X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক যুগ ধরে আটকে আছে শাবি’র তৃতীয় সমাবর্তন

শাবি প্রতিনিধি
০৯ মার্চ ২০১৯, ১৭:৫১আপডেট : ০৯ মার্চ ২০১৯, ১৮:৫১

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) উদ্ভাবন, শিক্ষা ও গবেষণায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমবর্ধমান সাফল্য থাকলেও সমাবর্তন আয়োজনের দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে খ্যাতনামা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। পথ চলার দীর্ঘ ২৮ বছর অতিক্রম করলেও মাত্র দু’বার সমাবর্তন পেয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি ৩২০ একর জমির ওপর দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম সমাবর্তন ১৯৯৮ সালের ২৯শে এপ্রিল এবং ২য় সমাবর্তন তার ৯ বছর পর ২০০৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দীর্ঘ ১২ বছরে আর কোনও সমাবর্তন পাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু করে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক ও ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর শেষ হয়েছে। এসব ব্যাচে এখন সমাবর্তন পাওয়ার যোগ্য প্রায় ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী । দিন যত গড়াচ্ছে ততই শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়ে চলায় সমাবর্তন আয়োজন রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য।
বর্তমান উপাচার্যও বিভিন্ন সময়ে এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেছেন। তবে সব মিলিয়ে তৃতীয় সমাবর্তন আয়োজন তাই আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রয়েই গেছে। এদিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাবর্তন না পাওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দাবিও জোরালো হচ্ছে। কবে সমাবর্তনের সেই কাঙ্ক্ষিত কালো গাউন পরার সুযোগ পাওয়া যাবে সেই প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন তারা।
সমাবর্তন নিয়ে আলাপকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী নুরুজ্জামান মিয়ার অভিযোগ, ‘১২ বছর ধরে গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় মিলনমেলা সমাবর্তন আয়োজনের কোনও উদ্যোগ নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। সময়ের বিবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন উপাচার্য এসেছেন, অনেকে মেয়াদও সম্পন্ন করেছেন কিন্তু, কেউ বিশেষ কোনও উদ্যোগ নেননি সমাবর্তন আয়োজনের। ২০১২ সালের শেষের দিকে ও ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে সমাবর্তন নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে আলাপ আলোচনা হলেও আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এখন সমাবর্তনের আয়োজন শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনের আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। আর শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় বিষয়টি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’
তিনি বলেন, ‘সমাবর্তন আয়োজনে যত বেশি দেরি করা হবে তত বেশি সমস্যার সম্মুখীনও হতে হবে প্রশাসনকে। আমার মতে, বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে একসঙ্গে সমাবর্তনের আয়োজন সম্ভব না হলে দুই বা তিন ভাগে ভাগে বিভক্ত করে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজন করা উচিত।’
একই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবুল হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে শাবিপ্রবিতে সমাবর্তনের কথা শুনে এলেও এখনও কোনও উদ্যোগ দেখি না। সমাবর্তন আয়োজনের কাজ মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিক হলেই কেবল সমাবর্তন আয়োজন সম্ভব। যে কোনও কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কিছুটা থাকবেই তাই বলে তাতো এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।’ এসময় তিনি শীঘ্রই একটি সমাবর্তন আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান।
এদিকে সমাবর্তন আয়োজন এখন সময়ের দাবি উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজী রাকিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শাকসু বন্ধ থাকায় সমাবর্তন আয়োজনের উদ্যোগ নিতে ভয় পাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অনেকদিন ধরে সমাবর্তন না হওয়ায় সমাবর্তন আয়োজন এখন সময়ের দাবি। সবার প্রাণের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় সমাবর্তন আয়োজন করুক প্রশাসন।’
সমাবর্তন নিয়ে আলাপকালে এত বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে সমাবর্তনের আয়োজন করা চ্যালেঞ্জের বিষয় উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১২ বছর ধরে সমাবর্তনের আয়োজন করা হচ্ছে না। ফলে প্রায় ২০ হাজারের মতো উর্ত্তীর্ণ শিক্ষার্থীকে নিয়ে সমাবর্তন আয়োজন আসলেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’
এসময় সমাবর্তন আয়োজনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যার কথা তুলে ধরেন উপাচার্য। উপাচার্য জানান, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থীকে সমাবর্তনে এনে এক জায়গাতে বসার ব্যবস্থা করা, এতগুলো গাউনের ব্যবস্থা করা, সার্টিফিকেট মুদ্রণ ও লিপিবদ্ধসহ নানা সমস্যা রয়েছে। সমাবর্তনের আয়োজনে এগুলোই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তাছাড়া সমাবর্তন অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও একটি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ‘২০ হাজার শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক ও ছেলেমেয়েরা আসবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সম্মানিত অতিথিরা আসবেন। এখানে নিরাপত্তার একটি বিষয় আছে। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো খুব বেশি বড় নয়। এখানে সমাবর্তনের প্যারেড করে যাবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা, কোথায় করবো? আমাদের যে রাস্তাগুলো আছে তা খুবই সংকীর্ণ। এখানে এই ধরনের অনেক বিষয় আছে যার সমাধানের মাধ্যমেই আমরা সমাবর্তনের আয়োজন করবো।’
কবে নাগাদ এসব সমস্যার সমাধান হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলতে পারেননি শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তবে শীঘ্রই এসব সমস্যা সমাধান করে তৃতীয় সমাবর্তন আয়োজনের আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৮ বছরে দেশ বিদেশে অনেক সুনাম অর্জন করলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের আয়োজন হয়েছে মাত্র দুই বার। ফলে বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন আয়োজন শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন