন ও ব্যবহার। এসমস্ত অপরাধ যৌন নিপীড়নের আওতাভুক্ত।

যৌন নিপীড়নের কোন বয়স অথবা বয়সের সীমানা নেই। একজন যৌন নির্যাতক অথবা নিপীড়ক সে যে কোনো বয়সেরই হতে পারে। হতে পারে যে কোন ধর্ম, জাতি ও সম্প্রদায়-ভুক্ত। যৌন নিপীড়নের অপরাধ ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে সমাজের সুস্থ মানুষের জীবনযাত্রা। একজন ধর্ষক অথবা নিপীড়ক শুধু একজন ব্যক্তি বিশেষকে সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে না। একক ব্যক্তি এবং দলবদ্ধ অপরাধীরা সমষ্টিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে নির্যাতন ভোগকারীসহ তার পরিবার ও সমাজকে।

খুব কাছের উদাহরণ হিসাবে আমরা দেখাতে পারি সম্প্রতিকালের বাংলাদেশের অবস্থা। আজকে সারা বাংলাদেশের সামাজিক শাস্তি ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত ও ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের এই আন্দোলনের কথা ছড়িয়ে পড়েছে ডিজিটাল সময়ে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশের ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সারা বিশ্বের সভ্য সমাজের।

ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন সদ্য শুরু হয়েছে বাংলাদেশের রাজপথে। কিন্তু পৃথিবী জুড়ে এই আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ সময়ের।ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন মূলত শুরু হয় আফ্রিকান আমেরিকান নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ প্রতিরোধ আন্দোলনের মাধ্যমে। যখন দাস প্রথার প্রচলিত ছিল তখন দাসত্বের অমানবিক শৃংঙ্খলে আবদ্ধ নারীদের ওপর সাদা চামড়ার পুরুষরা নির্যাতন চালাতো। তখন ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন ছিল অতি সাধারণ ঘটনা। এবং সমাজে অপরাধ বলে গণ্য হতো না। দাস প্রথার বিলোপ ঘটলেও নির্যাতনের ইতিহাস দীর্ঘ হতে থাকে। এই নির্যাতন ও অত্যাচার বাড়িয়ে দেয়ার হীন উদ্দেশ্য ছিল সামাজিকভাবে কালো রঙের মানুষেরা যেন শক্তি বৃদ্ধি করতে না পারে এবং তারা যেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কোথাও স্থান লাভ করতে না পারে। সময়টা ছিল ১৮৬৬। এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠস্বর ক্রমশ সফল আন্দোলনের রূপ লাভ করে।

অনুন্নত, উন্নয়নশীল এসব যত সংজ্ঞাতেই পৃথিবীর দেশগুলোকে চিহ্নিত করা হউক না কেন পৃথিবীর অতি সভ্য অথবা উন্নত দেশের দাবিদার কোন দেশই আজ পর্যন্ত এই দাবি করতে পারে না তাদের দেশ ধর্ষণের মতো অপরাধ মুক্ত।

রেপ ক্রাইসিস মুভমেন্ট (Rape Crisis Movement) গড়ে ওঠে আমেরিকাতে এবং ব্যাপক সংগঠিত হয়। ১৯৭০ সালে। অগণিত নারীর কঠিন শ্রমের ফসল রেপ ক্রাইসিস মুভমেন্ট। রেপ ক্রাইসিস এই আন্দোলনে সোচ্চারিত দাবির সর্বপ্রধান দাবি ছিল ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনা বৃদ্ধি। এবং এই লক্ষ্যে সরকার সমূহের ফলপ্রসূ কর্মসূচি গ্রহণ। এই আন্দোলনের সর্বপ্রধান সফলতা ছিল ধর্ষণের জন্য ঘৃণিত বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে নারীদের কথা বলার সাহসিকতা। রেপ ক্রাইসিস সেন্টারগুলো স্থাপিত হয় সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালে। প্রথম দিকে এই সেন্টারগুলোর ভেতরও বৈষম্য ছিল। কালো চামড়ার নারীদের তখন সংশ্লিষ্ট করা হয়নি। ফলে শুরু হয় বিরোধিতা। দ্বিগুণ হতে থাকে কালো চামড়ার নারীদের উপস্থিতি আন্দোলনসমূহে। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ এই সময়ের ভেতর প্রবল হতে থাকে বর্ণ বৈষম্য আন্দোলন। পরবর্তীতে যে কোনো রকমের সাহায্য সহযোগিতার নিশ্চিন্ত আশ্রয় হয়ে ওঠে রেপ ক্রাইসিস সেন্টারগুলো।

