X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাল্লাম ইলিয়ার (এ কেমন) বিচার

মুস্তফা শহীদ
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:০৬আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:২৪

মোহাম্মেদ বেন আবদাল্লাহ, ঘানার খ্যাতিমান নাট্যকার, একইসঙ্গে তাকে আধুনিক আফ্রিকান নাট্য আন্দোলনের পুরোধাও বলা হয়। তার ‘দ্যা ট্রায়াল অব মাল্লাম ইলয়া’ রাজনৈতিক ক্ষমতার পুনঃপৌনিক উত্থান-পতন ও বৈচিত্রে ভরপুর। এখানে বিপ্লব, প্রতি-বিল্পব, বা আদর্শ— তা যে নামেই চিহ্নিত হোক না কেন, সে সবের আকাঙ্ক্ষা, পদ্ধতি ও বাস্তবতা প্রায় একই। নানা নামে আর্বিভূত একই গোষ্ঠীর হাতে পদানত রাষ্ট্র ও সাধারণ নাগরিক।

মোহাম্মেদ বেন আবদাল্লাহ তার এই নাটকে সাহিত্যের কথিত আদর্শবাদ, নৈতিকতা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা—যাকে ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন’ বলেও অভিহিত করা হয়, তা করেননি। তিনি ক্ষমতালিপ্সার যথেচ্চারের বৃত্তরই ছবি এঁকেছেন ‘দ্যা ট্রায়াল অব মাল্লাম ইলয়া’য়।

তবে নাটকটি মোটেও এমন সরলরৈখিক নয়। এর ভেতরে আছে নানা ঘটনার বহুরৈখিক উপস্থাপনের কৌশল ও উত্তেজনা। নাটকটি ফুটিয়ে তুলতে তিনি আফ্রিকান ঐতিহ্য, মৌখিক ইতিহাস, মুখোশ, নৃত্য ও পাপেটের ব্যবহার করেছেন সফলভাবে। যা তার নাটকের বৈশিষ্ট্যও।

নাটকের শুরুতে দেখি রাতের অন্ধকারে মালওয়াল নামে এক সেনা বিদ্রোহের নেতা মাল্লাম মুহাম্মদ ইলিয়াকে আটক করে নিয়ে আসে তাদের নির্জন আস্তানায়, যেখানে তার বিচার শুরু হয় তার প্রতিটি ক্ষতাসীনের সঙ্গে অত্যন্ত সখ্য বজায় রাখা ব্যক্তি তথা ‘দুষ্ট চক্র’ হিসেবে অভিহিত করে। মালওয়ালের বিনা রক্তপাতে ক্যু করার নির্দেশ থাকলেও প্রাসাদে ইলিয়ার স্ত্রীকে খুন হতে হয় বাস্তবতার নিরিখেই।

ইলিয়া আঙ্গাহ্’র প্রধান মসজিদের শাহী ইমাম, যিনি শৈশবেই ছিলেন পিতৃমাতৃহীন, তাকে দত্তক নেন ইমাম আব্বাস, যিনি একইসঙ্গে ধর্মীয় নেতা ও আঙ্গাহ্’র অধিকর্তা কামরান শাহ্’র উপদেষ্টা। ইমাম আব্বাস তার শিক্ষাগুরু ও পিতা, তার স্ত্রী ডিকোকে মা ও কন্যা হালিমাকে বোন বলেই জেনে বড় হয়। হালিমা যৌবনবতী হয়ে উঠলে কামরান তাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়, তাদের মধ্যে যাতায়াত শুরু হলে হালিমা গর্ভবতী হয়ে পড়ে, কিন্তু কামরান রাজনৈতিক কারণে বিয়ে করেন পাশের দেশের রাজকুমারিকে। হালিমা নিযুক্ত হন প্রসাদের প্রধান সহকারি হিসেবে।     

ইলিয়া ধর্মানুগ ও সত্য প্রকাশে আপোষহীন। কামরানের শাসনের সমালোচনা করে সে জনমনে আস্থা অর্জন করলেও তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়। তবে তাকে প্রাণে বাঁচানো যাবে যদি সে উপদেষ্টা পরিষদের কাছে স্বীকার করে যে, সে হালিমাকে ধর্ষণ করেছে, ফলস্বরূপ সে গর্ভবতী। হালিমাও বাধ্য হয়েছে পরিষদের কাছে সাক্ষ্য দিতে তিনি ইলিয়া কতৃক ধর্ষিত। ইমাম আব্বাসকে কারাগারে পাঠানো হয় ইলিয়াকে রাজি করাতে। ইলিয়া অবিচল, উপরন্তু তার পিতা ও গুরুকে আপোষকামীতার জন্য ভর্ৎসনা করেন। কামরান যা আড়ালে থেকে শুনে ফেলে।

এরই মধ্যে একটি অভ্যুত্থান সংঘঠিত হলে নতুন বন্দিদের কারাগারে নিক্ষেপ করার জন্য পুরনো বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়। কামরান শহর ছেড়ে পালায়। আশ্রয় নেয় শ্বশুরের রাজ্যে। ইমাম আব্বাস পরলোকে। ডিকো হালিমার পুত্রকে নিয়ে আরেক পরিষদ ও পুরোহিত কোয়েইটের তত্ত্বাবধানে আত্মগোপনে। ওই সন্তানকে তার সঠিক পরিচয় জানানো হয় না।

ইলিয়া নতুন শাসকের সঙ্গে যুক্ত হন এবং হালিমাকে বিয়ে করেন। যদিও তিনি জনসম্মুখে স্বীকার করতে বাধ্য হন হালিমাকে তিনি গর্ভবতী করেছিলেন ধর্ষণ করে।

মোহাম্মেদ বেন আবদাল্লাহ মালওয়াল কেনো ইলিয়ার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ে মরিয়া, তার জট খুলতে থাকে ধীরে ধীরে। ইলিয়ার ধর্ষণ বিষয়ক প্রকাশ্য স্বীকারোক্তির দিনে মালওয়ালও জনতার সঙ্গে তা শুনেছে। এদিকে মালওয়াল বড় হয়েছে পুরোহিত কোয়েইটের রাজনৈতিক মন্ত্রণায়, যিতি তাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন ক্ষমতা দখলের কাজে। যেজন্য  ইলিয়াকে ‘সরিয়ে দেওয়ার অর্থে’ বিচার করা জরুরি।

উত্তেজিত মালওয়াল ইলিয়ার তিরিশ বছরের পেছনের ইতিহাস ঘাটাঘাটি করতে যায় মূলত আত্মানুসন্ধানেই, বা সেই ব্যাপারটিই সামনে এগিয়ে আসে। যে জানতো সে ধর্ষক ইলিয়ার সন্তান, কিন্তু ইলিয়ার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সে তো কামরানের রক্তধারা বহন করছে। একইসঙ্গে তার সৈনিক খুন করেও এসেছে তার জন্মদাত্রী মাকে। ইলিয়ার বিচারের কালক্ষেপনের কারণে তার বিপ্লবও প্রতিহত হয় আরেক গোষ্ঠীর হাতে।

নাট্যকার বেন আবদাল্লাহ পুরো নাটকটিই অতীতকে দর্শকের সামনে মঞ্চস্থ করে দেখিয়েছেন। কারণ এই নাটকের অধিকাংশ চরিত্রই মৃত। ইলিয়ার জবানবন্দির মধ্যদিয়েই কেবল তারা জীবিত।  

মোহাম্মেদ বেন আবদাল্লাহ ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছেন। ঘানা, জর্জিয়া ও টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। শিশুদের থিয়েটার নিয়ে কাজ করেছেন। ফ্রানৎস ফানো ও বেরটাল্ড বেকটের সঙ্গে কাজ করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে দ্যা এলিয়েন কিং, ভারডিক্ট অব দি কোবরা, দ্যা স্লেইভস রি-ভিজিটেড, দ্যা উইচ অব মোপটি ইত্যাদি।  

‘দ্যা ট্রায়াল অব মাল্লাম ইলয়া’ অনুবাদ করেছেন সৌম্য সরকার। মঞ্চস্থ করেছে বটতলা। প্রকাশক ধ্রুবপদ। মূল্য ১৬৮ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন তৌহিন হাসান।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দোকান সাজাতে গিয়ে গানচিত্র নির্মাণ!
দোকান সাজাতে গিয়ে গানচিত্র নির্মাণ!
বিতর্কিত দ্বীপ নিয়ে জাপানের কূটনীতিককে তলব দ. কোরিয়ার
বিতর্কিত দ্বীপ নিয়ে জাপানের কূটনীতিককে তলব দ. কোরিয়ার
সন্তানদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে চা বিক্রেতা মনিরুজ্জামানের
সন্তানদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে চা বিক্রেতা মনিরুজ্জামানের
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
সর্বাধিক পঠিত
কিছু আরব দেশ কেন ইসরায়েলকে সাহায্য করছে?
কিছু আরব দেশ কেন ইসরায়েলকে সাহায্য করছে?
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ১৮ এপ্রিল
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ১৮ এপ্রিল
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি