X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
সুলতানার স্মৃতিকথা

নৌকাজীবন

ড. আখতার হোসেন
০১ নভেম্বর ২০২১, ১৪:১০আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২১, ১৪:১৭

নিগার সুলতানা একজন নিভৃতচারী সংগীতশিল্পী ও গৃহিণী, করোনাকালের দীর্ঘ অলস সময়ে হঠাৎ করেই কিছু ঐতিহাসিক ঘটনাকে ঘিরে রচনা করেন ‘নৌকাজীবন’ নামক একটি গ্রন্থ। বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের সাথে নিগার সুলতানার পরিবার কীভাবে সম্পর্কিত তা নিয়ে নানা ঘটনার আলোকে রচনা করেছেন ভিন্ন রকম এই গ্রন্থ। নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের সদস্য হয়ে খুব কাছে থেকে দেখেছেন দাদা খানসাহেব, ওসমান আলী, পিতা সামসুদ্দোহা, চাচা মোস্তফা সারওয়ার বড় ভাই নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমান ও ছোট ভাই শামীম ওসমানকে। অন্যদিকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের অনেক সদস্যদের। সুলতানার স্মৃতিকথার বর্ণনার ভিতর বঙ্গবন্ধু আত্মত্যাগ করতে শিখিয়েছে তারই বয়ান সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে ‘নৌকাজীবন’ গ্রন্থে।

পাকিস্তান ভারত বিভক্তিরও দশবছর পর লেখকের জন্ম হয়েছিল এই বাংলায়। তারপরও ছোট বয়সেই দাদা বাবার আলোচনাও বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির বাঙালিদের। শোষণ আর বঞ্চনার জন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রান্তিক এই জনপদের। বঙ্গবন্ধু রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তেও বারবার উপস্থাপিত হয়েছে দাদার বাড়ি বায়তুল আমান আর বাবা বাড়ি হিরা মহল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাসহ নানা আন্দোলনের কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি বাড়ি। বাবা শামসুদ্দোহা আর মা নাগিনা জোহার বিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের মধ্যস্থতায় কীভাবে সম্পন্ন হয়েছিল তার বর্ণনা সুন্দরভাবে লেখক তুলে ধরেছেন। লেখক আরো বলেন ভাষা আন্দোলন ছাড়াও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধপূর্ব ও পরবর্তীসব আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জ পলিটিক্যাল হ্যান্টিং গ্রাউন্ড নামে খ্যাত ছিল। বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে মাওলানা ভাসানী, জাতীয় চার নেতাসহ বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবদান রাখা প্রায় সব রাজনীতিবিদদের আসা-যাওয়া ছিল এ দুটি ভবনে (পৃ. ৬১)

মুক্তিযুদ্ধের সময় কীভাবে নারায়ণগঞ্জের বাড়ি ছেড়ে মেঘনা হয়ে কীভাবে আগরতলা থেকে কলকাতার শরণার্থী জীবনের দুঃসহ জীবন কেটেছে তার বর্ণনা করেছে লেখক। যুদ্ধের সময় মামাবাড়িতে আশ্রিত জীবনে বঙ্গবন্ধু জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালের সাথে দেখা হয়। সেখানে কিশোর শামীম ওসমানের সাথে শেখ কামালের মধুর ঝগড়ার স্মৃতির বইয়ের পাতায় পাতায় আজো অম্লান। বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ কামালও যে শিশুবান্ধব ছিলেন নিগারের বর্ণনায় ফুটে ওঠে অকৃত্রিম আবেগে।

‘নৌকাজীবনে’ বঙ্গবন্ধু পরিবারের অনেক অজানা তথ্যের সমাহার ঘটেছে। বঙ্গমাতা বেগম মুজিব লেখকের মুজিব চাচির সাদামাটা জীবন যাপনের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের রোডের বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যৌথ পরিবারের নিয়মিত যাতায়াত ছিলো। অল্প বয়সেই মুজিব চাচির মতোই ঘন দুধের চা খাওয়ার অভিজ্ঞতার বর্ণনা পাঠককে জানিয়ে দেয়।