১৯৭০ সালে গড়ে ওঠা আন্দোলনের সাথে ১৯৯০ সালের আন্দোলনের পর্যায় আলোচনা করলে আমরা দেখতে পাই শুরুতে এই আন্দোলন সামান্য কিছু সফলতা অর্জন করছে। ফলে নারীবাদী আন্দোলনের নেতারা ক্রমেই আরও কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলে। তাদের আন্দোলন ক্রমেই বিস্তার লাভ করে বিশ্বব্যাপী। ফলে উন্নত বিশ্বে ধর্ষকের শাস্তি প্রতিষ্টা পায় এবং প্রকাশ পেতে থাকে ধর্ষণের সঠিক চিত্র। সম্মানজনক ভাষা ব্যবহারের আইন প্রণীত হয় ধর্ষণের শিকার নারীদের প্রতি ব্যবহারের জন্য। এবং এটাও ছিল নারী আন্দোলনের ফলাফল। শুধু তাই নয়, শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতনের বিষয়টিও এই আন্দোলনের মাধ্যমে উন্মোচিত হয়।এবং সমাজের জন্য কতটা ক্ষতিকর সেটা নির্ণীত হয় এই আন্দোলনের মাধ্যমেই। নতুন আইন প্রণীত হয় ধর্ষিতার ন্যায্য বিচার ও সামাজিক মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্টার। পুলিশ বিভাগের জন্য নির্ধারিত হলো বিশেষ ট্রেনিং প্রদান। তাদেরও শেখানো হলো ধর্ষণ বিচার কার্য পরিচালনার জন্য নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির সাথে কোন ভাষা ও আচরণ প্রয়োগ করে অভিযোগ গ্রহণ করতে হবে।

তবে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন যতটা সংগঠিত হওয়ার কথা ছিল ততটা সফলভাবে এগিয়ে যায়নি বা যেতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ হলো রাষ্ট্রসমূহের সরকারের নিকট থেকে আশানুরূপ তহবিল বা ফান্ড পাওয়া যায়নি। আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামত অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে বিবেচ্য হওয়া দরকার ছিল কিন্তু সেটাও হয়নি বাস্তবে।

যে সব দেশে ধর্ষণের শাস্তির সর্বোচ্চ কঠিনতর স্তরে রয়েছে সে সব দেশেও ধর্ষণের শিকার নারীরা ধর্ষণের যন্ত্রণা নীরবে সহ্য করে। কারণ অতি সহজে অনুমেয়! সমাজে ধর্ষণ নির্যাতনের শিকার নারীর অবস্থান। একজন ধর্ষিতা নারী সমাজে অবহেলিত ও পরিত্যাক্ত। সমাজ তাদের ঘৃণা, অবমাননা ও অবহেলার চোখে দেখে। কখনোই গ্রহণ করে না সম্মানের সাথে। একই ভাবে রাষ্ট্রে ধর্ষকের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও সামজের ভেতর সৃষ্ট ব্যবস্থা ধর্ষকের পক্ষেই দাঁড়ায়। সমাজের তৈরি নানা ফাঁকফোকড় দিয়ে ধর্ষক বের হয়ে আসে শাস্তির হাত থেকে। বাহ্যত সমাজের গুণী জনেরা অথবা সমাজের মুখপাত্র যারা তারা নীতি মূল্যবোধের কথা বললেও মূলত সমাজ আজও স্তব্ধ হয়ে আছে সচেতনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে।

মৃত্যুদণ্ড আইন ঘোষিত বিভিন্ন দেশের অপরাধ পরিসংখ্যন গবেষণা ও পর্যালোচনা করে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে মৃত্যুদণ্ড কোনো অপরাধ দমনে বা হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে না। এক্ষেত্রে গবেষণা মিশ্র ফলাফল প্রমাণ করেছে। রাষ্ট্র কৃর্তক দ্রুত মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হচ্ছে অন্দোলনকারীদের আন্দোলন দমন করার একটা পন্থা মাত্র। বরং মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার মাধ্যমে রাষ্ট্র অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। যে সব ক্ষতিকর অপরাধ দমনের জন্য জরুরি সে সব অপরাধ সমাজে স্থায়ীভাবে আসন নিয়ে নেয়।

ভারত বাংলাদেশ সহ বহু দেশের আইনের প্রয়োগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন ও উন্নয়ন সাধন একান্ত জরুরি। বহু ক্ষেত্রেই আইন আছে কাগজে কলমে কিন্তু এর যথাযথ প্রয়োগ নাই। এই সব দেশ সমূহে সত্যিকারের অপরাধীদের সাজা পাওয়ার সত্যতা কম। এই সব দেশে আইনের শাসন প্রতিনিয়ত দুর্নীতির মাধ্যেমে ফাঁকি দিচ্ছে অপরাধ চক্র। মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তির বিধান মগজ ধোয়ার মতো মিথ্যে প্রক্রিয়া মাত্র। অপর দিকে ভীতিকর চিত্র হচ্ছে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ ও বিত্তের বিনিময়ে সহজেই অপরাধী পালিয়ে যায় ও কোনো এক নিরপরাধীকে শাস্তির খাতায় তুলে দেয়। এই গবেষণায় দেখা যায় বেশিরভাগই দেশেই ধর্ষণ নির্যাতনের শিকার নারীদের মানসিক ও সামাজিক কোনো রকম সহযোগিতা করা হয় না। ধর্ষণের শিকার নারীর জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টিও যেন সচেতন ভাবে এগিয়ে গেছে রাষ্ট্র সমূহ।

নারীদের মতোই বাংলাদেশ ও ভারতের মতো অসংখ্য দেশে হিজড়া সম্প্রদায় অথবা ট্রান্স জেন্ডাররা সর্বাধিক অবহেলিত ও নিগৃত গোষ্ঠী। সমাজের কোন অধিকারই তারা ভোগ করে না। ফলত তাদের প্রতি ধর্ষণ নির্যাতনের বিষয়টি থাকে একেবারেই দৃষ্টির আড়ালে। তারা শিকার হয় অধিক ধর্ষণ নির্যাতনের। তাদের জন্য আইনের কোথাও কোনো সহযোগিতার কথা নাই। আইনগত সাহায্য সহযোগিতা কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে নাই বলাই সঠিক। একই চিত্র বাংলাদেশ ও ভারতের শিশু কিশোরদের। বিশেষ করে এতিম, দরিদ্র শিশু ও কিশোরদের। এই সব অসহায় অবহেলিত হিজড়া অথবা ট্রান্সজেন্ডার ও শিশু কিশোরদের জন্য সরকারের প্রয়োজন বিশেষ কার্যক্রম হাতে নেয়া।

ধর্ষণ বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের অধিক কার্যক্রম গ্রহণ করা। গ্রহণ করা সারা দেশে ধর্ষণ সমস্যা সমাধান প্রকল্প। উন্নত বিশ্বের দেশ সমূহের মতো রেপ ক্রাইসিস সেন্টার স্থাপন করে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আজকে আমরা যতটুকু ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন প্রত্যক্ষ করছি তার সবটুকুই অগণিত সমান অধিকার সচেতন নারীদের কঠোর আন্দোলনের ফসল। শুধু ধর্ষণ বিরোধী মিছিল শুধু নয়। দাবি আরও জোরদার হওয়ার চাইতে প্রয়োজন সরকার সমূহের কঠিন নীতিমালা। ধর্ষণের মূল কারণ ও অপরাধ উৎপাটনে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন। কয়েক শতাব্দী পার হয়েছে নারী অধিকার আদায়ের আন্দোলন। সময়ের গতিতে আন্দোলন এগিয়ে চলেছে। পৃথিবীর নারী সমাজ আজ অর্জন করেছে অনেক অধিকার কিন্তু পরিসংখ্যনে দেখা যায় সেই অর্জন আজও খুবই সামান্য।

আজকের বাংলাদেশে যে আন্দোলন সে আন্দোলন পৃথিবীর নারী আন্দোলনেরই ধারা। এবং এ আন্দোলন অবশ্যই এগিয়ে চলবে ধর্ষণ-মুক্ত শোষণ নির্যাতন মুক্ত পৃথিবীর পথে। ধর্ষণের শিকার নারীকে অন্য সব দুর্ঘটনার শিকার মানুষদের মতো মর্যাদা দিতে হবে। এটা নারী আন্দোলনের একক কোনো দায়িত্ব নয়! রাষ্ট্র ও সমাজের সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব। ধর্ষণ মুক্ত পৃথিবীর জন্য নারী ও পুরুষ একে অপরের হবে পরিপূরক, সহায়ক—বন্ধু।

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
ব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
এনার্জি মাস্টার প্ল্যান সংশোধনের দাবিব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান