বাঙালির সার্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষ। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ১৪২৯ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখে আনন্দে মাতবে সারাদেশ। নববর্ষকে বরণ করে নিতে সারা দেশের মতো নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়েও নেওয়া হচ্ছে বর্ণাঢ্য আয়োজনের প্রস্তুতি।
করোনা মহামারির কারণে দুই বছর পর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে হতে যাচ্ছে পয়লা বৈশাখের আয়োজন। থাকবে মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৈশাখী পালার আয়োজন। এর আগের দিন সন্ধ্যায় চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে দেশের মঙ্গল কামনায় ফানুস উৎসব করা হবে।
এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের নানা অনুষঙ্গের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শতাধিক শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসের গাহি সাম্যের গান মঞ্চ ও চারুকলা বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। লোকজ সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে টেপা পুতুল, রাজা-রানি ও সূর্যের পেপার ম্যাশ, হাতি, বাঘ, দোয়েল ও পেঁচার মুখোশ এবং আমন্ত্রণপত্র বানানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এসব উপকরণ তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। রঙ-তুলির আঁচড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাঙিয়ে তুলছেন মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনকে।
বৈশাখী আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজক কমিটির সদস্য-সচিব ড. সিদ্ধার্থ দে বলেন, ‘এবার আমরা লোকজ ঐতিহ্যবাহী মুখোশ, প্যাঁচার মাস্ক, হাতি, বাঘ, পোস্টার ম্যাশ, রিকশা টানাসহ বিভিন্ন ধরনের মুখোশ তৈরির হাতের কাজের আয়োজন করেছি। এখন চলছে রঙ করার কাজ। শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এত কিছু সুন্দরভাবে করা সম্ভব হচ্ছে। এসব আয়োজনের মাধ্যমে আমরা প্রকাশ করি আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা। আমরা সামাজিক ও মানবিক।’
আয়োজক কমিটির সভাপতি ড. মুহাম্মদ এমদাদুর রাশেদ বলেন, ‘এত সুন্দর কাজ করার পেছনে সম্পূর্ণ অবদান আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের। আয়োজনকে স্বার্থক করে তুলতে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সঙ্গীতানুষ্ঠান, মঙ্গল শোভাযাত্রা, নাটিকা সবকিছু থাকছে এবারের পয়লা বৈশাখে।’
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘বঙ্গাব্দের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত। আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি দেশের সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করে চলছে। তারই কার্যক্রম হিসেবে আমরা খুব করে চেয়েছিলাম নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমাদের চারিদিকে নানা বিষয়ে অশুচিপনা চলছে। এটাকে যদি আমরা অতিক্রম করতে না পারি, প্রত্যাখ্যান করতে না পারি তাহলে সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ও অসাম্প্রদায়িকতার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো না। এবার যেহেতু রমজান মাস, তাই রমজানের সম্পূর্ণ পবিত্রতা রক্ষা করেই পয়লা বৈশাখ উদযাপন করবো।’