একজন আটপৌড়ের বাঙালি মাতার চিরন্তন রূপ। শেখ শহীদের বিয়ের বৌভাতে মুজিব চাচির পাশে বসে মা আর মুজিব চাচির কথোপকথন শুনে অবাক হয়ে যায় লেখক। অতিসাধারণ একটি গাদোয়ান শাড়ি পরিহিতা বেগম মুজিবকে নাগিনা জোহা বলেন, ‘ভাবি আজকে আপনাকে সুন্দর লাগছে, কেন আপনি সাজগোজ করেন না?’ প্রশ্নের উত্তরে মুজিব চাচি বলেন, ‘এত সেজেগুজে লাভ কী? আজকের রাজা কাল হয়তো রাস্তায় থাকতে হবে। এই তো জীবন (পৃ. ২১)। এ উক্তিতে সাধারণ জীবনের অসাধারণ একটি উপলব্ধি। জীবনকে বুঝতে শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন বঙ্গমাতা।

১৯৭৫ সানে ৩ নভেম্বর শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সাথে একই সেলে থেকে ও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান বাবা শামসুদ্দোহা। সে তিক্ত অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনকে কীভাবে কুঁড়ে কুঁড়ে খায় পিতা সামসুদ্দোহাকে, তার মর্মস্পর্শী বর্ণনা করেছেন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হায়ে নিপীড়িত হয়েছে লেখক পরিবার। তারও বর্ণনা পাওয়া যায় লেখকের লেখনীতে এমনি করে অনেক অজানা কাহিনির বর্ণনা ‘নৌকাজীবন’-এ তুলে ধরা হয়েছে। রাজনৈতিক ঘটনার বর্ণনা যেমন করা হয়েছে তেমনি ওসমান পরিবারের বর্ণনা করা হয়েছে। খান সাহেব ওসমান আলীর তিন স্ত্রী ও তাদের সন্তান সম্পর্কে বিবরণ দেওয়া হয়েছে। পাঠকগণ নারায়ণগঞ্জের ঐতিহাসিক ওসমান পরিবারের সম্পর্কে একটি ধারণা লাভ করতে পারবে। বলা বাহুল্য খান সাহেব ওসমান আলীর তিন স্ত্রীর গর্ভে ১৮ জন সন্তানদের পরিচয় ও বর্ণিত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর দুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শেখ রেহানার সাথে কেমন সম্পর্ক ছিলো তার বর্ণনা আছে। দিল্লিতে প্রবাসী থাকার সময়ে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যার সাথে দেখা হবার পর আবেগতাড়িত মর্মস্পর্শী ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে কলেজ সহপাঠী ও শেখ রেহানা ও রোজী জামালের সাথে সখ্য ও ঠাট্টার সম্পর্ক। কথা কম বলার কারণে ঠাট্টা বারে রেহানা, রোজীসহ অন্য সহপাঠীরা বোবা নিগার নামে সম্বোধন করত সেকথার উল্লেখ করা হয়েছে বইয়ে।

অসংখ্য ছোটবড় ঘটনার বিবরণ দিয়ে ‘নৌকাজীবন’ সাজানো হয়েছে। একদিকে মর্মস্পর্শী ঘটনা অন্যদিকে সংগ্রামী জীবনের বিবরণ বিবৃত হয়েছে এ গ্রন্থে। বাংলাদেশের রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বিশেষভাবে নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের ভূমিকা সম্পর্কে উৎসাহী পাঠক ও গবেষকদের একটি মূল্যবান উৎস হিসেবে এগ্রন্থ পরিগনিত হতে পারে। বইটির প্রকাশক ইজি ফিল্ম ও পাবলিকেশন। মূল্য ৫০০ টাকা। প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০২১।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়